মুরাদুল ইসলাম » থ্রিলার » কাফকা ক্লাব- প্রথম অধ্যায়

কাফকা ক্লাব- প্রথম অধ্যায়

 


 

                                                                         অধ্যায় -১

                                                                        প্রথম খুন

 


 

Kafka Club

 

অন্ধকার রাতে একজন লোক রাজপথে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। লোকটি দেখতে রোগা, লম্বা। পড়নে লুঙ্গি, পুরনো পাঞ্জাবী। গলায় গামছা ঝোলানো। পায়ে খুব স্বস্তা দরের স্যান্ডেল। তার বয়স হবে আনুমানিক পঞ্চাশ কিংবা ষাট বছর। বয়সের ভারে লোকটি কিছুটা কুঁজো হয়ে গেছে।

মনু মিয়া হাজারী লম্বা নিঃশ্বাস নিলেন। তার মুখে ভাজ পড়েছে বয়সের কারণে। কিন্তু এখন তার কপালে ভাঁজের সংখ্যা বেশি সম্পূর্ণ অন্য একটি কারণে। তিনি দুশ্চিন্তা অনুভব করছেন। অত্যধিক দুশ্চিন্তায় তার কপাল ঘামে ভিজে যাচ্ছে। তিনি বারবার গামছা দিয়ে কপাল মুছছেন।

পথের পাশে ল্যাম্পপোস্টের লাইটগুলো মৃদু মৃদু ঝলছে। তাই আবছা আবছা অন্ধকার। এই অন্ধকারে সামান্য দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া এই রাস্তা বেশ জনশূন্য। কোন গাড়ি কিংবা মানুষজন দেখা যাচ্ছে না। শুধু কিছুক্ষণ পর পর বহুদুর থেকে পাহাড়াদারের গলার স্বর শোনা যাচ্ছে। হুশিয়ার! সাবধান!

মনু মিয়া হাজারী বেশ আড়ষ্টভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। আজ কী হবে তিনি জানেন না। অথচ এরকম হওয়ার কথা ছিল না। তিনি সব সময় খুব সতর্ক ছিলেন।

তার দাদার নাম জালালউদ্দিন হাজারী। লোকে বলে তিনি পীর ছিলেন। তার কবরের উপর লাল কাপড় টাঙ্গিয়ে রাখা আছে। এখনো প্রতি বছর উরশ হয় নিয়ম করে। তিনি ও গান গাইতে পারতেন ভালো। মনু মিয়া হাজারীদের বংশে সবচেয়ে ভালো গান গাইতেন বোধহয় জালালউদ্দিন ই। তার গান নিয়ে গ্রামে ছড়িয়ে আছে অনেক কথা। কথিত আছে এক পূর্ণিমা রাতে জালালুদ্দীনের গান শোনে আকাশ থেকে নেমে আশে পরীরা। তারা পুরো রাত গানের সাথে উদ্দাম নৃত্যে মাতিয়ে তোলে ঘুমন্ত গ্রামকে। এরপর যাবার সময় পরীরা জালালউদ্দিন কে ডেকে বলে, এই যন্ত্রটা তুই রেখে দে জালাল। তোর গলা ভারী মিষ্টি।

জালালউদ্দিন তাকিয়ে দেখেন, একটি বিস্ময়কর বাদ্যযন্ত্র। এমন বাদ্যযন্ত্র আগে আর কেউ দেখে নি।

তিনি ভয়ে ভয়ে যন্ত্রটি গ্রহণ করেন। সেই যন্ত্র স্পর্শ করার সাথে সাথে তার সারা দেহে বিদ্যুৎ খেলে যায়। মনে হয় এক ধরনের পবিত্র আলোক রশ্মি তাকে যেন ধুয়ে দিচ্ছে। জালালউদ্দিন মূর্ছিত হয়ে পড়ে যান। পরদিন সকালে গ্রামবাসীরা তাকে যন্ত্রটি হাতে অজ্ঞান অবস্থায় পায়।

মনু মিয়া হাজারী ভাবেন যন্ত্রটিই কাল হয়েছিল। এরপর জালালউদ্দিন গানের জন্য দেউলিয়া হয়ে যান। সারাদিন রাত গান গাইতেন। স্ত্রী পুত্র কন্যা কারো কোন খোঁজখবর রাখতেন না। শোনা যায় প্রতি পূর্নিমার রাতে নাকী পরীরা তার গান শুনতে নেমে আসত।

বাড়ির সামনে একটু দূরে ছোট খুপরী ঘর বানিয়ে থাকতেন জালালউদ্দিন। একদিন ওখানেই মারা যান। এবং ওখানেই তিনি শেষনিদ্রায় শুয়ে আছেন।

জালালউদ্দিনের স্ত্রী আফিয়া বানু মনে মনে ঐ দৈব বাদ্যযন্ত্রের উপরে ক্ষোভ পুষে রেখেছিলেন। গ্রামবাসীর কথিত কথা তিনিও বিশ্বাস করতেন। ঐ যন্ত্র তার স্বামীকে তার কাছ থেকে আলাদা করেছে এ কথা তার মনে ছিল। এজন্য স্বামী মারা যাবার পর যন্ত্রটি তিনি তার পুত্র বা কন্যাদের দেখান নি। যত্ন করে লুকিয়ে রেখে দিয়েছিলেন।

মনু মিয়া হাজারীর বাবা করিম হাজারী তাই যন্ত্রটি দেখেন নি। আশ্চর্যজনক ভাবে তিনি ঘর গৃহস্থালীতে মনযোগী ছিলেন। বেশ জমি জমাও করেছিলেন। জালালউদ্দিন গাতকের ছেলে পুরোদস্তুর সংসারী হবে তা কেউ আশা করে নি। কিন্তু তিনি হয়েছিলেন।

মনু মিয়া হাজারী যখন যুবক তখন তার বাবা মারা যান। মনু মিয়া তখন জমি জমার কাজে লাগবেন ঠিক করেছেন। তারও অন্যদিকে মন নেই।

কি একটা কাজে একদিন ঘরদোর পরিস্কার করতে গিয়ে মনু মিয়া প্রথম যন্ত্রটির দেখা পান। জালালউদ্দিনের স্ত্রী অর্থাৎ তার দাদী তখনো বেঁচে। বৃদ্ধা সর্বশক্তি দিয়ে তার একমাত্র নাতিকে বুঝাতে গিয়েছিলেন এই যন্ত্রটি অপয়া। মনু মিয়া শোনেন নি। যন্ত্রটির কালো মিশমিশে রূপ তার রক্তে আগুন তুলেছিল।

সেইদিন থেকেই মনু মিয়া হাজারী গান গাইতে শুরু করেন। অদ্ভুত সেই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান। তিনি গান গেয়েছিলেন মনের সুখে। যা দেখেছিলেন ছোটবেলায় যাত্রাপালায় সেসব গান। কিন্তু গ্রামের লোকজন মনে করতে থাকে জালালুদ্দিনের গানের পীরাকী ভর করেছে তার নাতির উপর। তারা প্রতিদিন আসতে থাকে গান শুনতে।

মনু মিয়া হাজারী তাদের শোনানোর জন্যই গান শিখতে শুরু করলেন। বিভিন্ন গাতকের সাথে যোগাযোগও শুরু করলেন। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন বৃদ্ধ গাতকেরা তাকে অত্যধিক সম্মান করেন জালালউদ্দিনের নাতি হিসেবে।

এই জীবন মনু মিয়ার ভালো লেগে গেল। তিনি ভালোভাবে ঢুকে গেলেন গানের জগতে। এমনভাবে প্রবেশ করলেন যে গান ছাড়া তার একদিনও চলে না। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় বায়না থাকে। মনু মিয়া সেসব বায়নায় তার অদ্ভুত বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ছুটে যান। অনেক বড় বড় গাতকের গান গাইতে থাকেন। দর্শকেরা তাকে অভিনন্দিত করতে থাকেন প্রশংসা আর করতালির মাধ্যমে।

এদিকে তার মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েন। ইতিমধ্যে মনু মিয়া বাপের জায়গা জমি বিক্রি করা শুরু করে দিয়েছেন। তিনি বাড়ির সামনে জালালউদ্দিনের কবর বা মাজারের পাশে ছোট ঘর বানিয়ে থাকেন। ওখানে সারা রাত গান হয়। দূর দূরান্ত থেকে গাতকেরা আসেন।

ভোর রাত্রি পর্যন্ত গান শোনা যায় বাউল আব্দুল করিম নামে এক মহান গাতকের লেখা গান

“গান গাই আমার মনরে বুঝাই মন থাকে পাগলপারা আর কিছু চায়না মনে গান ছাড়া ।।

গানে বন্ধুরে ডাকি গানে প্রেমের ছবি আঁকি পাব বলে আশা রাখি না পাইলে যাব মারা

আর কিছু চায়না মনে গান ছাড়া ।।”

 

মনু মিয়ার গানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। বিভিন্ন জায়গা থেকে তার ডাক আসত। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক আসত দেখা করতে।

 

মনু মিয়া পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছিলেন। জায়গা জমি বিক্রি করতে করতে সব শেষ। পরিবারের লোকদের খাওয়া পড়া বন্ধ হবার জোগাড়। তিনি যখন গানে থাকেন তখন এসব চিন্তা তার মাথায় আসে না। কিন্তু গান শেষ হলেই একরাশ দুশ্চিন্তা এসে ভীড় করে।

একদিন ভোরবেলা যখন মনু মিয়া যখন গান শেষে তার বন্ধুদের বিদায় দিয়ে ঘুমানোর আয়োজন করছেন তখন তার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়াল তিনটি লোক। তাদের সবার পড়নে কালো কোট, কালো জুতা। বয়স চল্লিশের মত।

তারা মনু মিয়াকে বলল, আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। আপনার সাথে সামান্য দরকার ছিল।

মনু মিয়া তাদের ঘরে নিয়ে বসান। ঘরে কোন আসবাব নেই। তাই পাটিতেই বসে পড়ল লোক তিনটি। তাদের ব্যবহার অমায়িক।

মনু মিয়া তাদের যথেষ্ট খাতির করলেন। তারা এক পর্যায়ে বলল তারা মনু মিয়ার বাদ্যযন্ত্রটা কিনতে চায়। এর জন্য পাঁচ লাখ টাকাও দিতে রাজী।

মনু মিয়া হাজারী প্রথম রাজী হন নি। প্রিয় যন্ত্র বিক্রির কথা ভাবতেই তিনি আৎঁকে উঠলেন।

কিন্তু লোকগুলো তাকে বুঝাল এরকম একটি যন্ত্র তিনি বানাতেও পারবেন। এছাড়া পাঁচ লাখ টাকা কম টাকা না।

মনু মিয়া তার বাদ্যযন্ত্র বিক্রি করতে রাজী হলেন।

ঠিক হুল আগামী সপ্তাহে তিনি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে শহরে যাবেন। শহরে তিনি কয়েকবার গিয়েছিলেন গানের বায়নায়। তিনি তার পুরনো বন্ধু আফতাব শেখ কে সাথে নিয়ে শহরে এসেছিলেন। এসে উঠেছিলেন তার পূর্বের চেনা এক হোটেলে। এই হোটেল থেকে সামান্য পশ্চিমে একটা রাস্তায় রাত তিনটার সময় বাদ্যযন্ত্রটি লোকগুলোর হাতে তুলে দেয়ার কথা ছিল।

এত রাতে টাকা নিয়ে আসা যাওয়া এক ধরনের ভয়। সেজন্যই মনু মিয়া আফতাব শেখকে নিয়ে এসেছিলেন। আফতাব শেখ একজন শক্তিমান লোক। তার চেহারাও বলিষ্ঠ। ছিচকে ছিনতাইকারী মুখ দেখলেই পালিয়ে যাবার কথা।

মনু মিয়া ঠিক করেছিলেন আফতাবকে কিছু বলবেন না। সে বার বার জিজ্ঞেস করছিল। এবার যে বায়নার জন্য আসা হয় নি তা সে বুঝতে পেরেছিল বেশ ভালোভাবেই।

মনু মিয়া এক পর্যায়ে তাকে বাদ্যযন্ত্রের কাহিনীটা খুলে বলেন। এতে বিস্ময়ে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।

হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে মনু মিয়া হাজারী বাথরুমে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন আফতাব শেখ নেই। সে বাদ্যযন্ত্রটি নিয়ে পালিয়েছে।

এই অবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন গাতক মনু মিয়া হাজারী। রাত দুটা পর্যন্ত ঘরে বসেই ছিলেন। একবার ঠিক করেছিলেন কাল সকালে গ্রামে ফিরে যাবেন। কিন্তু সহসাই তার মনে হল লোকগুলো এসে তাকে যদি না পায় তাহলে কোন সমস্যা হতে পারে।

তাই তিনি এই রাজপথে দাঁড়িয়ে আছেন। এখন বাজে রাত দুইটা পঞ্চাশ। যেকোন সময় লোকগুলো চলে আসবে। তিনি তাদের কি বলবেন চিন্তা করতে করতে ঘেমে যাচ্ছেন বারবার।

মিনিট পাচেঁক পর জুতার শব্দ শোনা গেল। কয়েকজন লোক আসছে। মনু মিয়ার উদ্বিগ্নতা বাড়ল।

আস্তে আস্তে জুতার শব্দটি পরিস্কার হতে লাগল। মনু মিয়া শব্দের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার বুক হাঁপড়ের মত উঠানামা করছে।

তিনি দেখতে পেলেন তিনটা লোক। তাদের পড়নে ফতোয়া আর বড় পাজামা। মাথায় লাল পাগড়ি। এই লোকগুলোই কি তার সাথে দেখা করতে গ্রামে গিয়েছিল? মনু মিয়া বুঝতে পারলেন না। তিনি তাকিয়ে রইলেন।

লোকগুলো তার ঠিক সামনে এসে দাঁড়াল।

একজন জিজ্ঞেস করল, জিনিস কোথায়?

যথাসম্ভব শান্ত থেকে মনু মিয়া বুঝালেন যন্ত্রটি তিনি নিয়ে এসেছিলেন। কীভাবে তার হাতছাড়া হয়েছে তিনি সব বললেন।

মুহুর্তে হিংস্র হয়ে উঠল লোকগুলোর মুখ। একজন পকেট থেকে একখানা হলুদ রুমাল বের করল। আরেকজন এর একপাশে একটি তামার মুদ্রা বেঁধে ফেলল।

মনু মিয়া হাজারী এদের মুখ দেখে ভয় পেলেন। তিনি ভয়ে চিৎকার করতে যাবেন এমন অবস্থায় একজন দৌড়ে এসে তার মুখ চেপে ধরল। আরেকজন ক্ষীপ্র গতিতে রুমালের ফাঁস তার গলায় লাগিয়ে দিল। অন্যজন ধরে রাখল পা দুটো।

মনু মিয়া নাড়াছাড়া করতে পারছেন না। লোহার মত শক্ত চার হাত তার পা এবং হাত ধরে রেখেছে। গলায় ফাঁসের কারণে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। চোখ হয়ে আসছে ঘোলাটে।

মুহুর্তকে তার অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছে। নিঃশ্বাসের তীব্র যন্ত্রণায় অনুভব করতে করতে তিনি দেখতে পেলেন তার শৈশব, কৈশোর আর গানের দিনগুলোকে। একেবারে ছবির মত। মনু মিয়া বুঝতে পারলেন তিনি মারা যাচ্ছেন। এ সময় অদ্ভুত কারণে তার একটা গানের কথা মনে হল –

 

‘ছেড়ে দিয়া মায়াপুরী, দিতে হবে ভব পাড়ি
চেয়ে দেখ মন-ব্যপারী দিন গেলে হয় সন্ধ্যা রে
দিন গেলে হয় সন্ধ্যা
আপনি যদি ভালো বুঝো, সুসময়ে মুর্শিদ ভজো
জ্ঞান থাকিতে পাগল সাজো চোখ থাকতে হও আন্ধা
এই দুনিয়া মায়াজালে বান্ধা’

 

 

 

 

————————————–

মোট অধ্যায়ের সংখ্যা ২৮। কাফকা ক্লাব পাওয়া যাবে বইমেলায় আদী প্রকাশনের স্টলে। স্টল নাম্বার ২৬৪।

অনলাইনে কিনতেবুকস্ট্রীট

চট্টগ্রাম – সাহিত্য বিচিত্রা, আন্দরকিল্লা, চটগ্রাম

সিলেট – ইসলাম প্রকাশনী, রাজা ম্যানসন, জিন্দাবাজার

বরিশাল – বুক সোসাইটি , খোন্দকার মোস্তাক আহমেদ ৫৫ সদর রোড (হোটেল সেডোনার সামনে), বরিশাল। মোবাইলঃ 01712081640

 


বিভিন্ন পাঠকের কাছ থেকে কাফকা ক্লাবের কিছু পাঠ প্রতিক্রিয়া – ফেসবুক থেকে সংগৃহীত



 

 

সাঈদ শিহাব

https://www.facebook.com/groups/BoiLoverspolapan/permalink/1100600016623774/

বেশ কয়েকটি রহস্যজনক খুন।
একটি সবুজ ডায়েরী।
এক ইংরেজ ঠগী।
এক বিদেশীর আগমন যার আগ্রহ খুন গুলো নিয়ে।
এক প্রফেসর যিনি নিজ দায়িত্বে খুন গুলোর তদন্ত করছেন।
সর্বোপরি হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন বাংলার এক মূল্যবান প্রত্নসম্পদ।

বইটার কভারে লেখাগুলো দেখে পড়ার আগ্রহ হয়েছিল। লেখকের লেখা আগে কখনো পড়ি নি। তাই একটু দ্বিধায় ছিলাম কিনবো কিনা। কিন্তু এখন আমি জানি বইটা কিনে আমি কোন ভুল করি নি। না পড়লে আপনিও ভুল করবেন।
বইটা পড়েই বোঝা যায় এই বইটা লিখতে গিয়ে লেখককে অনেক মাথা ঘামাতে হয়েছে। বহুল তথ্যসমৃদ্ধ ইতিহাস আশ্রিত থ্রিলার। আর মজার ব্যাপার হলো বইটা পরে মনে হবে এটা একজন নতুন লেখকের বই। অসাধারণ কাহিনীকে লেখক খুব সুন্দর ভাষায় সাবলীল ভাবে বর্ণনা করেছেন। মেদহীন লেখা। কোথাও কোন বাড়তি কিছু নেই। কাহিনী থমকে দাড়ায় নি একবারও। একবারও মনে একটু পরে পড়বো, এখন ভাল লাগছে। উত্তেজনা নিয়েই টানা পড়ে গেছি। যে থ্রিল দিয়ে লেখক কাহিনি শুরু করেছেন, বইয়ের শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পেরেছেন- আমার মতে এটাই লেখকের মূল সার্থকতা।
তিন গোয়েন্দাকে খুব মিস করি। সেই থ্রিলটাই যেন অনেক দিন পর ফিরে পেলাম বৃহৎ পরিসরে।
লেখককে অনেক ধন্যবাদ এরকম অসাধারণ উপন্যাস দেওয়ার জন্য। এরকম আরো বই আশা করছি।

 

মিসবাহ উদ্দিন আহমদ

https://www.facebook.com/groups/BoiLoverspolapan/permalink/1096428367040939/

‘কাফকা ক্লাব’ নবীন লেখক মুরাদুল ইসলামের নতুন বই।বইটি পড়ে মনে হল সবাইকে এই বইখানা সম্পর্কে জানানো কর্তব্য।খাটি রহস্য উপন্যাস বলা যায় বইটিকে।সাধারণ পাঠক হিশেবে কিছুকিছু অসাধারণ ভাল দিক ও কিছু খারাপ দিকও চোখে পড়েছে।
যা কিছু ভাল কিংবা অসাধারণ : নতুন লেখকদের রচনায় যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশিচোখে লাগে সেটা হল রচনার বিভিন্ন যায়গায় খেই হারিয়ে ফেলা/হোচট খাওয়া,মুরাদুল এর বইটি এই সমস্যামুক্ত প্রায় সম্পুর্নটাই।অত্যান্ত সাবলীল, গতিময় উপন্যাসটি।বিখ্যাত ব্যক্তি কিংবা ঘটনাকে উপন্যাসে অত্যান্ত প্রাসঙ্গিকভাবে যুক্ত করেছেন লেখক।বইটি পড়তে শুরু করলে আর শেষ না করে উঠা যায় না।উপন্যাসটিতে অযথা বর্ণনা কিংবা অপ্রয়োজনীয় চরিত্র নেই।টানটান উত্তেজনায় ভরপুর কাহিনী প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত।ঠগীদের ব্যাপারে আমি জানতে উৎসাহী হয়েছি এই বইটি পোড়ে।ঠগী দের বর্ণনা ‘ভয়ংকর সুন্দর’ হয়েছে।বইটি পড়লে যে কারও কাফকা সম্পর্কে, ঠগী সম্পর্কে প্রত্নতত্ত্ব সম্বন্ধে জানতে ইচ্ছে হবে প্রবলভাবে।
যা কিছু খারাপ:সবাই যে কথা বলে আমি তার উল্টা বলব “এই উপন্যাসটি আরো বড় হতে পারতেন”।সাধু ও চলিতের মিশ্রণ কয়েক স্থান চোখে লাগে,সিভিলিয়ান এর দ্বারা লাশ পরীক্ষা করা কিংবা বিদেশি ছেলের কিছু কার্যকলাপ একটু বেশি ই অবাস্তব বলে মনে হয়েছে।
সবশেষে স্পয়েল না করে একটা কথাই বলতে চাই “উপন্যাসের কয়েকটা যায়গা এত সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে যা অসাধারণ ভাল লাগে।একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে এই@ থ্রিলার উপন্যাসটি পড়ে তৃপ্তি পাবে না এমন লোক পাওয়া কঠিন হবে।
অভিনন্দন লেখক মুরাদুল ইসলাম কে আমাদেরকে এত সুখপাঠ্য রচনাটি উপহার দেয়ার জন্য।
স্পয়েল হয়ার ভয়ে উপন্যাসের গল্প কিংবা চরিত্র নিয়ে কিছুই বললাম না।

 

 

শাহেদ জামান, ব্লগার ও অনুবাদক

https://www.facebook.com/groups/BoiLoverspolapan/permalink/1095568537126922/

Muradul Islam ভাইয়ের কাফকা ক্লাব পড়ে শেষ করলাম এইমাত্র! দারুণ লাগল!

বাংলাদেশের সাহিত্যজগতে হাটি হাটি পা পা করে মৌলিক থ্রিলার বা ফ্যান্টাসির জন্ম হল এই সেদিন বলতে গেলে। Shariful Hasan ভাইয়ের সাম্ভালা ট্রিলজিকেই আমার মনে হয় প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা থ্রিলারের সম্মান দেয়া যায়। কিন্তু সময় বেশি দিন পার না হলেও এর মধ্যেই বাজারে চমৎকার কিছু লেখক চলে এসেছেন, মুরাদুল ইসলাম তাদের একজন।

কাফকা ক্লাবের কাহিনী শুরু হয়েছে কয়েকটি খুনের বর্ণনা দিয়ে। প্রতিটি খুনই একটির সাথে আরেকটি সম্পর্কিত। শুভ্র নামে এক যুবক ঘটনাচক্রে জড়িয়ে যায় খুনগুলোর সাথে। সেই সাথে কাহিনীতে যোগ হয় লাল পাগড়ী পরা কিছু নিষ্ঠুর খুনী, বিদেশ থেকে আসা এক যুবক আর খুনের তদন্তে নামা এক পাগলাটে প্রফেসর। সবুজ ডায়রীতে উঠে আসে বৃটিশ এক যুবক কিভাবে নিষ্ঠুর খুনী তুসুমবাজে পরিণত হয় তার বিবরণ। কিন্তু তার সাথে এই খুনগুলোর কি সম্পর্ক? শুভ্রর প্রাণ নিয়ে শেষে টানাটানি পড়বে না তো আবার?

সব প্রশ্নের জবাব মিলবে কাফকা ক্লাবে। লেখকের লেখনী গতিশীল, বর্ননাশৈলি সাবলীল। তবে সাধু ভাষায় দীর্ঘ বর্ণনা পড়াটা একটু ইরিটেটিং। গল্পে দুই এক জায়গায় বানান ভুল থাকলেও ভবিষ্যতে সেগুলো ঠিক থাকবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু দুর্দান্ত সব পয়েন্টকে প্রাসঙ্গিকভাবে নিয়ে এসে লেখক খুঁতগুলো পুষিয়ে দিয়েছেন। থ্রিলার প্রেমী পাঠক হতাশ হবেন না আশা করি!

বইয়ের নামঃ কাফকা ক্লাব
লেখকঃ মুরাদুল ইসলাম
প্রকাশনীঃ Adee Prokashon, একুশে বইমেলা ২০১৫- স্টল নং ২৬৪
মূদ্রিত মূল্যঃ ২৫০ টাকা

 

সালমান এইচ ধ্রুব

https://www.facebook.com/groups/BoiLoverspolapan/permalink/1071496232867486/

::Book Review:::::::::
নাম : কাফকা ক্লাব
লেখক: মুরাদুল ইসলাম
Genre: থ্রিলার

আসলে আমি বোধহয় খুব সহজেই ইম্পপ্রেসড হয়ে যাই। যেমন এই বইটা , ১৬০ পেজ এর একটা বই, পড়তে বেশীক্ষন লাগল না। কিন্তু শেষ করার পর!! বই এর ভেতরে এত এত তথ্য!!! সাথে একের পর এক খুনের বর্ণনা । গুগলিং করতে করতে হয়রান হয়ে গেলাম। লেখক বোধহয় অনেক গবেষণা করেছেন লেখার আগে। এটা স্বীকার করতেই হবে।

বাংলা ভাষায় মোলিক থ্রিলার এখন আর নতুন কিছু নয়, আমরা অনেকেই মাশুদুল হক ভাইয়ার ‘ভেন্ট্রিলোকুইস্ট’ কিংবা শরীফুল হাসান ভাইয়ার ‘সাম্ভালা ট্রিলোজি’ এনজয় করেছি। যাদের কাছে এগুলো ভালো লেগেছে তাদের কাছে ‘কাফকা ক্লাব ‘ ভালো লাগবে বলেই আমার মনে হয়।

বই এর কাহিনী বিন্যাস একটু জটিল, একই সাথে বর্তমান সময়ে আর অতীতের বর্ণনা । কিন্তু তা পড়তে একটুও অসুবিধা হবেনা লেখকের লেখনীর কারণে।

গল্পের কাহিনী শুরু হয় খুনের মাধ্যমে একটা না দুটা না পাচটা খুনের বর্ণনা একের পর এক। অবশ্যই খুনগুলো একই সুতোয় গাথা। এর পর গল্পের বক্তা শুভর লেখার মধ্যে কাহিনী সামনে আগাতে থাকে। আছে একটা ডাইরীর কথা যেটা একজন ইংরেজ ঠগীর। এই ঠগীরা হচ্ছে আমাদের এই উপমহাদেশ এর একদল খুনে । এরা মা ভবানীর নামে বিনা কারণে মানুষ খুন করে বেড়ায়, কিন্তু এমন ভাবে খুন করে যাতে কোন প্রকার চিহ্ন মাত্র থাকে না। ঠগীদের সম্পর্কে যে লেখক বিস্তর গবেষনা করেছেন তা বোঝাই যায়। তবে ঠগীদের এই কাহিনী গল্পের সাব প্লট কারণ আসল ঘটনা এই বর্তমান সময়ে । আবার কি ঠগীদের আগমন ঘটেছে নাকি এই খুনগুলোর উদ্দ্যেশ্য অন্য কিছু তা জানতে হলে পড়তে হবে কাফকা ক্লাব।

তবে একটা ব্যাপার, যে কারণে বই এর নামকরণ তার বর্ণনা একটু কম ই হয়ে গেছে বলে আমার মনে হয়। আরেকটু বেশী হল আরো জমত। আর বরাবরের মতই অন্য থ্রিলারগুলোর মত এটা তেও কাকতলীয় ঘটনা বেশী , তবে তা মেনে নেয়া যায়। smile emoticon

এবার আসা যাক প্রচ্ছদের কথায়, সাম্ভালা শেষ যাত্রার পর এটা আমার দেখা কোন বাংলা বই এর সেরা প্রচ্ছদ। দেখলেই হাতে নিতে ইচ্ছে করে। একটা আদর্শ থ্রিলার হতে যা লাগে – খুন, সাসপেন্স, পারফেক্ট মোটিভ আর এর সাথে যারা থ্রিলার এর মধ্যেও বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান তার সবকিছুই আছে বই টা তে। সময় থাকলে পড়ে ফেলতে পারেন -বেশীক্ষন লাগবে না কারণ একবার শুরু করলে ছাড়তে পারবেন বলে মনে হয় না ।

আর একটা ব্যাপার- বলতে একটু কেমন জানি লাগছে তাও বলি। আমার ধারণা বই টার দাম একটু বেশীই হয়ে গেছে।কারণ নতুন একজন লেখক এর লেখা এত দাম দিয়ে কিনতে অনেকেই আগ্রহী হবেন না। এই বিষয়টা আদী প্রকাশনীর একটু চিন্তা করা উচিত। লেখককে অনেক ধন্যবাদ। আশা করি সামনে আরো ভালো থ্রিলার পাব।

 

কিশোর পাশা ইমন, লেখক, অনুবাদক

রিভিউঃ কাফকা ক্লাব
লেখকঃ মুরাদুল ইসলাম
প্রকাশকঃ আদী প্রকাশন

বর্তমান যুগের অদ্ভুত কিছু খুন থেকে গল্পের শুরু। তারপর ধীরে ধীরে কাহিনী বিস্তৃত হয়ে গেল শত বছর পূর্ব থেকে শত মাইল দূরবর্তী এলাকা পর্যন্ত। মূল চরিত্রগুলোর প্রত্যেকের উদ্দেশ্যই এক। খুনের রহস্য সমাধান করা। প্রাচীন সিরিয়াল কিলার দলটি কি আজ পর্যন্ত টিকে আছে আধুনিক সভ্যতা পর্যন্ত? আলকেমিস্টদের সাথে পুরো ঘটনার সম্পর্ক কোথায়?

পেছনে ঠিক কোন চরিত্রটি সবার চোখের আড়ালে ঘুঘু নাচাচ্ছে?
কার হাত ভিজেছে রক্তে?
কোন খুনের উদ্দেশ্য কি ছিল?

সবগুলো প্রশ্ন একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়বে বইটার মাঝামাঝি যাওয়ার আগেই। তারপর যেটা হবে, আপনার মন নিয়ে স্রেফ খেলবেন লেখক। একবার নাগরদোলার শীর্ষে তুলে ধরবেন, একবার নিয়ে যাবেন সাত পাতালের নিচে। লেখকের হাতে আপনার চিন্তাশক্তির নাস্তানাবুদ হওয়ার ঘটনাটা কারও খারাপ লাগবে বলে মনে হয় না।

কারণ, শেষ পর্যন্ত নাটের গুরু কে ছিল – তা জেনে আপনি চমকাবেনই grin emoticon
অন্তত আমি চমকেছি।

শ্বাসরুদ্ধকর একটি বই, বিদ্যুতবেগে শেষ হয়ে গেল বইটা। ধরলাম, আর পড়লাম, শেষ মলাট চলে এল!
মৌলিক থ্রিলার হিসেবে দুর্দান্ত হয়েছে।

তবে কিছু ব্যাপার খুব চোখে লেগেছে। দোষটা লেখককে দেব না। প্রুফ রিডিংয়ের ক্ষেত্রে বানানের ভুল শোধরানো হয়নি। গুরুচণ্ডালীর সমস্যা মেটানোর কোন চেষ্টা করা হয়নি। আগামী সংস্করণে এ দুটো দিক লক্ষ্য করলে ভাল হয়।
অসাধারণ একটা উপন্যাস পড়ার সময় হাল্কা খুঁতখুঁতানী থেকে গেলে অনুভূতিটা পরিপূর্ণতা পায় না। frown emoticon

তবে, লেখকের কাছে পাঠক হিসেবে বিনীত প্রার্থনা, এরকম আরও বই উপহার চাই।
আপনার কল্পনাশক্তি আর গবেষণার পেছনের পরিশ্রম আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করেছে।

https://www.facebook.com/ImonTheThreat/posts/1060782653948591

 

1 thought on “কাফকা ক্লাব- প্রথম অধ্যায়”

  1. Pingback: কাফকা ক্লাব – মুরাদুল ইসলাম | আদী প্রকাশন

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং