মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » বউ পোড়ানো ও বউ বিক্রিঃ দুই প্রথার দিকে তাকানো যাক

বউ পোড়ানো ও বউ বিক্রিঃ দুই প্রথার দিকে তাকানো যাক

১৮২৯ সালের ডিসেম্বরে সতীদাহ প্রথা রদ হয়। সতীদাহ প্রথায় মৃত স্বামীর স্ত্রীকে স্বামীর চিতায় আত্মাহুতি দিতে হইত। একে সুন্দরভাবে বলা হয় সহমরণ। সহমরণের এই প্রথা চালু ছিল প্রাচীন ইন্ডিয়ায়।

সতীদাহের উইকিপিডিয়া পেজে উল্লেখ আছে যে মূলতঃ স্ত্রী নিজ ইচ্ছায় প্রবৃত্ত হইতেন সহমরণে। বেদে সহমরণের কোন নির্দেশ নাই। যেহেতু আমি বেদ পড়ি নাই তাই উইকিপিডিয়ার এই পেজকে রেফারেন্স ধরেই বলতেছি। বেদে উল্লেখ না থাকলেও এটা প্রথায় রূপ নেয়। বিশেষত ধনী লোক মারা গেলে তার স্ত্রীকে জোর করে আত্মীয়রা চিতায় তুলতেন সহমরণে সম্পত্তি হরণের ইচ্ছায়। কারণটা হয়ে যায় অর্থনৈতিক।

উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকং গতাসুমেতমুপশেষ এহি। হস্তাগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভি সংবভূব।।

অর্থঃ হে নারী! মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি?বাস্তব জীবনে ফিরে এস। পুনরায় তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির সাথে তোমার আবার পত্নীত্ব তৈরী হবে।

অথর্ববেদ ১৮.৩.২ (এই মন্ত্রটি ঋগবেদ ১০.১৮.৮ এ ও আছে)

মুসলমান শাসকগন যেমন বাদশা হুমায়ুন এই প্রথা দূর করার চেষ্টা চালান। রাজা রামমোহন রায় অনেক চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত আইন করে এই প্রথা রদ করেন জনাব উইলিয়াম বেন্টিংক সাহেব।

সতীদাহ প্রথা নিয়ে এসব কথা অধিকাংশ পাঠকের জানার কথা। কারণ আমাদের মহান শিক্ষাব্যবস্থার সামাজিক বিজ্ঞান বইতে সতীদাহের তথ্যাদি থাকে। অতএব এইখানে পুনরায় উল্লেখ দেখে বিরক্ত হলেও হইতে পারেন কেউ কেউ। তবে সতীদাহ নিয়ে কথা বলা আমার বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল না। আমার মূল উদ্দেশ্য বউ বিক্রি প্রথা নিয়া কথা বলা। ভেরী ইন্টারেস্টিং প্রথা।

wife-selling-in-market
ইংল্যান্ডে বউ বিক্রি

 

প্রথায় যাইবার আগে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবকালের বিবাহ এবং বিচ্ছেদ সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত আবশ্যক।

শিল্প বিপ্লবের কালে ইংল্যান্ডের আইন অনুযায়ী বিয়ার আগে সব সম্পত্তির উপর মেয়েদের অধিকার ছিল পুরুষের মতই। কিন্তু  কোন পুরুষের লগে বিয়া হয়ে যাবার পর তার যাবতীয় সম্পত্তির মালিক হইয়া যাইতেন জামাই ভদ্রলোক। এমনকি বউ নিজে কোন চুক্তি করার অধিকারও হারাইতেন। বস্তুতপক্ষে বউ তার সব লিগ্যাল রাইট হারাইয়া হইয়া যাইতেন জামাইয়ের প্রোপার্টি। হাউ রোমান্টিক একটা ব্যাপার!

প্রোপার্টির কথা যখন আসল তখন হৈমন্তী ছোটগল্পের অপুর কথা মনে আসাটাই স্বাভাবিক। কবিগুরুর অপু সাব হৈমন্তীর ব্যাপারে বলেছিলেন, সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ। শী ইজ নট মাই প্রোপার্টি, শী ইজ মাই ওয়েলথ।

যাইহোক, তখন ব্রিটেনে আইন অনুযায়ী কারণ দেখিয়ে স্ত্রীকে প্রহার করতে পারতেন জামাইরা। হাজার বছর ধরে উপন্যাসের আবুলরে মনে পড়ে। যে বিয়া করত আর বউ পিটাইত। এ নিয়ে লেখক জহীর রায়হান লিখেছেন, বউ পিটানোতে পৈশাচিক আনন্দ পায় আবুল।

আবুল কী  স্যাডিস্ট ছিল? এই প্রশ্ন কেউ তুলেন নাই। যদিও সমাজ বাস্তবতায় এই প্রশ্নের উপযোগীতা ছিল। আবুলের মনস্তত্ব আমাদের জানা উচিত ছিল।

Sadist

মহারানীর ব্রিটেনে তখন আইন অনুযায়ী জামাইরা বউয়ের যাবতীয় স্বাধীনতা হরণ করিতে পারতেন। অর্থাৎ অন্ধকার গৃহে তাকে বন্দি করে রাখতে পারতেন। তবে বউয়েরও কিছু অধিকার ছিল। যেমন জামাইকে তাকে খুন করতে পারতেন না কিংবা স্লেভ হিসেবে বিক্রয় করবার অধিকার রাখতেন না।

ডিভোর্সের ক্ষেত্রে একমাত্র লিগ্যাল উপায় ছিল এডাল্টারী কিংবা জীবন সংশয়ী নির্যাতন হলে। এডাল্টারী প্রমান হলে এবং জামাইয়ের যদি লিগ্যাল ওয়েতে যাইবার সামর্থ থাকত তাহলে তিনি ডিভোর্সের জন্য প্রাইভেট এক্ট অব পার্লামেন্টের দ্বারস্ত হইতেন। তবে এই বিচ্ছেদে বিবাহ ধ্বংস হইত না, কেবল তারা আলাদা থাকা শুরু করতেন। এটা হইত আইনগত বিচ্ছেদ। তারপর জামাই ভদ্রলোক তার বউয়ের লাভাররের উপরে সিভিল কোর্টে মামলা করতেন। সেই মামলায় তিনি জিতলে তার বউ এডাল্টারার হিসেবে পুরো প্রমাণ হইয়া যাইতেন এবং তখনি তাদের ঘটত পুরোপুরি বিচ্ছেদ। তারা পুনরায় অন্যত্র বিবাহ করিতে পারতেন।

কিন্তু এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

প্রাইভেট এক্ট অব পার্লামেন্ট প্রক্রিয়ায় ডিভোর্সের চেষ্টা মহিলারাও করতে পারতেন যদি তার জামাই এডাল্টারীতে যুক্ত হইতেন। তবে সেটা করা তার জন্য ছিল দুরূহ। লিগ্যাল রাইট না থাকায় এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করতে হইত। ১৭০০ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত প্রাইভেট পার্লামেন্ট এক্টের সময়কালে ৩৩৮ জন মানুষ ডিভোর্সের আবেদন করেছিলেন। এর মাঝে মাত্র ৮ জন ছিলেন নারী। ৩১৮ জন হাজবেন্ড এর আবেদন সাকসেসফুল হইছিল, আর স্ত্রীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা মাত্র ৪ জন। পার্সেন্টেজের তুলনা করলেই বিরাট পার্থক্য দেখা যাবে।

বিবাহ বিচ্ছেদের আরেক উপায় প্রচলিত ছিল যাকে বলা হয় ডেজারশন। অসুখী জামাই একদিন তার জিনিসপত্র নিয়া উধাও হইয়া যাইতেন। বউ বাসায় এসে দেখত জামাই নাই। এই তরিকা অবশ্য বেআইনি ছিল। আর স্ত্রীদের ক্ষেত্রে ডেজারশন ছিল প্রায় অসম্ভব। তাদের প্রোপার্টি নাই, প্রোপার্টি রাইট নাই, যাবে কই? আর গেলেও হাজবেন্ড তারে তুলে আনার অধিকার রাখত। কারণ আমরা জানি যে জামাইয়ের বাম পাঁজর থেকে তারে বানানো হইছে। এইজন্য কবির সুমনও জাতিস্মরে বলেন,

দুঃখ পেয়েছ যতবার জেনো আমায় পেয়েছ তুমি

আমি তোমার পুরুষ, আমি তোমার জন্মভূমি।

জাতিস্মর বঙ্গভূমের একটা শ্রেষ্ট রোমান্টিক গান হিসেবে খ্যাত। রোমান্টিক আবেগের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান রেখে কী এই প্রশ্ন তোলা যায় যে, পুরুষরে নারীর জন্মভূমি ভাবার মাধ্যমে কী নারীর আলাদা অস্তিত্বরে অস্বীকার করা বা ছোট করা হয় না? আর দুঃখ পেলে আমায় পাওয়া হয় কীভাবে? এটা কী নারীরে ম্যাসোকিস্ট হিসেবে কল্পনা করে নেয়া?

masochism

কেউ উত্তেজিত হইবেন না দয়া করে। কারণ কাউকে উত্তেজিত করা আমার উদ্দেশ্য না।  আমি কিন্তু আগেই রোমান্টিকতার প্রতি সম্মান দেখাইছি। অর্থাৎ হ্যালমেট পইড়া নিয়েছি। কবির সুমন এবং তার গান আমার ভালো লাগে। 😉

যাইহোক,  বউ বিক্রিতে ফেরা যাক। টমাস হার্ডি নামক এক ব্রিটিশ লেখকের জন্ম হয়েছিল ১৮৪০ সালে। তার লেখা একটি উপন্যাসের নাম “দ্য মেয়র অফ ক্যাস্টারব্রিজ”। ক্যাস্টারব্রিজ একটা ফিকশনাল টাউন। এর মাঝেই উপন্যাসের গল্প। এই উপন্যাসের নায়ক মাইকেল হেনচার্ড তার বউরে নিলামে বিক্রি করে দেন। বিক্রি করার পর এই বিষয়টাই তারে সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়ায় এবং একসময় ভদ্রলোক নিঃশেষ হয়ে যান।

বউ বিক্রি (১৮১২-১৪) বাই থমাস রোল্যান্ডসন
বউ বিক্রি (১৮১২-১৪) বাই থমাস রোল্যান্ডসন

হার্ডির লেখাতে যেমন বউ নিলামে বিক্রির বিষয় ছিল, এমন প্রথা চালু ছিল ইংল্যান্ডে। এই প্রথার উৎপত্তি ১৭ শতকের শেষের দিকে। ডিভোর্সের তরিকা তখন ছিল জটিল ও ব্যয়বহুল। খালি টাকাওয়ালাদের পক্ষেই সেই টাকা খরচ করে বিবাহ বিচ্ছেদে যাইবার সামর্থ্য ছিল। বিয়া করতেও টাকা, বিয়া বিচ্ছেদেও টাকা। মানুষ যাইবে কই? পয়সাহীনেরা তাই চালু করল বউ নিলামে বিক্রির পদ্বতি।

যখন বিবাহ টিকানো প্রায় অসম্ভব হইয়া উঠত তখন বউ বিক্রির ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্তে উপনীত হইতেন জামাই ভদ্রলোক।

গলায় দড়ি বাইন্ধা তারা বউরে লইয়া যাইত মার্কেটে। এই দড়ি বান্ধা আনুগত্যের সিম্বোলিক ছিল। বউয়ের আনুগত্যের প্রতীক কিংবা তিনি যে এই বস্তুটারে ওউন করেন সেটার প্রতীক। মার্কেটে লোক সমাগম হইত অনেক। নিলাম শুরু হইলে সবাই ঘিইরা ধরত এবং নানা মাত্রার দাম হাঁকাহাঁকি হইত। এক পর্যায়ে বউ বিক্রি হইয়া যাইত। বিক্রি হবার পর বিজয়ী ক্রেতার হাতে জামাই ভদ্রলোক তুলে দিতেন স্ত্রীয়ের গলায় বান্ধা দড়ি  খানা।

 

নিলাম ডাকা হত এভাবেঃ (১৮ শতকের পত্রিকা থেকে)

“To be sold for Five Shillings, my Wife, Jane Hebbard. She is stoutly built, stands firm on her posterns, and is sound wind and limb. She can sow and reap, hold a plough, and drive a team, and would answer any stout able man, that can hold a tight rein, for she is damned hard mouthed and headstrong; but if properly managed, would either lead or drive as tame as a rabbit. She now and then makes a false step. Her husband parts with her because she is too much for him. — Enquire of the Printer. N.B. All her body clothes will be given with her.”

 

আরেকটিঃ

“Gentlemen, I have to offer to your notice my wife . . . whom I mean to sell to the highest and fairest bidder. Gentlemen, it is her wish as well as mine to part for ever. She has been to me only a bosom serpent. I took her for my comfort, and the good of my house, but she became my tormentor, a domestic curse, a night invasion, and a daily devil . . . . Now I have shown you the dark side of my wife, and told you her faults and her failings; I will now introduce the bright and sunny side of her, and explain her qualifications and goodness. She can read novels and milk cows; she can laugh and weep with the same ease that you could take a glass of ale when thirsty . . . . She can make butter and scold the maid, she can sing Moore’s melodies, and plait her frills and caps; she cannot make rum, gin, or whisky; but she is a good judge of the quality from long experience tasting them. I therefore offer her with all her perfections and imperfections, for the sum of 50s.”

 

এইসব ক্ষেত্রে সেই বউ ভদ্রমহিলারও সম্মতি থাকত শোনা যায়। কারণ বিবাহ বিচ্ছেদ তারও কাম্য ছিল। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হইল একটা প্রোডাক্টের মত সেল হইতে সত্যিই কী সম্মতি থাকতো তাদের? মানে এখানে তো নিশ্চিত না কার হাতে গিয়ে পড়বে এবং সে কী কাজ করাতে বাধ্য করবে। তবে জানা যায় বিক্রিতে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা তার ছিল। সে বলতে পারতো আমি বিক্রি হবো না।

RW-1594-x350-Wife Selling
বউ বিক্রি

যাইহোক, বিক্রি হয়ে যাবার পর ক্রেতা বউ নিয়া চলে যাইত। মাঝে মাঝে ক্রেতা বিক্রেতা জামাইয়ের কাছ থেকে লিখিত নিত যে ভবিষ্যতে সে যেন তার সাবেক বউয়ের দিকে চোখ তুলে না তাকায়। অর্থাৎ পুনরায় অধিকার দাবী না করে। এইসব ক্রেতা কারা ছিল? স্বাভাবিকভাবেই যাদের জন্য সাধারণ বিয়া করা সহজ ছিল না। দেখতে অসুন্দর কিংবা বুড়ো লোক।  ধনী লোকেরাও কিনত। তারা সরাসরি আসত না। যেহেতু তাদের মান সম্মান আছে সোসাইটিতে। তাই পাঠাইত চ্যালাদের। এখানে আমি একটা বিষয়ের সাথে মিল পাইতেছি। অস্বস্তিকর বিষয় মনে হইতে পারে কারো কাছে। আমাদের সমাজে দেখা যায় আমেরিকা/লন্ডন থেকে আইসা কিছু বুড়া বুড়া লোক গরীব ঘরের কমবয়েসী মেয়ে বিয়ে করেন। এটা সাধারণত তার দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বা পঞ্চম বা ষষ্ট অথবা সপ্তম বিয়ে হয়। এরকম উদাহারন অনেক অনেক পাওয়া যাবে। এইগুলারে একরম বায়িং বলা যায়। কারণ সেই বুড়ালোকের পয়সা না থাকলে তিনি এই কমবয়েসী মেয়ে বিয়ে করতে পারতেন না। আমাদের সমাজের এইসব পয়সাওয়ালাদের মত সেই সমাজের কিছু পওসাওয়ালাদেরও একই মনোভাব ছিল দেখা যাইতেছে। নিলামে উঠা বউদের যেমন বিক্রিতে সম্মতি থাকত বলা হয়, তেমনি বুড়াদের সপ্তম বউ হওয়া কমবয়েসী মেয়েদেরও বিয়েতে সম্মতি থাকে। কিন্তু এই সম্মতি কে গ্লোরিফাই করা যাবে না, কারণ আমরা জানি সম্মতির পেছনের কারণটা অর্থনৈতিক।

১৯১৩ সালে শেষ বউ নিলামে বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। প্রথমে সতীদাহ প্রথার কথা বললাম এই কারণে যে সতীদাহ প্রথা যখন এই অঞ্চলে চালু ছিল তখন ইংল্যান্ডেও বউ বিক্রি চালু ছিল, এটা বলার জন্য। ‘সতীদাহের মত নিষ্ঠুর প্রথা না বউ বিক্রি’ এই প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে নিষ্ঠুরতার আপেক্ষিকতা তত্ত্বে আমরা না যাই। মানে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ এই আলোচনা করা এখানে অনর্থক। আমি সেই আলোচনার জন্য দুই প্রথারে একসাথে আনি নাই।

দুইটাই অসভ্য এক্ট বলে বিবেচীত হয় এখনকার সমাজে।

১৮২৯ সালে সতীদাহ রদের ৮৪ বছর পরও ইংল্যান্ডে নিলামে বউ বিক্রি চালু ছিল। আর এই এদের যারা কিনে নিত তারা তো আর বউ হিসেবে কিনে নিত না। প্রোডাক্ট হিসেবে কিনত।

আর সতীদাহের ব্যাপারটা ছিল রিলিজিয়াস একটা কাস্টম। আর বউ বিক্রির বিষয়টা সামাজিক কাস্টম যার উৎপত্তি আইনি প্রক্রিয়ায় ডিভোর্সের জটিলতা ও ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে। বউ বিক্রির প্রথাটা ইংল্যান্ডে ছিল প্রয়োজন। অর্থাৎ যার টাকা নাই(ওয়ার্কিং ক্লাস) এবং ডিভোর্স প্রয়োজন সে প্রায় একরকম বাধ্যই এই পদ্বতি গ্রহণ করতে। প্রাইভেট সেপারেশন কিংবা বউকে লাত্থি দিয়া ঘর থেকে বাইর কইরা দেয়াও প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেইগুলা তো স্থায়ী সমাধান দিতে পারে না। এছাড়া যেহেতু টাকাহীনদের প্রথা তাই বিক্রিতে কিছু টাকা পাওয়া যাইত, সুতরাং তারা এইটাই বেশি গ্রহণ করবে এটাই স্বাভাবিক।

এটা বলা যায় যে, মোগল পিরিয়ডে শাসকদের বিরোধীতার জন্য কিংবা ইংরেজদের কালে শিক্ষিত সমাজের একটা অংশের বিরোধীতার কারণে যখন সতীদাহ ম্রীয়মান ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে, তখন ইংল্যান্ডের ডিভোর্সপ্রত্যাশী গরীবদের মাঝে বউ বিক্রি ছিল একটা প্রয়োজনীয় প্রথা। আমরা দেখতে পাই আইনি যে প্রক্রিয়া ছিল ডিভোর্সের তাতে ১৫৭ বছরে মাত্র ৩৩৮ টা বিচ্ছেদ হইছিল। এই সংখ্যা দ্বারা একটা ধারণা পাওয়া যাবে বেশিরভাগ ডিভোর্সই হইত অন্য প্রক্রিয়ায়। কারণ ১৫৭ বছরে মাত্র ৩৩৮ টি বিচ্ছেদ হবার কথা না। অন্য পদ্বতিগুলোর মধ্যে বউ বিক্রি ছিল ওয়ার্কিং ক্লাসের মধ্যে প্রধান চয়েজ। গরীবদের বিষয় এবং কলোনিগুলোতে য়াধুনিক সভ্যতা (!) বিলানো ব্রিটিশদের কাহিনী তাই হয়ত বেশি ফোকাস পায় নাই। কারণ বিজিতরাই তো লেখে চিরকাল সভ্যতার ইতিহাস।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং