মুরাদুল ইসলাম » অনুবাদ » যা আপনি পছন্দ করেন তা অনুকরণ করুন – পল গ্রাহাম

যা আপনি পছন্দ করেন তা অনুকরণ করুন – পল গ্রাহাম

পল গ্রাহাম (নভে ১৩, ১৯৬৪) একজন ইংরাজ কম্পিউটার বিজ্ঞানী, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট এবং প্রাবন্ধিক। তিনি ভিয়াওয়েব এর কো-ফাউন্ডার, লিস্প এ তার কাজের জন্য বিখ্যাত এবং সিড ক্যাপিটাল ফার্ম ওয়াই কম্বিনেটরের কো-ফাউন্ডার।  এই লেখাটি তার Copy What You Like  লেখার বাংলা ভাবানুবাদ।

পল গ্রাহাম। ক্রেডিটঃ এলেক্স লেইউন। লিংক।
পল গ্রাহাম। ক্রেডিটঃ এলেক্স লেইউন। লিংক

স্কুলে থাকতে বাজে লেখকদের অনুকরণ করতে যাইয়া আমি অনেক টাইম নষ্ট করছি। ক্লাসে যেইগুলা পড়তাম, ফিকশন মূলত, সেইগুলাই আমার মনে হইত সেরা লেখা। এইটারে ধরা যাউক আমার পয়লা ভুল। যেই গল্পগুলায় দেখা যাইত মানুষেরা বিভিন্ন জটিল ভাবে ভুগতে আছে সেইগুলারে মনে হইত বেশী প্রশংসিত। যেইগুলা মজার বা আকর্ষনীয় সেইগুলা যদি দুর্বোধ্য এবং পুরানা শেক্সপিয়র বা সসারের না হইত তবে সেইগুলারে সন্দেহজনক মনে হইত। ভুল নাম্বার দুই এইটা। সেরা মাধ্যম মনে হইত ছোট গল্পরে। এইগুলা সাইজে ছিল ছোট। তাই স্কুলের ক্লাসে ব্যবহারের উপযুক্ত বেশী। আমরা তো অনেক পড়তাম এইগুলা। পড়তে পড়তে ভাবতাম যে ছোটগল্পের দুনিয়া যেন খালি বিকশিত হইতে আছে। এইটা ভুল নাম্বার তিন। এইগুলা যেহেতু ছোট ছিল, আসলে তাতে কিছুই ঘটত না। আগামাথাহীন জীবনের একটা টুকরা যেন। এইটারে আধুনিক বা উন্নত ধইরা নিছিলাম। ভুল নাম্বার চাইর। এর ফলে আমি অনেক ছোট গল্প লেখলাম। যেইগুলাতে আসলে কিছুই ঘটে না, খালি দুখী একজন থাকে আর মনে হইতে থাকে তার দুঃখের গভীরতা অনেক।

কলেজে বেশীরভাগই আমার আছিল দর্শন মেজর। জার্নালগুলাতে যেই পেপারগুলা প্রকাশ হইত তাতে আমি অভিভূত হইয়া ছিলাম। তারা কেমন সুন্দর টাইপ করা, আকর্ষনীয় উপস্থাপিত ইত্যাদি। আমি এইগুলা কখনো পুরাপুরি বুঝি না, তা পরে বুঝছিলাম। যখন আবার ভালো করে পড়তে লাগি। কিন্তু এর আগে আমি এইগুলা অনুকরন করার যথাসাধ্য চেষ্টা চালাইয়া গেলাম। এখন ভাবলে এইগুলারে ফালতু লাগে, কারণ সেইগুলার কোন বক্তব্য আছিল না। কোন দার্শনিকই অন্য দার্শনিকরে মিথ্যা বা ভুল প্রমান করেন নাই। কারণ কেউ মিথ্যা বা ভুল প্রমানের মত নির্দিষ্ট কইরা কিছু বইলা যান নাই। বলার আর অপেক্ষা রাখে না, আমার অনুকরণগুলারও কোন বক্তব্য আছিল না।

গ্র্যাড ইস্কুলে উইঠাও আমি ভুল জিনিশ অনুকরন কইরা যাইতে ছিলাম। তখন একটা ফুটানি মারা প্রোগ্রাম আছিল নাম এক্সপার্ট সিস্টেম। এর ভিত্রে আছিল ইনফারেন্স সিস্টেম নামে এক বস্তু। আমি দেখলাম এইগুলা ক্যামনে কি করে তারপর ভাবলাম হাজার লাইনের কোডে আমিই এইটা লেখতে পারি। তখন নামীদামী প্রফেসরেরা এইটা নিয়া বই লেখতেছিলেন এবং স্টার্ট আপ গুলা এইটা বিক্রি করতে ছিল। আমার মনে হইল এইটা তো দারুন সুযোগ আমার জন্য কারণ আমি এইটাতে অনেক শার্প নিশ্চয়ই। ভুল ছিল এইটা। এই পথটা ইন্টারেস্টিং কিছু করার মত ছিল না। যেসব কাস্টমারেরা টাকা দিয়া এইটা কিনতেছিল তারা ছিল সরকারের সেইসম সংগঠনের মত যারা হাজার ডলার ঢালে ইস্ক্রু ড্রাইভার বা টয়লেট সিটের জন্য।

আপনি কীভাবে ভুল জিনিস অনুকরন করা থেকে বাঁচবেন? অনুকরন করেন সেই জিনিশ যা আপনে সত্যি সত্যি লাইক করেন।  এই ধারণা ক্লাসে আমারে বাঁচাইতে পারত। ইংরাজি ক্লাসে পড়া ছোট গল্প পইড়া আমি মজা পাই নাই, দর্শনের পেপার গুলা পইড়া আমি কিছু শিখি নাই, এক্সপার্ট সিস্টেম আমি নিজের জন্য ব্যবহার করি নাই। আমি এই জিনিসগুলারে ভালো মনে করেছিলাম কারন এইগুলা প্রশংসিত ছিল।

এইটা কিন্তু কঠিন ব্যাপার কোন জিনিস আপনে সত্যি পছন্দ করেন আর কোন জিনিস দ্বারা আপনে ইম্প্রেস হইছেন তা আলাদা করা। একটা ট্রিক হইল প্রেজেন্টেশন এড়াইয়া চলা। আমি যখন যদুঘরের সুন্দরভাবে সাজানো কোন পেইন্টিং দেখি তখন নিজেরে জিজ্ঞাস করি এইটা ফ্রেম ট্রেম ছাড়া, ভাঙ্গা কোন গ্যারাজে পাইলে, যদি জানতাম না কে আঁকছে, তখন আমি কেমন দাম দিতাম? যাদুঘরে হাটতে হাটতে এই পরীক্ষা করলে আপনে দারুণ সব ফলাফল পাইতে থাকবেন। এই ডেটা বা তথ্যরে ইগনোর কইরেন না, ভিন্নরকম বইলা।

আপনে কি লাইক করেন তা জানার আরেক উপায় হইল দেখা কোন জিনিস আপনারে গিলটি প্লেজার দেয়। ইয়াং এবং উচ্চাকাঙ্খী থাকার কালে মানুষ অনেক জিনিস লাইক করে, সেইসব লাইক করা একটা গুণ হিসেবে মনে কইরা।  ৯৯ ভাগ মানুষ ইউলেসিস পড়তে পড়তে ভাবে, “আমি ইউলেসিস পড়তেছি।”

গিলটি প্লেজার আর যাইহোক কৃত্রিম না, আসল জিনিস।  যখন আপনে নিজেরে গুনে গুনান্বিত না ভাবতে চাইবেন তখন কি পড়বেন?  কি ধরনের বই পইড়া অর্ধেক শেষ হইলে আপনার মনে হয় না, ‘দারুন হইল, শেষ পর্যন্ত অর্ধেক পইড়া ফেলছি’; বরং আপনার খারাপ লাগে মাত্র অর্ধেক বাকী আছে বইলা? এইটাই আপনে লাইক করেন।

যখন আপনে নিজের সত্যিকার পছন্দের জিনিস পান অনুকরণ করার যোগ্য, তখনো একটা চোরাবালি রইয়া যায়। যা থেকে আপনার বাইচা থাকতে হবে। অনুকরণ করার সময় বস্তুর ভালোগুলা অনুকরন কইরেন, দোষগুলা নয়। দোষ সহজে দেখা যায় এবং অনুকরণ করা সহজ। আঠার উনিশ শতকের পেইন্টারেরা বাদামী রঙ ব্যবহার করত রেনেসার মহান সব পেইন্টারদের অনুকরণে। আসলে রেনেসার ঐসব পেইন্টিং এ ময়লা জইমা বাদামী রঙ হইছিল। পরে এইসব পেইন্টিং পরিষ্কার করা, ভিত্রের দারুন রঙ বাইর হইয়া আসে। কিন্তু অনুকরণকারীদের ছবির রঙগুলা বাদামী রইয়া যায়।

ভুল জিনিস অনুকরণ করা থেকে আমারে বাঁচাইছে পেইন্টিং। গ্র্যাড ইস্কুলের মাঝামাঝি টাইমে আমার মনে হইল পেইন্টার হমু। কিন্তু আর্টের দুনিয়া এত ব্যাপকভাবে দূষিত যে আমার বিশ্বাসপ্রবণতার শেষ বিন্দুও শুকাইয়া যায়। এই লোকগুলা দর্শনের শিক্ষকদের নীতিপরায়ণ গণিতবিদের মত বানাইয়া দিল। এইটা স্পষ্ট একটা সিদ্ধান্ত ছিল, হয় ভালো কাজ করা নয়তো ভিতরের একজন হইয়া পার্থক্যগুলা দেখা। সব ফিল্ডেই এইটা কমবেশী আছে। কিন্তু এরপর থেকে আমি তা এড়াইয়া থাকতে শিখলাম।

এইটাই অন্যতম এক মূল্যবান জিনিস যা আমি পেইন্টিং থেকে শিখছিঃ আপনারে বাইর করতে হবে আপনার জন্য কোনটা ভালো। অথরিটিরে আপনে বিশ্বাস করতে পারবেন না। তারা এই ক্ষেত্রে আপনার লগে মিথ্যা বলবে।

 

 

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং