মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » শত্রুরে বন্ধুতে পরিণত করার বেন ফ্রাংকলিনীয় নিয়ম

শত্রুরে বন্ধুতে পরিণত করার বেন ফ্রাংকলিনীয় নিয়ম

কে আর শত্রু চায় ? সবাই তো চায় তারে লোকে লাইক করুক। অন্যের কাছে নিজেরে লাইক করানোর জন্য মানুষের কত চেষ্টা, এই নিয়া কত বই লেখা হইল, বিরাট এক বাণিজ্য। লাইকের প্রেক্ষাপটে জো গিরার্ডের কথা বলা যায়। গিনেস বুকের রেকর্ড অনুযায়ী দুনিয়ার সবচেয়ে সফল সেলসম্যান জো গিরার্ড। মুড়ির মতো কার সেল করতে পারতেন । ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ১৩০০১ টি কার তিনি বিক্রি করেছিলেন! তার নীতিটা ছিল, মানুষ তার সাথেই বিজনেস করতে চায় যাকে সে পছন্দ করে। গিরার্ড বিভিন্ন হলিডেতে তার কাস্টমারদের কার্ড পাঠাইতেন “আই লাইক ইউ”। তার সাফল্যের কারন জানাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, “লোকেরা লাইক করে এমন কারো সাথে ফেয়ার ডিল করতে লাইক করে।”

যদিও ফোর্টি এইট ল’জ অব পাওয়ার বা ক্ষমতার ৪৮ সূত্র বইয়ের দ্বিতীয় নিয়মে লেখক রবার্ট গ্রীন বলেছেন শত্রু না থাকলে শত্রু বানান। শত্রু থাকা নিজের উন্নতির জন্য ভালো এবং শত্রুরে দিয়া আপনি অনেক কাজ করাইতে পারবেন যা বন্ধু কখনো করবে না। কারণ বন্ধুর আপনার কাছে প্রমাণ করার কিছু নাই, শত্রুর আছে।

চীনে জাতীয়তাবাদী এবং মাওয়িস্ট বামদের মধ্যে বিরোধ ছিল। এর মাঝে ১৯৩৭ সালে জাপান চীন আক্রমণ করে বসল। মাওবাদী নেতারা চেয়ারম্যান মাওকে বললেন, “আমরা এবার আত্মগোপনে যাই। আর জাতীয়তাবাদীরা জাপানের হাতে মার খেয়ে শেষ হোক।”

মাও বললেন, “না। আমরা জাপানের সাথে যুদ্ধ করব। এখন যদি আমরা আত্মগোপনে যাই তাহলে আমাদের শক্তি ভেঙে পড়বে। জাপান এতবড় চীনকে বেশীদিন অধিকার করে রাখতে পারবে না। ফলে যখন তারা চলে যাবে তখন জাতীয়তাবাদীদের সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের থাকবে না।”

মাও ঠিক ছিলেন। জাপানের সাথে যুদ্ধ করতে করতে কম্যুনিস্টরা আরো শক্তিশালী হয়। দীর্ঘদিন বিরাট চীন অধিকার করে রাখা জাপানের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই জাপান চীন ছেড়ে যখন চলে যায় তখন মাওবাদী কম্যুনিস্টদের চীনের ক্ষমতা দখল করতে সুবিধা হয়েছিল।

এর কয়েক বছর পরে জাপানিজ এক নেতা চীন ভ্রমণে এসে জাপানের চীন আগ্রাসনের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন।

মাও তখন হেসে বলেছিলেন, “আমাদের কি আপনাদের উপর কৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয়? যোগ্য শত্রু ছাড়া কোন মানুষ বা দল বেড়ে উঠতে পারে না।”

যোগ্য শত্রু ছাড়া কোন মানুষ বা দল বেড়ে উঠতে পারে না। Click To Tweet
বেনজামিন ফ্রাংকলিন
                     ছবি- বেনজামিন ফ্রাংকলিন

শত্রুর যদিও প্রয়োজন আছে তবুও স্বাভাবিকভাবে লোকে চায় তারে অন্য লোকে লাইক করুক।এবং শত্রুরে দিয়ে কাজ করাতে হলেও তাকে বন্ধু বানাতে হবে। এই ব্যাপারে বেনজামিন ফ্রাংকলিনের এক নিজস্ব পদ্বতি আছে। বেন ফ্রাংকলিন আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদারদের একজন। একজন রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা, চিন্তক; এককথায় প্রসিদ্ধ একজন পলিম্যাথ ছিলেন। একবার তার এক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্ধী তার লাইফ দুর্বিসহ করে দিচ্ছিল। তিনি চিন্তা করে দেখলেন একে বন্ধু বানাতে হবে, তাহলে অনেক কাজ তাকে দিয়ে করানো যাবে।

তিনি সেই প্রতিদ্বন্ধীর কাছ থেকে একটা বই ধার করলেন। কয়েকদিন পরে বইটা পড়ে একটা ধন্যবাদ নোটসহ ফেরত দিলেন। এরপর লোকটা তার বন্ধু হয়ে গেল।

বইয়ের ম্যাজিক? অবশ্যই না। এটাকে সাইকোলজিক্যালী বলে কগনিটিভ ডিসোন্যান্স। একজন মানুষ কাউকে একইসাথে ডিজলাইক এবং তার কোন উপকার করতে পারে না। বই ধার দেয়া মানে একটা উপকার করা। লোকটা যখন বেন ফ্রাংকলিনকে বই দিতে গেল তখন দুইটা জিনিস তার ভেতর কাজ করল।

এক- সে বেনকে অপছন্দ করে।

দুই- বেন তার কাছে বই চেয়েছেন। বইটা সে দিবে।

এই বই ধার দেয়ার মাধ্যমে সে যে বেনকে অপছন্দ করত তা দূর্বল হয়ে পড়ল। মানুষ এইরকম দুইটা বিপরীতধর্মী ভাব একইসাথে রাখতে পারে না।

তাই বেনজামিন ফ্রাংকলিনের পদ্বতিটা হলো, আপনি যদি চান লোকে আপনারে পছন্দ করুক, তাইলে তাদের কাছে ফেভার চান।

আপনি যদি চান লোকে আপনারে পছন্দ করুক, তাইলে তাদের কাছে ফেভার চান। Click To Tweet

🙂

 

আমি আপনাদের কাছে এখন একটা ফেভার চাই তাহলে, এই পোস্ট ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদিতে শেয়ার করে দিন।

1 thought on “শত্রুরে বন্ধুতে পরিণত করার বেন ফ্রাংকলিনীয় নিয়ম”

  1. Pingback: শত্রুর&#250...

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং