মুরাদুল ইসলাম » ফিল্ম » শিশু হত্যার এই উৎসবের কালে ‘হু ক্যান কিল এ চাইল্ড?’

শিশু হত্যার এই উৎসবের কালে ‘হু ক্যান কিল এ চাইল্ড?’

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত সাত মাসে অর্থাৎ এই ২০১৫ সালের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশে মোট শিশু হত্যা হয়েছে ৬৯ টি। সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা এবং তাকে নির্যাতনের ভিডিও নিয়ে সারাদেশে অনেক প্রতিবাদ হয়েছে। বলা যায় দেশবাসী অবাক হয়েছেন এর নৃশংসতায়। ভিডিওর কারণেই মূলত। ভিডিও না হলে শিশু হত্যার খবর কে রাখে?

আসকের পরিসংখ্যান মতে ২০১২ তে ১২৬, ২০১৩ তে ১২৮, ২০১৪ তে ১২৭ টি শিশু হত্যা হয়েছে এ দেশে। এগুলো গণমাধ্যমে তেমন আসে নি। রাজন হত্যার ভিডিওর পরপরই বিষয়টি গণমাধ্যমে গুরুত্ব পেতে শুরু করে। জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত নৃশংস শিশু হত্যা হয়েছে ১৩ টি। ভয়াবহ এক অবস্থা।

আসকের এই পরিসংখ্যানের খবর প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ০৬ আগষ্ট, ২০১৫ তারিখে।

বিশেষজ্ঞরা এসব হত্যার বিভিন্ন কারণের কথা বলছেন। রাজন হত্যা পরবর্তী সময়ে আমি একটি স্ট্যাটাস লিখেছিলাম ফেসবুকে যা এখানে তুলে ধরছি, প্রাসঙ্গিক বিধায়ঃ

আবু গারিব কারাগারের বন্দি নির্যাতনের চিত্র হয়ত দেখেছেন আপনি। একসময় তা হইছিল পপুলার নিউজ আইটেম। দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায়, …

Posted by Muradul Islam on Monday, July 13, 2015

স্ট্যাটাসে যে এক্সপেরিমেন্টের কথা আছে তার ওয়েবসাইট এর লিংক। এবং যে মুভি দুইটার কথা বলা আছে সেগুলো হল জার্মান “দাস এক্সপেরিমেন্ট(২০০১)”, আর আমেরিকান থ্রিলার “দ্য স্ট্যানফোর্ড প্রিজন এক্সপেরিমেন্ট (২০১৫)“।

মানুষের অন্য মানুষকে নির্যাতন করার যে প্রবণতা তা কিছুটা হলেও বুঝা যায় উপরের এক্সপেরিমেন্ট হতে। তবে যে মুভিটার কথা বলতে এই লেখা শুরু তা কিন্তু এই এক্সপেরিমেন্ট বা তার সম্পর্কিত ফিল্মগুলো নয়। শিশু হত্যা এবং শিশুদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ১৯৭৬ সালের স্প্যানিশ ফিল্ম হু ক্যান কিল এ চাইল্ড নিয়ে লেখাই মূল উদ্দেশ্য।

 

  “স্প য় লা র  আ ছে”

 

পোস্টার
পোস্টার

ফিল্মটির মূল স্প্যানিশ নাম আমি উচ্চারণ করতে পারি না বিধায় আর উল্লেখ করলাম না। হরর ক্যাটাগরিতে ফিল্মটাকে ফেলা যায়। এর শুরুতে দেখা যায় বিভিন্ন যুদ্ধের প্রভাব শিশুদের উপর কত নিষ্ঠুরভাবে পড়ছে তা নিয়ে ডকুমেন্টারীর বিভিন্ন ক্লিপ। আর একটা অদ্ভুত গানের সুর। যে সুর পুরো মুভিতেই থাকে। ভৌতিক ভৌতিক কিন্তু মায়াবী একটা সুর। পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে বা হচ্ছে তার সবচেয়ে মারাত্মক ভোক্তভোগী হচ্ছে শিশুরা। এই মেসেজই ডকুমেন্টারী গুলোর মাধ্যমে দেখানো হয় সরাসরি। এর ব্যাপ্তী বেশি না। পাঁচ দশ মিনিট।

তারপর মূল গল্প শুরু হয়। ইংরেজ এক কাপল ছুটি কাটাতে যায় একটা দ্বীপে। ভদ্রমহিলা প্রেগন্যান্ট, তার তৃতীয় বাচ্চা পেটে। দ্বীপে যাবার পর তারা লক্ষ করে যে দ্বীপটা খুব নিরব। কয়েকটা শিশুর সাথে তাদের দেখা হয়। আর কোন মানুষজনের দেখা মিলে না। একসময় তারা আবিষ্কার করে শিশুগুলো আসলে এক ধরনের সাইকো। এরা নির্মমভাবে মানুষদের হত্যা করে খেলায় মাতে। এভাবে দ্বীপের সব মানুষ খুন হয়ে গেছে।

দেখা যায় শিশুরা অন্য শিশুদের দিকে তাকিয়ে তাদেরও সাইকো বানিয়ে ফেলে।

who-can-kill-a-child

ভদ্রমহিলার পেটের সন্তানকেও তারা নিয়ে নেয় তাদের দলে। ফলে মায়ের পেটেই সে তার ক্রিয়া শুরু করে এবং খুন করে মাকে। দ্বীপে তখন একমাত্র জীবিত থাকেন সেই ভদ্রলোক এবং সেই সাইকো শিশুরা।

তারা তাকে তাড়া করে। সে পালিয়ে যেতে শিশুদের আঘাত করতে থাকে বাঁচার জন্য। ওদিকে দ্বীপের বাইরে থেকে পুলিশ আসে। তারা কোনভাবে জানতে পেরেছিল এখানে খারাপ কিছু হচ্ছে। তা না হলে পর্যটকেরা যোগাযোগ করছে না কেন।

পুলিশেরা যখন আসে তখন তারা দেখতে পায় শিশুদের আঘাত করে যাচ্ছেন ভদ্রলোক। তারা কয়েকবার ওয়ার্নিং দেয় এবং শেষ পর্যন্ত লোকটাকেই সাইকো ভেবে গুলি করে বসে। লোকটা মারা যায়।

কোমলমতি শিশুদের বাঁচাতে পেরে পুলিশেরা খুশি হয়। তারা দ্বীপের মধ্যে বের হয়। এইসময় শিশুরা দখল করে নেয় তাদের ইঞ্জিন চালিত নৌযান এবং তাতে রাখা সব অস্ত্র। সাইকো শিশুরা পুলিশদের গুলি করে মারে এবং নৌযান দিয়ে যাত্রা শুরু করে মূল ভূমির দিকে। যেখানে তথাকথিত সভ্য আধুনিক মানুষদের বসবাস।

তখন তাদের কথোপকথনঃ

“Do you think the other children will start playing the way we do?”

“Oh, yes…there are lots of children in the world. Lots of them.”

এখানেই ফিল্মের সমাপ্তি। এই শিশুরা মূল ভূমিতে যাবে। অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে সভ্য আধুনিক মানুষদের উপর। অন্য শিশুদের সম্মোহিত করে নিয়ে নেবে নিজেদের দলে। এবং শুরু হবে সব শিশুদের নৃশংস প্রতিশোধ। এই প্রতিশোধ যুদ্ধের বিরুদ্ধে, তাদের বিরুদ্ধে করা সভ্য ও আধুনিক মানুষদের দীর্ঘকালের অন্যায়সমূহের প্রতিবাদ।

এই গল্পের লেখক আসলে গল্পের আকারে এক প্রতিবাদ করেছেন। আবহমান কাল ধরে শিশুদের প্রতি মানুষদের করে আসা অন্যায়ের প্রতিবাদ। তিনি এক আশংকা করেছেন। এই অসুস্থ পৃথিবীতে শিশুরাও যদি এরকম অসুস্থ হয়ে যায় এই আশংকা।

মুভি দেখতে গিয়ে অবশ্যই নায়ক ভদ্রলোক এবং তার স্ত্রীয়ের প্রতি দর্শকের পক্ষপাত থাকবে। কারণ দ্বীপের শিশুরা তো ভয়ংকর। কিন্তু ফিল্মের আগে যেসব ম্যাসেজ দেয়া আছে তার নিরিখে শিশুদের এই আচরণের একটা জাস্টিফিকেশনও তৈরী হয়। যদিও এটা রূপক। এর মূল উদ্দেশ্য যাতে মুভিটি দেখে মানুষ বুঝতে পারে শিশুদের কথা ভেবে হলেও যুদ্ধ বন্ধ করা হোক। শিশুদের প্রতি অন্যায় বন্ধ করা হোক।

 

 

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং