মুরাদুল ইসলাম » বই রিভিউ » বড়’রা যেভাবে নতুন ভাষা শিখতে পারেন

বড়’রা যেভাবে নতুন ভাষা শিখতে পারেন

ভাষা একটি চমৎকার জিনিস। বলা যায়, পৃথিবীতে তিন প্রজাতির শিম্পাঞ্জি আছে। এর মধ্যে দুই প্রজাতি ভাষা আবিষ্কার করতে পারে নি। তাই তারা পরস্পরের সাথে সহযোগীতামূলক সম্পর্ক বাড়াতে সক্ষম হয় নি। এক প্রজাতির শিম্পাঞ্জি, হোমো স্যাপিয়েন্স ভাষা আবিষ্কার করতে পেরেছিল। তাদের পরস্পরের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই ভাষার ভূমিকা সর্বাধিক। এর জন্যই তারা অন্য প্রাণীদের ছাড়িয়ে জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে।

মানুষ মানুষই। সে শিম্পাঞ্জি নয়। তবে প্রজাতিগত ভাবে মানুষের নিকঠাত্মীয় শিম্পাঞ্জি। জ্যারেড ডায়মন্ড এর ধারণা, ভাষাই মানুষের উন্নতির কারণ। তার দ্বারা প্রভাবিত ইয়্যুবাল নোয়াহ হারারি লিখেছেন সেপিয়েন্সঃ এ ব্রিফ হিস্টরী অব হিউম্যানকাইন্ড।

একসময় মানুষেরা শিকারী ছিল। শিকারী হিসেবে তারা যে খুব ভালো ছিল এমন না। ফিল্মে যেমন দুধর্ষ শিকারী দেখানো হয় জঙ্গলে থাকা লোকদের তেমন নয়। এই মানুষেরা ফলমূল এবং প্রাণী শিকারের মাধ্যমে নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটাত। তারা ছোট ছোট দল একসাথে হয়ে থাকত। তাই সামান্য দূরত্ব পরপরই ভাষা বদলে যেত। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের সাথে মিশত না। তারা নিজেদের ভাষার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করত।

একসময় কৃষিভিত্তিক সমাজের শুরু হলো। কৃষিভিত্তিক সমাজে চাষবাসের ফলে খাদ্য উৎপাদন বাড়ল। জনসংখ্যাও তখন বাড়তে লাগল। যারা কৃষিভিত্তিক সমাজে যোগ দিল না, তারা কৃষিভিত্তিক সমাজে যোগদানকারী বড় দলের সাথে পেড়ে উঠল না। ঐ বড় দল তাদের বিতারিত করল, হত্যা করল। তাদের ভাষাও বিলুপ্ত হলো। ভাষা কমতে লাগল। এখন আস্তে আস্তে, এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, পৃথিবীতে হাতে গোনা কয়েকটি ভাষা রাজত্ব করছে। বাকীরা বিলীন হয়ে গেছে, যাচ্ছে।

এইসব ভাষা বিলুপ্ত হলে কী হবে? মানুষের বিচিত্র অনুভূতি ও তার প্রকাশের অনেক কিছুই মানব জাতির অজানা থেকে যাবে। অসাধারন লেখক ও বিজ্ঞানী জ্যারেড ডায়মন্ড চমৎকারভাবে এসব তুলে ধরেছেন তার বই থার্ড শিম্পাঞ্জিতে। এই লেখার বিষয়বস্তু বড়দের ভাষা শেখা, তাই ভাষা সম্পর্কিত এই ইতিহাস সামনে আনতে হলো। কারণ আমি দেখেছি ভাষা নিয়ে অনেক অনেক মানুষ অজ্ঞ ও খুবই সংকীর্ন চিন্তাধারী। মানবজাতির যে বিভিন্ন ভাষা থাকবে, নানা ধরনের ভাষা সম্মিলন, ভাব ও অনুভূতির মিশ্রণ হবে; এ তারা মানতে নারাজ।

রিচার্ড রবার্ট এবং রজার ক্রুজ দুজন কগনিটিভ সাইন্টিস্ট। কগনিটিভ সাইন্স হলো জ্ঞানের একটি শাখা যেখানে মানুষের মস্তিষ্ক বা চিন্তা কীভাবে কাজ করে তা বুঝার জন্য জ্ঞানের নানা শাখা ব্যবহার করা হয়। যেমন, নিউরোসাইন্স, সাইকোলজি, লিঙ্গুইস্টিক্স ইত্যাদি। এই দু’জন বিজ্ঞানী একটি বই লিখেছেন, কীভাবে বড়’রা কোন ভাষায় ফ্লুয়েন্ট হতে পারেন এ নিয়ে। তারা কগনিটিভ সাইন্সের বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল তাতে ব্যবহার করেছেন।

Becoming Fluent: How Cognitive Science Can Help Adults Learn a Foreign Language - Richard M. Roberts and Roger J. Kreuz

আমরা সাধারণত একটা ভাষা খুব ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারি। যেটা আমাদের ন্যাটিভ ভাষা বা মাতৃভাষা। এই ভাষা আমরা শিশুকাল থেকে বড় হতে হতে শিখি। ফলে, আমাদের মনে এইরকম একটি ধারণা থাকে যে যেকোন ভাষাই এই পদ্বতিতে শিখতে হবে, ভালোভাবে শিখতে হলে। কিন্তু রবার্ট ও ক্রুজ এই ধারনার বিপরীতে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তারা বিভিন্ন গবেষনার ফলাফল তুলে ধরে তাদের বক্তব্য শক্ত করার চেষ্টা করেছেন।

বড়’রা ভাষা শিখতে হলে ছোট’রা যেভাবে শিখে সেভাবে শিখতে হবে। বড়’দের নতুন ভাষা শিখতে ছোটদের চাইতে বেশী কষ্ট করতে হয়। বড়’রা ভাষা শেখার কালে নিজের মাতৃভাষা যেন ব্যবহার না করেন। – বড়’দের নতুন ভাষা শেখার ক্ষেত্রে এই তিন মিথ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন রবার্ট ও ক্রুজ।

ভাষা শেখার ক্ষেত্রে বড়’রা বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন। যেমন, একটি ভাষার উপর তাদের দখল আছে। ফলে অন্য একটি ভাষা তার পক্ষে শেখা অনেকটা সহজ। ছোটদের এই সুবিধা থাকে না।

বড়’দের চিন্তা করার ক্ষমতা জন্ম নিয়েছে। ফলে তারা তা ব্যবহার করতে পারেন। তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করতে পারেন। পরিকল্পণা করে এগুতে পারেন।

তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের সাথে নতুন ভাষার শব্দের যোগসূত্র তৈরী করে তা সহজে মনে রাখতে পারেন।

ইত্যাদি নানা সুবিধা তারা পান নতুন ভাষা শেখার ক্ষেত্রে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের ভুল ধারণা থাকার জন্য তারা এসব সুবিধা ব্যবহার করেন না। তিনটি বিষয় আমি এই বইয়ে পেয়েছি যা ভাষা শেখা ছাড়াও অন্য কোন কাজ করার ক্ষেত্রেও মনে রাখা দরকার। এগুলো হলোঃ

১। সেলফ এফিক্যাসি – কোন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারার যে বিশ্বাস তাকে বলে সেলফ এফিক্যাসি। ধরা যাক, কেউ একজন ছোটবেলায় একটা ভাষা শেখার চেষ্টা করেছিলেন। তখন তার শিক্ষক তার উচ্চারন নিয়ে হাসাহাসি করেছিলেন। এতে তার মনে ধারণা হতে পারে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে তিনি দূর্বল। এই নিম্ন সেলফ এফিক্যাসির কারণে ভবিষ্যতে অন্য নতুন ভাষা শিখতে গেলে তিনি আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগবেন। এই আত্মবিশ্বাসের অভাব তার প্রধান বাঁধা হয়ে উঠবে।

অনেকদিন আগে একজন বড় মাঠে, অনেক দর্শকের সামনে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ভালো পারফর্ম করতে পারেন নি। এ থেকে তার মনে ধারণা জন্মাতে পারে বড় মাঠে তিনি খেলতে পারেন না। অথবা অনেক মানুষের সামনে তিনি পারফর্ম করতে পারেন না। এর জন্য অনেকদিন পরে অনেক মানুষের সামনে কোন বক্তৃতা দিতে গিয়েও তিনি নিম্ন সেলফ এফিক্যাসিতে ভুগতে পারেন।

সেলফ এফিক্যাসি আর সেলফ ইস্টিম এক নয়। সেলস ইস্টিম নিজের সম্পর্কে আপনার অভারল মূল্যায়ন। আপনার সেলফ ইস্টিম ভালো হলেও কোন কোন কাজের ক্ষেত্রে নিম্ন সেলফ এফিক্যাসি থাকতে পারে। সেলফ এফিক্যাসি দূর করার উপায় সরাসরি কাজে লেগে যাওয়া। ঐ কাজের মধ্যে, আপনি যদি মনে করেন কোন একটি ক্ষেত্রে আপনি ভালো, তাহলে সেটা করা শুরু করুন। ধরা যাক, শব্দ মনে রাখায় ভালো আপনি। তাহলে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে তা দিয়েই শুরু করা ভাল। এটি আপনার এফিক্যাসির উন্নয়ন ঘটাবে।

২। সেলফ হ্যান্ডিক্যাপিং – মানুষ কখনো চায় না নিজের কাছে তার সম্মান ধ্বংস হয়ে যাক। এই সম্মান বাঁচানোর জন্য সে বাহ্যত নিজের ক্ষতিও করতে পারে।

মার্টিনা নাভ্রাতিলভা একজন বিশ্বখ্যাত টেনিস প্লেয়ার। টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে অভিহিত করেছিল ১৯৯৬ থেকে ২০০৫ এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট মহিলা টেনিস প্লেয়ার। ৩৩২ সপ্তাহ তিনি টেনিস প্লেয়ার হিসেবে তিনি এক নাম্বারে ছিলেন, ২৩৭ সপ্তাহ ছিলেন ডাবলে। দুইটাই বিশ্বরেকর্ড, আর কেউ করতে পারেন নি। তার অর্জনের তালিকা অনেক দীর্ঘ।

১৯৮৭ সালের ফ্রেঞ্চ অপেনে ত্রিশোর্ধ্ব নাভ্রাতিলভা হেরে গেলেন আঠারো বছরের একজন খেলোয়াড়ের, স্টেফি গ্রাফের কাছে। একইবছর ষোল বছরের আরেক খেলোয়াড়ের সাথে হারেন ইতালিয়ান অপেনে।

নাভ্রাতিলভা পরবর্তীতে সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ভয় পেয়েছিলেন এই ইয়াং প্লেয়ারদের সাথে তিনি পেরে উঠবেন না। হয়ত তিনি হেরে যাবেন এদের সাথে। এই কারণে তিনি তার সেরাটা দেন নি। কারণ তার সেরাটা দিয়ে যদি হেরে যান তাহলে নিজের কাছে তার যে সম্মান আছে তা ধুলায় মিশে যাবে!

নাভ্রাতিলভা, এত বড় সেরা খেলোয়াড়, নিজের সেরাটা দেন নি; যাতে হেরে গেলেও নিজের প্রতি নিজের সম্মানটা থাকে; যাতে তিনি নিজেকে বলতে পারেন, ‘আমি তো সেরাটা দেই নি।’ তার এই সেরাটা না দেয়া সেলফ হ্যান্ডিক্যাপিং।

কোন ছাত্র আছে হয়ত পড়ালেখায় ভালো এটা সে মনে করে, দেখা যায় না পড়ে পরীক্ষা দেয়। যাতে ভালো ফলাফল হলে বলতে পারে আমি না পড়ে ভালো ফলাফল করতে পারি। তাতে তার নিজের ইগো আরো বাড়ে। আর খারাপ হলে বলতে পারে, আমি তো পড়িই নি। যাতে তার ইগো সমুন্নত থাকে। এইভাবে সে নিজেরে আবদ্ধ করে রাখে। এটা তার সেলফ হ্যান্ডিক্যাপিং।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় মানুষেরাই সেলফ হ্যান্ডিক্যাপিং এর মাধ্যমে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখেন। একটা বিভ্রান্তিতে অবস্থান করেন শুধুমাত্র নিজের কাছে নিজের সম্মান হারিয়ে যাবে এই ভয়ে। স্বভাবগত ভাবে মানুষ লস এভার্স। অর্থাৎ, কোন কিছু হারাতে সে ভয় পায়। গেইন তথা অর্জনের চাইতে হারানো তাকে বেশী ব্যথিত করে। হারানোর ভয় তাঁকে বেশী সন্ত্রস্ত করে।

৩। প্ল্যানিং ফ্যালাসিঃ যখন কেউ পরিকল্পণা করে তখন সে সব কিছু পজিটিভলী ধরে নেয়। ধরে নেয় সব কিছু তার পক্ষে থাকবে। তাই সে দেখা যায় তুলনামূলক কম সময় বা বাজেট রাখে পরিকল্পণায়। কিন্তু বাস্তবে সব কিছু পজিটিভলী হয় না। আপনি হয়ত ইংরেজি ভাষা পরীক্ষা আইএলটিএস দিবেন ঠিক করলেন। প্রস্তুতির জন্য বরাদ্দ করলেন এক সপ্তাহ সময়। রেজিস্ট্রেশন করলেন এক সপ্তাহ আগে। তখন পরীক্ষা কেমন হয় তা বুঝার জন্য বসার সাথে সাথেই যেকোন একটা খারাপ ঘটনা ঘটে যেতে পারে আপনার সাথে। তার সাথে যুঝতে চলে যেতে পারে ছয়দিন। পরিকল্পণায় মানুষ অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ভুল করে। একে বলে প্ল্যানিং ফ্যালাসি।

পরিকল্পনায় অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে এই ভুল করার সাথে প্রায় সব মানুষই হয়ত পরিচিত। এক্ষেত্রে, নিজের পরিকল্পণা বাস্তবায়নে কী কী জিনিস প্রতিকূলে যেতে পারে তাও বিবেচনায় নিতে হবে গুরুত্বের সাথে। সম্পূর্ন নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পরিকল্পণাটি এবং তার বাস্তবায়নের পথকে দেখতে হবে।

 

অনেকে মনে করেন ছোটরা যেমন ভাষা শেখার ক্ষেত্রে প্রথমে শিখে বলতে, তারপরে শিখে লিখতে; এরকম বড়দেরও করা উচিত। এভাবে অনেকে চেষ্টাও করে থাকেন। কিন্তু রবার্ট ও ক্রুজ এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অনেক ভাষার ক্ষেত্রে লিখিত রূপ আর উচ্চারন রূপের “এক = এক” মিল নেই। উচ্চারন হচ্ছে ফোনিম, লেখার রূপ গ্রাফিম। ইংরেজি ভাষায় ফোনিম আছে ৪৪ টা। অন্যদিকে ল্যাটিন বর্নমালা, যা দিয়ে ইংরেজি ভাষা লেখা হয় সেগুলো ২৬ টা। ফলে কোন কোন বর্নকে ভিন্ন ভিন্ন উচ্চারনের কাজে লাগতে হয়। অন্য ভাষাদের অনেকগুলো বর্নের উপরে নিচে চিহ্ন ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন উচ্চারন নির্দেশ করে। ইংরেজি তা করে না।

ইংরেজিতে একটি শব্দ আছে ফিশ। এফ আই এস এইচ। (FISH)

এই শব্দ “জি এইচ ও টি আই” দিয়ে ফিশ উচ্চারন লেখা যায়। (GHOTI)

এখানে জিএইচ (GH) এর উচ্চারন এফ। ( যেমন এনাফ (ENOUGH) শব্দে জিএইচ এর উচ্চারন এফ।)

অ (O) এর উচ্চারন আই। (যেমন উইমেন (WOMAN) শব্দে অ এর উচ্চারন আই।)

টি আই (TI) এর উচ্চারন শ। (যেমন ন্যাশন (NATION) শব্দে টি আই এর উচ্চারন শ।)

 

বড়দের ভাষা শেখার ক্ষেত্রে রবার্ট ও ক্রুজও যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে আছেঃ

 

১। স্লো এন্ড স্টেডি। ধীরে এগুতে হবে এবং নিয়মিত।

২। ছোট ছোট কার্যকরী লক্ষ্য স্থির করতে হবে। যদি চাইনিজ বা আরবী ভাষায় এক বছরে ফ্লুয়েন্ট হবার লক্ষ্য কেউ নির্ধারন করেন তা হবে খুবই বিরাট লক্ষ্য। যাতে পৌছানো অসম্ভব হবে নতুন ভাষা শিখতে আসা কারো জন্য।

৩। অল্প অল্প সময়ে ভাগ করে ভাষার বিভিন্ন জিনিস নিয়ে পড়তে হবে। ১৫ মিনিট করে ভাগ করে। ১৫ মিনিট শব্দ শিখলেন, পনের মিনিট গ্রামার; এরকম।

৪। যে ভাষা শিখতে চান সেই ভাষার কোন লোককে বন্ধু বানাতে পারেন। ভাষাবন্ধু। এডমন্ড হিলারী একা এভারেস্টে উঠেন নি। সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন ন্যাটিভ তেনজিং নোরগে’কে। একপর্যায়ে নোরগে এডমন্ড হিলারী’র জীবনও বাঁচিয়ে ছিলেন। এইভাবে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে ঐ ভাষার কোন বন্ধু অনেক কাজে আসতে পারে।

৫। নিজের ব্যবহার্য জিনিসের পাশে যে ভাষা শিখতে চান ঐ ভাষায় জিনিসটাকে কী ডাকা হয় তা লিখে রাখতে পারেন। যেমন, ধরা যাক ইংরেজি শিখতে চান কেউ। তিনি চামচের পাশে লিখে রাখলন স্পুন। প্রতিবার চামচ হাতে নেবার সাথে লেখাটি তার নজরে পড়বে। তিনি ঐ শব্দ দিয়ে ঐ ভাষায় একটি বাক্যও বানাতে পারেন মনে মনে।

৬। স্মৃতিতে কোন জিনিস বেশীদিন রাখার উপায় হলো অভারলার্ন। মানে বার বার পড়ে তা মুখস্তের উপরে টুখস্ত করে রাখা। স্কুলে পড়ার সময় আমরা কিছু জিনিস টুখস্ত করেছিলাম। এসব কবিতা এখনো বলে যাওয়া সম্ভব হয়। মুখস্ত করা সব সময় খারাপ নয়।

বইয়ের শেষের দিকে গ্রীক ওরাটর সাইমোনাইডসের একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন লেখকদ্বয়। স্মৃতিশক্তি নিয়ে কথা বলার সময় প্রায় লেখক বা বক্তাই এই ঘটনার উল্লেখ করে থাকেন। এই ঘটনাটির সত্যাসত্য নির্নয় করা যায় না, এবং রোমান দার্শনিক সীসেরো’র লেখার মাধ্যমে এর প্রচার হয় অনেক।

সাইমোনাইডস ছিলেন প্রাচীন এক গ্রীক কবি। একবার তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হল এক বিরাট হলে কবিতাপাঠের জন্য। সেখানে অনেক মানুষেরা ছিলেন। সাইমোনাইডস কবিতা পাঠ করলেন। অতঃপর দুজন লোক তার সাথে দেখা করতে এল। তিনি বাইরে গেলেন। এসময় পুরো বিল্ডিং ধ্বসে যায়। হলের ভিতরের সবাই মারা যান। এমনভাবে চাপা পড়েন যে তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছিল না। তখন সমাধিস্থ করার প্রয়োজনে কোনটা কার মৃতদেহ তা চিহ্নিত করা খুব দরকার হয়ে পড়ল।

সাইমোনাইডস তার স্মৃতিশক্তি থেকে কে কোথায় বসেছিলেন তা ভেবে নিয়ে বলে দিতে পারলেন কোনটা কার মৃতদেহ। গ্রীক ওরাটর অর্থাৎ বক্তারা অনেক দীর্ঘ দীর্ঘ বক্তৃতা দিতেন কোন লিখিত স্ক্রিপ্ট ছাড়া। তারা এটা করতে পারতেন ইমেজারী মেমোরি বা মেমোরি প্যালেস টেকনিক ব্যবহার করে। তারা স্মৃতিতে একটা পূর্ন ইমেজ কল্পণা করে রেখে দিতেন এবং বক্তৃতার সময় সেই প্যালেসে ভ্রমণ হতো তার। কোন জিনিস স্মৃতিতে রাখার এই পদ্বতির নাম মেথড অব লকি বা মেমোরি প্যালেস।

৭। ঐ ভাষায় কথা বলা লোকদের প্রচুর প্রচুর ভিডিও দেখুন।

৮। ন্যাটিভদের মত একসেন্ট হয়ত আপনি অর্জন করতে পারবেন না। তা খুবই কঠিন। একসেন্ট জন্মগত বিষয়। ফ্রেঞ্চ এবং জর্মন বাচ্চাদের কান্নার একসেন্টই ভিন্ন হয়ে থাকে বলে দেখেছেন গবেষকেরা। বাচ্চাকালেই এই একসেন্ট ভিন্নতা থাকলে, বড়দের আরো বেশী থাকবে তা স্বাভাবিক। তাই আপনি নিজের একসেন্টেই থাকুন এবং উচ্চারনকে বোধগম্য করে তোলার দিকেই নজর দেয়া ভালো একসেন্ট নকল করার চাইতে। হুবহু ন্যাটিভ একসেন্টে যাবার চেষ্টা করতে অহেতুক সময় নষ্ট।

৯। ভাষা শেখার ক্ষেত্রে কোন সহযোগী বন্ধুর সাথে মিলে শেখা শুরু করুন। এতে আপনার যখন আলস্য আসবে শিখতে, তখন তার তাড়নায় আপনি সে আলস্য ঝেড়ে ফেলতে পারবেন, ভাইস ভার্সা।

এরকম আরো অনেক সাজেশন দিয়েছেন রবার্ট ও ক্রুজ। তাদের সাজেশনের পক্ষে কগনিটিভ সাইন্সের গবেষনা এবং তার ফলাফলও সামনে এনেছেন। ভাষা শেখা থেকে শুরু করে অন্য অনেক কাজের ক্ষেত্রে এই তথ্যপূর্ন বই নতুনভাবে ভাবার সুযোগ করে দিতে পারে। এর প্রকাশক এমআইটি প্রেস।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং