মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » ড্রাগনকথার পরের কথা

ড্রাগনকথার পরের কথা

চাইনিজ ড্রাগনের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ওরাকল বোন স্ক্রিপ্টে। কচ্ছপের খোলস বা প্রানীর হাড়ের উপর কিছু চাইনিজ লেখা যার সময়কাল ১৪-১৭ শতক বিসিই থেকে ১২০০-১০৫০ বিসিই।
এখানে বৃহৎ সাপের মত ড্রাগনের উল্লেখ ছিল।

Dragon

ছবি- ওরাকল বোন স্ক্রিপ্টে ড্রাগনের ছবি

এই ড্রাগনগুলো বা এরকম বড় সাপের মত বস্তু কী করে চীনা সংস্কৃতিতে এলো তা জানা যায় না। ৫০০০ বিসিইতে ইয়াংশাও কালচারে ড্রাগনের মতো বস্তুর ভাস্কর্য পাওয়া যায়। ৪৫০০ বিসিইতে হোংশান কালচারে মিলিটারী র‍্যাংকের একটা ক্রেস্ট ছিল কুন্ডলী পাকানো ড্রাগনের। ৩০০ বিসিইতে ইতিহাসবিদ চাং কু দাবী করেন ড্রাগনের হাড়গোড় পাওয়া গেছে মাটির নিচে। কুন্ডলী পাকানো অবস্থায়।

চীনে অনেক ডায়নোসরের ফসিল পাওয়া গেছে। এদের অনেককেই পাওয়া গেছে কুন্ডলী পাকানো।

Mei_Long

ছবি- চীনে পাওয়া মেই লং ডায়নোসর

সময়ের পরিবর্তনে রূপকথা, লোককথার গল্প পরিবর্তিত হয়। ৩০০ বিসিইর দিকে ড্রাগনের রুপে অনেক সংযোজন বিয়োজন হয়। হান ডাইনেস্টির স্কলার ওয়াং ফু এর সময়ে, খ্রিস্টের জন্মের ৮২ বছর পর থেকে ১৬২ বছর পর পর্যন্ত ড্রাগন ডায়নোসরের রূপ বদলে সর্প জাতীয় এবং সামুদ্রিক প্রাণীতে পরিণত হয়।

Gilded_Bronze_Handle_of_a_Dragon,_Eastern_Han

ছবি- হান ডাইনেস্টিতে ড্রাগনের ব্রোঞ্জ মূর্তি (২২-২২০ এডি)

চাইনিজ ড্রাগনেরা সম্রাটের ক্ষমতার প্রতীক। তারা সাহায্যকারী, আবহাওয়া এবং পানি নিয়ন্ত্রণ করে। চীনের চার বড় নদীর উৎপত্তি নিয়ে ড্রাগন সংস্লিষ্ট রূপকথার গল্প আছে। তারা উড়তে পারে কিন্তু তাদের ডানা নেই। ডানার সাহায্যে তাদের উড়তে হয় না। তাদের উড়াটার মধ্যে শারিরিক কার্যকলাপের চাইতে যাদুটা প্রধান। তাদের মাথার এক স্ফীত অংশই (যার নাম চিনু) তাদের উড়া এবং অনান্য ক্ষমতার উৎস।

চাইনিজ শব্দ “লং” (বৃহৎ সর্প) এর ইংরেজি অর্থ ইংলিশ ড্রাগনের সাথে মিলিয়ে নেয়া হয়েছে হয়ত এজন্য যে ইংরেজিতে “লং” বলে আরেকটা শব্দ আছে যার অর্থ লম্বা।

চীনা নববর্ষের সময় এখনো ড্রাগন নৃত্য হয়। চীনা ড্রাগনকে মানুষের মধ্যে সৌভাগ্য আনয়নকারী ধরা হয় এবং এমন ধারনা আছে যত দীর্ঘ হবে ড্রাগন নৃত্য ততো বেশি সৌভাগ্য আসার সম্ভাবনা তৈরী হবে।

Chinese_New_Year

ইংরেজি শব্দ ড্রাগনের অর্থ হিসেবে আমরা বুঝি ডায়নোসরের মত একটি প্রাণী, যার বাদুরের মত সংযুক্ত ডানা আছে, যে উড়তে পারে, যার মুখ দিয়ে বের হয় আগুন এবং সে ভয়ংকর। ইংলিশ এই ড্রাগন ভিলেন হিসেবে কাজ করে। গল্পে বা মিথের যিনি নায়ক তিনি এর সাথে মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ন হন এবং তাকে পরাজিত করেন। অনেক সময় দেখা যায় ড্রাগন রাজকন্যাকে চুরি করে নিয়ে যায় বা কোন যাদকর চুরি করে নিয়ে যায় আর পাহারায় থাকে মুখে আগুনওয়ালা ড্রাগন। রাজপুত্র কিংবা রাজকন্যার হবু জামাই ড্রাগনকে পরাজিত করে রাজকন্যাকে উদ্ধার করেন। আমাদের লোককাহিনীতে ড্রাগনের জায়গায় থাকে রাক্ষশ কোক্ষশ।

এই ব্রিটিশ ড্রাগনের চেহারাই এখন প্রধান, অবশ্যই এতে ব্রিটিশ ইম্পেরিয়ালিজমের প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই।

ব্রিটিশদের ড্রাগনের ধারনা এসেছে সম্ভবত নর্স, জার্মান মিথ, গ্রীক রোমান লোককথা ইত্যাদি থেকে। ড্রাগন শব্দটিরও উৎপত্তি সম্ভবত গ্রীক δράκων (drákōn) শব্দ থেকে। গ্রীক ক্লাসিক পিরিয়ডে ড্রাগন সাপের মতো চিত্রায়িত হত। হোমার উল্লেখ করেছেন ড্রাগনের ডানা এবং পা আছে।

800px-Kadmos_dragon_Louvre_E707

ছবি – ৫০০ বিসিই তে কারুকাজ করা পাত্রে ড্রাগনের ছবি

এই গ্রীক ড্রাগন দেখতে চাইনিজ ড্রাগনের মত। চাইনিজ ড্রাগন বলে যা পরিচিত তা ব্রিটিশ ড্রাগন থেকে চরিত্রগত এবং গাঠনিক দিক থেকে অনেক ভিন্ন। মূলত চাইনিজ ড্রাগনদের “ড্রাগন” নাম এক ধরনের বাজে সরলীকরন, যা তার জন্য অপমানজনকই বলা যায়।

মধ্যযুগে নর্স/জার্মান ড্রাগনের গল্প ব্রিটেনে যাওয়ার প্রমানের ক্ষেত্রে বলা যায় নর্স/জার্মান ড্রাগনেরা যেরকম সম্পদ পাহারা দিত, ব্রিটিশ ড্রাগনদেরও সেই কাজ করতে দেখা যায়। তাদের পরাজিত করতে হত। পক্ষান্তরে এশিয়ান ড্রাগনেরা উপকারী হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।

এই ব্রিটিশ ড্রাগনের খারাপ রূপের পিছনে খ্রিস্টানিটির প্রভাব আছে সম্ভবত। বাইবেলে বর্নিত এডাম এবং ইভকে শয়তান “নাহাশ” নামক বৃহৎ সাপের দ্বারা প্ররোচিত করেছিল নিষিদ্ধ ফল খেতে। হিব্রু নাহাশ অর্থ বৃহৎ সাপ। কিং জেমসের বাইবেলে বৃদ্ধ বৃহৎ সাপ বুঝাতে দুইবার ড্রাগনের উল্লেখও আছে। মোটকথা, বাইবেলে তার এক নেগেটিভ চরিত্র উপস্থাপিত ছিল শয়তানের রূপক হিসেবে। তাই নর্স বা জার্মান ড্রাগন মিথ যখন ইংরেজিতে অনূদিত হল তখন তার নেগেটিভিটি আরো বৃদ্ধি পায়। তখন রাজা রানীকে ধরা হতো ঈশ্বরের নির্দেশে রাজ্য চালনা করেন তথা ঈশ্বরেরই এক অংশ।  (এই ডিভাইন রাইটের ধারনার বিপরীতে থমাস হবের সোশ্যাল কন্ট্র্যাক্ট থিওরী এর বিরুদ্ধে অন্য ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে যা ওয়েস্টার্ন পলিটিক্যাল ফিলোসফির ভিত্তি এখন।) মিথে তাই দেখা যায় রাজকন্যাকে ড্রাগন তুলে নিয়ে বন্দি করে রেখেছে। এখানে ড্রাগন সরাসরি শয়তানের ভূমিকায় অবতীর্ন যে সরাসরি ঈশ্বরকে বা ঈশ্বরের অংশকে আঘাত করে। তাই ঈশ্বরকে বাঁচাতে বা ঈশ্বরের প্রতি তার কর্তব্যের কারণে নায়ক ছুটে যান এবং ড্রাগন তথা শয়তানকে পরাজিত করেন।

রূপকার্থে বাইবেলের শিক্ষাই এখানে বর্তমান। ঈশ্বরের মান রক্ষায় শয়তানের বিরুদ্ধে মানুষের যুদ্ধ। কিন্তু চাইনিজ ড্রাগনের ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে খরা আক্রান্ত মানুষকে পানি এনে দেয় সমুদ্র থেকে। তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যেতে সাহস করে মানুষের জন্য। গ্রীক মিথের সেই প্রমিথিউস যেন এরা সবাই, যে প্রমিথিউস আগুন চুরি করে এনে দিয়েছিল মানুষদের।

ব্রিটিশদের ড্রাগনদের বাদুরের মতো ডানা থাকার ব্যাপারটা দেখা যায় যা এশিয়ান বা ক্লাসিক ইউরোপিয়ান ড্রাগনদের নেই। কিন্তু ডানা না থাকলেও তারা উড়ত।

Reggio_calabria_museo_nazionale_mosaico_da_kaulon

ছবি- তিন শতকে আঁকা ইতালিয়ান এক শিল্পীর ড্রাগন মোজাইক

সম্ভবত ব্রিটেনে যখন ড্রাগনের গল্পের বিস্তার হয় তখন তাদের পরিচিত উড়ন্ত প্রাণী বলতে ছিল পাখি এবং বাদুর। যেহেতু তারা দেখতে পেল ড্রাগনের পালক নেই অতএব তারা পালকহীন ডানা অর্থাৎ বাদুরের ডানা কল্পনা করে নিল। ড্রাগনের মুখের আগুনের উৎপত্তি বাইবেল। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে ঈজিপশিয়ান প্রভাব আছে। তখন মিশর, সিরিয়া এসব এলাকা বেশ বিষাক্ত ধরনের অনেক সাপ ছিল। সেগুলোর ভয়ংকর বিষাক্ততার বাইবেলের অন্তর্ভূক্তি এবং পরবর্তীতে সেই বিষাক্ততা আগুনের রূপ ধরে ড্রাগনের মুখে প্রকাশ পায়। অনেকে মনে করে হিব্রু থেকে অনুবাদ করতে গিয়ে বিষাক্ততা আগুনে পরিণত হয়েছে।

প্রাচীন বৈদিক পুরানেও ড্রাগনরূপী এক প্রাণীর উল্লেখ দেখা যায়। তার নাম ভ্রিত্রা। খরার মানুষরূপ, ভেদে তার নাম অহি। সংস্কৃত অহি শব্দের অর্থ সাপ। ভ্রিত্রা অসুরদের অন্তর্ভূক্ত। সে ড্রাগনরুপে এসে নদীর স্রোত বন্ধ করে দিত। সে নদীর সব পানি আটকে রাখে। ইন্দ্র তাকে হত্যা করে নদীর স্রোত মুক্ত করে দেন। নদীর উপত্যকায় বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখাকে সব সংস্কৃতিতেই খুব খারাপ কাজ হিসেবে দেখা হয়েছে।

Story_of_Vritra

ছবি- ইন্দ্রের অসুর ভ্রিত্রা বদ

প্রাচীন মিশরীয় দেবী মা’ত ছিলেন ন্যায়বিচারের প্রতীক। মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির আত্মা তার কাছে যেত এবং মৃত ব্যক্তির আত্মাকে ৪২ টি ঘোষনা দিতে হত যে জীবদ্দশায় সে এগুলো করে নি। এই বেয়াল্লিশটি ঘোষণা প্রাচীন মিশরের বুক অব ডেড এ উল্লেখ আছে। এর মধ্যে ৩৫ নাম্বারে আছে-

                                              “আমি জলের প্রবাহ রুদ্ধ করিনি।”

বৈদিক মিথে বর্নিত অসুর ভ্রিত্রার (বৃত্র) মত কাজ বাংলাদেশের সাথে দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে হিন্দু সংস্কৃতির বৃহত্তম দেশ ভারত। ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে তারা পানি আটকে রাখছে এবং আন্তঃনদী সংযোগ নামক প্রজেক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের নদ নদীকে জলশূন্য করার চেষ্টা করছে। অসুর ভ্রিত্রার মতো। দেবতাকে অনুসরন না করে ভারত রাষ্ট্র অনুসরন করছে অসুরকে! ইন্দ্রের আগমন কবে হবে, এই অসুর নিধনে? অথবা কী জবাব দেবে এই নদী সংযোগ বা বাঁধ প্রকল্পের পরিকল্পণাকারীরা ন্যায়বিচারের দেবী মা’তের কাছে? সেইসব প্রশ্নের আলোচনা অবশ্য এই লেখার বিষয় নয়, তবুও এ নিয়ে অল্প ভাবা যেতে পারে।

দামাস্কাসের সেইন্ট জন লিখেছিলেন ড্রাগন আসলে সাধারনের চাইতে বড় সাপ। তিনি একটা গল্পের উল্লেখ করেন, রেগুলাস তার সৈন্যসহ বাগরাডাস পার হতে গিয়ে এক বৃহৎ সাপের সামনে পড়েন। তিনি একে হত্যা করেন। গ্রীসে এর চামড়া পাঠিয়ে দেয়া হয়। হিসাব করে দেখা হয় তা লম্বায় ১২০ ফিট।

ইতালিয়ান প্রকৃতিবিদ উলিসে আলদ্রবান্দি (১৫২২-১৬০২) প্রাকৃতিক ইতিহাস স্টাডির জনক এবং ইউনিভার্সিটি অব বলোগ্নার প্রথম ন্যাচারাল সায়েন্সের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন প্রজাতিকে ভাগ ভাগ করে অনেক বই লিখেছেন। এর একটা “এ হিস্টোরী অব মনস্টার” এ বিভিন্ন রূপকথা বা পুরানে বর্নিত প্রানীদের রেখেছেন। তার সেই বইয়ে ড্রাগনের উল্লেখ নেই। “হিস্টোরী অব সারপেন্টস এবং ড্রাগন নামক একটি বইয়ে তিনি ড্রাগনের উল্লেখ করেন। মে ২২, ১৫৭৫ সালে তিনি একটি ড্রাগন দেখার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন এটা অবশ্যই সরীসৃপ। তিনি বলোগ্নার কাছে একটা ফার্মে বস্তুটিকে দেখেন। সেটি ছিল বাচ্চা, মাত্র দুই ফুটের মত উচ্চতাবিশিষ্ট।

তিনি হয়ত কোন অষ্ট্রেলিয়ান মনিটর লিজার্ড কিংবা নীল নদের কুমিরের মত জিনিস দেখেছিলেন। ড্রাগনের ধারনার পিছনে ডায়নোসর, মনিটর লিজার্ড, নীল নদের কুমিরের সাথে তিমির ভূমিকাও থাকতে পারে।

এন্থ্রোপলজিস্ট ডেভিড ই জোনস তার বই এন ইনস্টিংক্ট ফর ড্রাগনস এ হাইপোথিসিস দেন, মানুষের বড় শিকারী প্রাণীর প্রতি একটা ভয় আছে। সে ভয়ই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ড্রাগনের মত একটা বস্তু তৈরী করেছে। বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ এই অবস্থায় এসেছে কিন্তু তার মধ্যে এই ভয় রয়ে গেছে। সাপের শরীর, বড় বিড়ালের মত মুখ ড্রাগনের আছে। এবং তার উড়া হচ্ছে বড় হিংস্র শিকারী পাখির মত। বৃহৎ সাপ, বিড়ালের পূর্বপুরুষেরা এবং বড় হিংস্র পাখিরা মানুষের পূর্বপুরুষদের জীবনের জন্য ছিল হুমকি স্বরূপ। এজন্য বানরেরা এখনো বড় সাপ, বড় বিড়াল ভয় পায়। মানুষের পূর্বপুরুষেরা এদের ভয় পেত। । এই বৈশ্বিক ভয়ই লোককাহিনী বা পুরানের মধ্যে নিজেকে মেলে ধরেছে। কার্ল স্যাগান একে বলেছেন ফসিল মেমোরি। মানুষ তার স্তন্যপায়ী পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এই ড্রাগনের ধারনা লাভ করেছে জেনেটিক্যালী, উত্তরাধীকারসূত্রে। মানুষের স্তন্যপায়ী পূর্বপুরষদের  বড় বড় হিংস্র প্রাণীদের সাথে প্রতিযোগীতা করে ঠিকে থাকতে হত তার স্মৃতি মানুষের মধ্যে রয়ে গেছে। তাই দেখা যায় যেসব অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ডায়নোসরের ধারনা ছিল না তারাও এইরুপে ড্রাগনের কল্পনা করে নিয়েছে। মানুষের কল্পিত সব ড্রাগনের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও মিল আছে অনেক।

তাই এখনো মানুষেরা ড্রাগন নিয়ে ভাবে।

1 thought on “ড্রাগনকথার পরের কথা”

  1. Pingback: ড্রাগন&#245...

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং