মুরাদুল ইসলাম » সাহিত্য » সাহিত্য সমালোচনা » কাজুও ইশিগুরো’র গল্প এ ফ্যামিলি সাপার

কাজুও ইশিগুরো’র গল্প এ ফ্যামিলি সাপার

কাজুও ইশিগুরো’র এ ফ্যামিলি সাপার গল্পটি পড়েছিলাম ২ জুলাই ২০১৫ সালে। তারিখ মনে আছে কারণ গল্পটি পড়ে তাকে ভালো গল্প লেখক উল্লেখ করে একটা টুইট করেছিলাম। ইচ্ছা ছিল গল্পটি অনুবাদ করব। আজ ইশিগুরো’র নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে এই লেখাটি প্রকাশ করলাম।

 

কাজুও ইশিগুরো’র গল্প এ ফ্যামিলি সাপার

 

কাজুও ইশিগুরোর এ ফ্যামিলি সাপার গল্পের বিষয়বস্তু পশ্চিমা সংস্কৃতির সাথে জাপানি ঐতিহ্য-সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব। গল্পের শুরু হয় ফুগু নামক এক ধরনের মাছের বর্ননা দিয়ে, যে মাছ সতর্কতার সাথে কেটে রান্না করতে হয়। ঠিকমত না কাটাকুটি করা হলে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়।

Fugu is a fish caught off the Pacific shores of Japan. The fish has held a special significance for me ever since my mother died through eating one. The poison resides in the sexual glands of the fish, inside two fragile bags. When preparing the fish, these bags must be removed with caution, for any clumsiness will result in the poison leaking into the veins. Regrettably, it is not easy to tell whether or not this operation has been carried out successfully. The proof is, as it were, in the eating.

 

গল্পের কথকের মা ফুগু খেয়েই মারা গেছেন। গল্পের কথক এর অনেকদিন পর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছে। দেশে তাদের বড় ঐতিহ্যবাহী বাড়ি, তাদের বংশ ঐতিহ্যবাহী সামুরাই বংশ, এবং এর জন্য তার পিতা গর্ববোধ করেন।

গল্পের শুরুতেই কথক এটা জানায় যে তার পিতা মাতার সাথে তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাই সে দীর্ঘদিন বাইরে ছিল। তার মা মারা গেছেন তখনো সে আসে নি। কেবল বোন কিকুকোর সাথে যোগাযোগ রেখেছে সে।

পিতার সাথে কথোপকথনে সে জানে তার পিতার বন্ধু তাদের ফার্ম বন্ধ হয়ে যাবার পর আত্মহত্যা করেছেন। তার পিতা বার বার বন্ধুর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন,

‘We were partners for seventeen years. A man of principle and honour. I respected him very much.’

কথোপকথনের এক পর্যায়ে গল্প কথকের বোন কিকুরো আসে। পিতার সামনে সে ভাইকে ফর্মাল কিছু প্রশ্ন করে। তার ভেতরে সাধারণ ভয় দেখা যায় যাতে প্রশ্নগুলি অস্বস্থিকর বিষয়ের দিকে না যায়। অস্বস্থিকর বিষয়গুলি হলো তার ভাইয়ের সাথে মা-বাবার দ্বন্দ্ব।

তাদের বাবা রান্নার জন্য রান্নাঘরে চলে যান, তখন হাঁটতে হাঁটতে কথক এবং তার বোন গল্প করতে থাকে। কিকুরো এবার স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে, সিগারেট ধরায়।

কাজুও ইশিগুরো
ছবিঃ কাজুও ইশিগুরো, সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী,২০১৭

 ‘I’ve been dying for a smoke for the last half-hour,’ she said, lighting a cigarette.

‘Then why didn’t you smoke?’

She made a furtive gesture back towards the house, then grinned mischievously.

 

১৯৮০ সালে গল্পটি প্রকাশিত হয়, তখনকার জাপানে ট্র্যাডিশনাল ভ্যালু অনেক শক্তিশালী ছিল। মেয়েদের সিগারেট খাওয়া সহজ ভাবে নেয়া হত না, লিঙ্গবৈষম্য ছিল শক্ত। তাই কথকের প্রশ্নের উত্তরে তার বোন কিকুরো যে তাদের ঐতিহ্যবাহী বড় বাড়িটির দিকে তাকায়, এর অর্থ এই ট্র্যাডিশনাল ভ্যালুর চাপেই সে পারে নি। নারী স্বাধীনতাকে সিগারেটের রূপকে দেখিয়েছেন লেখক।

 

পরবর্তীতে কিকুরো বলে তার বয়ফ্রেন্ড হয়েছে এবং সেও আমেরিকায় চলে যাবে। এখানে দেখা যায় জাপানি পিতামাতার সাথে সন্তানদের দ্বন্দ্বের রূপটি।

 

‘Guess what? I’ve got a boyfriend now.’

‘Oh yes?’

‘Except I’m wondering what to do. I haven’t made up my mind yet.’

‘Quite understandable.’

‘You see, he’s making plans to go to America. He wants me to go with him as soon as I finish studying.’

‘I see. And you want to go to America?’

‘If we go, we’re going to hitch-hike.’ Kikuko waved a thumb in front of my face. ‘People say it’s dangerous, but I’ve done it in Osaka and it’s fine.’

 

কিকুরোর কাছে গল্পের কথক জানতে পারে তার বাবার যে বন্ধু আত্মহত্যা করেছে সে একা আত্মহত্যা করে নি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

খাবার আগে কথায় কথায় গল্প কথকের বাবা তাকে জানান, হয়ত তার মা আত্মহত্যা করেছেন। তিনি চাইতেন সন্তানরা তার কাছে থাকুক। তিনি হতাশ ছিলেন।  তার সন্তানকে এমন কিছু জিনিস কেড়ে নিয়েছে যেগুলি তিনি বুঝতে পারতেন না।

 

  ‘Obviously you don’t see. You don’t see how it is for some parents. Not only must they lose their children, they must lose them to things they don’t understand.

 

এরপরে আসে খাবার টেবিল বা সাপার। গল্পের কথক, তার বোন এবং তার বাবা খেতে বসেন। এক ধরনের মাছ রান্না হয়েছে। কথক কী মাছ জিজ্ঞেস করলে তার বাবা জানান জাস্ট ফিশ।

এখানে সন্দেহ জাগে পাঠকের মনে, এই মাছ কি সেই ভয়ংকর মাছ ফুগু? জাপানী ট্র্যাডিশনাল পিতা কি তার বন্ধুর মত সন্তানদের নিয়েই মারা যাবেন?

খাবার টেবিলে অন্য একটা চিত্র দেখা যায়। গল্পের কথক একটা বুড়ো মহিলার ছবি দেখে চিনতে পারে না। ছোটবেলায় কুয়ার ধারে এক রাতে সে এমন এক বৃদ্ধ নারীকে দেখে ভয় পেয়েছিল। সে জিজ্ঞেস করে ছবির নারীটি কে। তার পিতা কিছুটা শক্তভাবে জবাব দেন সে কি তার মাকে চিনতে পারছে না?

অর্থাৎ, এই অবস্থায় আমরা সন্তানের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতি প্রভাবের তীব্রতা দেখি। নিজের মা’র ছবি না চেনার অর্থ জাপানি সংস্কৃতির সাথে তার চিন্তার এখন যোজন যোজন দূরত্ব।

কথোপকথন নির্ভর এই গল্পের কথোপকথনে দেখা যায় জাপানি পিতা তার সন্তানকে ধরে রাখতে চান, কিন্তু পারেন না। সন্তানদের দৃষ্টিভঙ্গী অনেক বদলে গেছে।

তবে গল্পের কথকের আমেরিকান জীবন যে খুব সুখের তাও নয়। সে বলে সে ওখানে কেবল “শুন্য রুম” ফেলে এসেছে, যেমন তাদের ঐতিহ্যবাহী বাড়িটিতে শুন্য অনেক রুম নিয়ে থাকেন তার বাবা।

বাবা কিকুরো বিষয়ে মনে করেন পড়ালেখা শেষ করে সে বাড়িতে ফিরে আসবে, তখন সব কিছুর উন্নতি হবে; এসব বলে তিনি গল্পের কথককে থাকতে রাজী করাতে চান, পরোক্ষভাবে। সরাসরি তিনি বলতে পারেন না কারণ এ নিয়ে অনেক তিক্ততা হয়েছে তাদের আগে, এবং এজন্য তার স্ত্রী মারা গিয়েছেন বলে তার বিশ্বাস।

  We fell silent again. The sound of locusts came in from the garden. I looked out into the darkness. The well was no longer visible.

‘What do you think you will do now?’ my father asked. ‘Will you stay in Japan for a while?’

‘To be honest, I hadn’t thought that far ahead.’

‘If you wish to stay here, I mean here in this house, you would be very welcome. That is, if you don’t mind living with an old man.’

‘Thank you. I’ll have to think about it.’

I gazed out once more into the darkness.

‘But of course,’ said my father, ‘this house is so dreary now. You’ll no doubt return to America before long.’

‘Perhaps. I don’t know yet.’

‘No doubt you will.’

 

আগে কিকুরোর সাথে গল্পের কথকের কথোপকথনে পাঠক দেখতে পান যে, কিকুরোও খুব সম্ভবত আমেরিকা চলে যাবে পড়ালেখা শেষ করে, সে ওখানে বয়ফ্রেন্ডের সাথে হিচ হাইকিং করতে চায়।

  For some time my father seemed to be studying the back of his hands. Then he looked up and sighed.

‘Kikuko is due to complete her studies next spring,’ he said. ‘Perhaps she will want to come home then. She’s a good girl.’

‘Perhaps she will.’

‘Things will improve then.’

‘Yes, I’m sure they will.’

We fell silent once more, waiting for Kikuko to bring the tea.

 

এইভাবে গল্প শেষ হলেও পাঠকেরা বুঝতে পারেন, সব কিছু উন্নত হবার মত অবস্থায় আর নেই। এবং লাস্ট সাপারের মত এই ফ্যামিলি সাপারটাও হয়ত তাদের একসাথে করা শেষ রাতের খাবার।

 

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং