মুরাদুল ইসলাম » ক্রিটিক্যাল থিওরী » লিঙ্গ কর্তন এর সাইকোএনালিসিস

লিঙ্গ কর্তন এর সাইকোএনালিসিস

দেশের কতিপয় নারীবাদীরা ধর্ষকদের লিঙ্গ কর্তনের দাবী তুলেছেন আর এইটা নিয়া কথা হচ্ছে। লিঙ্গ বিষয়ক এই সমস্যা আমি আগে দেখতে পাই নাই। সম্প্রতি পাইলাম সাবেক ব্লগার ও বর্তমান বুদ্ধিজীবি পারভেজ আলমের লেখায়। তিনি বর্তমান বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় বুদ্ধিজীবি ফুকো’র শৃঙ্খলা ও শাস্তির চশমায় নারীদের এই লিঙ্গ কর্তনের দাবীকে দেখছেন। ফুকো বলেছিলেন এটা শাস্তির আদিম রূপ, রাজারা সর্বসমক্ষে হাতের বদলে হাত বা কল্লা কাটা শাস্তি দিত, যাতে নিজেদের সার্বভৌমত্ব দেখানি যায়। পারভেজ বলেছেন নারীবাদীদের ধর্ষকদের লিঙ্গ কাটতে চাওয়া এমনই শাস্তি; আদিম, ও পুরুষতন্ত্রের উপর পালটা ক্ষমতার প্রকাশ, নারীদের শাসক হওয়া এবং পুরুষকে নিপীড়ন করার ইচ্ছার প্রকাশ।

জর্মন ফটোগ্রাফার গ্রিট স্টার্ন এর ফটো মন্তাজ, ১৯৪৮।

যারা ফুকো পড়েন নাই, সাধারণ বিবেচনায় তারাও বলছিলেন নারীদের এই লিঙ্গ কাটতে চাওয়া আদিম বর্বর স্যাডিস্ট ইত্যাদি। ফলে ফুকো’র তথা পারভেজীয় ফুকোর মাধ্যমে আমরা নয়া কোন জিনিস পাইলাম না এই লিঙ্গ জনিত সমস্যায়।

আমি ব্যাপারটারে তাই এইভাবে দেখতে চাই না। ঘটনাটার সাইকোএনালিসিস করতে হবে আমাদের। ক্যাস্ট্রাশন এংজাইটির কালে (প্রায় ৩-৬ বছর) পোলা তার পুরুষাঙ্গরে পাওয়ারের কেন্দ্র মনে করে ও লিঙ্গ হারানির ভয় তার ভেতর কাজ করে। ফ্যালিক স্টেইজে তার ভয়, সে দেখবে তার লিঙ্গ নাই, সবাই চাইয়া দেখতেছে, মানে সে পাওয়ারলেস।

লিঙ্গরে পাওয়ার মনে করার এই চিন্তা অনেকের রইয়া যায়। এইজন্য কিছু লোক কিছু আঁকতে দিলে খালি পেনিস সাইজের বস্তু আঁকে। এগুলা দিয়া তারা বুঝাইতে চায় তাদের পাওয়ার আছে। দেশ বিদেশের যুদ্ধাস্ত্রের ক্ষেত্রে দেখবেন মিসাইল টিজাইল এগুলা পেনিস শেইপের হয়, ফিজিক্সের ব্যাপার আছে কিন্তু আমরা এখানে শেইপটারেও ঐভাবেই দেখব।

এছাড়া আমেরিকায় কঞ্জিউমারিজমের উত্থানের কালে যখন যাবেন, সেই ইতিহাসে পাবলিক রিলেশনের আব্বা ফ্রয়েডের ভাগনা এডয়ার্ড বার্নেরে পাবেন। বার্নের কাছে একবার সিগারেট কোম্পানি গিয়া বলল মহিলাদের সিগারেট খাবার উপর সমাজ ট্যাবু কইরা রাখছে। তারা সিগারেট খায় না, ফলে আমাদের হিউজ লস। আমাদের সাহায্য করেন।

এমতাবস্থায় বার্নে সাইকোএনালিস্ট হায়ার করেন। সেই সাইকোএনালিস্ট বলেন যে, পুরুষাঙ্গ হইল পাওয়ারের সিম্বল। পুরুষেরা এইটা দিয়া পাওয়ার দেখায় আর নারীরা এর অভাব বোধ করে। ফলে সিগারেটরে যদি পুরুষাঙ্গের বিকল্প হিসাবে বুঝানি যায় মহিলাদের, তাইলে তারা খাইবেন সিগারেট। আর পাওয়ারফুল বোধ করবেন তারা।

চতুর বার্নে, এর ব্যবস্থা করেন। তিনি মিডিয়া ব্যবহার করে মহিলাদের সিগারেট ধরানির নাম দেন স্বাধীনতার মশাল। মানে পুরুষতন্ত্রের হাত থেকে মুক্তি, সিম্বলিক হইলেও।

এখনো কলকাতার ফিল্মে (যেমন গয়নার বাক্স) পর্যন্ত দেখবেন নারীমুক্তি দেখাইতে সিগারেট খাইতেছে নারী এমন দেখানি হয়। অর্থাৎ, এইটা নারীদের জন্য পুরুষাঙ্গ হিসেবে কাজ করছে ভালো।

এখন আসি রেইপের কথায়। ধর্ষণ মূলত একটা পাওয়ার ক্রাইম। তো পাওয়ারের কেন্দ্র কোথায়? ধর্ষকের পুরুষাঙ্গে।

পুরুষতন্ত্রের পাওয়ারের কেন্দ্র কোথায়? পুরুষতন্ত্রের পুরুষাঙ্গে।

ফলে নারীবাদীদের পুরুষাঙ্গ কর্তনের দাবী ঠিক আছে। তারা তাদের অবচেতন পাওয়ার ধারণা থেকে লিঙ্গ কর্তনের মাধ্যমে পুরুষতন্ত্রের পাওয়ার সিস্টেমের বিনাশ চাইছেন। ঘটনাটারে এইভাবেই দেখতে হবে আমাদের।

ফলে শাস্তি হিসেবে ফুকোর বিচারে আদিমতায় এইটা ঠিক পড়ে না, আর নারীরা প্রাচীন রাজাদের মত সার্বভৌম পাওয়ার প্রদর্শন নয়, নিজেদের পুরুষতন্ত্রের অন্যায় পাওয়ারের যাতাকল থেকে বাইরে নিয়া আসতেই এমন বলছেন বলে ধরতে হবে। এখানে কেবল সমালোচনা এই হতে পারে যে নারীবাদীদের উচিত হবে ওই লিঙ্গকে কেবল পাওয়ারের কেন্দ্র মনে না কইরা, সিম্বলিক এটাকে না গিয়া, বাস্তবিক পুরুষতন্ত্রের কাঠামোর নানা ডাইমেনশন চিহ্নিত করা, এবং সেদিকে মেশিন তাক করা। সমাজে নারীমুক্তি সমাজের ভালোর জন্যই দরকারী।

 

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং