আমি জুলাই আন্দোলনের সময় একটা পোস্ট করছিলাম ইউনুস সাহেবকে অভিনন্দন জানাইয়া। জুলাই আন্দোলনের ঘটনাগুলা আমারে নানাভাবে প্রভাবিত করতে থাকে, মেন্টালি ডিস্টার্ব করতে থাকে, ফলে ওই সময়ে নানা ভাবে আমি তাদের পক্ষে লেখতে থাকি। এরই এক অংশ ছিল ওই পোস্ট।
পরে ঘটনাক্রমে জুলাই আন্দোলন সফল হয়ে যায়। ইউনুস সাহেব প্রধান উপদেষ্টা হয়ে যান।
তখন আমি দেখতে পাই যে মানুষেরা আমার ওই প্রেডিকশনরে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফান হিশেবে একটা পর্যায় পর্যন্ত এটা ঠিক আছে। সোশ্যাল মিডিয়া আমরা চালাই সামাজিক ইন্টারেকশনের মাধ্যমে, এটা একেবারে নিরস কিছু না। কিন্তু পরে আমার মনে হইল, এই অঞ্চলের মানুষদের ক্রিটিক্যাল চিন্তা ডেভলাপ হয় নাই। তারা জিনিশটারে অন্যভাবে নিচ্ছে। এই বিষয়টারে খোলাসা করতে, এবং কীভাবে অনুমান কাজ করে, কীভাবে অনুমানরে আমরা বুঝব, এই বিষয়ে লেখব বলে ঠিক করি। এর আগেও কয়েকবার এই প্রসঙ্গ আসছে নানা লেখায়, কিন্তু এককভাবে হয়ত আসে নাই।
যখন আমি অভিনন্দন জানাইছিলাম ইউনুস সাহেবরে উপদেষ্টা বা প্রধানমন্ত্রী হিশেবে, তখন কী আমি জানতাম তিনি হইতে যাইতেছেন?
না, আমি জানতাম না।
কারণ, ওইটা ছিল ভবিষ্যতের ঘটনা। ভবিষ্যতের ঘটনা কখনো জানা যায় না, এটা সম্ভব না। জানতে হইলে ঘটনা আগে ঘটতে হবে।
আর এই ইস্যুটা অনেক জটিল। একে তো বিশাল শক্তিশালী সরকার, তার পক্ষে প্রশাসন, অন্যদিকে ছাত্র জনতা। দেশ এবং বিদেশের নানা শক্তিও বিদ্যমান আছে। এখানে প্রভাব বিস্তার করা বিষয় তথা ভ্যারিয়েবল কয়টা আছে, তাও জানা সম্ভব না।
১০০% নিশ্চয়তা দিয়ে বলা কখনো অনুমান হয় না, এর অর্থ হয়, আমি জানি। কিন্তু ভবিষ্যতের ওই ঘটনা তো ঘটেই নাই। জানা যাবে কীভাবে!
মাঝে মাঝে দেখা যায়, কোন ঘটনা ঘটলে মানুষ বলে, আমি জানতাম এটা ঘটবে। যেমন কারো বিয়া ভেঙ্গে গেছে। মানুষ বলবে, ওদের বিয়া যখন হয় তখন বিয়া খাইতে গিয়াই আমি বুঝছিলাম এই বিয়া টিকবে না, কারণ ছেলেটা কালো মেয়েটা বেশী ফর্সা। অথবা, অন্য যে কোন কারণ তারা দেখায় নিজের অবস্থানের পক্ষে, যেন তারা আগেই বুঝে গেছিল ও জানতো।
আবার, এই বিয়াটা না ভাঙলে, সে এই ব্যাপারে ভাবতোই না।
হয়ত, কোন বিয়া খাইতে গেলেই তার নানা কিছু মনে হয়। কিন্তু ঘটনা ঘটে গেলে, এর স্বপক্ষে যা তার মাথায় আসছিল ওই সময়ে, তা মনে হইতে থাকে, ও সে ভাবতে থাকে, আরে আমি তো জানতাম।
সে নিজেই বিশ্বাস করে সে জানতো আগে থেকেই, তাই কনফিডেন্টলি বলতে পারে। সবচাইতে ভালো মিথ্যা সেই বলতে পারে যে নিজের মিথ্যায় নিজে বিশ্বাস করে। যার নিজের মিথ্যায় ডাউট আছে তার মিথ্যা কনভিন্সিং হয় কম।
বিয়ার কথা উদাহরণ হিশেবে, আরো অনেক অনেক ঘটনায় মানুষ এরকম ভাবে। কিন্তু, তারা আসলে ভুল কারণ তারা ওইটা জানতো না, কারণ ভবিষ্যতের ঘটনা জানা যায় না। হাইন্ডসাইট বায়াসের কারণে তার মনে হয় সে জানতো।
গত ইলেকশনে আমার মনে হইছিল আওয়ামীলীগ সরকার টিকবে না, যেটা বলছিলামও। আমেরিকা চাপ দিবে ও সরকার চলে যেতে বাধ্য হবে। কিন্তু দেখা গেল এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে ঝামেলা শুরু হলো, আমেরিকার উপর গ্লোবাল চাপ। এইদিকে আওয়ামীলীগ ভুয়া ইলেকশন দিয়ে ক্ষমতায় টিকে গেল।
প্রেডিকশন বা অনুমানে অলওয়েজই এক অংশ থাকে পক্ষে, এক অংশ বিপক্ষে। যেমন ইউনুস সাহেব প্রধানমন্ত্রী হবেন ৬০%, হবেন না ৪০%।
অর্থাৎ, না হবার চান্স ৪০%।
এই অঞ্চলের বেশিরভাগ লোকজন প্রেডিকশনরে ভাবে কোন গায়েবি জ্ঞানের মত। মানে, আগে আপনি সত্যটা জাইনা গেছেন। এইখানে যারা সম্মানিত মানুষ ছিলেন আবহমান কাল ধরে, তারা পীর মুর্শিদ, এনাদের কারামতের এক বড় অংশ গায়েবের জ্ঞান, এমনই জনমনে ধারণা। তারা রহস্যজনক, কারণ তারা নাকি ভবিষ্যৎ জাইনা বসে থাকেন। এর উলটা ধারনা, ঝড়ে বক মরে, আর ফকিরের কেরামতি বাড়ে।
যেকোন যুক্তিবোধ সম্পন্ন মানুষ বুঝবে, এটা সম্ভব না কারণ ভবিষ্যৎ জানা যায় না।
আমি বলছি না সব পীর ফকির ভণ্ডামি করতেন, এটা বলা ধৃষ্টতা হবে। তাদের অনেকে ছিলেন সময়ের চাইতে আগাইয়া থাকা, জ্ঞানী ও মানুষদের নেতা। তাদের কাছে তথ্য বেশী থাকতো, তাদের পড়ালেখা বেশী ছিল, তারা চিন্তা করতেন। ফলে তাদের প্রেডিকশন বেটার হইত। তাদের অনেক কথা ফলে নাই, যেগুলা মানুষ মনে রাখে নাই। যেগুলা ফলছে এগুলার উপর ভিত্তি করে গল্প রচনা করছে, মহত্ত্ব আরোপ করছে।
এক উদাহরণ মনে পড়লো। পাটলিপুত্র যখন নগর হয় নি, গ্রাম কেবল, তখন বুদ্ধ সেখানে এসে বলেছিলেন এই জায়গা একদিন বড় নগর হবে।
নগর হবার পরে, মানুষ ভাবল তিনি হয়ত অলৌকিক ভাবে বুঝেছিলেন। কিন্তু বুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করে, নিজের বিচার করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন নদীপথে যেসব পণ্য আসে মগদে, তা এখানে খোলা হয়। চার নদীর মুখে এই অঞ্চল। ফলে তিনি বুঝতে পারলেন এই জায়গা বড় নগর হবার সম্ভাব্যতা বেশি। যেটা হয়ত ওইসময়ের সাধারণ লোকেরা বুঝতে পারে নি।
বুদ্ধির প্রেডিকশন ভুল হইত, যদি প্রাকৃতিক কারণে নদীর গতিপথ বদলে যাইত, যেটা বাংলায় হইছে অনেকবার।
যারা বিভিন্ন বুজরুকি করে, এরা মানুষরে ম্যানিপুলেট করতে ভবিষ্যৎ বলে দেবার চাল দেয়। তারা জেনেরিক কিছু কথাবার্তা বলে। যেমন রাশিফলে দেখা যায়, এমন সব কথাবার্তা যা সব মানুষের জন্যই মিলবে। অনেক সময় ধান্দাবাজেরা আগে থেকে কিছু তথ্য জেনে নেয়। অথবা, অনেক ক্ষেত্রে একসাথে কাছাকাছি কিছু প্রেডিকশন দেয়। ঘটনা ঘটে যাবার পরে মানুষের মাথায় থাকে ওইটা, যেটা মিলে গেছিল। বিশেষত, ভক্তদের মনে, অথবা, সে নিজ থেকেই কিছু মানুষ রাইখা এটা প্রচার করতে পারে। তখন দলে দলে মানুষ তার কাছে যাবে। বাবা তো ত্রিকালদর্শী, সব জানেন। কিন্তু আসলে তিনি বাল জানেন।
স্টুপিডগুলা ওইখানে যায়ই ধরা খাইতে। যে এক ধান্দাবাজের কাছে ধরা খাইতেই গেছে তারে বাঁচানো অনেক কঠিন।
নস্ট্রাদামূসের বইতে এই ভবিষ্যৎ করা আছে, কোন প্রাচীন গ্রন্থে আছে, এরকম অনেক ভবিষ্যতবাণীর কথাও মানুষ প্রচার করে, যা নাকি মিলে যায়। দেখা যাবে, এদের সব প্রেডিকশনই ক্রিপ্টিক, কাব্যিক, ধোঁয়াশাপূর্ণ, অস্পষ্ট, এবং গ্র্যান্ড স্কেলের। এগুলারে অনেক কিছুর সাথে মিলাইয়া নেয়া যায়। প্রাচীন গ্রীসের ডেলফির মন্দিরের ভবিষ্যতবাণীগুলাও ছিল এরকম। সম্পদশালী রাজা ক্রইসাস ডেলফির মন্দিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করছিলেন, সাইরাস দ্য গ্রেটের পারস্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়া তার উচিৎ হবে কি না।
ওরাকল বলে, তুমি হেইলেস নদী পার হইলে এক বড় সাম্রাজ্যের পতন হবে।
ওরাকলের ভবিষ্যৎ বানী শুনে জয়ী হবেন ভেবে মহা সমারোহে ক্রইসাস যুদ্ধে নামেন। সাইরাসের কাছে পরাজিত হন। তখন ডেলফির বানীর অর্থ করা হয়, ওরাকল আসলে এটাই বুঝাইছিল, পারস্য সাম্রাজ্য না, তার নিজের সাম্রাজ্যই ধ্বংস হবে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র জনতার আন্দোলন, শেখ হাসিনার পতন এবং বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে সরাসরি কি ভবিষ্যৎ বানী করে গেছিলেন নস্ট্রাদামুস? তিনি লেখেন,
The trumpet shakes with great discord. An agreement broken: lifting the face to heaven: the bloody mouth will swim with blood; the face anointed with milk and honey lies on the ground.
প্রথম লাইনের অর্থঃ প্রচুর তর্ক বিতর্ক আনরেস্ট শুরু হবে। যেটা শুরু হইছিল কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে।
দ্বিতীয় লাইনের ‘An agreement broken’ অংশের অর্থঃ চুক্তিভঙ্গ হয়ে গেছে মানুষের সাথে সরকারের।
লিফটিং দ্য ফেইস থেকে পরের লাইনের অর্থঃ প্রচুর মানুষ মারা যাবে। সহিংসতা হবে। ব্লাডি মাউথ দ্বারা বুঝায় কোন মুখ থেকেই শুরু হবে রক্তধারা, যেটা বুঝাইছে শেখ হাসিনার রাজাকারের বাচ্চারা বলা থেকেই শুরু।
পরের লাইনের অর্থঃ একসময় যারা উচ্চ আসনে ছিল, আরাম আয়েসে ছিল তারা ভূপতিত হবে। শেখ মুজিবের বিশাল মূর্তির ভূপতিত হওয়া তার এক প্রতীকী রূপ। আওয়ামীলীগের তখতে তাউশ ধুলায় লুটাবে।
এইরকম, নস্ট্রাদামুসের কাব্যিক, রূপক, ক্রিপ্টিক চালাকিগুলারে যেকোন কিছুর সাথে মিলাইয়া নিয়া বলা যাবে, তিনি ওইটা আগে ভবিষ্যৎ বানী করে গেছিলেন। এটা এক ধরণের রেট্রোফিটিং।
একজন লোক অনুমান করলো বাংলাদেশ ও ভারতের আজকের ম্যাচে ভারত জিতবে। কোন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ, কোন প্রসেস ছাড়াই সে তার অনুমানটা দিল, তার কাছে আছে তার খেলা দেখার অভিজ্ঞতা, যদিও এটাও এক ধরণের তথ্য উপাত্ত।
আরেকজন লোক, ডেটা নিল, বিভিন্ন প্লেয়ারের এনালাইসিস করলো, আবহাওয়ার করল, মাঠের করলো, তারপর বায়েশিয়ান পদ্বতিতে বললো, বাংলাদেশ জিতবে। তার অনুমানে ৫৫% বাংলাদেশ জিতার সম্ভাবনা। ৫% বেশী থাকায় সে বলে দিল বাংলাদেশ জিতবে।
খেলায় দেখা গেল, বাংলাদেশ হারছে, ইন্ডিয়া জিতছে।
উপরোক্ত, দুই অনুমানকারকের মধ্যে কোনজনরে আপনি হায়ার করবেন আপনার অনুমান করা বিষয়ক কোন প্রজেক্টে?
আমি হায়ার করব দ্বিতীয়জনরে। কারণ তার একটা প্রসেস আছে, সে অনুমান কী জানে। ফলে আমার অনুমানের কাজে সে ইউজফুল হবে। দ্বিতীয়জন, তার ইমোশনাল ফিলিং থেকে একটা অনুমান করছে। এটাই তার প্রসেস, ফলে এখানে তার কোন স্কিল নাই।
দ্বিতীয় সমস্যা, যেটা সবচাইতে বড় সমস্যা, যখন কোন স্টুপিড অনুমান করলো এবং তার অনুমানের মত ঘটনাটা ঘটে যায়। তখন সে ভাবতে থাকে তার কোন পাওয়ার আছে। সে নিজেরে জ্ঞানী ভাবতে থাকে, তার ভুল কনফিডেন্স জন্মায়। বেশিরভাগ লুজার ফাইনানশিয়াল মার্কেটে নিঃস্ব হয় এই সমস্যায়, এইটা খুবই ডেডলি সমস্যা।
এইরকম পাওয়ার কোন মানুষেরই নাই, কোন স্টুপিডের থাকার কথাই না। মানুষ কিছু তথ্য উপাত্ত, ঐতিহাসিক ডেটা ইত্যাদির উপর ভর করে কোন অনুমানে যায়।
জটিল সিস্টেমে, আজ এক অনুমান করা হইল, কিন্তু এরপরেই কোন একটা নতুন ঘটনা ঘটে হিশাব বদলে দিতে পারে।
খুবই কনফিডেন্ট কোন ইভেন্ট, ধরা যাক কাল সূর্য উঠবে কি না, এইখানেও একেবারে ১০০ ভাগ নিশ্চিত প্রেডিকশন করা যায় না, কারণ অতি সামান্য হলেও অস্বাভাবিক ঘটনা যেমন, কজমিক ডিজাস্টারের জায়গা থাকে।
প্রবাবিলিস্টিক থিংকিং হইল, আপনে মানুষ হিশেবে নিজের সীমাবদ্ধতা এবং দুনিয়ার অনিশ্চয়তারে মেনে নিবেন। এবং আপনার সামনে যখন আপডেটেড তথ্য আসবে, নতুন এভিডেন্স আসবে তখন পজিশন চেইঞ্জ করে নিবেন সেই অনুপাতে। জন মেইনার্ড কেইনেজ যেমন এরকম বলছিলেন, আমি নতুন তথ্য পাইলে আমার অবস্থান বদলাইয়া ফেলতে পারি, আপনি কী করেন, স্যার? এটা আমার প্রিয় একটা কথা।
যারা গাড়ল, জিন্দেগীতে কখনো ফাইনানশিয়াল মার্কেটে ডিল করে নাই, এরাই অনুমানরে গণনার মত দেখে, স্থির সত্য হিশাবে। মেইনার্ড কেইনেজ, এবং আরো যারা সরাসরি মার্কেটে ইনভলব ছিলেন, তারা জানেন, অনুমানে স্থির সত্য নাই, এইখানে আমি রাইট হইলাম না রং হইলাম এই হিশাবের জায়গাই থাকে না। আমি কালকে এক পজিশন নিয়া এক অনুমানে ছিলাম। আজ নতুন তথ্যে মনে হইল উলটা ঘটার সম্ভাব্যতা বেশী, তখন অনুমান বদলাইয়া পজিশন উলটাইতে হয়। তা না হইলে মার্কেটে সারভাইভ করা যায় না। মার্কেট গাড়লদের জন্য মহাশশ্মান।
সাইকোলজিস্ট ফিলিপ টেটলক তার বইগুলাতে, এবং নাসিম তালেব তার সব লেখায় এই থিম নিয়াই কাজ করে গেছেন। বিশেষত, নাসিম তালেবের ফুলড বাই র্যানডমনেস, পুরা বইটা হচ্ছে, গাড়লদের অনুমান সঠিক হলে তারা যে ভুলভাবে ভাবতে থাকে তারা ঠিক অনুমান করছিল, এবং র্যানডম ঘটনারে স্কিল হিশাবে বিশ্বাস করতে থাকে ও পরে কীভাবে ধাপে ধাপে বিপদে পড়ে, সেগুলা নিয়া।
তুমি কী অনুমান করতেছ বা তোমার মতামত কী তা আমি শুনতে চাই না, আমি দেখতে চাই তোমার পোর্টফোলিওতে কী আছে – এরকম একটা কথা প্রচলিত আছে ফাইনানশিয়াল দুনিয়ায়। কারণ মানুষ অনেক কিছু বলে কিন্তু ওইগুলা বিশ্বাস করে না। সে বিশ্বাস করে কি না তা দেখার উপায় হইল, এর পক্ষে সে কী বাজি ধরছে।
এটা ওই বিশ্বাসের পক্ষে তার স্কিন আছে কি না দেখার জন্য। বেশিরভাগ অপিনিয়ন, অনুমানই হইল নয়েজ কারণ ওইগুলাতে ওই ব্যক্তি নিজেই বাজি ধরবে না।
আর অনুমানরে জিতা বা হারার বাচ্চাসুলভ ডাইকোটমি থেকে দেখার অবস্থা থেকে যারা একেবারেই বের হতে পারে না, তাদের জন্য জর্জ সরোসের এই কথাটা প্রযোজ্য হতে পারে। তুমি রাইট হইলা না ঠিক হইলা তা ম্যাটার করে না, ম্যাটার করে রাইট হইলে তোমার লাভ কী হইল আর রং হইলে কী লস হইল।
এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা, কারণ এটা রিয়ালিটি চেক দেয়। মানুষরে দেখাইতে চায়, তুমি কোন গেইম খেলতেছ এইটা কি তোমার খেয়ালে আছে। নাকি হুদাই খেইলা যাইতেছ বুরবকের মত। এইখানে দার্শনিক এন্থনি এপিয়ার একটা কথা মনে আসে, তিনি বলছিলেন, লাইফের চ্যালেঞ্জ এইটা না যে বের করা কীভাবে সেরাভাবে খেলতে হয়, মূল চ্যালেঞ্জ হইল বুঝতে পারা কোন খেলাটা তুমি খেলতেছ।
আমি আবার ইউনুসের প্রেডিকশনে আসি, ওইখানে কি গণক হবার খেলা খেলতেছিলাম, যেটা বুরবকদের ধারণা? না, আমি আমার অবস্থানের পক্ষে মত জানাইতেছিলাম। যেই অবস্থান বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে। যেই স্বৈরাচারী সরকার আছে তার বিপক্ষে। এইটার অংশ হিশেবে ইউনুস সাহেবরে আইনা উপস্থাপন মানুষরে আশা দিবে, যেটা দিছে। অবশ্যই আমার অনুমান নির্মাণে কিছু ডেটা ছিল, ঐতিহাসিক ভাবে এমন নৃশংসতা চালিয়ে কোন সরকার আধুনিক দুনিয়ায় টিকতে পারে না, কিন্তু কখনোই এটার প্রেডিকশন ১০০% ছিল না।
আবার কমলা হ্যারিসের বিষয়ে, আমি অনুমান করছিলাম উনি জিতবেন। তার পক্ষে আমার কাছে কিছু ডেটা ছিল। কিন্তু এই অনুমানে ব্যবধান হিউজ ছিল না। ১% বা তার কম ব্যবধান হবে বলে আমার মনে হইছিল, তিনি এই ব্যবধানে জিতবেন। কিন্তু দেখা গেল পপুলার ভোটে তিনি ১.৭২% কম পাইছেন ট্রাম্প থেকে।
আমেরিকার ভোটাভোটি এবং রাজনীতি অনেক জটিল, যেটা বাংলাদেশ থেকে বুঝা সহজ নয়। সুইং স্টেটগুলা রেজাল্ট নির্ধারণ করে দেয় এটা অনেকেই জানেন, কিন্তু এখানেও আছে কিছু কাউন্টির ব্যাপার, সত্যিকার অর্থে যেগুলা রেজাল্ট চেইঞ্জ করতে বড় ভূমিকা রাখে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ইলেকশনের সাথে সিনেট, মেয়র, এসেম্বলি, ভ্যালট মেজার ইত্যাদি নানা অংশেরও ইলেকশন হয়। ডেমোক্রেটদের জনপ্রিয়তা নানা কারণে এবার কম ছিল। ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন বাড়ছে। তাও, আমি ট্রাম্পের পক্ষে যাইতে পারি না। যদি বাইডেন ইলেকশন লড়তেন, তাহলে সম্ভাবনা আরো কম থাকতো, তখনো কি আমি অনুমান করতাম বাইডেন হারবেন? না। কারণ, বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার খেলা হইলে বাংলাদেশের এক প্লেয়ার আগেই অনুমান করতে পারে না বাংলাদেশ হারবে। নানা দিক থেকে এটা স্টুপিডিটি। এটা তার করা উচিৎ না।
কিন্তু, আমি কি কমলা হ্যারিস জিতবেন, এই অনুমানের উপর ভিত্তি করে স্টক মার্কেটে বেট ধরছি, বা যেসব স্টক তিনি জিতলে বাড়তে পারে, ওইগুলাতে পজিশন নিছি?
না, নেই নাই। কারণ ন্যারো ব্যবধান, ১% অনুমানের ভিত্তি, ওইটা কনভিকশন তৈরি করার জন্য যথেষ্ট নয়।