মানসিক নকশা নিয়া জানতে এই বিষয়ে প্রথম পোস্ট দেখতে পারেন।
—
কোন ব্যাক্তি, বস্তু বা সমাজ সম্পর্কে এক গল্প আপনারে ভুল একটা ধারনা দিতে পারে। এই নিয়া অসাধারন একটা লেকচার আছে টেডে। টেড বিভিন্ন কনফারেন্সের আয়োজন করে যাতে জ্ঞাণী ব্যাক্তিরা তাদের বক্তব্য প্রদান করেন। এটা প্রাইভেট নন প্রফিট অর্গানাইজেশন স্যাপলিং ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করছে।
চিন্তা প্রক্রিয়ার উন্নতি এবং নয়া নয়া আইডিয়া বা চিন্তার লগে পরিচিত হওয়ার জন্য যেসব ওয়েবসাইট আমি এই পুস্তকে রেকমেন্ড করব এর মধ্যে টেড অন্যতম।
যে লেকচারের কথা বলতেছি তা দিছেন নাইজেরিয়ান লেখিকা চিমামান্দা এনগোজি আদিচি। তিনি চমৎকার ভাবে তুইলা ধরছেন কীভাবে কোন বিষয় নিয়া এক গল্প কীভাবে ভুল তথ্য দিতে পারে আমাদের।
গল্প একটা পাওয়ারফুল জিনিস। চিমামান্দা বলছেন যে ছোটকালে তিনি ইংরাজি লেখকদের বই পড়তেন। খুব ছোটবেলাতেই তিনি লেখতে শুরু করেন। কিন্তু তার গল্পের চরিত্রগুলা হইত ইংলিশ ইংলিশ। যেমন তারা আবহাওয়া নিয়া কথা বলত, জিঞ্জার বিয়ার খাইত। তিনি তখন ভাবতে পারেন নাই তার মত কালো মানুষেরাও সাহিত্যে আসতে পারে। তিনি ইংরাজ লিটারেচার পড়তে পড়তে ভাবছিলেন যে হয়ত খালি শাদা চামড়ার লোকেরাই সাহিত্যে আসে।
পরে তিনি চিনুয়া আচেবের মত লেখকের লেখার লগে পরিচিত হন। এবং প্রথম দেখতে পান যে তার মত মানুষেরা, তার আশেপাশের মানুষদের মত লোকেদের জায়গাও আছে সাহিত্যে।
এইটা তার ভুল ভাইঙ্গা দেয়।
সাধারণত গল্প তৈরী করে ক্ষমতাবানেরা। যার হাতে ক্ষমতা আছে, তার মিডিয়া আছে, গল্প তৈরী এবং প্রচারের সুবিধা আছে তার। ফলে সে তার ইচ্ছামত গল্প তৈয়ার করবে। কলোনিয়াল ইউরোপিয়ানরা আফ্রিকা সম্পর্কে গল্প তৈরী করেছিল যে এরা অসভ্য মানুষ এবং মানুষই না আসলে। হাফ ডেভিল, হাফ চাইল্ড লেখছিলেন বিখ্যাত কবি রুডিয়ার্ড কিপলিং।
এডাম হর্সচাইল্ডের একটা বই আছে কিং লিওপল্ডস গোস্ট। এটা নিয়ে একটা ডকুমেন্টারী ফিল্মও হয়েছে। সেখানে দেখানো হইছে বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপল্ডের কংগোতে চালানো অমানুষিক নির্যাতনের কথা।
আফ্রিকার লোকদের নির্যাতন করতে করতে রাজা দ্বিতীয় লিওপল্ড পত্রিকায় এমনভাবে গল্প প্রচার করত যে সে খুব মহান কাজ করতেছে কংগোতে। মানুষদের সভ্য বানাইতেছে। লেখক জোসেফ কনরাডও লিওপল্ডের এই গল্পে বিশ্বাস করছিলেন। পত্রিকা ও প্রচারণা দেইখা কনরাড লিওপল্ডের মহানুভবতার ভক্ত হয়ে গেছিলেন। পরে তিনি একবার ভ্রমণে গেলেন কঙ্গো। কঙ্গোতে গিয়া নির্যাতনের বিভীষিকা দেইখা মানবজাতি সম্পর্কে তার ধারনাই পালটে যায়।
কনরাড লেখেন ইংরেজি ভাষার একটি বহুল-পঠিত ক্ষুদ্রাকৃতির উপন্যাস হার্ট অব ডার্কনেস, যা পাঠকরে এক বিভীষিকার সামনে দাঁড় করাইয়া দেয় এখনো।
কোন বিষয় নিয়ে এক গল্প হইতেছে ঐ বিষয় নিয়ে অসম্পূর্ন চিত্র। এবং সচরাচর আমরা এক গল্প গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কিন্তু ক্রিটিক্যাল চিন্তার গুরুত্বপূর্ন ব্যাপারটা হলো ওই বিষয় সম্পর্কে যত বেশী পারা যায় গল্প জানতে থাকা। তবেই মোটামোটি সামগ্রিক একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব।
একটা উদাহরণ দেয়া যাক বিষয়টা মনে রাখার সুবিধার জন্য। আপনারা মাঝে মাঝে দেখতে পারেন কোন চিকেন ফুডের রেস্টুরেন্টের সামনের পোস্টার বা সাইনবোর্ডে তাদের নাম বা লগোতে মুরগীর বিভিন্ন ফুড আর তার পাশে হাসিমুখে দাঁড়ানো কারটুন মুরগীর ছবি। এই ধরনের পোস্টার বা বিজ্ঞাপন আমাদের যে গল্প বলে তা সিঙ্গেল স্টোরি। এইটা দেখে আমরা যদি মনে করতে থাকি মুরগীরা হাসিমুখে এই চিকেন ফুডের দোকানে আসে তাইলে তা ভুল হবে। মূল গল্প হচ্ছে, এই ফুডের দোকান মোরগ-মুরগীদের জন্য এক মর্মান্তিক জায়গায়। যেখানে নানাবিদ মশলা, সস ও সালাদের লগে তাদের খায় মানুষেরা।
রেস্টুরেন্টের মালিকেরা মুরগী সম্পর্কে পোস্টারে যে গল্প বলেন সেটা ছাড়াও মুরগীর আরো গল্প আছে। প্রায় সব বিষয়ের এইরকম বিভিন্ন গল্প থাকে।
চিন্তার সময় এইটা খেয়াল রাখা জরুরী।
সংযুক্তিঃ
এই লেখা সম্পর্কে আপনার কোন মতামত বা কোন মানসিক নকশা শেয়ার করতে চাইলে মানসিক নকশা ফেইসবুকে গ্রুপে যোগ দিতে পারেন।
টেড লেকচারঃ