কনফার্মেশন বায়াস থেকে বাঁচার উপায়

           মানসিক নকশাঃ কনফার্মেশন বায়াস থেকে বাঁচার উপায়

 

ড্যানিয়েল কাহনেম্যান এবং এমোস টিভার্স্কি নামের দুইজন সাইকোলজিস্ট মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর বেশ কিছু পরীক্ষা করেছিলেন। কাহনেম্যান এ নিয়ে গুরুত্বপূর্ন একটি বই লিখেছেন, থিংকিং ফাস্ট এন্ড স্লো। সেখানে কনফার্মেশন বায়াসের কথা আছে।

মানুষের মেন্টাল মেকানিজম বা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এমন যে, যেসব জিনিস তার নিজের ধারণা বা তত্ত্বকে সমর্থন করে সেগুলোই সে দেখতে পায়। এমনকী অতীতের কোন ঘটনাকে সে তার তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবে ধরে নিতে থাকে।

চিন্তার ক্ষেত্রে এই বিভ্রান্তি মারাত্মক ক্ষতিকর ফল বয়ে আনতে পারে। যেমন, আপনি ইনভেস্ট করবেন। একটা কোম্পানি সম্পর্কে নিজে একটি তত্ত্ব ধার করালেন বা একটা তত্ত্ব আপনার ভিতরে জন্ম নিল এই কোম্পানি ভালো, ভবিষ্যতে লাভ করবে। তখন আপনি আপনার তত্বের স্বপক্ষে নানা প্রমাণ দেখতে থাকবেন বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু সেইসব জায়গাতেই হয়ত আরো অনেক জিনিস ছিল যা আপনার তত্ত্বকে নাকচ করে দেয়। সেসব আপনার চোখে পড়বে না। এই না পড়ার দরুণ আপনি অযৌক্তিক একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেন।

যেকোন মতাদর্শ, যেকোন মানুষ সম্পর্কে আপনার ধারনাও একইভাবে কনফার্মেশন বায়াস দ্বারা প্রভাবিত হবে। এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।

আমাদের তত্ত্বের সাপেক্ষে যেসব প্রমান আমরা দেখি, ট্র্যাডিশনাল হিশেবে এগুলো আমাদের তত্ত্বকে প্রমাণ করে বলে ধরা হয়। কিন্তু দেখা বা এই কনফার্মেশন কিছুই প্রমাণ করে না, যেহেতু আমাদের তত্ত্বকে অপ্রমাণ করার মত অনেক কিছু উপস্থিত থাকে যা আমরা দেখি না।

একসময় মনে করা হতো পৃথিবীর সব সোয়ান তথা রাজহাঁস হচ্ছে শাদা রঙের। তারপর হঠাৎ একদিন অষ্ট্রেলিয়ায় দেখা গেল একটি ব্ল্যাক সোয়ান বা কালো রাজহাঁস। আগে শাদা রাজহাঁস দেখে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল পৃথিবীর সব রাজহাঁস শাদা, তা একটি কালো রাজহাঁসই ভুল প্রমাণ করে দিল।

 

ছবিঃ কার্ল পপার
ছবিঃ কার্ল পপার

এই ভেরিফিকেশনের প্রবৃত্তি এর মধ্যে থেকেও অপেক্ষাকৃত যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে আপনাকে সেইসব ফ্যাক্টগুলাও দেখার চেষ্টা করতে হবে যা আপনার তত্ত্বকে অসমর্থন করে বা নাকচ করে দেয়। দার্শনিক কার্ল রাইমুন্ড পপার এর পদ্বতি হলো আপনার ধারনাকে সমর্থন করে এমন জিনিস না খুঁজে যা আপনার ধারনাকে অসমর্থন করে এমন জিনিস খুঁজতে থাকা।

চার্লি মাঙ্গার মনে করেন তার এবং ওয়ারেন বাফেটের সাফল্যের পিছনে একটা বড় কারণ তারা নিজেদের প্রিয় আইডিয়াগুলোকে ত্যাগ করতে পারেন। তার উক্তি, “যে বছরে আপনি আপনার প্রিয় কোন আইডিয়াকে ত্যাগ করলেন না সে বছর সম্ভবত নষ্ট হলো। যখন আপনার কাছে এর চেয়ে ভালো আইডিয়া আসবে তখন পুরনো আইডিয়া বদলানোর চাইতে ভালো আর কী হতে পারে? ওয়ারেন এবং আমি নিয়মিতভাবে এটা করি। কিন্তু অধিকাংশ লোকেরাও তাদের অপেক্ষাকৃত কম উপকারী আইডিয়া আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকে।”

 

নিজের প্রিয় আইডিয়াকে হত্যা করুন। Share on X

 

(এই সিদ্ধান্ত আঁকড়ে ধরে থাকা ইনসাইট অর্জনের পথে বাঁধা, তার সিয়িং হোয়াট আদারস ডোন্ট বইয়ে উল্লেখ করেছেন কগনিটিভ সাইকোলজিস্ট গ্যারী ক্লেইন দেখিয়েছেন।)

নিজের প্রিয় আইডিয়াকে ত্যাগ করতে এবং তার চেয়ে ভালো আইডিয়া খুঁজে পেতে কনফার্মেশন বায়াসকে অতিক্রম করতে হয়। কনফার্মেশন বায়াসের ফাঁদে পড়ে গেলে নিজের প্রিয় আইডিয়াকেই একমাত্র সেরা আইডিয়া বলে ভ্রম হবে।

এক্ষেত্রে একটা সমস্যায় অনেকে পড়তে পারেন। কোন ধারণার ব্যাপারেই তিনি কংক্রিট-নিশ্চিত হতে পারবেন না।

এটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ভালো।

মাঙ্গার বলেন, “আপনার কোন কাজ খারাপের চাইতে বেশী ভালো করবে এমন মনোভাব এবং এ নিয়ে খুবই আত্মবিশ্বাসী হওয়ার বিরুদ্ধে আমি। আপনি যা নিয়ে কাজ করছেন (পৃথিবী) তা অত্যন্ত জটিল সিস্টেম যেখানে সব কিছুই এঁকে অন্যের সাথে যুক্ত।”

চার্লি মাঙ্গারের এই কথা আমলে নিলে আমরা বলতে পারি- নিজের জ্ঞান, ধারনার ব্যাপারে বেশী আত্মবিশ্বাসী না হওয়াই ভালো।

কনফার্মেশন বায়াসের ফলে আমাদের ধারণার পক্ষে যায় এমন ফ্যাক্ট দেখে দেখে আমাদের অতি আত্মবিশ্বাসের জন্ম হয়।

কিন্তু আসলে অতি আত্মবিশ্বাসী হবার কি কোন উপায় আছে? বিপুলা এই ধরনী!

 


এই লেখাটি মানসিক নকশার অন্তর্ভূক্ত। মানসিক নকশা সম্পর্কে জানতে পড়ুন মানসিক নকশা কী এবং কেন?