মুরাদুল ইসলাম » কবিতা » আমার কয়েকটি কবিতা

আমার কয়েকটি কবিতা

ডুব

কোনও এক প্রভাতবেলায় সূর্য
উঠেছিল খুঁজতে বিকল্প সমাধান
সমস্ত সিগারেটের ধোঁয়ায় ধোঁয়ায়

ট্রায়াল এ্যান্ড এরর মেথডে অমীমাংসিত
ধোঁয়া-ওঠা চিমনির গল্প

অতঃপর ব্যর্থ হয়ে ব্যাঙের মত লাফ দিয়ে সূর্য
ডুবেছিল কুয়ায় কুয়ায়।

 

একজন বোকা লোক বিষয়ক

দৈনন্দিন জীবনযাপন শেষে তিনি জীবন থেকে লগ আউট করেছেন
আমাদের পরচিত সেই ভদ্রলোক
প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক
অত্যন্ত ছাপোষা লোক, রোগা রোগা
বুদ্ধিমানদের দেশে সততা আর মানবিকতাকে আদর্শরূপে ধরে রাখা এক বোকা
এই নিম্ন বেতনভোগী কর্মচারীকে হয়ত ভালোবাসত সবাই অথবা বাসত না
তিনি ছিলেন একেবারেই সাধারণ লোক, চেহারাটা মনে পড়ে
অজস্র চালাকের ভিড়ে, কেমন যেন বোকা বোকা।

 

প্রার্থনার পূর্বে

তুমি হেলে পড়ো ঈশ্বর
এই অবেলায়
নিয়ত চুম্বকের আকর্ষণে বিব্রত তোমার মুখ
দেখে আমার তালগাছের নুয়ে পড়ার কথা মনে হয়
যে একবার মাগরিবের আজানের সাথে সাথে নুয়ে পড়েছিল পশ্চিমে
তুমি হেলে পড়ো ঈশ্বর
কেন এই অবেলায়?

 

(এই তিনটা কলকাতার সৃষ্টি ওয়েবম্যাগে প্রকাশিত হয়েছিল।)

 

 

আবার লোডশেডিং হলে

 

আবার লোডশেডিং হলে

ছাইপাশ ভুলভাল হিশেবের বেহিশেবী চিন্তায় আচ্ছন্ন দুই বা ততোধিক তরুণের উচ্ছাসা হতাশা কিংবা ব্যর্থতার অন্তরঙ্গ কথামালায়

হেলায় হারিয়ে যাওয়া বিন্দু বিন্দু সময়কে নির্দেশ করে যে কপোত ডাইভ দিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল কৃষ্ণ গহবরে

তার পর আর তন্ন তন্ন করে এখানে ওখানে সবখানে, ওলিতে গলিতে,বিনম্র হলদে বাতির ইলেক্ট্রিক আলোয় উদ্ভাসিত দোকানপাঠে,উচু উচু বিল্ডিং এ, রাস্তার পাশের সব ডাস্টবিনে কিংবা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে অপরিশোধ্য ঋণের জ্বালায় জর্জরীত হাফিজ মিয়া এবং তার উত্তরাধীকারীদের বসত ভিটা সহ সম্ভব অসম্ভব সব জায়গায় এফোঁড় ওফোঁড় করা মাইক্রোস্কোপিক চোখ দিয়ে খুঁজেও যাকে পাওয়া যায় নি

মনে রেখো হে পৃথিবীবাসী, তাকে খুঁজতে বেড়োয় তার স্ত্রী সন্তানেরা

হাজার হাজার উড়ন্ত কপোত কপোতী নিরন্তর তখন ঝাঁকে ঝাঁকে ছড়িয়ে পড়ে

এখানে ওখানে

লোডশেডিং এর অন্ধকারে।

 

বৃষ্টি

 

সূর্যের কাছাকাছি থাকা গরম আত্মারা

বৃষ্টির মত ঝরে পড়ছে

এই বিকেলে, সংকেতে বিব্রত করে পৃথিবীর সিনাপটিক নব

ধীরে ধীরে ভিজে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে, দৃষ্টিসীমার সব

অভ্যাসমত প্রতিদিনের টহলে ব্যস্ত প্রাচীন শবের দল

আর কাঁপছে তো কাঁপছেই

আমার, ভিতরের প্রিয় জেনানা মহল।

 

(এই দুইটা কলকাতার জার্নি ৯০’স ওয়েবম্যাগে প্রকাশ হয়েছিল, সাথে আরেকটা ছিল, ঐ কবিতা পাচ্ছি না। )

 

 

শবযাত্রা

 

প্রচন্ড বিভীষিকাময় রাত্রি এবং রাত্রি

শবদেহ নিয়ে গমনোদ্যত যাত্রীদল,লক্ষ্য তাদের বিশাল বিস্তৃত অসীম আকাশ

পথের মাঝে বৃষ্টিজল,ঝাপসা ধূষর,কাদামাটি পানি,পদদলিত বিবস্ত্র পৃথিবী

তরলের মত অন্ধকার,গাঢ় আলকাতরার মত,কেরোসিন প্রদীপের গাঢ় কাল নিঃশ্বাস

 

যাত্রীদল, শোকের মাতম,স্তব্দ আকাশ লক্ষ্য তাদের

নগ্ন মৃতদেহ আর্তনাদ করে,অস্ফুট শব্দভাষায়

খাটিয়াতে শয়ান এই জন্মের দুঃখেরা সব,পরজন্মের প্রতীক্ষায়

 

মলিন শীতল চোখের জল বৃষ্টি হয়ে বৃষ্টি

মৃতের দেহে ঝরে পড়ে,মৃত সৃষ্টির বুকে বৃষ্টি

শবদেহ নিয়ে যাত্রীদল,গমনোদ্যত শঙ্কাহীন

লক্ষ্য তাদের অলীক পৃথিবী।

 

৭।১২।২০১০

 

(বাংলা একাডেমীর উত্তরাধিকারের কোন এক সংখ্যায় প্রকাশিত।)

 

 

ত্বকি

ত্বকি ছেলেটার ছবির দিকে তাকাইয়া দেখলাম
ইয়া মাবুদ! ছেলে ক্যামন কইরা তাকাইয়া রয়!
আপনারা দেখেন নাই?
তার মুখের মইদ্যে ফুইটা উঠে একটা বিবর্ণ দেশ
একটা তপ্ত, গলিত হিংসার স্রোত
অমানুষিক নির্যাতনে কাতর এবং নিঃশেষ
ছেলেটারে কি আপনারা দেখেন না! নাকী?
এ যে মুখের মইদ্যে ধইরা আছে
এই দেশের সাম্প্রতিক সেলফি
বিষাদ, ঘৃণা ও হতাশায় মাখামাখি।

 

 

ভুল ছিল গণিতে

উড়ে আসছিল একটা গাঙচিল

উড়ে আসছিল একটি বাঁজ পাখি

উড়ে আসছিল একটু সবুজ বলগা হরিণ

উড়ে আসছিল তিনটি প্রজাপতি

ধেয়ে আসছিল তানপুরাটা

সঙ্গে নিয়ে তার জোড়াটা, হারিয়ে যাওয়া সাদা ঘোড়াটা

ধেঁয়ে আসছিল মশাদের সেনাপতি

সবকিছু ঠিকঠাক, মাছ দিয়ে ঢাকা শাক

ঝাঁক ঝাঁক শঙ্খের ধবনিতে

ভুল হল পাসওয়ার্ডে, আসলে ভুল ছিল গণিতে।

 

( বাংলা একাডেমীর উত্তরাধিকার কোন এক সংখ্যায় প্রকাশিত।)

 

 

ঋতুবন্দনা

এ একটি ঋতু
বিষে ভরা ঋতু
হাত পাতে সকলের হাতে
মাঠে ও গঞ্জে যত লাল পিঁপড়া
জটলা করে তাহাদের সাথে
এ একটি ঋতু
বিষে ভরা ঋতু
ডুব দেয় সকলের পাতে।

 

 

রফিকুন্নবী বিষয়ক

রফিকুন্নবী সাহেব বাম পকেটে হাত ঢুকিয়ে বের করে নিয়ে এলেন কিছু মৃত্যু পরওয়ানা। এনে আমার চোখের সামনে মেলে ধরলেন। আমি তাকে বললাম, স্যার আপনি ভুল পকেটে হাত ঢুকিয়েছেন। এখানে কয়েকটি রঙিন মার্বেল পাথর থাকার কথা ছিল। রফিকুন্নবী এবার অন্য পকেটে হাত ঢুকালেন। এবার তার হাতে উঠে এল কয়েকটি বিবসনা বিকেল।

তিনি কয়েকটি দীর্ঘশ্বাস বাক্সবন্দি করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, এসব কী নীল পাথর? আমি তখন বাতাসে মিলিয়ে যেতে যেতে অনুভব করলাম আমার বস্ত্রখন্ড নির্মান করছে মাথার উপর আকাশ। সে আকাশের রঙ নীল ।

 

 

পবিত্র রজনী

সেজদায় নুয়ে পড়বে সব গাছ
সব পাহাড়
আজ সেজদায় হুমড়ি খেয়ে পড়বে বিশাল আকাশ
সেই সব বিশ্বাস বুকে নিয়ে
গোপন করে ভয় এবং ভক্তির নিঃশ্বাস
দেখে দেখে নিঃশেষ করেছি অনেক সন্ধ্যারাতের আকাশ
কালো রাত শেষে দিন হয়, কোমল সুপ্রভাত
আর আমার ভেতরের সেইসব দিন জুড়ে বীরদর্পে বসত করে
আরব্য রজনীর গন্ধমাখা, শবে বরাত ।

 

 

একটি উজ্জ্বল মাছের প্রতিবিম্ব দেখে

জ্বলন্ত চাঁদের নিচে
ঘুমিয়ে আছে ক্লান্ত নগর
শীতল জ্যোস্নায় প্লাবিত চরাচর
আর দর্পণে একটি উজ্জ্বল মাছ
তীক্ষ্ণ ও ক্রূর হাসি হেসে
মিলিয়ে যায় নিমিষে
উড়িয়ে বাতাসে সঞ্জীবনী মদ
আমি জিজ্ঞেস করি তাকে
হে মাছ, তুমি কি মান্নান সৈয়দ ?

(কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ স্মরণে)

 

 

ব্যাঙবন্দনা

কতদিন পর ব্যাঙ
ভাঙ্গা স্যুটকেস ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছো
মুখে নিয়ে বিনম্র ফুটপাত
রাঙ্গা চার দেয়ালে লাগানো যত ভাঙ্গা কাচ
সব সম্মিলিতভাবে ধরে রেখেছে তোমাকে
তুমি অদ্ভুত ব্যাঙ
তুমি বিস্ময়!
অন্ধকারে যখন নামে বৃষ্টির মত ভয়
তখনো তুমি রয়ে যাও
আদি ও অকৃত্রিম
নিশাচর ও দিবাচর
ব্যাঙ।

 

 

নড ও নৌকা বিষয়ক

আমি নড নগরীতে অভিশপ্ত নাবিক এক
যার সহায় সম্বল ছিলো একটিমাত্র খেয়া নৌকা
তা ডুবিয়া গিয়াছে গাঢ় চৈত্রের রোদে
আর আমি তোমার হস্ত স্পর্শ করিবার অন্তীম ইচ্ছায়
বর্ণ চিহ্ন মুছে যাওয়া কী বোর্ডের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে যাই
নির্বিকার
খটখট শব্দ তুলে ঝড়
জিউসের বর্জ্রদণ্ডের আঘাতে মুহুর্মুহু কেঁপে উঠে আসমান
আর ফজরের আজানের কালে
দুঃস্বপ্নের ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়
যেন ঘুম হয় বিদীর্ণ খানখান।

তোমার বর্তমান অবস্থাকে মাথায় রেখে

আমাকে ছেড়ে যাবার পর
তুমি চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে এতই বেড়ে গেছো যে
এখন তোমার মুখের দিকে তাকাতে হলে আমার মাথা উচু করতে হয়
আর আমি ভুলে যাই স্কুলজীবনে শেখা ক্যালকুলাসের যাবতীয় সব সূত্র
শুনেছি ভূ-বিদ্যা কিংবা বায়োলজির কোনো এক অপঠিত অধ্যায়ে
রয়েছে তোমার চক্রবৃদ্ধির জন্মকাহিনী
ছাড়াছাড়াভাবে এবং খুব অস্পষ্ট।

আমার মাছি

আমার একটি পোষা মাছি
নিয়ত হতাশ থাকে
মুখ করে বেজার
আর
মাঝে মাঝে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে
বৃত্ত তৈরি করে
তারপর আরেকটি বৃত্ত
এভাবে করে যায় যতোক্ষণ না দিনান্তে
সূর্য জানায় শেষ বিদায়
আমার পোষা মাছি
আমার বিষণ্ন মাছি
সন্ধ্যাবেলা যখন রাত্রির হাতছানি
সে তখন উড়ে এসে জুড়ে বসে থাকে আমার হাতখানি
তারপর এঁকে যায় বৃত্তের পর বৃত্ত
মাঝে মাঝে কিছুক্ষণ থমকে বসে থাকে
মিছেমিছি জুঁই ফুলের গন্ধে আনমনা বৃক্ষের মতো
তখন আমি হাত নেড়ে জানিয়ে দেই, আছি
আমার পোষা বিবর্ণ মাছি

এরপর রাত্রি আসে
হয় গভীর থেকে আরো গভীর
আমি তখন অন্ধকারে লীন
মাছি তখন জোনাকের মতো
সবুজ আলো ছড়িয়ে উড্ডীন
রচনা করে চলে বৃত্ত এবং বৃত্ত
চক্রাকার সব গোলকধাঁধা
রঙ তাদের ধূষর, হরিৎ কিংবা সাদা

আমি যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার ভিতরে ঢুকে পড়ি
স্বভাবতই পাই না কোনো ঠাই
এবং আমি তলিয়ে যাই।

(এই তিনটা শিল্প ও সাহিত্য, বাংলানিউজ২৪ এ প্রকাশ হইছিল।)

 

আমাদের জলপাই গাছ

আমাদের বাড়িতে একটা জলপাই গাছ লাগানো হয়েছিল
দাদা বললেন, ‘উত্তুরে হাওয়া এসে উড়িয়ে নেবে ঘরের চালা’
তাই গাছটা থাকুক, বড় হোক
আটকে দেবে বাতাসের জোর, ভাঙবে না দরজার তালা
দিনে দিনে সেই জলপাই গাছ বড় হলো
চারিদিকে মেললো ডালপালা

ঘন সবুজ পাতা তার, সবুজ সবুজ টক টক ফল
আমাদের রসনা বিলাস, জলপাই খেলে নাকি বাড়ে মনোবল
বড় হতে হতে গাছটি ঘরের চালার উপর উঠে গেল
ঘিরে ফেলল আমাদের পুরোটা বাড়ি
শক্ত ঝুলন্ত মূল বের হলো তার ডাল থেকে
পেঁচিয়ে ফেললো আমাদের বাড়ি

কেউ কেউ তখন বললেন, ‘এ কেমন গাছ? বটগাছ নাকি?’
দাদা ছিলেন না তখন
গাছটা মাঝে মাঝে দানবের মতো নড়ে উঠত সকাল-বিকাল
কারো সেদিকে তেমন দৃষ্টি ছিল না
ঘরের চালায় গাছের শক্ত বিস্তার দেখে
পিতা বললেন, ভালোই হলো, ‘বাড়িটা টিকে যাবে দীর্ঘকাল’
ভালোই চলছিলো সব

তারপর একদিন গাছটা তুলে নিলো রোদে শুকাতে দেয়া কাপড়চোপড়
রঙিন স্যান্ডেল, পিতার শাদা পাঞ্জাবি ও ঘরের দুয়ার
হতবাক হয়ে সেদিন আমরা নামলাম গাছ কাটতে
কিন্তু ততদিনে অনেক বিশাল সে
শক্ত অতি
তাকে কাটার মতো কুড়াল
কোথাও পাওয়া যায় না।

 

পাহাড়ের সাথে কথোপকথন

চলো পাহাড় আরেকটু দূরে চলে যাই
এখানে আমার আর ভাল্লাগে না
খারাপই লাগে
যখন শুনি আব্দুল মজিদের ছেলে
ও-পাড়ার সাইফুদ্দিনের ছেলেকে বিষ খাইয়ে খুন করার পর
পোস্টমর্টেম রিপোর্টে আসে “সাইফুদ্দিনের বড় ছেলে মহিউদ্দিন অবেলায় একগ্লাস মধু খাইয়া মারা গিয়াছে”
কোর্টে মামলা চলে
আব্দুল মজিদের অবৈধ টাকা কিছুটা কমে যায়
আর একদিন শোনা যায় তার ছেলে বেকসুর খালাস পেয়েছে
কিছুদিন পরে ছেলেটাকে ব্যাট হাতে দেখা যায় মাঠে
এবং আব্দুল মজিদের ছেলেরা এরপর থেকে বিষের বোতল পকেটে নিয়ে হাঁটে

 

বস্তিবাসী

তাদের ঘরবাড়ি নাই
উঠান নাই
শিক্ষাদীক্ষা নাই
ফকিন্নি সব
মানুষই না আসলে
ফকিন্নি-ফকিন্নি চেহারা
ফকিন্নি-ফকিন্নি কাপড়চোপড়
বই পড়ে না
শাস্ত্রীয় সংগীত শুনে না
ছি! ছি! কত আনকালচার্ড এরা
দুইটা ভালো ফিল্মও দেখে নাই
আমাদের সাথে থাকে অবশ্য
একই শহরে
উটকো ঝামেলাটাইপ ব্যাপার
পাশ দিয়ে গেলে গন্ধ লাগে নাকে
তাই আমাদের বেশি বেশি পারফিউম খরচ হয়
এরাই অসুখের মূল
একটা ভালো শহরে
সুন্দর শহরে
আমাদের মতো কালচার্ড
ফিল্ম দেখা, বই পড়া
স্প্যানিশ লিগ, ইংলিশ লিগ দেখাদের শহরে
এরা কেন থাকবে?
তুচ্ছ, নগণ্য, ফকিন্নিরা সব
এদের জ্বালিয়ে দাও।

 

মধ্যবিত্ত বিনোদন

বিজ্ঞাপনে সুন্দরী মহিলা চায়ের কাপ হাতে দাঁড়ায়।
ও মাবুদ! তাদের সেই গোছানো ঘরবাড়ি!
মহিলার হউরের মুখে খান জাহান আলী কালের গোঁফ
আর আছে মহিলার জামাই, পোলা
এবং হরি
সবাই কেমন যেন সুন্দর করে চা খায়।

 

পরিষ্কার শহর চাই

আমাদের শহরের সৌন্দর্য
হকারেরা খাইয়া যায়
তারা আম জাম ইত্যাদি ফল
চানাচুর বাদাম ইত্যাদি আজেবাজে জিনিস
এবং আরো কি কি যেন লইয়া বসে
অবৈধ চুদিরভাই সম্প্রদায়
এরা যানজটের মূলে
এরা রাস্তা খাইয়া যায়

যেসব গবেষকেরা বলেন প্রাইভেটকারই যানজটের কারণ
যেসব লোকেরা প্রশ্ন করেন গরিবের দেশে এত প্রাইভেট কার কেন
তাদের কথায় কান দেই না আমরা ভদ্রলোক
ওসব শুনতে আমাদের বারণ

আমরা চাই পরিষ্কার টাউন
নীল গাউন
শিক্ষিত-শিক্ষিত ভদ্রলোকের বেশ
হকারমুক্ত দেশ

 

(এই পাঁচটা রাশপ্রিন্ট ওয়েবম্যাগে প্রকাশিত।)

 

পুনরুত্থান

 

ঘুমাইয়া ছিলাম আমি

জানি নে কতদিন

হয়ত হাজার বছর মাস

এমন গভীর ঘুম

কফিনের ভিতরে, নিয়তির অভিশাপ

উইঠা মনে হইল যে

প্রশান্তি হয়

শরীরে ব্যথা, ভিতরে ক্ষুধা

পর্বত চূড়ায় পান করে আরেক দুনিয়ার দ্রাক্ষারস

সেই মদিরা প্রভাবে ঘুমাইছিল রিপ

ভ্যান উইঙ্কল পরিবারের সন্তান

তারো হয়ত উইঠা লাগছিল এমন

আমার ভেতরে রক্তের ক্ষুধা

আমি বাইর হই গুম্ফা থেকে

অভিশপ্ত কফিন ভেঙ্গে

শহর বদলে গেছে

পথে পথে মানুষ নাই

মানুষের গন্ধ নাই

রোবট রোবট

ও মানুষ! ও লুসিফার!

আমি রক্ত কোথায় পাই?

 

 

সমাজ বিশ্লেষণ

 

শুনেছি মগধের বামুনেরা

বলতো এদেশের মানুষ পক্ষীজাতীয়

হেথায় পক্ষী জাতীয় মানুষের বাস

পাখি ও মানুষ খুবই কাছাকাছি

পাখাময় পাখালীময় সমাজ, গভীরে বর্তমান

এই লোকসমাজ, লোকে লোকারন্য পথ ঘাট জনপদ

পাদানীতে পা দিয়ে চলন্ত মানুষ বাস

খুবই পক্ষীজাতীয়, আমার এখনো মনে হয়

খুব সম্ভবত রাতকালে, নিশিকালে এহেন মানুষগুলি

পুরাতন মাটির গন্ধে, পূর্বপুরুষের রয়ে যাওয়া ভারী সব নিঃশ্বাসের প্রভাবে

পাখি হয়ে যায়

টুকরে টুকরে ফল খায়, ঘাস খায়, খায় শস্যদানা

গায় গায় নানা সুরে

পরাবাস্তব পাখিদের গানা।

 

২৩ নভেম্বর, ২০১৭

 

শেখ শাদী পরবর্তী

একদিন আমার জুতার জন্য দুঃখ হইছিল
তো পথে হাঁটতে গিয়া দেখলাম একজনের পা-ই নাই
জুতার দুঃখ দূর হইল আমার
আবার রাস্তায় এক লোককে দেখলাম এক সপ্তাহ পরে
জুতাওয়ালা
পুনরায়, জুতার জন্য দুঃখ জাগল আমার
কিন্তু জুতা যেহেতু কেনার টাকা নাই
তাই রাস্তায় বের হইছি পা হীন কোন লোক দেখার আশায়

২৪/২/২০১৯

 

 

সাদা বাড়ি

আমাদের জানালা দিয়ে একটা উঁচু সাদা বাড়ি দেখা যেত। খুব উঁচু যেন আসমান ছুঁতে চায়। তার গায়ের রঙে কেমন যেন শান্তির স্পর্শ লুকানো ছিল। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় এমন। মাঝে মাঝে যখন আকাশ হয়ে যেত পরিস্কার, ঝলমল করে উঠত রোদ, তখন বাড়িটাকে মনে হত রূপকথার কোন এক প্রাসাদের মত। যে নিরবে মায়াবী হাতছানি শুধু কাছে ডেকে যায়।

আমাদের যখন খুব মন খারাপ হত তখন আমরা বাড়িটার দিকে চেয়ে থাকতাম। আমাদের যখন কান্না পেত কোন কারণে, তখনো আমরা বাড়িটাকে দেখতাম।
দূরে থেকেও সাদা বাড়িটা আমাদের অংশ হয়ে উঠেছিল। হয়ে উঠেছিল আমাদের আপনজন।

তারপর যখন একদিন বাড়ির মালিক দেশে ফিরে এলেন এবং বাড়িটার দিকে তাকানোর উপর ট্যাক্স বসিয়ে দিলেন; সেদিনের পর থেকে আমাদের আর বাড়িটাকে দেখা হয় না।

প্রায়ই মনে হয় বাড়িটাকে দেখব। তাই অল্প অল্প করে পয়সা জমাই। কিন্তু ছাপোষা জীবন আমাদের। দৈনন্দিন কাজের ফাঁকতালে কীভাবে যেন টাকাগুলো উবে যায়। আর আমাদের সাদা বাড়িটাকে দেখার সামর্থ্য হয় না।

৭/২৯/২০১৫

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং