জিন্দেগী না মিলেগি দোবারা বিষয়ে

এক

সাম্প্রতিক এই ফিল্ম দেখলাম, জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা।

প্রাথমিক ভাবে এর মেসেজ মনে হইতে পারে সাইজ দ্য ডে, নিজের লাইফ এঞ্জয় করো, ইত্যাদি।

কিন্তু এর ডিপার মেসেজ, নিজের লাইফের দায়িত্ব নাও।

ফিল্মের ভিলেন কে?

নাসিরুদ্দিন শাহ, যার নাম সালমান হাবিব। তিনি সন্তানের দায়িত্ব নেন নাই নিজের আনন্দের জন্য।

সালমান হাবিব তার ছেলে ইমরানরে বলেন, আমাদের লাইফ থেকে চাওয়া আলাদা আলাদা ছিল। তোমার মা চাইছিল ঘর সংসার করতে, আমি চাইছিলাম দেশে দেশে ঘুরতে, ছবি আঁকতে।

একই কথা আপনে আগেও শুনবেন ঋত্বিকের মুখে। গার্লফ্রেন্ড চলে গেল কেন জিগাইলে সেও বলে, আমাদের দুইজনের লাইফের আলাদা আলাদা উদ্দেশ্য আছিল।

এই জায়গায় প্রবলেমটা কী? স্যাক্রিফাইস করতে না পারা, বা দুইটারে ব্যালেন্স করতে না পারা।

সালমান হাবিব দায়িত্ব থেকে পলাইয়া দেশ ছাড়ছেন। ঋত্বিক টাকা কামাইতে কামাইতে অন্যান্য দায়িত্ব ভুলে গেছিল।

ইমরান তার মায়ের দুঃখ বুঝে নাই। সালমানরে দেখতে চলে আসছিল স্পেন। সালমানের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার রূপ দেইখা তার ভুল ভাঙ্গে। এই কঠিন দৃশ্যের পরে দেখবেন দেখায়, সে তার মায়ের কাছে ফোন দিয়া সরি বলে। ইগোর কারণে সে ঋত্বিকের কাছে সরি বলতে পারতেছিল না, ওইটাও বলে।

পরে কবিতার বইও প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়, অর্থাৎ নিজের দায়িত্ব নিতে শিখে। স্মরণ করা যায় আগের ওই সিন, নাসিরুদ্দিন এইখানে সেরা অভিনয় করছেন, কোল্ড এক ডার্ক চরিত্র। উনি ইমরানরে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, লেখতেছ তো বুঝলাম, কিন্তু নিজের জন্য কী লেখো? এইগুলা ইমরানরে ধাক্কা দেয়।

ঋত্বিক বলে কাজ ছাইড়া ক্যাটরিনার লগে মরক্কো চলে যাবে।

শেষ আছিল অভয় দেওল। আমরা জানতে পারি, সেও পড়ে আছে এক সামাজিক প্রেশারে। একটা চাপে পইড়া তারে বিয়া করতে হইতেছে। সেও বলে, বিয়া আপাতত স্থগিত করবে।

দুই

কল্কি আর অভয় দেওল ক্যারেক্টারের যদি বিয়া হইয়া যাইত, তাইলে কী হইত ভাবা যায়।

বা তাদের বিয়া কেন ভাইঙ্গা গেল।

এই সমস্যাটা প্রায়ই দেখা যায়।

কল্কি অভয়রে ভালোবাসে, অভয়ও ভালবাসেন। কিন্তু কল্কি অভয় পান নাই, তিনি সন্দেহে ভুগছিলেন। কেউ কেউ বলতে পারেন, অভয়ের আরো নানা কাজ করা উচিৎ ছিল সন্দেহ দূর করতে, আরো অভয় দিতে।

কিন্তু এইগুলা কাজ করত না।

কারণ কল্কি তারে পুরা অধিকার করতে চাইছে। এইটার শেষ পর্যায় হইল, তার কোন বন্ধুবান্ধব থাকতে পারবে না, সব মনোযোগ থাকতে হবে কল্কির দিকে।

এবং এইটাও যদি বাস্তব হইত, তাইলে কল্কি অভয়ের উপর আগ্রহ হারাইতেন একসময়। বলতেন তোমার আগের চার্ম কই। তিনি বুঝতেন না ততদিনে অভয় ডেড।

বিবর্তনীয় দিক থেকে জেলাসি ও পজেসিভনেসের এক কারণ ছিল, বা আছে। জঙ্গলের সমাজে নিশ্চিত করতে হইত, এই পোলা সন্তানের লালন পালনে হেল্প করবে, প্রেগন্যান্ট সময়কালে অতিরিক্ত ক্যালরি যে দরকার ওইগুলা সরবরাহ করবে, প্রটেক্ট করবে।

সে যদি অন্য নারীর লগে চলে যায়, তাহলে এইটা তো হবে না। এইটা না হলে মৃত্যুর ঝুঁকি, সন্তান বাঁচবে না, নিজেও মরার রিস্ক। ফলে, জেলাসির তাড়নাটা তীব্র হয়।

সামান্যতম চিহ্ন দেখলেও নারীরা প্যানিকড হইয়া যাইতে পারে।

অনেকে আগে থেকেই প্যানিকড থাকে, যেমন এইখানে কল্কি, সে আগে থেকেই চাইতেছে না কোন সম্ভাবনা না থাকুক, সে অভয়রে পুরাই অধিকার করতে চাইতেছিল।

বাস্তব অভিজ্ঞতায় মিলাইতে পারেন। বন্ধুবান্ধব, পরিচিত কেউ কেউ থাকতে পারেন, যিনি বিয়ার পরে পুরা চেইঞ্জ হইয়া গেছেন, আগের মত কী, আগের ৫% টাইমও বন্ধুদের দিতে পারেন না। ওইসময়ও বউ কল করে খোঁজ নেন তিনি কই আছেন।

এইসব প্রবণতা নিয়া রিল মহাবিদ্যালয়ে ছোট ছোট ফান ভিডিও হয়। দেখা যায়, এক মাইয়া পোলা যাইতেছেন, তখন আরেক মাইয়ারে ওই পোলা থ্যাংক ইউ বলছেন কোন কারণে। তখন তার গার্লফ্রেন্ড মুখ ভেংচাইয়া থেংকু থেংকু করতেছে। মানুষ এগুলা নিয়া হাসেন। নিজেদের লগে মিল পান। শেয়ার করেন।

কিন্তু ভাবলে দেখবেন, এইটা মারাত্মক এক টক্সিক আচরণ। ওই পোলা কি যারে থ্যাংকু বলছে তার লগে কোন সম্পর্কে গেছে? বা, যাবার কথা ভাবছে? আর তুমি এইরকম নিজেরে ভাবতেছ যে তোমার বয়ফ্রেন্ড রাস্তার এক মেয়ে দেইখা সাথে সাথেই ওর লগে সম্পর্কে যাবার চিন্তা করতেছে? বা সেক্স করার? তাইলে কোন বিশ্বাস ও ভরসায় তুমি এর লগে থাকো?

ভালোবাসার প্রকাশে, এই আচরণ কি যৌক্তিক হয়? অনেকে এইটাও বুঝাইতে চান, বেশি জেলাসি মানে বেশি লাভ! এইটা ভুল।

ফিল্মে দেখবেন অভয় স্যাড থাকে, কিন্তু সে সাহস করে কিছু করতে পারতেছিল না। বা এইটা যে ভুল তাও ঠিক বুঝতেছিল না। থার্ড পার্টি, অর্থাৎ তার বন্ধুরা ধরে ফেলে ও তারে হেল্প করে। তখনই সে বের হইতে চায়।

ওই ভিডিওগুলাতে যে টক্সিক গার্লফ্রেন্ডদের দেখা যায়, ওই গল্পেও অভয়ের মত সিচুয়েশন এক সময় হবে।

আর না হইলে, তারা সম্পর্কের ভেতরে স্যাড হইয়া থাকবে। যেইটা সম্পর্কে আরো নানা সমস্যার তৈরি করবে।

কল্কির এই এটাচমেন্ট স্টাইল রিলেশনশিপ সাইকোলজিতে এংশাস হিশেবে ধরা হবে। এরা রিলেশনশিপরেই ধ্যান জ্ঞান করে ফেলে, সেপারেশনে এংজাইটি ফিল করে, প্রচুর ইমোশন কাজ করে, সন্দেহ, মিক্সড ইমোশন হয় অনেক, তাদের আরেক ভয় থাকে, এইরকম আর কাউরে পাবে না। তারা নিজেদের তীব্র ইমোশনাল দ্রুত উঠা নামারে লাভ বলে ভ্রম করে। এটা তাদের মারাত্মক সমস্যায় ফেলতে পারে।

পক্ষান্তরে, ঋত্বিক ও ক্যাটরিনার যে রিলেশনশিপ, ওইটা সিকিওর স্টাইল, দুইজনের দিক থেকেই। রিলেশনশিপে দুইজন সিকিওর স্টাইলে থাকলে এটা সেরা সম্পর্ক হয়।

ইমরান ও ওই মেয়ের যে সম্পর্ক, ওইটা এভয়ডেন্ট স্টাইল। তারা দুইজনই ওইরকম।

অভয়ের ক্যারেক্টারের এটাচমেন্ট স্টাইল কিছুটা সিকিউর এবং কিছুটা এভয়ডেন্ট। সে ডেভলাপমেন্ট স্টেইজে। নিজের সম্পর্কে এওয়ার হইতে থাকলে, ও সিকিওর পার্টনার পাইলে, সে সিকিওর স্টাইলে চলে যাবে। যেমন, ঋত্বিক তার প্রথম গার্লফ্রেন্ডের লগে এভয়ডেন্ট ছিল, ক্যাটরিনার লগে সিকিওর স্টাইলে চলে যাইতে পারছে।

ইমরান এভয়ডেন্টই থাকবে। তার বাপ সালমান হাবিবও এভয়ডেন্ট এটাচমেন্টের।

এখন এংশাস স্টাইলের কল্কির নতুন বয়ফ্রেন্ড কোন এটাচমেন্ট টাইপের হবে?

রিসার্চ ডেটায় ভরসা করলে, আমার অনুমান, কল্কির নতুন বয়ফ্রেন্ড হবে এভয়ডেন্ট স্টাইলের। এংশাসরা পার্টনারের থেকে দূরে থাকলে সন্দেহ, জেলাসি, ভয় এগুলাতে ভুগে। কল্কি ব্যাচেলর ট্রিপে চলে আসছিল খেয়াল করেন। অপরদিকে, এভয়ডেন্টরা রিলেশনশিপ ইমোশন এভয়েড করতে চায়, দ্রুত দূরে যাইতে চায়, আবার কাছে আসে, আবার দূরে যায়। ফলে, তার এংশাস পার্টনার কন্সট্যান্ট এক ইমোশনাল রোলার কোস্টারের মধ্যে থাকে। এবং এইটারেই যেহেতু এংশাস টাইপরা ভুল করে ভালোবাসা ভাবে, তাই তারা মনে করতে থাকে এখানে ভালোবাসা বেশি।

বাট আমি আশা করি, ওই গল্পের রিয়ালিটিতে, কল্কি তার ইমোশন সম্পর্কে সচেতন হোক, তার এটাচমেন্ট টাইপ বুঝুক, এবং এর টক্সিক দিকগুলা সম্পর্কে সচেতন হোক, এবং খুঁজে নিক সিকিওর পার্টনার। এবং ক্রমে তারা দুইজনই সিকিওর এটাচমেন্ট স্টাইল ডেভলাপ করে ফেলুক সম্পর্কে।

তিন

সালমান হাবিবের ক্যারেক্টার দায়িত্ব নেয় নাই। এইজন্য সে ভিলেন। একদিক থেকে এটা ঠিক।

কিন্তু দায়িত্ব নিয়া সে যদি এক মাঝারি লাইফ লিড করত, নিজের পটেনশিয়াল এক্সপ্লোর করত না, সাধারণ এক গুড স্বামী অ গুড বাপ হইত, ওইটা কী ভালো হইত?

কে ডিসাইড করবে কোনটা ভালো?

ইমরানের সৎ বাপ ইমরানরে ১০০% এর উপরে দিছে। সৎ পোলারে বুঝতে দেয় নাই সে আসল বাপ না। কিন্তু, ইমরান বাপের খোঁজ পাইয়াই ছুট দিল তারে দেখতে। সৎ বাপের দায়িত্ব নেয়ার দাম কি তখন ছিল?

সালমান হাবিব সাধারণ দায়িত্ববোধ সম্পন্ন বাপ হইলে হয়ত উপেক্ষিতই হইত।

দুনিয়াতে যারা দায়িত্ব নেয়, ট্রুলি স্যাক্রিফাইস করে, তাদের কয়জনরেই বা মানুষ বুঝে?

মানুষ ভুল বুঝবে। উপেক্ষা করবে।

দায়িত্ব নিলেও করবে। সালমানের শেষের দিকে যে পোলার জন্য মায়া ছিল না তা বলা যায় না।

কিন্তু সে লাইফের গুঢ় কঠিন সত্য বুঝে গেছিল যে, দায়িত্ব নিলেও উপেক্ষিত হতে হইত।