জীবনের উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত ডেভিড গেইল?

লাকানের মতে মানুষ যখন কোন বস্তু বা জিনিস আকাঙ্খা করে তখন সে আসলে  ঐ বিষয় বা বস্তুটি চায় না। বস্তুটি চাওয়ার ফ্যান্টাসীই তাকে রোমাঞ্চিত করে। এতেই সে আনন্দ পায়। প্রকৃত বস্তুটি পেলে তার এই আনন্দ থাকবে না। তার মনে হবে সে এটা চায় নি। স্ল্যাভো জিজেক তার এক লেকচারে বলেছিলেন, ধরা যাক লোকের এক বউ এবং একজন প্রেমিকা আছে। সে সব সময় ভাবে তার বউ যদি কোনভাবে নাই হয়ে যেত তাহলে সে তার প্রেমিকার সাথে সুখে বাস করতে পারত। একদিন সত্যি সত্যি তার বউ নাই হয়ে গেল। এবং লোকটি তার প্রেমিকাকে কাছে পেল। এখানে সাইকোএনালিস্টরা বলবেন, লোকটি তার প্রেমিকাকেও হারাবে। এমনটাই সাধারণত দেখা যায়। লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটি ঘটেছিল।

david gale

দ্য লাইফ অব ডেভিড গেইল (২০০৩) ফিল্মের শুরুর দিকে জ্যাক লাকানের ফ্যান্টাসী তত্ত্ব সম্পর্কে লেকচার দিতে দেখা যায় ডেভিড গেইলকে। এটাই ফিল্মের সবচেয়ে গভীর ডায়লগ। মানুষ যদি যা চায়, তার ফ্যান্টাসীই তাকে রোমাঞ্চিত করে, প্রকৃত বস্তু পাওয়া নয়; তাহলে বলা যায় ম্যাটেরিয়াল কোন বস্তু থাকে কখনো তৃপ্ত করতে পারবে না। তা নোবেল পুরস্কারই হোক বা মিলিওন ডলার।

So the lesson of Lacan is, living by your wants will never make you happy. What it means to be fully human is to strive to live by ideas and ideals and not to measure your life by what you’ve attained in terms of your desires but those small moments of integrity, compassion, rationality, even self-sacrifice.

শহীদুল জহিরের কোথায় পাব তারে গল্প লাকানের ফ্যান্টাসী তত্ত্বের আলোকে ব্যাখ্যা করে একটা লেখা পোস্ট করেছিলাম। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন।

মানুষের জীবন যাপন হওয়া উচিত কোন আদর্শ, কোন নীতি, ম্যাটেরিয়াল চাহিদার বাইরে বড় কিছুর জন্য। তাহলেই সে কেবল একটা তৃপ্তি পেতে পারে। মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে থাকার জন্যও এর দরকার আছে। যেমন, বক্সার মোহাম্মদ আলী যদি তার বক্সিং এবং ব্যাক্তিগত অর্জনেই সীমাবদ্ধ থাকতেন তাহলে তাকে নিয়ে এত মাতামাতি হতো না। তাকে নিয়ে এতো মাতামাতি, তাকে এত বড় হিরো হিসেবে অনেকে মানছেন এই কারণে যে ব্যাক্তিগত চাহিদা, পুরস্কার, টাকা পয়সা, খ্যাতির বাইরে গিয়ে তিনি বড় এবং মহান কিছুর উপর বেশী গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এগুলোই তাকে এক ভিন্ন এবং মহান রূপ দিয়েছে।

লাইফ অব ডেভিড গেইল ফিল্মে ডেভিড গেইল একজন প্রফেসর এবং মৃত্যুদন্ড বিলোপ আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে তাদের বিদগ্ধ লেখালেখি আছে। টকশোতে গভর্নরের সাথে মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে সে কথা বলে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে তারই এক সহকর্মী খুব বিভৎসভাবে খুন হয়। এবং তার ফিংগারপ্রিন্ট, সিমেন ইত্যাদি পাওয়া যায়।

ডেভিড গেইল তখন নিজেই পড়ে যায় মৃত্যুদন্ডের ফাঁদে।

গল্প বেশ ইন্টারেস্টিং, অতি নাটকীয় এবং থ্রিলিং শেষদিকে। মৃত্যুদন্ডের একটা বড় সমস্যা হলো তাতে নিরপরাধ ব্যাক্তি সাজা পেয়ে যেতে পারে। তাছাড়া, আরেকটি ধারণা আছে, মানুষ অন্য মানুষের প্রাণ নিতে পারে না বিচারের খাতিরে। মৃত্যুদন্ড বিরোধীদের আরো নানা ধরনের যুক্তি আছে। যুক্তিগুলো মানবিক। তবে সেসব যুক্তির জোরালো কোন উপস্থাপন নাই এই ফিল্মে।

ডেভিড গেইল চরিত্রে অভিনয়কারী কেভিন স্পেসীর ফ্যান্টাসী তত্ত্ব নিয়ে ডায়লগটির উপরেই ভর করে দাঁড়িয়েছে ফিল্মটি। এরকম এনিমি ফিল্মেও দেখা গিয়েছিল। সেখানেও অধ্যাপকের লেকচারের উপরই যেন অবস্থান করছিল পুরো ফিল্মের বিষয়বস্তু।