তলোয়ার, আগলি, আই হায়ারড এ কন্ট্রাক্ট কিলার এবং …

ইরফান খান অভিনীত হিন্দি ফিল্ম তলোয়ারের রাশোমন ইস্টাইলের গল্প ঠিক জমে নাই। রাশোমনে যেমন জমছে, সব সম্ভাবনারেই রাশোমনে ঠিক মনে হত তার পয়েন্ট থেকে। তলুয়ারে এরকম মনে হয় না। দর্শকের সাপোর্ট ইরফান খানের সাথে চলে যায় তার হিরোগিরির জন্য। এইসব ক্যারেক্টারে কলকাতার শ্বাশ্বত ভালো। শবরে যেমন করছে, রাফনেসের লগে সেন্স অব হিউমারের ব্যবহার। সম্প্রতি অঞ্জন দত্তের আরেক ব্যোমকেশ, যেটাতে যিশু গুপ্ত ব্যোমকেশ হইছেন সেইটাতে অজিতের অভিনয় ব্যোমকেশ থেকে ভালো। অঞ্জন দত্তের এই ব্যোমকেশ ভালো লাগে নাই। খুনি কে এইটা আগেই জানতাম, গল্প মনে ছিল; এছাড়া বাকী জিনিসও ভালো হয় নাই। আগেরটা বেশ ভালো ছিল।

তলোয়ার মার্ডার মিস্ট্রিতে রহস্যের পুরা মীমাংসা না করে সম্ভাবনা রাখার চেষ্টাটা ভালোই হইছে। রাশোমন এই ধারার সর্বকালের সেরা। তলুয়ারে সিস্টেমের সমস্যা, নায়বিচার ইত্যাদি বিষয়ে গতানুগতিক আলোকপাতও ভালো। তবে ফিল্মটা বেশি ফিল্মি। মিউজিকের ব্যবহার ভালো না। মার্ডার মিস্ট্রি হিসাবে আগলির ধারে কাছেও যেতে পারবে না। আগলির ন্যাচারিলিস্টিক স্টাইলটা ভালো।

অনুরাগ কাশ্যপের আগলি (২০১৪) ভালো। গল্প, ডায়লগ, মেকিং,অভিনয় ইত্যাদি সব মিলাইয়া গুড থ্রিলার যারে বলে। মেসেজটাও বেশ শক্ত। একটা পিচ্চি মেয়ের কিডন্যাপিং বা হারাইয়া যাওয়া নিয়া গল্পের শুরু হয়। কাশ্যপ তার প্রথম বিয়ার বাচ্চারে ঠিক মতো সময় দিতে পারেন নাই, সেই অপরাধবোধই এই ফিল্মের প্রথম অনুপ্রেরণা ছিল বলে তিনি জানাইছেন এবং এও জানাইছেন এইটা তার এখন পর্যন্ত বানানো সেরা ফিলিম। দেইখা ভালো লাগল।

CatONineTails

কাশ্যপের নো স্মোকিং দেখলাম। এরকম ফিল্ম বানানি সাহসের ব্যাপার। ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে স্যাটায়ারই মনে হইল। ডার্ক সারেয়াল স্যাটায়ার। এনিমিকেও এই জাতের ফিল্ম বলা যায়। শেষের দৃশ্য দুইটা ফিল্মেই চমকপ্রদ। এনিমিতে নায়ক দেখে যে তার বউ বৃহৎ মাকড়শা হইয়া গেছে। নো স্মোকিং এ জন আব্রাহাম দেখেন তার দুইটা আঙ্গুল নাই। এইরকম একটা অবস্থায় গিয়া শেষ। যেন মনে হয় শেষ হইল না, ব্যাখ্যাটা পাইলাম না। এই জাতীয় ফিল্মে দর্শকদের স্বাধীনভাবে অনুমানের সুযোগ থাকে।

আই হায়ারড এ কন্ট্রাক্ট কিলার আকি কাওরিজমাকির প্রথম ফিচার ফিল্ম। একমাত্র ফিল্ম এখন পর্যন্ত যা এই ফিনিশ ফিল্ম নির্মাতা ইংল্যান্ডে শ্যুট করেন। ১৯৯০ সালের নির্মান। কাহিনী হচ্ছে এক ফ্রেঞ্চ লোক জব হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। বাঁচার ইচ্ছা তার চলে যায়। তাই সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আত্মহত্যা করতে পারে না। পত্রিকায় ভাড়াটে খুনি বিষয়ে পড়ে সে একজন ভাড়াটে খুনি হায়ার করে তাকে খুন করার জন্য।

হায়ার করার পর আবার তার মরার ইচ্ছা চলে যায়। সে তখন খুনির হাত থেকে বাঁচার জন্য পালাতে থাকে।

ইন্টারেস্টিং গল্প। প্রধান চরিত্র এবং প্রধান ভিলেন চরিত্রের অভিনয় অসাধারণ কিন্তু ক্যামেরাবাজি এই ফিল্মে ভালো লাগে নাই। তবে কাওরিজমাকি তার স্বাক্ষর রাখছেন ফিল্মের চরিত্র নির্মানে। তারা হাসে না, প্রায় সবাই খালি সিগারেট খায়। ২০০২ সালে তার নির্মিত অতীতহীন লোকটির প্রধান চরিত্রের সাথে এই ফিল্মের প্রধান চরিত্রের মিল লক্ষণীয়। দুইটাতেই নায়িকা একজন একা লোক। চরিত্রগুলোর প্রায় সবাই একা একা।

এই আর কি। এখানে মানুষের সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছা যে কত দ্রুত বদলে যায়, এবং মানুষ যে অনুমানের উর্ধ্বে ইত্যাদি বিষয় স্পর্শ করা হয়েছে। শেষদিকে সাসপেন্স ফিল্মের আবহ আছে।

অনুরাগ কাশ্যপের আগলি দেখার পর তার একটা ইন্টারভিউ পড়ছিলাম। তিনি সেখানে নোলানের উদাহরন দিয়া বলছিলেন, ‘একজন পরিচালক একটা ফিল্মই বানান। গল্পের বদল হয়, বাজেট বাড়ে, কিন্তু ফিল্ম যেন একই।’

এই কথার আরেক উদাহরন হতে পারেন কাওরিজমাকি। তার নিজের চরিত্রের মতো চরিত্রদের নির্মান, যেন নিজের আলাদা একটা দুনিয়া তার, সেইটা দেখান। এইটা অনেক স্বেচ্ছাচারী কিন্তু এটাই তার স্টাইল।

ব্যোমকেশ বক্সীর যে দুইটা ফিল্ম হইছে নয়া একটা অঞ্জন দত্তের আরেকটা অরিন্দম শীলের, দুইটাই দেখলাম। অত ভালো লাগে নাই। অঞ্জন দত্তেরটা বেশি খারাপ লেগেছে। ওখানে ব্যোমকেশ যিশুর চাইতে অজিত শাশ্বত বেশি গোয়েন্দা। শাশ্বত শবর চ্চরিত্রে ভালো করছেন, গোয়েন্দাদের মধ্যে তার অভিনয় ভালো। আবির গোয়েন্দাও ভালো, তবে হর হর ব্যোমকেশে অত ভালো লাগে নাই যেমন আগেরটাতে লাগছিল। তবে অরিন্দম শীলের ফিল্মের চিত্রায়ন, জায়গা ইত্যাদি দারুন হইছে। কেমন যেন ফেলুদা ফেলুদা লাগে জায়গার দিক দিয়া। ফেলুদার গল্পে এইসব থাকে, ঐতিহ্যবাহী জায়গা, বাদশাহী আংটি ইত্যাদি।

ডারিও আরজেন্টোর ক্যাট ও’নাইন টেইলস, এনিমেল ট্রিলোজির ফিল্ম। বাকীগুলা ফোর ফ্লাইজ অন গ্রে ভেলভেট, দ্য বার্ড উইথ ক্রিস্টাল প্লুমেজ। এরা একই প্যাটার্নের ফিল্ম। কিছু খুন হয়, এর পিছনে আছে এক ভয়ংকর ম্যানিয়াক, এমন ধারণা করা হয়। বিভিন্ন সময়ে কোন কোন চরিত্র আঁচ করতে পারে বা জেনে যায় খুনি কে। কিন্তু কাউকে বলার আগেই সে খুন হয়। জাল্লোর স্বাভাবিক নিয়মে এই ফিল্ম গতিপ্রাপ্ত হয়েছে। জাল্লোর আরেকটা দেখলাম দ্য ডেভিল হ্যাজ সেভেন ফেইসেস। একেবারেই ভালো লাগে নাই।

Pigeon

ইন্টারেস্টিং লাগছে প্রিয় সুইডিশ নির্মাতা রয় এন্ডারসনের এ পিজিয়ন স্যাট অন এ ব্র্যাঞ্চ রেফ্লেক্টিং অন একজিজটেন্স। লিভিং ট্রিলজির তৃতীয় ফিল্ম। প্রথমটা সংগস ফ্রম দ্য সেকন্ড ফ্লোর দেখে অবাক এবং মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এটার গল্পও একই ধারার, অভিনয়ও। ট্র্যাডিশনাল কোন স্টোরি লাইন অনুপস্থিত। নির্মাতা একে ইতালিয়ান নব্য বাস্তববাদী ফিল্ম বাইসাইকেল থিভস দ্বারা অনুপ্রাণিত বলেছেন। রয় এন্ডারসনের ফিল্ম ব্যতিক্রম, ডিপ, এবসার্ড এবং প্রতিটি দৃশ্যে অসাধারণ। একটা জিনিস দেখা যায় তার ফিল্মে, ফ্রেমে একই সাথে দুটি ঘটনা ঘটতে থাকে মাঝে মাঝে।