নাসিম নিকোলাস তালেবঃ সফলতা কী?

নাসিম নিকোলাস তালেব একজন আধুনিক দার্শনিক এবং একজন স্মার্ট লোক। ছোটবেলায় পন্ডিতদের দেখে তার পন্ডিত হবার ইচ্ছা জেগেছিল। হয়েছেনও তাই। তার বই ব্ল্যাক সোয়ান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রকাশিত বারোটি মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল বইয়ের মধ্যে একটি, সানডে টাইমসের বিচারে।

তালেবের অন্যান্য বই ফুল বাই র‍্যানডমনেস, এন্টি ফ্র্যাজাইলিটি, দ্য বেড অব প্রোকাস্টস ইত্যাদি।

আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতে তিনি প্রথমবারের মতো গ্রাজুয়েট ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিয়েছেন। সেখানে সফলতা বা সাকসেস, লাইফটিপস ইত্যাদি নিয়ে কিছু কথা বলেছেন তিনি। সেগুলোর কিছু অংশ এই লেখায় আছে।

ছবিঃ নাসিম নিকোলাস তালেব
ছবিঃ নাসিম নিকোলাস তালেব

 

সফলতা বিষয়েঃ

আপনি প্রতি সন্ধ্যায় দাঁড়ালেন আয়নার সামনে, দাড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করলেন, আঠারো বছরের আপনি কি এই যে বড় আপনি তারে দেখে কি লজ্জিত হত? এই আঠারো বছরের আগে আগেই লাইফ মানুষরে করাপ্ট করা শুরু করে দেয়। তারেই আপনার একমাত্র বিচারক বানান। আপনার মান সম্মান, খ্যাতি, সম্পদ বা সামাজিক অবস্থানরে নয়। যদি আঠারো বছরের আপনি লজ্জিত না হয়, তাহলে আপনে সফল। বাকী যেসব সংজ্ঞা আছে সফলতার, এরা ভঙ্গুর আধুনিকতার নির্মান।

দ্য বেড অব প্রোকাস্টস-এ তালেব লিখেছেন-

শৈশবকালের শেষদিকে আপনি যা হবেন বলে স্বপ্ন দেখেছিলেন মধ্যবয়েসে তাই হয়ে যাওয়াই সফলতা।

তালেব তার বক্তৃতায় আরো বলেন,

সফলতা হলো ভঙ্গুরতার অনুপস্থিতি। আমি অনেক বিলিনিয়ারকে দেখেছি সাংবাদিকদের ভয়ে তটস্থ, অনেক ধনী লোককে দেখেছি নিষ্পিষ্ট হয়ে যেতে কারণ তার শালা তার চেয়ে বেশী সম্পদশালী হয়ে গেছে, নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত একাডেমিকসদের দেখেছি যারা ইন্টারনেটে মন্তব্য করতে ভয় পায়। যত উপরে আপনি উঠবেন, নিচে পড়লে ব্যতা তত বেশী লাগবে। যত মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে তাদের প্রায় সবার ক্ষেত্রেই বাহিরের সফলতা আসে অনেক ভঙ্গুরতা এবং উচ্চ নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে।

 

তালেব সফলতার চাইতে আত্মসম্মানের গুরুত্ব দিয়েছেন। আত্মসম্মানকে উল্লেখ করেছেন রোবাস্ট হিসেবে। এর সাথে সম্পর্কিত রাশান গণিতজ্ঞ গ্রেগরি পেরেলম্যানের গল্প আছে। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন।

 

লাইফ টিপস বা জীবন উপদেশ বিষয়েঃ

জীবন সম্পর্কে উপদেশের ব্যাপারে তালেবের বক্তব্য হল তিনি জীবনে যেসব বড় উপদেশ পেয়েছেন তা তিনি অনুসরন করেন নি এবং সবগুলোই ভুল প্রমানিত হয়েছে। ফলে তিনি উপদেশ দেন নি, নিজে কি ধরনের ট্রিক ব্যবহার করেন তা উল্লেখ করেছেন। এগুলোর কয়েকটি হলোঃ

১। খবরের কাগজ পড়বেন না বা যে মাধ্যম থেকে খবর আসে তা ফলো করবে্ন না। গত বছরের পত্রিকাগুলো পড়তে পারেন। এর মানে এই না যে খবরকে অগ্রাহ্য করা। এটা হচ্ছে খবর থেকে ঘটনায় যাওয়া নয়, ঘটনা থেকে খবরে যাওয়া।

এই প্রক্রিয়াটা তালেব উল্লেখ করেছেন এটা বুঝাতে যে, পুরনো পত্রিকা পড়লে আমরা বুঝতে পারব অনেক ভবিষ্যতবানী, অনেক সম্ভাবনা বাস্তব রূপ লাভ করে নি। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম সম্ভাবনাময় অনেক জিনিসও বাস্তব হয়েছে। এই প্রক্রিয়া নিশ্চয়ই আমাদের বুঝ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

 

২। কোন কিছু যদি ফালতু মনে হয়, তাহলে তা জোরের সাথেই বলুন। হয়ত প্রথমে আপনার কিছু ক্ষতি হবে কিন্তু দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এটা অভঙ্গুর (এন্টি ফ্র্যাজাইল) প্রমাণিত হবে। আমি যখন অখ্যাত লেখক ছিলাম তখন ব্লুমবার্গ রেডিও ডেকেছিল ইন্টারভিউ এর জন্য। প্রশ্নকর্তার কথা ফালতু মনে হওয়ায় আমি উঠে চলে আসি। তিন বছর পরে ব্লুমবার্গ ম্যাগাজিন আমাকে নিয়ে কভার স্টোরি করে।

৩। বিগ বসের চাইতে ডোর ম্যানের সাথে অধিক সম্মানযুক্ত আচরন করুন।

 

নাসিম তালেবের ব্ল্যাক সোয়ানের একটি আইডিয়া থেকে একটি মানসিক নকশা পোস্ট দেব আশা করছি, ভবিষ্যতে।

পুরো বক্তৃতার লিংক