ফ্রান্স বিষয়ে যে কারণে বিন লাদেনের আগ্রহ ছিল

তালেবান নেতা ওসামা বিন লাদেন

এই বছর তালেবান নেতা ওসামা বিন লাদেনের কিছু বইয়ের লিস্ট প্রকাশ করে আমেরিকান সরকার। সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বই ছিল ফ্রান্স নিয়ে। ফ্রান্সের সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বেতন বৈষম্য, মিলিটারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, ডিফেন্স ইন্ড্রাস্ট্রি এবং তার ওয়াটার প্রোফাইল, ফ্রান্সের নিউক্লিয়ার পলিসি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় ছিল। প্রায় উনিশটি ডকুমেন্টস ছিল ফ্রান্স নিয়ে।

বিন লাদেন ফ্রান্স নিয়ে এত আগ্রহী হয়ে উঠেছিল কেন?

পত্রিকাগুলোতে অনেকে লিখেছেন, তারা আন্দাজ করেন লাদেন হয়ত ফ্রান্সে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পণা করছিল।

কিন্তু ফ্রান্স কেন?

এই প্রশ্ন তৈরী এবং উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলাম।

প্রথমত, হয়ত লাদেনের কাছে কোন কারণে ফ্রান্সে আক্রমণ সম্ভব বা সহজ মনে হয়েছে।

কেন?

এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য মিখায়েল হানেকের “হিডেন” ফিল্মকে বেছে নিলাম। হিডেনে একটি চমৎকার বিষয় তুলে এনেছেন হানেকে। যেটা নিয়ে আমার ব্লগে লিখেছিলাম- হানেকের হিডেন রহস্যঃ নতুন ধরনের রহস্য নির্মান। এছাড়া মিখায়েল হানেকের প্যারিস রিভিউতে প্রকাশিত স্বাক্ষাতকারের অনুবাদও করেছিলাম একসময়।

ফিল্মে দেখা যায় এলিট টকমারানী জর্জস এক অদ্ভুত সমস্যায় পড়ে যান। সেই সমস্যার জন্য তিনি দোষারূপ করতে থাকেন ফ্রেঞ্চ-আলজেরিয়ান মাজিদকে।

মাজিদের বাবা মা ১৯৬১ সালে প্যারিস গণহত্যায় ফ্রেঞ্চ পুলিশের হাতে খুন হয়েছিলেন। তারপর এতিম মাজিদকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন সেই টকমারানির বাবা মা।

কিন্তু টকমারানি ছোটবেলাতেই ভিন্ন জাতের মাজিদকে সহ্য করতে পারেন নি। তিনি একটি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মাজিদকে নৃশংস হিসেবে উপস্থাপন করেন তার পিতা মাতার কাছে। ফলে তার পিতা মাতা মাজিদকে আর দত্তক নেন নি।

মাজিদ বড় হয় এতিমখানায়।

অনেক বছর চলে যায়। টকমারানি বড় হয়ে বই নিয়ে টিভিতে লেখক, বুদ্ধিজীবিদের সাথে টকশো করেন। তিনি নিজেকে মনে করেন এনলাইটনমেন্টের আলোতে আলোকিত। তার বউও প্রকাশক। তার ঘর পুরা বইয়ে ভর্তি। এমনকী কিচেনেও বই।

কিন্তু যখনই তিনি অদ্ভুত সমস্যাটায় পড়লেন তখনই তার মনে হল এ নিশ্চয়ই মাজিদের কাজ। মাজিদ নিশ্চয়ই তার উপর প্রতিশোধ নিতে চায়।

মাজিদ যত অস্বীকার করে তিনি তত রেগে যান। অবশেষে মাজিদ তার নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করার মাধ্যমে প্রমান করতে চায় সে কোন কিছুর পিছনে নয়।

কিন্তু তবুও এলিট টকমারানি মাজিদকে বিশ্বাস করেন নি। তিনি এই ভেবে স্বস্তি পান যে মাজিদ মারা গেছে, তিনি তার সমস্যা থেকে মুক্তি পেলেন।

হানেকে একজন চমৎকার শিল্পী। তিনি দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কীভাবে এই এলিট শ্রেণীদের কাছে মাজিদরা অর্থহীন। মাজিদদের দুঃখ বা জীবন সেই এলিট, প্রগ্রতিশীল, এনলাইটনমেন্টের আলোতে আলোকিত বলে ভাবতে থাকাদের কখনো স্পর্শই করে না।

এরা যতই তত্ত্ব জ্ঞানের চর্চা করুক, যতই নিজেদের আলোকিত ভাবুক তাদের ভিতরের রূপটা কদর্য।

হানেকে ফ্রান্সের লুকায়িত ইতিহাসে খোঁচা দিয়ে এক বাস্তবতা তুলে ধরেছেন মাজিদ এবং সেই টকমারানির গল্পের ভেতর দিয়ে।

এই ধরনের বিভাজন এবং বাস্তবতা উগ্রপন্থীদের জন্য সহায়ক। ধারণা করি, ফ্রান্সের ব্যাপারে বিন লাদেনের আগ্রহ থাকার এটা একটা বড় কারণ।

 

ফন্ট বড় করুন-+=