বস্তিবিদ্যা
মার্ক্সবাদী বুদ্ধিজীবি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, “বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষিত মানুষের বস্তি হচ্ছে। বস্তিতে যে সংস্কৃতি আছে, তা হচ্ছে এখানে। হানাহানি, কলহ, ছিনতাই ও রাহাজানি হচ্ছে। ” (প্রথম আলো, ১৪ই ডিসেম্বর ২০১৫)।
এই বক্তব্যের কারণে অনেকেই তার সমালোচনা করছেন। বলা হচ্ছে এই কথার মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে বস্তিবিদ্বেষ।
কিন্তু বস্তি আসলে কী? গরীব এক ধরনের মানুষের বসবাসস্থল। সেখানে কম জায়গায় লাগালাগি ঘর থাকে। অনেক মানুষের বসবাস, এরা বেশিরভাগই হয় শ্রমজীবি। যেহেতু সমাজ ব্যবস্থা এখানে এরকম যে শ্রমজীবিদের শোষন করে ধনী হচ্ছে আরেক শ্রেনী ফলে এই বস্তিবাসীদের মধ্যে অর্থাভাব থাকে। এই অর্থাভাব থাকার দরুন বস্তবাসীর ছেলেমেয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষা পায় না, তারা বিভিন্ন অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়।
বস্তিতে তাই (এবং আরো নানা অর্থনৈতিক কারণে) হানাহানি, কলহ ইত্যাদি লেগেই থাকে।
যারা বস্তিতে বসবাস করে তারাও বস্তিতে থাকতে চায় না। তারাও ফ্ল্যাটবাড়ি কিংবা উঠানওয়ালা ছিমছাম বাসস্থানের স্বপ্ন দেখে। বস্তি যদি ভালো এবং মহিমাময় হত তাহলে বস্তিবাসীরা বস্তিকে পছন্দ করত।
তারা সেটা করে না। বস্তিবাসীরা নিজেরাই এক অর্থে বস্তিবিদ্বেষী। সমাজ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সুষম বন্টন নিশ্চিত হলে বা তারা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে তাদের বস্তিতে থাকতে হত না। এই কারণে এটা এভাবেও বলা যায়, বস্তিবাসীরা হচ্ছে এমন কিছু লোক যাদের সামাজিক অব্যবস্থাপনার কারনে বস্তিতে থাকতে হচ্ছে।
তাই সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বস্তি হয়ে যাচ্ছে বলেছেন এতে বস্তি কিংবা বস্তিবাসীর প্রতি অসম্মান করা হয় নি। তার কথায় পরোক্ষভাবে উঠে এসেছে বস্তির বাস্তবতা, যে বাস্তবতা মধ্যবিত্তের পরিচিত।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বক্তব্যের মধ্যে আভিজাত্যবোধ রয়েছে বলে যেসব বুদ্ধিজীবি অভিযোগ করছেন, তাদের অভিযোগ ঠিক নয়। উপরন্তু, তাদের মধ্যে একধরনের পলায়নপর মনোবৃত্তি রয়েছে ফলে তারা বস্তির রুঢ় বাস্তবতা এড়িয়ে যেতে চান। তাদের কথা এবং বক্তব্য এই সামাজিক অব্যবস্থাপনা, যা বস্তিবাসীদের বস্তিবাসী করে রাখে তার পক্ষে যায়।
১২/১৯/২০১৫
বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে গড়ে উঠা বস্তি, সেখানকার পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে বণিক বার্তায় একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে ২২ জানুয়ারি, ২০১৬ তে। রিপোর্টিতে বস্তি’র একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যাবে।