—-
একটা ইন্টারেস্টিং গল্প আছে যা আপনারা হয়ত পড়ছেন। এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে কিছু চ্যাংড়া পোলা গেল একটা পুকুরের ধারে। গিয়া সেই পুকুরে ঢিল ছুঁড়তে লাগল। এইটা নাকী তাদের খেলা!
অবশ্য এইরকম একটা খেলার মত জিনিস আছে। চ্যাপ্টা আকারের ঢিলরে তেরছাভাবে পানিতে ছুইড়া দেয়া। তখন ঢিলখানা লাফাইতে লাফাইতে অন্য পাড়ে গিয়া লাগে। এই ধরনের খেলা অবশ্য আমরা অনেকেই খেলছি। ঢিলরে লাফাইয়া অন্য পাড়ে নিয়া যাওয়া বড় কৃতিত্বের কাজ ছিল।
যাইহোক, গল্পে ফেরা যাক। সেই পুকুরে থাকত কিছু ব্যাঙ। তারা ঢিলের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হইয়া গেল তাদের সর্দার বুড়া ব্যাঙের কাছে। বুড়া ব্যাঙ সব শুইনা পানির উপরে মাথা বাইর কইরা ছেলেদের বলল, “হেই পোলারা, যা তোমাদের কাছে খেলা, আমাদের কাছে তা মৃত্যু।”
গল্প এইখানে শেষ। এই গল্পের মেসেজটা বেশ ভালো। একজনের খেলা অন্যজনের মৃত্যুর কারণ হইতে পারে।
একটা আধুনিক উদাহরন দেই। ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ হবে কাতারে। সেখানে দারুণ সব স্টেডিয়াম ইত্যাদি নির্মানের কাজে অভিবাসী শ্রমিকদের খুবই মানবেতর ভাবে রাখা হইতেছে এমন খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে আসছে নিয়মিতভাবে। এর মাঝে বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্টের বরাতে ২০১৩ পর্যন্ত মৃত্যু হইছে ১২০০ এর অধিক শ্রমিকের। গল্পের ব্যাঙ না, মানুষ এরা। আমাদের দেশেরও একটা উদাহরন দেয়া যায়।
টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের কালে সিলেট স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানের করতে জমিতে টান পড়ে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের তো করতেই হবে। তা না হইলে দেশের ভাবমূর্তির কী হবে, দেশের বিজ্ঞাপন কী হবে।
ফলে চা শ্রমিকদের জমি কেড়ে নেয়া হইল কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই। কাজ শুরু হইল জোরেসোরে। সীমানা প্রাচীরের পাশে স্থান হল চা শ্রমিক পরিবারের। আশংকা ছিল প্রাচীর ধ্বসে পড়তে পারে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এতে কান দিলেন না। এরপর ঠিকই একদিন রাতে প্রাচীর ভাইঙ্গা পড়ল। চা শ্রমিক পরিবারের তিন ভাই বোন ঘুমে ছিল। ঘুমন্ত অবস্থাতেই মইরা গেল তারা। তাদের শেষ আর্তনাদ অভিশাপ হয়ে মিশে গেল সবুজ স্টেডিয়ামে। এখনো গিয়া যদি নিরালে বইসা আপনে কান পাতেন ওইখানে, শুনতে পাবেন হয়ত।
এই দুই স্টেডিয়ামের গল্পে ব্যাঙের জায়গায় আছে দরিদ্র ক্ষমতাহীন মানুষেরা। আর বালকের জায়গায় আছেন দেশগুলার ক্ষমতাবানেরা। এইরকম গল্পের বাস্তব উদাহরণ আরো অনেক দেয়া যেতে পারে। কিন্তু আর উল্লেখ করতেছি না, যাদের আগ্রহ আছে তারা খুইজা নিবেন।
ব্যাঙের গল্পের ট্র্যাজেডিটা হইল যখন বাস্তব জীবনে একই ঘটনা ঘটে তখন বুড়া ব্যাঙের কথা কেউ শুনতে পায় না। রূপকথার গল্পে পশুপাখিরা কথা কইতে পারে। কিন্তু বাস্তব জীবনে সেইটা সম্ভব না। ফলে ধরেন বাস্তবে আপনি বন্ধুদের লগে গিয়া পুকুরে ঢিল ছুঁড়তেছেন। ব্যাঙেরা কষ্ট পাইতেছে। এইটা আপনি বুঝতেছেন না। একটা ব্যাঙ মাথা তুইলা তার ভাষায় কিছু কইল। আপনারা তার ভাষা না বুইঝা উলটা তারে ঢিল মারতে পারেন।
জিনিসটা এমন। এখানে ক্ষমতাহীন ব্যাঙেরা সংখ্যালঘু দূর্বল। আপনারা হইলেন প্রতাপশালী। তারা আইসা নিজেদের কষ্টের কথা কইব এই আশায় বইয়া থাকলে হবে না। বিভিন্ন ধরনের বাঁধা অতিক্রম কইরা ক্ষমতাহীন ভোক্তভোগীর ক্ষীণ আওয়াজ আপনার কাছে পৌছাইবে না।
এখানে যে নকশাটা আপনি ব্যবহার করতে পারেন তা হইল, দলবিচ্ছিন্ন হওয়া। বন্ধুরা ঢিল ছুঁড়তেছে, তখন আপনি একটি দূরে সইরা গিয়া সমস্ত ব্যাপার পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। আপনি ব্যাঙ এবং অন্যান্য জলজ প্রানীদের দিক থেকে ব্যাপারটা দেখা চেষ্টা করতে পারেন।
একইভাবে যেকোন ঘটনায় ঢিল ছোঁড়াদের দল থেকে বাইর হইয়া ঢিল খাইতে থাকাদের দিক থেকে ব্যাপারটা দেখতে পারলে আপনি একটা সামগ্রিক চিত্র পাইবেন। এই নকশার নাম দেয়া গেল ব্যাঙ নকশা। চিন্তায় এই নকশা আপনি ব্যবহার করতে পারেন সামগ্রিক চিত্র পাইতে এবং নির্যাতীত, ক্ষমতাহীন ভোক্তভোগীর দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টারে দেখতে।
সংযুক্তিঃ
মানসিক নকশা নিয়া জানতে এবং অন্যসব নকশার লিংক পাইতে এই বিষয়ে প্রথম পোস্ট দেখতে পারেন।
এই লেখা সম্পর্কে আপনার কোন মতামত বা কোন মানসিক নকশা শেয়ার করতে চাইলে মানসিক নকশা ফেইসবুকে গ্রুপে যোগ দিতে পারেন।