কয়েকদিন আগে একটা নিউজ শোনা গেল যে বাংলাদেশ সরকার ফেইসবুকে এইরকম চিঠি দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে ফেইসবুক আইডি খুলতে যেন জাতীয় পরিচয় পত্র লাগে। নিরাপত্তা ইস্যুতে তারা এই অবস্থান নিতে চাইতেছেন। জনগনের নিরাপত্তার দিকটা দেখা সরকারের দায়িত্ব এবং এ ব্যাপারে তারা যেকোন মানুষের ধ্বংসাত্মক কার্যাবলী বন্ধ করতে পারেন। এবং আইন অনুযায়ী তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে পারেন।
কিন্তু অনেকে নৈতিক কারণ দেখিয়ে ফেইক আইডির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাদের মতে, ফেক আইডিগুলো আসল নয় ফেইক তাই এগুলো খুব খারাপ । তারা ফেইক আইডিগুলোকে অনৈতিক বলেন এবং এইজন্য তার বিনাশ চান।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ফেইক আইডিগুলো অরিজিনাল বলে পরিচিত ফেইসবুক আইডিগুলোর মতই ফেইক বা এগুলোর থেকে অপেক্ষাকৃত কম ফেইক।
ফেইক আইডি বলতে আমরা বুঝি যে এর পিছনে একজন রক্তমাংসের মানুষ আছে, সে আইডিতে প্রকাশিত তথ্যের মত না, আলাদা। হয়ত সে ছেলে কিন্তু মেয়ের রূপ প্রকাশ করছে, হয়ত সে খুনী কিন্তু সাধুর রূপ ধরে আছে, হয়ত হিংস্র হিংসাপরায়ন কিন্তু রূপ ধরে আছে দয়ালু ব্যক্তির ইত্যাদি।
এই যে তার একটা ফেক মাস্ক, এটা প্রতিটি ফেসবুক আইডির ক্ষেত্রে সত্য। সবাই যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে সে তেমন নয়। একজন আইডির মালিক নিজে যা সেটা পুরোপুরি তার তথাকথিত আসল আইডির ফেইসবুকে প্রকাশ করে না। সব প্রকাশ করা তার পক্ষে বিব্রতকর হয়ে দাঁড়াবে।
এ ব্যাপারে কবি নীরেন্দ্রনাথের কবিতার লাইন পড়া যেতে পারেঃ
“তুমি তাকে যা-ই ভাবো, সে তা নয় যেনো,
তেমন ছিল না কোনকালে।
তুমিও তেমন নও, যা-ই সে ভাবুক
অন্য লোক তুমিও আড়ালে।”
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এই কবিতা ফেইসবুক নিয়ে লিখেন নি। লিখেছেন বাস্তব জীবনে মানুষে মানুষে মুখোশের খেলা নিয়ে। বাস্তব জীবনে মানুষ নানাবিধ মুখোশ পরিধান করে থাকে। তার ভেতরের সব কিছু পারিপার্শ্বিক বা সামাজিক কারণে সে প্রকাশ করতে পারে না। অতি স্বার্থপর ও অহংকারীজনও বিনয়ী ভাব ধরে থাকতে পারে। অন্তরে ঘৃণা পুষে হাসিমুখে ভালোবাসার অভিনয় করে যেতে পারে মানুষ। এগুলো তার মুখোশ। মানুষের ভিন্ন পরিস্থিতিতে এই ভিন্ন ভিন্ন মুখোশের বৈচিত্রই গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ফিল্ম ইত্যাদির নানা শাখার রসদ।
যারা অপেক্ষাকৃত কম মুখোশ পরিধান করে চলে জীবন যাপনে তারা অসামাজিক বলে বিবেচীত হয় এবং একেবারে যারা মুখোশহীন তারা পরিচিতি পায় উন্মাদ হিসেবে।
মানুষের বাস্তব জীবনের মুখোশ, তার তথাকথিত আসল আইডির মুখোশ ইত্যাদি বিবেচনায় নিলে ফেইক আইডির মুখোশকে অনৈতিক বলে বিনাশ চাওয়াটা অযৌক্তিক এবং অনৈতিক হয়ে দাঁড়ায়।