ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে ১৪৬৯ সালের ২ মে জন্মগ্রহন করছিলেন দার্শনিক এবং রাজনৈতিক চিন্তক নিকোলো ম্যাকায়াভেলী। দ্য প্রিন্স গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি সেই সময়ের ইতালির শাসক লরেঞ্জো দ্য মেডিসিকে উপদেশ এবং দিক নির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা নিছিলেন। বইটি বিতর্কিত এবং অনৈতিক বলে বিবেচিত হইছে বিভিন্ন সময়ে।
ইতালির শাসক লরেঞ্জো ম্যাকায়াভেলীর উপদেশ আমলে নেন নাই। এই গুরুত্বপূর্ন বইখানা রাজনৈতিক চিন্তা এবং রাষ্ট্রনীতি বুঝতে অনেক সাহায্য করতে পারে। আমি চিন্তকদের বইটা পড়তে এবং তা নিয়া চিন্তা করতে সাজেস্ট করি।
যাইহোক, প্রফেসর সঞ্জয় বক্সী বলেন, হার্বার্ড বিজনেস ইস্কুলের শিক্ষক জোসেফ এল বাদারাক্কো হার্বার্ড বিজনেস ইস্কুলের “মোরাল লিডার” কোর্সে এথিকস শিখাইতে গিয়া ম্যাকায়াভেলীর দ্য প্রিন্স ব্যবহার কইরা থাকেন। ক্লাসে এইটা পড়ানির কালে চার ধরনের অবস্থার তৈয়ার হয়।
এক – কিছু স্টুডেন্ট মনে করে এইটা একটা ফাউল বই। এমন এক ব্যাক্তি লেখছেন যিনি সেইসময় দূরাবস্থায় ছিলেন। তাই এইরকম একটা কিছু লেইখা, রাজার মন জয় কইরা সুবিধা নিতে চাইছেন।
দুই – এরা মনে করে বইটাতে কিছু কমন সেন্সের প্রয়োগ আছে। অমলেট বানাইতে হইলে কিছু ডিম ভাঙতে হইব, ভালো কাজ করতে হইলে কিছু খারাপ কাজ করতে হইব, এমনই বলছেন ম্যাকায়াভেলী।
তিন – যারা মনে করে এইটা একটা শয়তানি বই তাই এখনো ঠিইকা আছে। শয়তানি বই কারণ কোন সৃষ্টিকর্তার কথা নাই, আধ্যাত্মিকতার কথা নাই, চার্চের কথা নাই, আইনের কথা নাই। সংস্কৃতি টংস্কৃতিও নাই।
চার- বাদারাক্কোর মতে এই শ্রেণীর স্টুডেন্টরা বইটার সবচেয়ে চমৎকার দিক দেখতে পায়। এরা দেখে যে বইটা দুনিয়ারে অন্যভাবে দেখতে শেখায়। এই অন্যভাবটা শয়তানি না, বাস্তবতার দিক থেকে দেখা। বাদরাক্কো মনে করেন যেসব স্টুডেন্টরা এইভাবে বইটারে দেখে তারা বাস্তবের দুনিয়ায় বিরাট পরিবর্তন আনতে পারবে, কোন কাল্পনিক পৃথিবীতে নয়।
দ্য প্রিন্স এবং ম্যাকায়াভেলী নিয়া সামান্য ভূমিকার পরে বইটা থেকে পাওয়া এক চিন্তাপদ্বতির দিকে যাওয়া যাক।
উপরে আধুনিক পলিটিক্যাল সায়েন্সের জনক নিকোলো ম্যাকায়াভেলীর একটা ছবি। উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া। এঁকেছেন স্যান্টি ডি টিটো।
চিন্তার অভ্যাস – ফিলিপিওমেন
আর্কেয়ান শাসক ফিলিপিওমেনের এক গুণের কথা নিকোলা ম্যাকায়াভেলী উল্লেখ করেছেন তার বিখ্যাত পুস্তক ‘দ্য প্রিন্স’ এ। ফিলিপিওমেন মাঝে মাঝে বন্ধু বান্ধবদের-সৈন্য-সহকারীদের নিয়া শিকারে বের হইতেন। যাইতে যাইতে হঠাৎ অজানা অচেনা কোন পাহাড় বা ঝোঁপের সামনে থমকে দাঁড়াইতেন। সবাইরে বলতেন, মনে করো এই ঝোঁপে লুকাইয়া আছে শত্রুরা। আমাদের আক্রমণ করবে। এখন আমরা বাঁচব কেমনে?”
এইভাবে আলাপ আলোচনা শুরু হইত। একেকজন একেক মত দিতেন। তাদের মত ভুল হইলে ফিলিপিওমেন সেই ভুল ধরাইয়া দিতেন। ঠিক হইলে গ্রহন করতেন। এইভাবে তিনি নিজেরে এবং তার সহকারীদের যুদ্ধের জন্য বা আকস্মিক বিপদ মোকাবেলার জন্য তৈরী কইরা রাখতেন। এর ফল হইল দারুণ। ফিলিপিওমেন প্রতিটা যুদ্ধেই জিতছেন।
ম্যাকায়াভেলী যেহেতু ইতালির শাসকরে উপদেশ দিতেছিলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি অভ্যাস এবং সর্বদা তৈরী থাকার বিষয়টা উল্লেখ কইরা শাসকরে সামরিকভাবে দক্ষ হইতে হবে এটা বলছেন। যুদ্ধে পারদর্শীতা অর্জনের এই নিয়ম চিন্তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বিভিন্ন ঘটনা নিজে কল্পনা কইরা নিয়া সেই ব্যাপারে চিন্তকেরা ভাবতে পারেন। চিন্তক বন্ধুদের সাথে এই নিয়া আলোচনা করতে পারেন। যুক্তি, পালটা যুক্তির মাধ্যমে চিন্তারে শাণিত করতে পারেন। ফিলিপিওমেন যখন তার সহকারীদের বলছিলেন ঝোঁপের পিছনে শত্রু আছে তখন সত্যি সত্যি শত্রু ছিল না। একটা কাল্পনিক অবস্থা তৈয়ার করে তিনি যুদ্ধের পরিবেশ বা অনুভূতি আনতে চাইছেন। সেইভাবে চিন্তকেরাও কাল্পনিক যেকোন বিষয় ভাইবা, যেকোন ইন্টারেস্টিং সমস্যা তৈয়ার কইরা তা নিয়া ভাবতে পারেন।
ফিলিপিওমেন নিজে চিন্তক ছিলেন তার এই কাজে তা স্পষ্ট বুঝা যায়। তার এই প্রক্রিয়া ব্যবহার চিন্তার কাজে মজাও আইনা দিতে পারে। মজা না থাকলে একটা জিনিস বেশিক্ষণ করা যায় না। ফলে এই পদ্বতিতে কাজ হইবার সম্ভাবনা বেশি।
সংযুক্তিঃ
মানসিক নকশা নিয়া জানতে এবং অন্যসব নকশার লিংক পাইতে এই বিষয়ে প্রথম পোস্ট দেখতে পারেন।
এই লেখা সম্পর্কে আপনার কোন মতামত বা কোন মানসিক নকশা শেয়ার করতে চাইলে মানসিক নকশা ফেইসবুকে গ্রুপে যোগ দিতে পারেন।