রবীন্দ্রনাথের বুঝা এবং না বুঝা

মানুষরে শিখাইতে হবে কীরূপে চিন্তা করতে হয়, কি নিয়া চিন্তা করতে হবে এটা শিখানোর কিছু নাই। বরং আপনি যদি কাউরে শিখাইয়া দেন এই এই বিষয় নিয়া খালি চিন্তা করবা, তাইলে তার আর চিন্তা করা শিখা হইল না।

শিশু অবস্থায় বা ছোটকাল হইল চিন্তা করা শিখার দারুণ সময়। আমাদের স্কুলগুলোর উচিত ছিল এর দায়িত্ব নেয়া। তাইলে শিশুরা চিন্তা করতে শিখত এবং যখন তারা দেখতে পাইত বইয়ে আছে,

পাখী-সব করে রব, রাতি পোহাইল

কাননে কুসুমকলি, সকলি ফুটিল

রাখাল গরুর পাল, ল’য়ে যায় মাঠে

শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে

(কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কার) এবং দেখতে পাইত বইয়ে ছবি সূর্য উঠতেছে আর রাখাল লইয়া যাইতেছে গরুর পাল মাঠে; তখন তাদের মনে এই প্রশ্নের উদয় হইত, আমাদের বয়েসী পোলা রাখাল সে ইস্কুলে না গিয়া মাঠে গরু রাখালি করতে যায় কেন? এই রাখাল এরা কি অন্য কোন প্রজাতি নাকী? এদের গরু রাখাল হিসাবে কেন পরিচিত করাইয়া দেওয়া হয় বইয়ে?

তারা এইসব প্রশ্ন করত মাস্টরদের। মাস্টরেরা তখন বিব্রত হইতেন মনে হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শিশুদের জ্ঞাণ এবং বুদ্ধিবিকাশের জন্য শিশুসাহিত্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা শিশুসাহিত্য শুরু হইছে মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উপেন্দ্রকিশোর রায়, সুকুমার রায়দের হাত ধইরা। এর আগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নীতিকথামূলক শিশুতোষ গল্প লেখছিলেন।  শিশুসাহিত্য নিয়া বা বুঝা না বুঝা নিয়া রবীন্দ্রনাথের ইন্টারেস্টিং একটা ভাবনা আছে যা তার স্মৃতিকথায় পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছেনঃ

“আমার বাল্যকালে বাংলাসাহিত্যের কলেবর কৃশ ছিল। বোধ করি তখন পাঠ্য অপাঠ্য বাংলা বই যে-কটা ছিল সমস্তই আমি শেষ করিয়াছিলাম। তখন ছেলেদের এবং বড়োদের বইয়ের মধ্যে বিশেষ একটা পার্থক্য ঘটে নাই। আমাদের পক্ষে তাহাতে বিশেষ ক্ষতি হয় নাই। এখনকার দিনে শিশুদের জন্য সাহিত্যরসে প্রভূত পরিমাণে জল মিশাইয়া যে-সকল ছেলে-ভুলানো বই লেখা হয় তাহাতে শিশুদিগকে নিতান্তই শিশু বলিয়া মনে করা হয়। তাহাদিগকে মানুষ বলিয়া গণ্য করা হয় না। ছেলেরা যে বই পড়িবে তাহার কিছু বুঝিবে এবং কিছু বুঝিবে না, এইরূপ বিধান থাকা চাই। আমরা ছেলেবেলায় একধার হইতে বই পড়িয়া যাইতাম– যাহা বুঝিতাম এবং যাহা বুঝিতাম না দুই-ই আমাদের মনের উপর কাজ করিয়া যাইত। সংসারটাও ছেলেদের উপর ঠিক তেমনি করিয়া কাজ করে। ইহার যতটুকু তাহারা বোঝে ততটুকু তাহারা পায়, যাহা বোঝে না তাহাও তাহাদিগকে সামনের দিকে ঠেলে।

বুঝা না এবং বুঝা নিয়া এটা একটা চমৎকার কথা। শিশু কিংবা বড় যে কেউ এর গুরুত্ব বুইঝা তা কাজে লাগাইতে পারেন। যা পড়েন তার সবই যে বুঝতে হইব এমন কোন কথা নাই। অনেকে পড়ে না বুঝবে না এই ডরে। কিন্তু এই ডরের কারণে তার পড়া হয় না এবং বুঝাও হয় না।

না বুঝাটা গুরুত্বপূর্ন এই কারণে যে তা নয়া নয়া আগ্রহ তৈরী করে। আর জ্ঞাণ অর্জনের প্রথম কথাই হইল আগ্রহ জন্মিতে হইবে। অর্থাৎ না বুঝা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজটাই কইরা যায় আসলে।

তাই চিক্তকদের না বুঝাকে ভয় পাইলে চলবে না। নিত্য নতুন না বুঝার সাথে পরিচিত হইতে হইতেই চিন্তকেরা নয়া নয়া চিন্তার বস্তুর লগে পরিচিত হইবেন।

 

কৃতজ্ঞতা এবং দ্রষ্টব্যঃ মদনমোহন তর্কালংকারের কবিতা ছোটকালে পড়েছিলাম। কিন্তু এইরকম ভাবি নাই। এই ভাবনাটা আসে কবি শোয়েব সর্বনামের লেখা পইড়া। কবিতাটি একটি উদাহরন। এইরকম আরো অনেক গল্প বা কবিতা আছে নিশ্চয়ই, যেমন এই বাঘের গল্প

সংযুক্তিঃ

মানসিক নকশা নিয়া জানতে এবং অন্যসব নকশার লিংক পাইতে এই বিষয়ে প্রথম পোস্ট

এই লেখা সম্পর্কে আপনার কোন মতামত বা কোন মানসিক নকশা শেয়ার করতে চাইলে মানসিক নকশা ফেইসবুক গ্রুপ