আর্কিমিডিস বলছিলেন আমারে একটা যথেষ্ট লম্বা লিভার দাও, ওইটা রাখার ফালক্রাম দাও, আমি দুনিয়া সরাইয়া দিব।
লেভারেজ বুঝাটা জীবনের জন্য অপরিহার্য। আমরা প্রায় সকলেই বিষয়টা জানি, কিন্তু এইখানে বুঝার কিছু জিনিশ আছে।
ধরেন একজনের এক মিলিয়ন ডলার আছে, ও আপনার ১০০ ডলার আছে। ৫% লাভ হইল মাসে সাধারণ সেইফ ব্যাংক সেভিংস থেকে। তার ৫% হবে আপনার ৫% থেকে অনেক বেশি টাকা। আপনার রিটার্ন ৫ ডলার, তার রিটার্ন ৫০ হাজার ডলার। একই সময়ে।
কারণ তার লেভারেজ বেশি, তার টাকা বেশি।
মানুষের জন্ম থেকে পাওয়া অনেক লেভারেজ থাকে। যেমন যিনি সুস্থ অবস্থায় জন্ম নিছেন তার আলাদা সুবিধা থাকে যারা অসুস্থ অবস্থায় জন্ম নিছেন তাদের থেকে। যারা অপেক্ষাকৃত রিচ ফ্যামিলিতে জন্ম নিছেন, শিক্ষিত ফ্যামিলিতে জন্ম নিছেন, বড় শহরে জন্ম নিছেন, এনাদের জন্মগত সুবিধা থাকে।
এইগুলা ব্যবহার করেই মানুষ আগাইয়া যায়।
যেমন, যার বাপ ভাই বড় ক্ষমতাবান, তার জন্য একটা চাকরি পাওয়া বা ব্যবসা করা সুবিধাজনক বেশিরভাগ সময়েই। অমুক পাওয়ারফুলের ভাই বা বোন, এটা লেভারেজ হিশাবে কাজ করে।
প্রায় সকলেই এইটা জানেন, কারণ সমাজে তারা এর প্রভাব দেখতে পান। সাধারণত, যখন তারা প্রতিযোগিতায় পারেন না, অতিরিক্ত লেভারেজ যুক্ত কারো কাছে হাইরা যান, তখন বঞ্চিত ফিল করেন, ও বুঝতে পারেন। এইটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঠিক, অনেক সময় দেখা যায় তার যোগ্যতা থাকলেও তিনি পারতেছেন না কারণ ঘুষ দিতে পারতেছেন না। ঘুষ দিতে হইলে বাপের এক্সট্রা টাকা লাগবে, যেইটা এক লেভারেজ।
এইটারে বঞ্চনার দিক থেকে দেখার সমস্যা হইল, এরে ১০০ ভাগ দূর করা সম্ভব না, কারণ এইটা ন্যাচারাল। অন্যায্য কোটা থাকলে, বা সিস্টেমের করাপশন দূর করা সম্ভব, কিন্তু দুনিয়াতে আবহমান কাল থেকে চলে আসা লেভারেজের ক্ষমতা একেবারে দূর হবে না।
একজন মানুষরে তাই ফোকাস দিতে হবে দুই জায়গায়। এক, আমার কী কী লেভারেজ আছে। এইটা তারে নিজেরে বুঝতে ও হাম্বল করতে সাহায্য করবে। সে বুঝতে কোন দিক থেকে আমি আসলে সুবিধা পাইয়া আছি। যারা পারতেছে না, তারা অলস এইজন্য পারতেছে না, শুরুতেই এইটা ধরে নিবে না। নিজের পারা নিয়া খুব বেশি বড়াইও করতে যাবে না। কারণ সে সচেতন তার জন্ম থেকে প্রাপ্ত সুবিধাগুলা নিয়া। এইটা খুব দরকারী তার জন্য, এবং সমাজের জন্যও।
দুই, সে লেভারেজের পাওয়ার বুঝে, কোন জায়গায় তার লেভারেজ নাই তা খেয়াল করবে। এবং তার লক্ষ্যে যাইতে ওই জায়গায় ক্যামনে সুবিধা পাওয়া যায়, সেই জায়গায় কাজ করবে। উদাহরণ, গ্রামের এক ছেলে, সে দেখল তার প্যাশন আছে, স্কিল আছে কিছু, ইচ্ছা আছে টেকনোলজি বিষয়ে শেখার। কিন্তু সে গ্রামে থাকে। শহরে যারা টেকে কাজ করে তাদের কাউরে চিনে না। তার জন্য টেকে কেরিয়ার গড়তে এক বেরিয়ার সে আইডেন্টিফাই করল, এমন কাউরে সে চিনে না যে তারে এন্ট্রি লেভেলের জবে ঢুকতে হেল্প করবে। তখন সে, ফেসবুকে এইরকম একজনরে খুঁজে নিল, তার সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করল, শিখলো এবং তার রেফারেন্সে কোথাও চাকরী করতে গেল নিজের যোগ্যতায়। এই উদাহরণে, তার বাপ ভাই টেকে না থাকার সমস্যা সে অন্যভাবে সমাধান করল। আরও নানাভাবে সে করতে পারে। যেমন, তার এক ভালো ব্লগ ছিল ধরা যাক, ওইটা দেখে অনেকে আকৃষ্ট হইল তার কাজে। তার প্রজেক্ট ছিল। বা তার ফ্রিলান্সিং প্রোফাইল ছিল। ইত্যাদি ইত্যাদি। মুল বিষয়টা হচ্ছে, সে তারে আগাইয়া নিতে, তার গোলটার নিচে লিভারের শক্তি সে বাড়াইছে। হয়ত বাপ ভাই টেকে পপুলার হইলে এটা তার করতে হইত না, তাদের পরিচিতিতেই সে জয়েন করতে পারত।
মূল কথাটা হচ্ছে, যখন আপনার ক্যাপিটাল কম, তখন আপনারে ফোকাস করতে হবে ক্যাপিটাল বাড়ানোর দিকে।
এটা বিভিন্ন ভাবে বাড়ানো যায়।
আমরা এখন সামাজিক মাধ্যমে বারো লাখ টাকা দামের ছাগল কিনা সরকারী কর্মকর্তার পোলাদের দেখতেছি। তাদের লেভারেজের পরিমাণ অনেক বেশি।
তাদের লগে সাধারণ এভাব এভারেজ প্রতিভার মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির সন্তানের কম্পিট কইরা পাইরা উঠা অসম্ভব। খুবই প্রতিভাবান, মেধাবী কম হয়, তাদের কথা এখানে বিবেচ্য নয়।
এই অবস্থায় আপনি লেভারেজ বাড়াবেন কীভাবে, এই জিজ্ঞাসা যদি আপনার মনে এসে থাকে, আমি বলতে পারি ইন্টারনেট একটা ভালো মাধ্যম মানুষের সাথে পরিচিত হবার জন্য। ভালো ও প্রতিভাবান লোকদের থেকে আপনি ইনসাইট নিতে পারবেন ফ্রিতে। তাদের সাহায্যও নিতে পারবেন।
একইভাবে, আপনি অন্যদের সাহায্য করতে পারেন, যাদের ওইটা দরকার, যারা আগ্রহী তাদের। হেল্প করা, হেল্প চাওয়াটারে আমি সহজ করতে চাই। কারণ, এনার্কিস্ট ওয়েতে এটা লেভারেজ তৈরি করে দিবে, যাদের ওই লেভারেজ নাই তাদের। এই আদান প্রদানই ওই সরকারী করাপ্টেড আমলা ও তার সন্তানের লেভারেজ পাওয়ার, গলায়াথের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ডেভিডের অবস্থান।