সঞ্জয় বক্সী ঝুঁকি নকশা

জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান লোকেরা অন্যের অভিজ্ঞতালব্ধ অর্জিত জ্ঞান থেকে শিখতে পারেন। সব কিছু নিজে নিজে এক্সপেরিয়েন্স করার জন্য বইয়া থাকেন না। “ইলেক্ট্রিসিটি প্রবাহিত হইতেছে এমন ধাতব বেড়ার মধ্যে পেশাব করলে কী হবে তা জানতে এর মধ্যে পেশাব করতে হয় না, যারা করছিল তাদের কী হইছিল তা জানলেই হয়।” অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শেখা বিষয়ে এমনই বলেন চার্লি মাঙ্গার

সঞ্জয় বক্সী তার “দ্য ইভেনচুয়াল কনসিকুয়েন্সেস অব রিস্ক সিকিং অর রিস্ক ব্লাইন্ড বিহেভিওর” প্রবন্ধে তার ২১ বছরের অভিজ্ঞতার (এবং চার্লি মাঙ্গার, ওয়ারেন বাফেট ইত্যাদি পড়া থেকে) মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের উপর ভর করে তিনটা নো ফল্ট রুলের কথা বলেছেন। মূলত ইনভেস্টিং বিষয়ে। কিন্তু এগুলো লাইফে অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও আপনারে সাহায্য করতে পারে।

sanjay_bakshi
ছবিঃ প্রফেসর সঞ্জয় বক্সী

এর মধ্য থেকে ঝুঁকি বিষয়ে সঞ্জয় বক্সীর চিন্তাভাবনা এই লেখায় আনা হবে। এর নাম দেয়া হলো সঞ্জয় বক্সী ঝুঁকি নকশা।

মানুষের মধ্যে এক ধরনের টেন্ডেন্সি আছে ঝুঁকি নেবার। কিন্তু ঝুঁকি হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে লটারীর মত। ভাগ্যের উপর নির্ভরশীলতা এক ধরনের পরনির্ভরশীলতা, ম্যাকায়াভেলীর স্পষ্ট মত। সম্ভাব্যতার নিয়ম অনুযায়ী, যদি এমন হয় যে একশোবার কোন প্লেন থেকে প্যারাস্যুট দিয়ে লাফ দিলে একবার দূর্ঘটনা হবে, এবং যদি আপনি একবার লাফ দেন, তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকেন দূর্ঘটনায় পড়তে যাচ্ছেন। এই লাফ ঐ ৯৯ বারের ভিতরে পড়বে না, একবারের মধ্যেই পড়বে। এইটা মারফির ল নামে পরিচিত।

ঝুঁকি এবং সাহসের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমার মনে হয় এই দুই জিনিস গুলাইয়া ফেলেন। সাধারনভাবে ব্যবসা উদ্যোগের ক্ষেত্রে “ঝুঁকি” বলে একটা টার্ম আছে, তারে ঝুঁকি না বলে, সাহস বলাই ভালো। একজন উদ্যোক্তা কখনো লটারীর মত ঝুঁকি নিতে পারেন না। নিলে তিনি অসফল হবার সম্ভাবনা বেশী।

তার ঝুঁকিটা আসলে সাহস। তিনি বিচার বিবেচনা করে দেখেন কোন একটা ব্যবসায় তিনি অর্থ ইনভেস্ট করলে তার লাভ হবে, ফলে তিনি এতে যুক্ত হন। স্পষ্ট না হলেও বেশ ভালো একটা ধারণা থাকে তার এতে লাভ হবে। এটি কখনোই দশ টাকা দামের লটারী কেনার মত নয়।

স্ট্রিং রে মাছের আঘাতে স্টিভ আরউইং এর মৃত্যু কিংবা দ্য এক্সপেনডেবল ২ এর শ্যুটিং-এ দূর্ঘটনা, ইত্যাদিসহ অনেক দূর্ঘটনার ভিডিও পাওয়া যাবে ইউটিউবে। যেখানে ঝুঁকি মারাত্মক ফলের দিকে নিয়ে গেছে।

এই ধরনের ঝুঁকি গ্রহণ মানুষ কোন একক ফ্যাক্টর দ্বারা তাড়িত হয়ে করে না। বিভিন্ন ফ্যাক্টর এতে কাজ করে।

মানুষের একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার হইল অভার কনফিডেন্স। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। যেসব মানুষেরা রেড লাইটে গাড়ি চালাইয়া দূর্ঘটনায় পড়ে, নিজে আহত হয় বা অন্যরে আহত করে; তারা এই ঝুঁকি নেয় এটা মনে করে যে তারা পার হইয়া যাইতে পারবে নিরাপদে।

বেশিরভাগ ড্রাইভার মনে করে তারা এভারেজের চাইতে ভালো গাড়ি চালায়। সুইডেনে একটা সাইকোলজিক্যাল সার্ভে চালাইয়া এমন জিনিসই পাওয়া গেছে।

 

Limited

খালি ওভার কনফিডেন্স না, এইখানে সে তার মতো আরো যারা এমন করছে তাদের  কপি করতে যায়। এছাড়া একটা সাইকোলোজিক্যাল ব্যাপারও কাজ করে। ড্রাইভার মনে করে যে সে কিছু লস করতে যাইতেছে যদি সে না যায়। মানুষের একটা বিবর্তনগত টেন্ডেন্সি আছে সে কোন কিছু হারাইতে চায় না। আপনার বস যদি বলে আপনার বেতন ২০০০০ টাকা বাড়বে আগামী মাস থেকে তাইলে আপনার যে তীব্র খুশির অনুভূতি হবে, তার চেয়ে যদি শুনেন আপনার বেতন ১০০০০  টাকা কমানো হবে আগামী মাস থেকে, তাইলে খারাপ অনুভূতি হবে বেশী তীব্র। মানুষ কিছু হারাইতেছে শুনলে তার ঝুঁকি নেয়ার প্রবণতা বাড়ে। এইজন্য মার্কেটিং এ লেখা থাকে “স্টক সীমিত” বা “শেষ হইয়া যাইতেছে” “আপনি অমুক জিনিস বা অত টাকা হারাইবেন না কিনলে”। ইনডাইরেক্টলীও একই মেসেজ থাকে বিজ্ঞাপনে। যেমন ধরেন একটা ক্রিমের এডে দেখাইল এক মাইয়া চাকরী পাইতেছে না। পরে ক্রিম মাইখা  শাদা হইয়া জব পাইল। বিজ্ঞাপনের এই কনসেপ্ট দেইখা আপনার মনে হইতে পারে যে মার্কেটাররা এইটার আইডিয়া দিছে এরা ছাগল। কিন্তু তাদের কাজের জায়গায় তারা ঠিক, মানুষের এই হারানোরে ভয় পাবার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে তাদের পন্য বিক্রি করতে চায়। ইনডাইরেক্টলী তারা মেসেজ দিল, ঐ ক্রিম ইউজ না করলে আপনি জব হারাইতে যাইতেছেন বা সেলেব্রেটি হওয়ার সুযোগ হারাইতে যাইতেছেন। এইভাবে মার্কেটিং বেশী কার্যকরী হইতে পারে। এটা মানুষরে রিস্ক সিকিং বা ঝুঁকি খোঁজা আচরনের দিকে ঠেইলা দেয়। এবং তখন মানুষ ইরেশন্যাল হইয়া ঝুঁকি নেয়ার দিকে যায়।

সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে এই সঞ্জয় বক্সী ঝুঁকি নকশা আপনার মনে থাকলে আপনে অহেতুক ঝুঁকি এড়াইতে পারবেন কিছুটা।

 

সংযুক্তিঃ

মানসিক নকশা নিয়া জানতে এবং অন্যসব নকশার লিংক পাইতে এই বিষয়ে প্রথম পোস্ট দেখতে পারেন।