এক
মহাভারত একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস, কারণ এখানে সব সময় ন্যায় কী এই দ্বন্দ্ব থাকে।
কোন সিচুয়েশনে ন্যায় কী হবে, এই দ্বন্দ্বটা মানুষের চিরায়ত। আমাদের লাইফে জড়িত।
যেমন, করোনা সমস্যা সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার, এই পরিস্থিতিতে একজন সরকারি দলের সমর্থক কোন সিদ্ধান্ত নিবেন। তিনি কি ব্লাইন্ডলি তার সরকাররে ফলো করবেন, নাকী করোনা ইস্যুতে যা তার যৌক্তিক বিবেক বলছে, সে অনুসারে কথা বলবেন। নাকি নিরব থাকবেন। এটা ন্যায়ের দ্বন্দ্ব।
মহাভারতে এইরকম দ্বন্দ্ব প্রচুর আছে।
যেমন, রাজা শান্তনু সত্যবতীরে দেখতে যমুনা পাড়ে যাইতেন। রাজার মনে শান্তি নাই। সত্যবতীর বাপ শর্ত দিছেন বিয়ে করতে হলে এই ঘোষনা দিতে হবে যে, সত্যবতীর ছেলেই রাজা হবে। এদিকে রাজা শান্তনু অলরেডি গঙ্গাপুত্র দেবব্রত (ভীষ্ম)’রে যুবরাজ ঘোষণা করে ফেলছেন।
দেবব্রত দেখলেন বাপ চিন্তিত, তার মনে নাই শান্তি। তিনি প্রতিদিন কই জানি যান। রাইতে ফিরে আসেন।
দেবব্রত রাজার সারথিরে ডাইকা আনলেন। তারে জিজ্ঞেস করলেন, রাজা কই যান ডেইলি?
শারথি কয়, যেইখানে তার ইচ্ছা।
দেবব্রত বলেন, সেই জায়গাটা কই, যেইখানে আপনে তারে লইয়া যান?
শারথি কয়, সেইটা ওই জায়গা, যেইখানে তিনি আমারে যাইতে কন।
দেববব্র তখন বলেন, আমি আপনার লয়ালটি বুঝতেছি। আপনে আপনার রাজার প্রতি লয়াল। কিন্তু এই লয়াল থাইকা আপনি তারই ক্ষতি করতেছেন। আপনে হস্তিনাপুরের ক্ষতি করতেছেন। কারণ রাজা অশান্তিতে আছেন, এতে রাজ্যের ক্ষতি। আর আমি জানতে চাইতেছি তার অশান্তি দূর করতেই, ফলত হস্তিনাপুরের ভালোর জন্যই। ফলে রাজার প্রতি লয়াল থাইকা আপনে এখানে হস্তিনাপুরের উপর ডিসলয়াল হইতেছেন শারথি।
শারথি তখন বলেন, রাজা যমুনা পাড়ে যান। গাছে আড়ালে থাইকা দাশরাজের মাইয়া সত্যবতীরে চাইয়া চাইয়া দেখেন।
দুই
ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরকে যখন ইন্দ্র বলেন, তুমি কুত্তা নিয়া স্বর্গে ঢুকতে পারবা না, তখন যুধিষ্ঠির একা নিজে যাইতে অস্বীকৃতি জানান।
এই জায়গায় যুধিষ্ঠির যে শিক্ষা আমাদের দেন, তা কুত্তার প্রতি লাভের শিক্ষা না।
যারা এইভাবে এটারে কুত্তার প্রতি লাভের শিক্ষা হিসেবে দেখে তারা মূল পয়েন্ট বুঝে নাই।
প্রথমত যুধিষ্ঠির তার আত্মীয়দের ফেলে স্বর্গে যেতে চান নাই। তখন ইন্দ্র জানালেন তারা মরে আগেই স্বর্গে চলে গেছেন।
এরপরে আসে কুত্তার আলাপ। ইন্দ্র যখন বললেন কুত্তা নিয়ে যুধিষ্ঠির স্বর্গে যেতে পারবেন না, তখন যুধিষ্ঠির বললেন, “শরণাগতকে ভয় দেখানো, স্ত্রীবধ, ব্রহ্মস্বহরণ ও মিত্রবধ এই চার কার্যে যে পাপ হয় ভক্তকে ত্যাগ করলেও সেই পাপ হয় তাই আমি ভক্তকে ত্যাগ করতে পারব না।”
অর্থাৎ, ভক্তকে ত্যাগ করতে চান নাই। কুত্তার পরিবর্তে গাধা হইলেও একই কথা বলতেন তিনি। এখানে পয়েন্ট কুত্তা না, পয়েন্ট হইল ভক্তরে ত্যাগ না করা। যা অন্য ওই চার পাপের সমান।
যুধিষ্ঠিরের নৈতিকতা জ্ঞান ছিল, তার বেসিক ঠিক। ফলে কুত্তা, গাধা এটা বিষয় না, তার নৈতিকতার লজিক যেভাবে কাজ করে, তিনি তাই করবেন, পরিস্থিতি যাই হোক।
শিক্ষা এই জায়গায় ছিল।
তিন
শকুন্তলাপূত্র রাজা ভরত তার পুত্রদের মধ্যে কারে উত্তরসুরী বানাইবেন ঠিক করতে পারতেছিলেন না। তিনি রৃষি কন্বের কাছে যান এই বিষয়ে কী করা উচিত এই উপদেশের জন্য।
ঋষি কন্ব তারে বলেন, তুমি দুনিয়া জয় করছো শকুন্তলাপুত্র, কিন্তু বুঝা যাইতেছে নিজেরে জয় করতে পারো নাই। পারলে এই সমস্যায় তুমি পড়তা না। যাও নিজেরে জয় করো।
ভরত ফিরা আসেন।
তিনি ভাইবা দেখেন তার পুত্রগুলা অযোগ্য। তিনি অযোগ্য পুত্রদের রাজা করলে তা অন্যায় করা হয়। আর একজন রাজা কখনো অন্যায় করতে পারে না।
তার মাতাশ্রী শকুন্তলা যুক্তি দেন, তুমি কেমন বাপ পুত্র, নিজের পুত্রদের অধিকার বঞ্চিত কইরা তাদের প্রতি অন্যায় করতেছ।
ভরত বলেন, আপনার তো আমার জন্য গর্ব হওয়া উচিত মাতাশ্রী। আমি রাজা, আর রাজার কাছে পুরা রাজ্যই পরিবার। সেইটা না মাইনা আমি যদি ব্যক্তি নিজের পরিবারের স্বার্থ দেখতাম সেইটাই অন্যায় হইত। একজন রাজা হিসাবে এইটা আমি করতে পারি না।
ভরত যখন নতুন রাজার ঘোষনা দেন, তখন তিনি বলেন, একজন রাজা কখনো তার রাজ্য ও রাজ্যের জনগণের চাইতে বড় হইতে পারে না। রাজার তিন কর্তব্য। তার রাজ্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, রাজ্যের জনগণকে রক্ষা করা, আর যোগ্য উত্তরসুরী নির্বাচন করা, যে রাজ্যের জনগণকে ন্যায় দিবে ও রক্ষা করবে।
তিনি তার পুত্রদের মধ্যে ওইসব গুণ না পাওয়ায় ভরদ্বাজ পূত্র অভিমন্যুকে যুবরাজ নির্বাচন করেন। তিনি বলেন, সারা জানসামুদায় মেরা পারিবার হ্যায়। তাইলে ভরদ্বাজের পুত্র আমারো পুত্র।
চার
মহাভারত মিথের মূলকথা হইল যে, মহাকালই আসল, এবং যা ঘটার তা আগে থেকেই ঠিক করা। হেক্টরের মৃত্যু হবে একিলিসের হাতে। আফ্রিকান একটা বহুপুরানা জ্ঞানকথা, যখন পাম গাছের বীজ লাগাইতেছেন আপনি, গাছ সেইটা দেখতেছে। মানে এই বীজের গাছ, যা ভবিষ্যতের জিনিস। মানে, ভাবিষ্যা আমাদের দেখতেছে, বর্তমানরে। তার দিকে টানতেছে। সুতরাং, তাই হইতেছে যা হওয়ার কথা, আর আমরা ভবিষ্যতের দিকে ক্রমধাবমান, যেইটা আগে থেকেই ওইখানে বসা।
পাঁচ
আমরা
এক ভাগ শিখি শিক্ষকের কাছ থেকে,
এক ভাগ নিজের বুদ্ধিতে,
এক ভাগ সহপাঠীদের মাধ্যমে,
আর এক ভাগ কেবল সময়ের সাথে।
এই চার ভাগে আমাদের শেখা।
মহাভারত বলে।
ছয়
মহাভারতে হিরো হইল কর্ণ।
সে তার ফুল পটেনশিয়ালরে এক্সপ্লোর করতে চাইছে সব সময়। সূতপুত্র হইয়া বা একজন সাধারণ বীর হিসাবে সে লাইফ কাটাইতে পারত। কিন্তু সে ঐ জিনিশে সন্তুষ্ট থাকে নাই।
বাঁধা থাকা স্বত্বেও যুদ্ধ শিখছে। শাপিত হবার পরেও বন্ধু দূর্যোধনের পক্ষে যুদ্ধে গেছে।
সাত
যেকোন ধরণের পার্টনারশিপের ক্ষেত্রে কানেকশন সবচাইতে জরুরী।
ব্যক্তিরা কত দক্ষ এটা পরের বিষয়।
কারণ “পার্টনারশিপ” জিনিশটা আলাদা ‘একক’ হিশাবে কাজ করে। দুইজন ব্যক্তি নিজেরা তাদের জায়গায় সেরা হলেও পার্টনারশিপ বাজে হতে পারে।
যেমন মহাভারতে কর্ণ ও তার সারথী রাজা শল্যের পার্টনারশিপ কাজ করে নি।
যদিও শল্য ভালো যোদ্ধা এবং সেরা সারথী ছিলেন কৃষ্ণের মতোই। কিন্তু তাদের ভেতরে কানেকশন ছিল না। বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে, এবং দূর্যোধনের চালাকিতে পড়ে শল্য কর্ণের সারথী হয়েছিলেন।
কর্ণ শল্যের উপর বিরক্ত ছিলেন তার কথাবার্তায়। একসময় শল্য তাকে ত্যাগ করেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যখন রথের চাকা আটকে যায়, তখন কর্ণকে সাহায্য করার জন্য তার সারথী ছিলেন না সাথে।
পক্ষান্তরে, অর্জুন ও কৃষ্ণের পার্টনারশিপ কাজ করেছে। কারণ তাদের মধ্যে কানেকশন ছিল। কৃষ্ণ অর্জুনের মনের দ্বিধা দূর করেছেন। শিক্ষা দিয়েছেন, ঘোড়ার যত্ন করেছেন। পাণ্ডবদের লক্ষ্যের প্রতি একাত্ম ছিলেন।
আট
এইটা একটা নাইস সিন (পর্ব ১৯) যখন ব্যাস তার মা সত্যবতীরে নিয়া যাইতেছেন সন্ন্যাসে। বিদায়ের বেলা ভীষ্ম আইসা বলেন “মাতাশ্রী আমারেও সাথে নেন।
সত্যবতী বলেন, “না তোমার তো কাম এইখানে। কুরু সিংহাসন দেইখা রাখা, আজীবন এই তোমার কাজ পুত্র, এই তোমার সন্ন্যাস, এই তোমার তপস্যা ।
ভীষ্ম কন, “পাড়ান্তু, মাতাশ্রী এভ্রিথিং ইজ গুড নাও, দেখেন সবই ভালো চলতেছে।
তখন ব্যাস একটা তীর্যক হাসি দিয়া বলেন, “গঙ্গাপুত্র তুমি কি ভবিষ্যতে গিয়া দেইখা আসছো সব ভালো থাকবে? এইটা না ভুলো, তোমারে ইচ্ছা মৃত্যুর বরদান দেয়া হইছে, ইচ্ছা জীবনের না। “
“মরার আগ পর্যন্ত এই সিংহাসনের লগেই বান্ধা থাকো।
“আর জিয়ে যাও। জীন্দেগি জিনা বাহত কাঠিন কাম হ্যায় বৃহাস্পতি শিষ্য ভীষ্ম।
নয়
সম্ভবত প্রাচীন ভারতেই প্রথম প্রবাবিলিটি বা সম্ভাব্যতা ধরণের কিছু চিন্তা শুরু হয়। প্রাচীন গ্রিস এ নিয়ে কোন তত্ত্ব দাঁড় করায় নি, অর্থাৎ তারা এ নিয়ে ভাবেন নি।
অঙ্কবিদ্যায় প্রাচীন ভারতীয়দের অবদান অনেক। ১ ২ ৩ থেকে ৯ পর্যন্ত যে সংখ্যা, এটা ভারতে উদ্ভূত, এবং এখান থেকে নেয় আরবেরা। আরবদের থেকে পায় ইউরোপিয়ানরা। আল এলজেবরার উৎপত্তি হয়। এজন্য এই সংখ্যা ধরণকে হিন্দু-আরব সংখ্যা বলা হয়। সংখ্যার ধারণায় আরেক যুগান্তকারী নতুন জিনিশ, যা গণনাকে আমূল পালটে দেয়, তা হল ০ এর ধারণা। এটাও প্রাচীন ভারতীয়।
মহাভারতে পাশা খেলার কথা এসেছে।
নল রাজার উপাখ্যানে দেখা যায় রাজা নল রাজা ঋতুপর্নের কাছ থেকে অক্ষবিদ্যা শিখেছিলেন। এবং এরপর তিনি তার ভাইকে পাশা খেলায় হারিয়েছিলেন।
মাইকেল মধুসূধন দত্তের অসাধারণ বীরাঙ্গনা কাব্যে, যখন দূর্যোধনের স্ত্রী ভানুমতি তাকে পত্র লিখে বলছেন যুদ্ধ থেকে ফিরে আসতে, তখন অক্ষবিদ্যার কথা এসেছে। তিনি বলছিলেন মাতুল শকুনি আপনাকে অক্ষিবিদ্যা শিখিয়ে
সর্বনাশটা করলো।
কুক্ষণে মাতুল তব—ক্ষম দুঃখিনীরে –
কুক্ষণে মাতুল তব, ক্ষত্র-কুল-গ্লানি,
আইল হস্তিনাপুরে ।কুক্ষণে শিখিলা
পাপ অক্ষবিদ্যা, নাথ, সে পাপীর কাছে
দশ
ধৃতরাষ্ট্র বললেন শুদ্রার ঘরে জন্মানো মহাপণ্ডিত বিদুরকে, “আর কী জ্ঞান আছে বিদুর, আমাকে শোনাও।”
বিদুর বললেন, “সনতকুমার বলেছেন মৃত্যু বলে কিছু নাই। তবে এই গুঢ়তত্ত্ব তার কাছ থেকেই জানতে হবে আপনার।”
ধৃতরাষ্ট্র বললেন, “কেন, তুমি কি জানো না?”
বিদুর বললেন, “আমি শুদ্রার ঘরে জন্মেছি মহারাজ, তাই জানলেও প্রকাশ করতে পারব না। ব্রাহ্মণকূলে জন্ম নিলে, অতি গুঢ়তত্ত্বও প্রকাশ করা যায়, দেবতাদের নিন্দনীয় হতে হয় না।”
এখানে বিদুর জ্ঞানী হয়েও জ্ঞান প্রকাশের ঝামেলাটা দেখালেন। অর্থাৎ পাণ্ডিত্যের অধিকার তখন কেবল জন্মসূত্রে কিছু লোকের কাছেই থাকতো।
আধুনিক কালে এটি গিয়েছিল একাডেমীতে। সত্যিকার অর্থেই কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন ও আছেন একাডেমীতে। কিন্তু পরে ব্রাহ্মণদের মতো অবস্থা হওয়ায়, একাডেমিকেরা একাডেমিতে গিয়েই নিজেরে পণ্ডিত ভাবতে শুরু করে, যেমন ব্রাহ্মণকূলে জন্ম নেয়া অযোগ্য সন্তানও ভাবতো।
পণ্ডিতি অর্জনের পথ পরিশ্রমসাধ্য, কঠিন, এবং এটা নিরন্তর চলতে থাকে। সেই পথে আর কয়জন যেতে চাইবে যখন সে জন্মসূত্রেই বা একাডেমিতে গিয়েই নিজেরে পণ্ডিত বলে দেখাতে পারে।
একাডেমীর বাইরে থাকা পন্ডিতদের একটা বাঁধা থাকে পাণ্ডিত্য প্রকাশে। শুদ্রার ঘরে জন্ম নেয়া মহামতি বিদুরের মত তাদের অবস্থা। যদিও আধুনিক দুনিয়ার সবচে বড় চার মহা প্রভাবশালী ব্যক্তি ডারউইন, ফ্রয়েড, মার্ক্স ও আইনস্টাইন একাডেমিকস ছিলেন না, পণ্ডিত ছিলেন।
এগারো
বিনতা কদ্রু’র সাথে প্রতিযোগীতার বোধ থেকেই সময়ের আগে একটি ডিম ভেঙে ফেলেন। বের হয়ে আসে তার পুত্র অরুণ, তখন তার শরীরের অর্ধাংশ পরিণত হয় নাই। এই অবস্থায় বের করে নিয়ে আসার জন্য সে মাকে শাপ দেয়, এবং এর ফলেই বিনতাকে কদ্রু’র দাসী হয়ে থাকতে হলো পাঁচশো বছরকাল। এ থেকে আমরা কী বুঝলাম?
বুঝলাম, ঈর্ষামূলক প্রতিযোগীতার বোধ বিচারক্ষমতা নষ্ট করে।
যার জন্য ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করা দরকারী, সেটা দ্রুত করতে চাইলে হীতে বিপরীত হয়
বারো
মানুষের সেলফের দুই ভাগ ফ্রয়েড প্রথমে করছেন এমন না। বুদ্ধ বলেছেন এই দুই ভাগ নিয়ে। বুদ্ধের কথায়, মানুষের প্যাশন, ডেজায়ার, যুক্তিহীনতার যে ফোর্স, তা এক হাতির রূপকে। হাতির উপরে একজন আরোহী, যিনি ওইসব তীব্র যুক্তিহীন ফোর্সকে শান্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করে হাতিকে নিয়ে যান।
প্লেটো বলেছেন, মানুষের রিজন তথা যুক্তির দিক হইল সারথী, এবং তার প্যাশনের জায়গা হইল ঘোড়াগুলি, ওয়াইল্ড বিস্ট।
ফ্রয়েডের হিশাবে ইগো হচ্ছে সারথী, এবং ইড হলো মানুষের মানুষের ডেজায়ার, ঘোড়া, যারা গাড়ি টেনে নিচ্ছে। চালক ইগো তারে নিয়ন্ত্রণ করে। ফ্রয়েড
আরেকজন বড় মাস্টর আনেন, সুপার ইগো, যিনি ইগোর দিকে চোখ রাখেন, তারে বলেন সে কী ভুল করতেছে।
মহাভারতের যে অংশে কৃষ্ণ অর্জুনকে উপদেশ দেন, সেখানে রিজন কথা বলছে আবেগের সাথে।
এই যুদ্ধক্ষেত্র প্রায় প্রতিটা মানুষ বিভিন্ন সময়ে অনুভব করে নিজের মধ্যে, নানা পরস্থিতিতে। তার রিজনের দিক, কৃষ্ণ হয়ে কথা বলে। আবেগের দিক অর্জুন হয়ে কথা বলে।
কথাবার্তায় যে জিতে, অন্যকে কনভিন্স করতে পারে, তার কথাতেই গাড়ি চলে।
তেরো
ধর্মক্ষেত্র সিরিজে মহাভারতের শ্রী কৃষ্ণরে প্রশ্ন করা হয়, প্রভু, আপনি নারায়ণের রূপ। কিন্তু সব মানুষরেই কোন এক সম্পর্ক ধরে ডাকেন, কাউরে বড় মা, কাউরে বন্ধু, কাউরে ভাই, কাউরে পিতামহ, কাউরে মাতা – এগুলা কেন? আপনার এইসব মেইন্টেইন করার কী দরকার ছিল?
কৃষ্ণ তখন উত্তর দেন, মানুষের প্রবৃত্তি হলো, যারা নিজেদের বড় করে কথা বলে তাদের কথা শুনতে চায় না। তারা তাদের কথাই শুনে যাদের নিকটজন মনে হয়। এবং এইটা আজকে না, যুগ যুগ ধরে রয়ে যাবে সকল কালে। মানুষ প্রথমে শুনবে নিকটজনের কথা, তারপর কোন দেবতার কথা।
তখন অর্জুন বলেন, এখন বুঝতে পারছি কেশব যখন অভিমন্যুর মৃত্যুর পরে প্রতিশোধ স্পৃহায় উন্মত্ত আমারে আপনে বুঝাইতেছিলেন, তখন কেন আপনার বাণী আদেশের মত ছিল না, ছিল বন্ধুর পরামর্শের মত।