জাপানের ফিউডাল সময়কালে যেসব সামুরাইদের কোন মালিক থাকতো না, তাদের বলা হতো রোনিন। মিয়ামটো মোসাশি ছিলেন একজন রোনিন।
বলা হয়ে থাকে সবচাইতে বেশি ডুয়েল যুদ্ধে তিনি ছিলেন অপরাজিত। জাপানে খুব সেরা যারা তলোয়ারযোদ্ধা হতেন, তাদের কেনসেই বা সোর্ড সেইন্ট বলা হতো, মোশাসি ছিলেন এমনই একজন কেনসেই।
একজন যোদ্ধা, আর্টিস্ট, স্ট্র্যাটেজিস্ট এবং দার্শনিক।
১৬৪৫ সালে মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে তিনি একুশটি উপদেশ লিখে যান তার প্রিয় শিষ্যদের জন্য।
এই ২১ টি সেল্ফ ডিসিপ্লিনের উপদেশ, যা তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য দিয়ে গিয়েছিলেন, এবং যেগুলি ছিল তার জীবনের পিছনের আইডিয়া। এখানে ইংরেজি থেকে বাংলায়।
১/ সকল কিছু যেভাবে আছে সেভাবেই গ্রহণ করো।
এই আইডিয়াটি বুদ্ধিজমের একটা মূল জিনিস। জিনিস যেভাবে আছে, সেভাবেই তাকে দেখা, ও গ্রহণ করা।
২/ শুধু আনন্দের (বা সুখের) জন্য আনন্দ (বা সুখ) খুজবে না।
এখানে ভোগবাদ বা সুখবাদের বিরুদ্ধে বলেছেন তিনি। যেমন, আনন্দের জন্য পড়া, বা আনন্দের জন্য ড্রাগস নেয়া, ইত্যাদি। এগুলি মানুষকে অসুখী করে ও মিনিংফুল জীবন যাপন করার পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
৩/ কখনো, কোন অবস্থাতেই আংশিক অনুভূতির উপর নির্ভর করে কাজ করবে না।
কোন ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে আংশিক নিশ্চিত হয়ে কাজ না করতে বলেছেন।
৪/ নিজের সম্পর্কে হালকা, ও দুনিয়া সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবো।
যারা ভাবনা চিন্তা করেন তাদের নিজেতে মগ্ন হবার বিপদ রয়ে যায়। এখান থেকেই আমি আমি ও আমি ভিন্ন কিছু নাই এমন মনোভাবের উদ্ভব। এটি না করতে বলেছেন মোসাশি।
বরং, দুনিয়া সম্পর্কে গভীর ভাবে ভাবতে বলেছেন, নিজেকে সরিয়ে রেখে।
৫/ পুরো জীবনে ডেজায়ার বা আকাঙখা থেকে দূরে থাকো।
ডেজায়ার হলো নিজের সাথে এই চুক্তি যে, ওই জিনিস না হলে আমি অসুখী থাকব। বুদ্ধিজম মতে ডেজায়ারই সকল অসুখের কারণ। যার বেশি ডেজায়ার, ও যে ডেজায়ার কন্ট্রোল করতে পারে না, সে অসুখী হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়।
আকাঙখা থেকে হয়ত পুরোপুরি দূরে থাকা যাবে না, তা হয়ত সব সময় ভালোও নয়, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ডেজায়ারের সুখ বিধ্বংসী চরিত্র সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
৬/ যা করে ফেলেছো তা নিয়ে অনুতাপ করবে না।
এই শিক্ষাটি হয়ত তাদের কাজে লাগবে যারা তাদের অতীতেই বন্দি হয়ে আছেন, ও সেই অনুতাপে বর্তমানে বাস করতে পারছেন না। খারাপ কিছু করলে অনুতাপ করার পরিবর্তে তা আর না করা, এবং ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করাই ভালো।
৭/ কখনো ঈর্ষা করবে না।
কারণ ঈর্ষা সবচাইতে খারাপ পাপের একটি। এটি একটি গর্দভী পাপ। আপনার সুখ এটি নষ্ট করবে, আপনার জীবনকে বিষন্ন করবে। ফেইসবুকে যেখানে অন্যরা নিজেদের ব্রাইট সাইডই দেখায়, ভালো বা আনন্দের জিনিসগুলিই দেখায়, সেখানে ঈর্ষকদের মর্মপীড়ার অন্ত থাকার কথা না। তাই ঈর্ষক হবেন না।
৮/ কখনোই বিচ্ছিন্নতার কারণে নিজেকে দুঃখী হতে দিবে না। –
এটাচমেন্ট বেশি হলে এর বিচ্ছিন্নতা দুঃখবোধের কারণ হতে পারে। কিন্তু বিচ্ছিন্নতা বাস্তবতা। আমরা অনেক কিছু ছেড়ে আসি, অনেক কিছু আমাদের ছেড়ে যায়। মানতে হবে।
৯/ প্রতিহিংসা ও অভিযোগ প্রবণতা নিজের বা অন্যের কারো জন্যই ভালো নয়।
প্রতিহিংসা পুষে রাখলে নিজেরই ক্ষতি। আর অভিযোগ প্রবণতা একটি খারাপ অভ্যাস, ফেইসবুকের যুগে এর স্ফুরণ ঘটেছে যেন। এই দুইটি থেকে সাবধান করেন মোসাশি।
১০/ কাম ও ভালোবাসা দিয়ে নিজেকে পরিচালিত করবে না।
কারণ এই দুইটি আপনার জাজমেন্টকে বায়াসড করে তোলে। ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ায়।
১১/ কোন বিষয়েই পক্ষপাত রাখবে না।
নিজেকে খোলা রাখবেন। তাহলে কনফার্মেশন বায়াস থেকে অল্প হলেও বেঁচে থাকা যাবে।
১২/ নিজের থাকার জায়গা বা বাসস্থান এর ব্যাপারে আবেগহীন ( বা স্থান নিরপেক্ষ) থাকবে।
অর্থাৎ, এটি হলো আপনি যে জায়গায় আছেন তা যেন আপনার ইনার পিসে প্রভাব ফেলতে না পারে। যেখানেই যান, আপনি হ্যাপি হলে হ্যাপিই।
১৩/ ভালো স্বাদের খাবার খুজবে না।
মোশাসি জিহবা সংবরণ করতে বলেছেন। তার কথা হলো, খাবার বেঁচে থাকার জন্য। যেটি ভালো স্বাস্থ্যের জন্য সেটা খাবে।
১৪/ যা দরকার নেই তোমার, সেসব জিনিস আয়ত্ত্বে রাখবে না।
মানুষ অনেক জিনিস রাখে যেগুলি তার প্রয়োজন নেই। আপনি আপনার ফোনের এপগুলার দিকে দেখতে পারেন, কয়টা আসলেই প্রয়োজনীয়?
১৫/ প্রচলিত প্রথা অন্ধভাবে অনুসরণ করে কাজ করবে না।
এখানে তিনি নিজ থেকে বিচার করার কথা বলেছেন। কারণ প্রথা, নিয়ম অনেক সময় ভুল হতে পারে।
১৬/ যা কাজে লাগে না এমন অস্ত্র সংগ্রহ করবে না বা রাখবে না।
এখানে অস্ত্রের জায়গায় কাজের জিনিস বসিয়ে পড়তে পারেন। যা দরকার নেই কাজে, তা বাহুল্যতা। এটি পরিহার করতে বলেছেন মোসাশি।
১৭/ মৃত্যুকে ভয় পাবে না।
১৮/ নিজের বৃদ্ধ বয়েসের জন্য সম্পদ জমিয়ে রাখবে না। – এই উপদেশ আধুনিক যুগে কাজে মানা কঠিন হবে।
১৯/ বুদ্ধ ও দেবতাদের সম্মান করবে, তারা তোমাকে কী সাহায্য করেছেন এটি হিসাব না করে। – এখানে বুদ্ধের জায়গায় নিজ নিজ ধর্মের সৃষ্টিকর্তাকে মানার কথা বুঝা যায়।
২০/ সম্মানের জন্য দেহত্যাগ করতে হলেও করবে।
২১/ কখনো সঠিক পথ থেকে সরে যাবে না।
মোশাসির এই উপদেশগুলি অতীশ দীপংকরের উপদেশগুলির কথা মনে করায়। মহান অতীশ দীপংকর বলে গেছেন,
The greatest achievement is selflessness.
The greatest worth is self-mastery.
The greatest quality is seeking to serve others.
The greatest precept is continual awareness.
The greatest medicine is the emptiness of everything.
The greatest action is not conforming with the worlds ways.
The greatest magic is transmuting the passions.
The greatest generosity is non-attachment.
The greatest goodness is a peaceful mind.
The greatest patience is humility.
The greatest effort is not concerned with results.
The greatest meditation is a mind that lets go.
The greatest wisdom is seeing through appearances.