মুরাদুল ইসলাম » ফিল্ম » ৮ টি রহস্য থ্রিলার ফিল্ম

৮ টি রহস্য থ্রিলার ফিল্ম

 দ্য লজারঃ এ স্টরি অব দ্য লন্ডন ফগ

হিচককের ১৯২৭ সালের ফিল্ম দ্য লজার। সাইলেন্ট ফিল্ম, কথাবার্তা ছাড়াই সাসপেন্স ধরে রাখছেন ফিল্মে!কাহিনীটা এমন, তখন লন্ডনে খুন হইতেছে সোনালী চুলের মেয়েরা। একজন মার্ডারার খুন কইরা যায়, আর একটা কাগজ রাইখা যায়, দ্য এভেঞ্জার লেখা।এক ফ্যামিলিতে মা বাপ, তাদের সোনালি চুলের মেয়ে থাকে, আর ঐ মেয়ের প্রেম প্রত্যাশী যুবক এক পুলিশ অফিসার ওই বাড়িতে আসেন। বাড়ির উপরের তলায় থাকতে আসে এক লোক। লজার।সন্দেহ হইতে থাকে সেই মার্ডারার।

দ্য লজার


টু ক্যাচ এ থিফ


হিচককের আরেকটা ভালো ফিল্ম। এই ফিল্মের স্টোরির চাইতে ডায়লগ ভালো। এবং ক্যারি গ্র্যান্টের অভিনয় ভালো এখানে।কাহিনী এমন, ক্যারি গ্র্যান্ট, আমাদের নায়ক হইলে পুরান জুয়েলারী চোর। তিনি জন রবি, দ্য ক্যাট নামে কুখ্যাত। ক্যাটের মতোই নিঃশব্দে গিয়া তিনি লোকের দামী অলঙ্কারাদি নিয়া আসতেন।কিন্তু এখন তিনি চুরি ছাইড়া দিছেন। ভালো মানুষ হইয়া গেছেন।তার চুরির স্টাইলেই যখন জুয়েলারি চুরি হওয়া শুরু হইল, তখন পুলিশ হানা দিল তার কাছে। সন্দেহ কইরা। তিনি ভাগলেন।তখন তার কাজ দাঁড়াইল আসল চোররে ধরা।ফিল্মের প্রথম ভাগে ক্যারি গ্র্যান্ট একটা হাসি হাসি মুখ নিয়া অভিনয় করেন। এই জিনিস এটা বুঝাইতে হেল্প করছে যে, পুরান স্কিলড চোর সে, কিন্তু এই চুরি করে নাই (বা করছে), কিন্তু মজা পাইতেছে।একটা দৃশ্যে নাইকা গ্রেস ক্যালি রাইতের অন্ধকারে নায়কের সামনে দাঁড়ায়, তখন মুখ থাকে অন্ধকারে আর জ্বল জ্বল করতে থাকে গলায় পাথরের হার। এই জিনিস আরেক ফিল্মে হিচকক করছিলেন, সাসপিশন ফিল্মে, সেইটাতেও ক্যারি গ্র্যান্ট অভিনয় করছিলেন। ওইটাতে এক বউ সন্দেহ করতো তার জামাই তারে মাইরা ফেলবে। ক্যারি গ্র্যান্ট একবার বউয়ের জন্য গ্লাসে কইরা দুধ নিয়া যাইতেছেন, সিঁড়ি দিয়া উঠতেছেন, অন্ধকারের মত অবস্থা, এই দুধে বিষ মিশানো কি না এইটা তখন সাসপেন্স, সেইসময় দুধের গ্লাস উজ্জ্বল হইয়া জ্বলজ্বল করতেছিল। কারন প্লেইটের নিচে বাল্ব রাখছিলেন হিচকক, দুধের গ্লাসরে উজ্জ্বল দেখাইতে, গ্লো আনতে।


এ পিওর ফরমালিটি


কথোপকথন টাইপের ফিল্ম যারা লাইক করেন, যেমন স্লিউথ, তারা এই ফিল্ম লাইক করতে পারেন। এইটার কাহিনী এইভাবে শুরু হয়, একটা গুলির শব্দ হয়, মেঘের রাতে, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এক লোক পুলিশের সামনে আইসা পড়ে। আইডি কার্ড দেখাইতে পারে না। লোকটারে থানায় নিজে যাওয়া হয়। সে নিজের পরিচয় দেয় বিখ্যাত লেখক অনোফ হিসাবে।ইনস্পেক্টর সাহেব আসেন। তিনি আবার অনোফের সব লেখাই পড়েছেন। ফিল্ম আগায় এইভাবে যে, একটা মার্ডার হইছে খুব সম্ভবত, আর রাইটার অনোফরে সন্দেহ করা হইতেছে। ইন্সপেক্টর সাব নানা বিষয়ে তারে জেরা করতে থাকেন। এই দুইজনের কথোপকথনেই ফিল্ম অনেক কিছু বাইর হইতে থাকে। অনোফের লেখা নিয়া ও লাইফ নিয়া। সিম্বলিক ফিল্ম। কাহিনীর এই পর্যন্ত বলা যায়। আর বেশি গেলে স্পয়লার হবে।


শ্যাডো অব এ ডাউট

হিচককের আরেকটা নাইস ফিল্ম। এক লোক তার বইনের বাসায় গিয়া উঠে। ভাগনা ভাগনীদের সাথে তার ভালো সম্পর্ক। শুরু থেকেই টের পাওয়া যায় সে একটা কিছু লুকাইতেছে। বড় ভাগনি সন্দেহ করতে থাকে তার মামুই হইল সেই মার্ডারার, যারে নিয়া পত্রিকায় লেখালেখি হইতেছে। যে ধনীর বিধবা বউদের খুন করে।এই হইল কাহিনীর সূত্র।


দ্য ট্রাবল উইথ হ্যারি

হিচককের কমেডি মার্ডার মিস্ট্রি ফিল্ম। এক বুড়া লোক জঙ্গলে খরগোশ শিকারে গিয়া এক মৃত লোকরে পায়। তার নাম হ্যারি। সে ভাবে তার গুলিতেই মারা গেছে হ্যারি। ঐ এলাকার আরো কিছু চরিত্র হ্যারির সাথে জড়িয়ে পড়ে। হ্যারি কে, এইটা তো এক রহস্য থাকে, আর অন্য সাসপেন্স হইল ক্যামনে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়া এই হ্যারিরে কবরস্থ করা হবে। আর এইটা নিয়াই নানা ফানি ইভেন্টের মাধ্যমে কাহিনী আগায়।


এক্সোবারঃ প্যারাডাইজ লস্ট

মাফিয়া ফিল্ম। ভালো লাগছে এইটা। পাবলো এস্কোবারের চরিত্রে বেনেসিও দেল তরো’র অভিনয় ভালো। এস্কোবারের ভাতিজির লগে প্রেম করে কানাডিয়ান এক সাধারণ ছেলে। এই প্রেমের কারণে সে পাবলো এক্সোবার গাভিরিয়া ফ্যামিলির সাথে কানেক্টেড হইয়া যায়। ফিল্মের একটা বিশেষত্ব হইল, মাফিয়াইজমের ডার্ক সাইডও দেখানো হইছে। ফিল্মে সাসপেন্স আছে। এস্কোবার নিয়া নারকোজ সিরিজ যারা দেখছিলেন, বা যারা মাফিয়া ফিল্ম লাইক করেন, তাদের ভালো লাগতে পারে।


ইন এ লোনলি প্লেইস

১৯৫০ সালের ফিল্ম। হামফ্রে বোগার্ট এই ফিল্মে একজন বিখ্যাত স্ক্রিপ্ট রাইটার যার রাগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা আছে। যে প্রায়ই বিভিন্ন জনের সাথে মারামারিতে জড়াইয়া যায়। ফিল্মের শুরু থেকেই এই জিনিসটা ক্লিয়ার করা হয়। একটা মেয়েরে তিনি এক রাতে বাসায় নিয়া আসেন, যেই বই অনুসারে তিনি স্ক্রিপ্ট লেখবেন ঐ বইয়ের গল্প শুনার জন্য। কারণ বইটা তার পড়তে ইচ্ছা হইতেছে না, আর মেয়ে ওই বই পড়ছে। বই এর গল্প শুনাইয়া মেয়েটা যায়। ওই রাতেই সে মার্ডার হয়। আর সন্দেহ যাইতে থাকে লেখকের প্রতি।  যেহেতু তার বাজে রেকর্ড আছে, তাই সন্দেহ আরো বাড়তে থাকে। হামফ্রে বোগার্টের অভিনয় অন্যতম সেরা বলে প্রশংসিত হয় এই ফিল্মে। এইটা একটা ক্লাসিক ক্রাইম তথা নয়ার ফিল্ম। এর পরিচালক নিকোলাস রে খুবই ইনফ্লুয়েনশিয়াল। জা লুক গদার্দ নাকী লেখছিলেন, সিনেমা ইজ নিকোলাস রে।


দি ইনসপেক্টর কলস

অভিনয়ে এটা একটা চমৎকার ফিল্ম। মূল কাহিনী জে বি প্রিস্টলি’র ক্লাসিক ড্রামা দ্য ইন্সপেক্টর কলস অবলম্বনে। ইংল্যান্ডের এক বিখ্যাত অভিজাত পরিবারে একদিন রাতে একজন ইনস্পেক্টর আসেন। অভিজাত পরিবারটির কর্তা, যিনি সামনে নাইটহুড পেতে যাচ্ছেন, তার স্ত্রী, তার ছেলে, মেয়ে, মেয়ের হবু জামাই এরা সবাই ইনস্পেক্টরের জেরার মুখে পড়েন। একটি ওয়ার্কিং ক্লাস মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। জেরাটি এ সংস্লিষ্ট। মূলত এই ড্রামায় সামাজিক শ্রেণী বৈষম্য, এবং ধনী ক্লাসের কর্মকাণ্ড কীভাবে ওয়ার্কিং ক্লাসের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে, সেটা দেখানো হয়েছে, একটি মিস্ট্রি ড্রামার মাধ্যমে।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং