আর্ট হিস্টোরি বা শিল্পের ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে অনেক ইন্টারেস্টিং বিষয়াদি জানতে পারতেছি। এর একটা হল বিভিন্ন পিরিয়ডে আর্ট এবং ভাস্কর্যের রূপ বদলানো। ক্লাসিক পিরিয়ডে প্রাচীন গ্রীস এবং রোমে যেসব ভাস্কর্য ছিল সেগুলা ছিল পুরা মানব কাঠামোর। একেবারে মানুষের মতো করে বানানো। ক্লাসিক পিরিয়ডের সময়টা ৫০০ বিফোর ক্রাইস্ট থেকে ২০০ এডি। এ ডি অর্থ এন্নো ডোমিনি অর্থাৎ আমাদের প্রভুর জন্ম বর্ষ থেকে। ১ বিসি থেকে ১ এডিতে যায়। মাঝখানে কোন জিরো এডি নাই। জুলিয়ান, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের এই নিয়ম। এইগুলার সেক্যুলার ভার্সন হচ্ছে কমন এরা আর বিফোর কমন এরা।
যাইহোক, ক্ল্যাসিক পিরিয়ডের একটা ভাস্কর্য দেখা যাক –
এটি একটি বিখ্যাত গ্রীক ক্ল্যাসিকাল ভাস্কর্য। এর নাম ডরিফরোস (Doryphoros)। এটি নির্মান করেছিলেন ক্ল্যাসিকাল গ্রীসের বিখ্যাত ভাস্কর পলিক্লেইটোস। ডরিফরোসের ভাস্কর্যটি মানুষের মতো দেখতে এবং চেষ্টা করা হয়েছে সত্যিকার মানুষের মতো তাকে বানানোর। তার পা দুটোর অবস্থান এবগ শারিরিক ভঙ্গি বলে দেয় সে এক পায়ে ভর দিয়ে অন্য পা পিছনে নিয়ে দাঁড়িয়ে কোন কিছু দেখছে এবং ভাবছে অথবা হাটছে। এইরকম অবস্থা তৈরী করা হয়েছে ভাস্কর্যের মধ্যে জীবন্ত ভাব ফুটিয়ে তোলার জন্য। এই ধরনের চেষ্টাকে বলা হয় কন্ট্রাপস্টো (contrapposto)।
ক্ল্যাসিকাল পিরিয়ডের আরেকটি ভাস্কর্য দেখা যাক
এটি কন্ট্রাপস্টো নয়।
ক্লাসিক পিরিয়ডের পরে ইউরোপিয়ান আর্ট মধ্যযুগে গিয়ে পরিবর্তিত হয়। প্রায় ১০০০ এরও বেশি সময় মধ্যযুগের আর্টের ব্যাপ্তি। ইউরোপে খ্রিস্টানিটির প্রভাবে তখন মানবদেহের পূর্ণ রূপ প্রদান পরিবর্তিত হয়ে অমানবসূলভ ভাস্কর্য নির্মানের দিকে যায়। যেমন মধ্যযুগের ভাস্কর্য দেখা যাক
চার্লস ক্যাথেড্রালের এই ভাস্কর্যগুলোর ক্ষেত্রে মানবদেহের সাথে পুরোপুরি সাদৃশ্য রাখার চেষ্টা করা হয় নি। ভাস্কর্যের দেহ কাপড় দিয়ে ঢাকা এবং তাদের অবস্থান এমন জায়গায় যেখানে মানুষের দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না। অর্থাৎ ভাস্কর্যগুলো মানবদেহের মতো না, মানবদেহের প্রতীকিরূপে উপস্থাপিত।
মধ্যযুগের পর ইউরোপে যখন রেনেসা শুরু হলো (১৪-১৭ শতক) তখন আবার ভাস্কর্যে মানবদেহের পূর্ন রূপ বা বাস্তব রূপ দেয়া শুরু হলো। রেনেসা পুরুষদের মধ্যে বিখ্যাত লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এবং মাইকেল এঞ্জেলো। মাইকেল এঞ্জেলোর ডেভিডের ভাস্কর্য দেখা যাক
মডার্ন পিরিয়ডে ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে আবার অমানবসূলভ দেহাকৃতি ফিরে এসে। তবে এবার ধর্মীয় প্রভাবে নয়, বিভিন্ন ধরনের প্রতীকি এবং দার্শনিক কারণে। একটি মডার্ন ভাস্কর্য দেখা যাক
ডেভিড স্মিথের কিউভি ছয়। এখানে মানব দেহাকৃতির কোন মিল নেই। এছাড়া মডার্ন ভাস্কর্য যার হাত ধরে শুরু বলে ধরা হয় সেই অগাস্ট রোডিন এর একটি কাজ দেখা যাক
এখানে পুরোপুরি মানুষের দেহাকৃতির সাথে মিল রাখার কোন চেষ্টা করা হয় নি।
এটা একেবারে প্রাথমিক একটা বিষয়। এই যে চার সময়ের কথা বলা হয়েছে, তার ব্যাপ্তি অনেক, ফলে এর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায় আছে। সহজভাবে দেখতে এরকম হলেও প্রতিটি পিরিয়ডের ভিতরে আরো অনেক বিষয় আছে বুঝার মতো। ফলে এই ইন্টারেস্টিং বিষয়টাকে প্রাথমিক ধারণা হিসেবে ধরে নেয়াই ভালো।
যে একটা চক্রের মতো দেখা যাচ্ছে ক্ল্যাসিক স্টাইল ফিরে এলো রেনেসায় কিংবা মধ্যযুগের স্টাইল ভিন্ন রূপে ফিরে এলো আধুনিক যুগে তার নাম দেয়া যাক “এভাবেও ফিরে আসা যায়” 😉 । এই রূপ বদলানো দেখে সেই নির্দিষ্ট সময়ের অবস্থা, চিন্তা ও দর্শন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অবশ্যই শিল্প হচ্ছে সভ্যতার আয়না।