আপনি একটা রেল লাইনের পাশ দিয়া যাচ্ছেন। যাইতে যাইতে দেখলেন একটা বিরাট লম্বা ট্রেন হুশ হুশ কইরা চলে গেল। এরপরে আপনার সাথে আমার দেখা হইল। আপনি আমারে বললেন একটা ট্রেইন দেখলাম চইলা গেল। তখন আমি আপনারে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনে ক্যামনে বুঝলেন ওইটা ট্রেন ছিল?”
আপনি অবাক হইয়া আমার দিকে তাকাইলেন। বললেন, “বুঝাবুঝির কি আছে। ওইটা ট্রেন।”
আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, ‘ওইটা যে সাপ না ক্যামনে বুঝলেন?”
আপনি এই প্রশ্ন শুনে আমারে উন্মাদ ভাবতে পারেন। অথবা ভাবতে পারেন আমি ফাজিল কিসিমের লোক। কিন্তু আমার প্রশ্নটা আসলেই গুরুত্বপূর্ন। আপনি কেমনে বুঝতে পারেন একটা ট্রেন আসলে ট্রেন, সে সাপ নয়।
ধরা যাক, আপনার মস্তিস্কে এইরকম কিছু ইনফরমেশন রাখা আছে। বড় বগিযুক্ত লম্বা বস্তু যা ভিতরে মানুষ ও জিনিসপত্রাদি লইয়া হুশ করিয়া চলিয়া যায় তা হচ্ছে ট্রেন। আর সাপ হইল একটা সরিসৃপ প্রানী, লম্বাকৃতির, মাথায় দুইটা চক্ষু আছে এবং জিহবা দিয়া সে শুনে। ইত্যাদি বা আরো কছু তথ্যের সমন্বয়ে আপনার মস্তিস্কে কিছু মানসিক নকশা আছে বলে ধইরা নিলাম। কোন বস্তু সাপের নকশার সাথে মিলে গেলে আপনি বুঝতে পারেন ওইটা সাপ। কোনটা ট্রেনের লগে মিলে গেলে আপনে বুঝেন ওইটা ট্রেন।
এই ধরনের অনেক মানসিক নকশা লইয়া আমরা চলি, মনে করা যাক। মনে করতে হচ্ছে কারণ মস্তিষ্ক ক্যামনে কাজ করে তা আমাদের অজানা। মস্তিষ্কের কাজ বুঝতে মানুষেরা গত দুই হাজার বছরে বিভিন্ন রূপকের অবতাড়না করছে। একসময় তারা বলছে এটা বাইরের কোন স্পিরিট (আত্মা, এক্ষেত্রে সক্রেটিসের ডাইমন কি স্মরণ করা যায়?) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তারপর খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে আবিষ্কার হইল হাইড্রোলিক এঞ্জিনিয়ারিং। লোকেরা ভাবতে লাগত মস্তিষ্ক বোধহয় হাইড্রোলিক এঞ্জিনের মত কাজ করে। এই ধারণা স্থায়ী হইছিল প্রায় ষোল শত বছর।
১৫০০ সালে রেনে দেকার্তে বললেন মানুষেরা জটিল মেশিন। তার এই মেশিন ধারণার শক্ত ক্রিটিসিজম আছে মাইন্ডওয়াক ফিল্মে। ১৬০০ সালে দার্শনিক থমাস হবস বলেন কিছু মস্তিষ্কে কিছু মেকানিক্যাল গতির ফলেই চিন্তার উৎপত্তি। ১৭০০ সালে রসায়ন ও বিদ্যুতের উন্নতির ফলে মস্তিষ্কের কাজ ব্যাখ্যায় নয়া রূপক আসে। শেষপর্যন্ত, জর্মন পদার্থবিজ্ঞানী হারমান ভন হ্যালমলজ মস্তিষ্ককে বলেন টেলিগ্রাফের মতো।
অর্থাৎ, প্রতিটা সময়ে মানুষ তার সেরা আবিষ্কারের রূপকে ধরতে চেয়েছে মস্তিষ্কের কাজ। সেই ধারাবাহীকতার সূত্রে ১৯৪০ এ এসে ধরা হলো মস্তিষ্ক কাজ করে কম্পিউটারের মতো। মস্তিষ্ককে বলা হইল একটা ইনফরমেশন প্রসেসর। এই ধারনা বা রূপকে অনেক সমস্যা আছে, তবে তা ভিন্ন বিষয়। এ নিয়ে এইয়ন ম্যাগাজিনে সাইকোলজিস্ট রবার্ট এপস্টাইন বেশ লম্বা আলোচনা করেছেন। আগ্রহীরা তা দেখতে পারেন। আমাদের এখানে ধরে নেয়া ভালো মস্তিষ্ক আইপি প্রসেসরই।
চিন্তার বা সিদ্ধান্ত গ্রহনের সুবিধার ক্ষেত্রে তাই সচেতনভাবে আপনি কিছু মানসিক নকশা তৈরী করতে পারেন। এইভাবে নকশাকারে রাখলে তা মনে রাখতে এবং ঠিক সময়ে প্রয়োগ করা সহজ হবে।
বিভিন্ন ধরনের বই পড়ি আমরা। কিছুদিন পরে বইয়ের কাহিনী আর অত মনে থাকে না। যেমন এখন আমি এখন বইলা যাইতে পারব না পুতুল নাচের ইতিকথায় আসলে কি হইছিল। তবে মনে আছে শশী ডাক্তার আর তার কুসুমের কথা আবছাভাবে। এইভাবে অনেক ফিল্ম দেখা হইছে যার কাহিনী মনে নাই। পাঁচ বছর আগে যেসব অনেক পত্রিকার রিপোর্ট পড়ছিলাম তাও মনে নাই। এইভাবে জিনিসগুলা আমাদের মনে থাকে না।
মনে না থাকলে পড়ার যে উপকারীতা তা থেকে আমরা বঞ্চিত হইতে থাকি।
এজন্য মনে রাখার একটা উপায় হইতে পারে মানসিক নকশা তৈরী। একটা বইয়ের বা ফিল্মের সব কিছুই যে সবার কাজে লাগার মত এমন নয়। নিজের যা কাজে লাগবে বা লাগতে পারে তা নিয়া মানসিক নকশা তৈয়ার করা যাইতে পারে।
মানসিক নকশার উৎস বা যেগুলা থেকে মানসিক নকশা তৈরী করা যাইতে পারেঃ
১। আপনি নিজে নিজে তৈরী করতে পারেন নিজের চিন্তাশক্তি ব্যবহার কইরা।
২। বই পুস্তক
৩। চলচ্চিত্র
৪। পত্রিকা, নিউজ
৫। বাস্তব অভিজ্ঞতা
বাস্তব অভিজ্ঞতা হইল জীবন যাপন করতে গিয়া আপনার যেসব লোকের সাথে কথা হয়, যেসব ঘটনায় পড়তে হয় সেগুলা থেকে। অনেক জ্ঞাণী, বুদ্ধিমান লোকের সাথে দেখা হইতে পারে, কথা হইতে পারে। হয়ত সে অশিক্ষিত বা একাডেমিক পড়ালেখা করে নাই। কিন্তু তার চিন্তা হইতে পারে পরিষ্কার।
এইখানে আমি কিছু মানসিক নকশা তৈরী করব । অর্থনীতি, সমাজবিদ্যা, ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প – ইত্যাদি বড় সব ডিসিপ্লিনের বড় সব আইডিয়া থেকে – এইটা এক মাল্টিডিসিপ্লিনারী এপ্রোচ।
—
মানসিক নকশা জাতীয় চিন্তার ক্ষেত্রে প্রবাদ পুরুষ হইলেন চার্লি মাঙ্গার। স্মার্ট হইবার বাফেট নিয়ম লেখার তার কথা কিছু আছে। এই বড় জ্ঞানী, দার্শনিক, ধনী এবং বিরাট স্মার্ট লোক এবং ওয়ারেন বাফেট, শন প্যারিশ, সঞ্জয় বক্সী সহ নানা লেখক, ইনুভেস্টর, কবি, দার্শনিকদের চিন্তার উপর ভর করে, জায়ান্টদের কাঁধে খাড়াইয়া, আমি মানসিক নকশা তৈরী করবো। আপনারা চাইলে পড়তে পারেন।
আমি যদি অন্যের চাইতে বেশী কিছু দেখে থাকি, তার কারণ হচ্ছে মহানদের কাঁধে দাড়াইছিলাম আমি।
– আইজাক নিউটন
চিন্তা হইল কঠিন কাজ, এইজন্য অধিকাংশ লোকে তা না কইরা বিচার করতে যায়?
– কার্ল গুস্তান ইয়ুং (বা জাং)
মানসিক নকশাসমূহঃ
২। ব্যাঙ নকশা
৫। পাবলো নেরুদাকে স্মরণ
৬। রবীন্দ্রনাথের বুঝা এবং না বুঝা
৭। গুজব তত্ত্ব
১০। ভবিষ্যত বানী
১১। ফেলুদার সবুজ ডায়রী
১২। কনফার্মেশন বায়াস কী? এ থেকে বাঁচার উপায়।
১৩। ন্যারেটিভ ফ্যালাসিঃ সাফল্যের গল্প থেকে সাবধান
১৪।
১৫।
১৬।
—
মানসিক নকশার ফেইসবুক গ্রুপ।