এই যে বেশীরভাগ লোকে, অনেক জিনিস মেইন্টেইন করে চলেন নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য। কোন এক জনপ্রিয় লেখককে তার বাজে মনে হয়, তিনি বলেনও বিশ্বস্ত পরিচিত সার্কেলে কিন্তু তা নিয়া পাবলিকলি কিছু বলেন না এই ভেবে যে তার জনপ্রিয়তা কমে যাবে এতে। বা কোন সম্পর্ক দূর্বল হবে, যে সম্পর্ক তারে অনেক দূরে যাইতে হেল্প করবে বলে তার ধারণা, এমন করেন লোকে।
আমি এটা করি না।
কারণ আমার মনে হয় দূর যাওয়াযাওয়ি একটা ব্ল্যাক সোয়ান। শিল্প সাহিত্যের ইতিহাস থেকে এই শিক্ষা নিছি। প্রচুর পরিশ্রম করে অনেকে ভালো লেখেও তার সময়ে পরিচিত হইতে পারেন নাই। আবার খুব হালকা পাতলা লেখকেরাও পরিচিত হইতে পারছেন। এইখানে পরিশ্রম, কানেকশন খালি কাজ করেনা, লাক বলে আরেক জিনিস কাজ করে।
সব মেইন্টেইন কইরা, জনগণের চাহিদার মাপে চইলা, নিজের ইচ্ছারে নিজের প্রকৃত রূপরে লুকাইয়া, সাধারন লোকের ইচ্ছায় নিজেরে গইড়া আপনে পরিচিতি বা জনপ্রিয়তা নাও পাইতে পারেন। অথবা পাইলেও তা হুট কইরা নাই হইয়া যাইতে পারে।
জগতে পূর্ব ধারণা যেসব হয়, বিশেষজ্ঞরা করেন তার অধিকাংশই ফলে না। উলটা পর্যন্ত হইয়া যায়। এটা ভালোভাবে দেখতে কয়েকবছর আগের পুরান পত্রিকাগুলা দেখেন। দেখবেন বিশেষজ্ঞদের অনেক মতামত ফলে নাই। এই পৃথিবীতে কোন এক নিয়মে চলে না। খালি সাইন্স, খালি আর্টস, খালি অর্থনীতির নিয়ম না। এইখানে সব কিছু রিলেটেড, সব মিলাইয়াই চলে।
এখানে এক আর একে দুই হওয়ার ইজি গনিত নাই। আপনি বুঝতেও পারবেন না কোন ঝোঁপে আরেক পাঁচ কিংবা আট বইসা আছে। তা আপনার এক আর একের সমীকরনে আইসা বইসা যাবে। গনীতের হিশাবে আপনে দুই এক্সপেক্ট কইরা বসে দেখবেন রেজাল্ট সাত বা দশ!
বনি ওয়ার একজন নার্স। প্যাল্লিয়েটিভ কেয়ারে তিনি কাজ করেন। সেইখানে মারাত্মক সিরিয়াস সব রোগীরা আসতেন। যারা কয়েকমাসের মধ্যেই মারা যাবেন এমন। ভদ্রমহিলা এদের সাথে কথা বলতেন। তাদের জীবনের শেষ কয়েক সপ্তাহ তিনি কাছ থেকে দেখছেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করতেন, তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় পরিতাপের বিষয়গুলা কী কী?
রোগীরা উত্তর দিতেন। সেইগুলা নিয়া তিনি একটা বই লিখেছেন। দি টপ ফাইভ রেগরেটস অব ডাইং নামে। পাঁচটা টপ রেগরেটস তিনি দেখছিলেন বেশী কমন, যেইগুলা প্রায় সবাই ই বলেন।
এগুলা হলো-
- ১। আমি যদি অন্যের প্রত্যাশামত নিজের জীবন চালিত না কইরা, নিজের মত কইরা বাঁচতে পারতাম। আমার যদি সেই সাহসটা থাকত।
- ২। আমি যদি এত কাজ, এত পরিশ্রম না করতাম।
- ৩। নিজের ইচ্ছা, অনুভূতি প্রকাশের মত সাহস যদি আমার থাকত।
- ৪। আমি যদি আমার বন্ধুদের লগে থাকতে পারতাম আরো বেশী।
- ৫। আমি যদি আরো সুখী বা খুশী থাকতে পারতাম।
এইগুলা মানুষের ডীপ রেগরেট। প্রথমটা আর তৃতীয়টা ডিল করে ঐ বিষয়টা নিয়া, যা নিয়া আমি লেখাটা শুরু করছি। অন্যের সাথে শান্তি বজায় রাখার জন্য, অন্যের কি মনে করে তা ভাইবা, পদোন্নতি বা খ্যাতি পাইবার জন্য লোকে নিজের অনুভূতি লুকায়। এইটা নিজের লগে তার নিজের প্রতারনা। এমন মানুষের জন্য আমার দুঃখ হয়।
এটা শেষপর্যন্ত একটা রেগরেট, একটা পরিতাপ হইয়া ফিরে আসে। মৃত্যুর আগে আগে।
নিজে “নিজে” হওয়াটা জরুরী। না হইলে কেন মিছেমিছি এই জীবনযাপন, অন্যদের চাহিদার দাস হইয়া?
দুই নাম্বার পয়েন্টে কাজের কথা আছে, বেশী কাজ বেশী পরিশ্রম শান্তি বিনাশী। পরিশ্রমে ধন আনে কথা আছে, এটা সর্বাংশে সত্য নয়। প্রচুর কায়িক পরিশ্রমের কাজ করে সাধারন শ্রমিকেরা প্রতিদিন, তাদের ধন কই? সঠিক জায়গায়, সঠিক সময়ে, সঠিক পদ্বতিতে পরিশ্রম ধন আনতে পারে। কিন্তু এই তিন সঠিক একসাথে মিলাইতে এর পিছনে কাজ করেন ভাগ্য বা লাক মহাশয়।
চাইরে আছে বন্ধুদের কথা। প্রত্যেকের কিছু গ্রেট বন্ধুবান্ধব থাকে। সেইগুলা যখন থাকে তখন লোকে বুঝে না। ভালো বন্ধুত্বের চাষ করা তাই দরকার।
আর লাস্ট পয়েন্ট হইল, একটা স্টোয়িক পয়েন্ট। প্রাচীন গ্রীক দর্শনের এক শাখা স্টোয়িকবাদ। মানুষেরা মৃত্যুর আগে আগে বুঝে হ্যাপিনেস একটা চয়েজ। আপনি চয়েজ করতে পারেন হ্যাপি থাকবেন না, স্যাড থাকবেন। আপনার ক্ষমতা খালি আপনার মাইন্ডের উপরেই। একইভাবে সৎ থাকা, অসৎ থাকা, ন্যায়পরায়ন থাকা ইত্যাদি হইল চয়েজ। আপনার সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করে।
নিজে “নিজে” হইবেন, না অন্যের চাহিদামত হইবেন, এইটাও একটা চয়েজ।