দ্য ট্রেইন
Beauty belongs to the man who can appreciate it!
ফিল্মের একটি চরম শক্তিশালী জায়গা হচ্ছে ডায়লগ বা চরিত্রদের মধ্যেকার কথোপকথন। ডায়লগ যদি প্রাসঙ্গিকভাবে গভীর, তাৎপর্যপূর্ন এবং অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে তাহলে ফিল্মে যে চিত্র দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত হয়, তা একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। বাংলা জনপ্রিয় ধারার সিনেমায় এই ডায়লগের জায়গায় ব্যর্থতা সীমাহীন।
দ্য ট্রেইন (১৯৬৪) ফিল্মটি নির্মিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি ঘটনার উপর ভিত্তি করে। আগস্ট ১৯৪৪ সালের কাহিনী। কাহিনীর সংঘটনস্থান ফ্রান্স, জার্মান বাহিনী ফ্রান্স দখল করে রেখেছে। অক্ষ শক্তি বুঝতে পেরেছে তাদের পরাজয় ঘনিয়ে এসেছে। জার্মান সেনা কর্নেল ফ্র্যাঞ্জ ভন ওয়াল্ডহেইম ফ্রান্সের যাদুঘর থেকে আধুনিক চিত্রশিল্পের নানা নিদর্শন জার্মানীতে নিয়ে যেতে চাইলেন। সেগুলোর মধ্যে আছে পিকাসো, মাতিসে সহ আরো বড় বড় অনেক শিল্পীদের আকা ছবি। যাদুঘরের কিউরেটর ফ্রেঞ্চ রেজিসট্যান্সের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলেন। মাত্র কয়েকটা দিন ট্রেন দেরী করতে পারলেই হবে, মিত্রশক্তির মাধ্যমে ফ্রান্স স্বাধীন এই ঘোষনা চলে আসবে।
রেজিসট্যান্সের সেল লিডার এবং রেলওয়ের এরিয়া ইন্সপেক্টর পল ল্যাবিশের কাছে এই অনুরোধ গ্রাহ্য হলো না। তার কাছে আর্টওয়ার্কের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশী। ট্রেন কয়েকদিন দেরী করানো এক ভয়ানক এবং দুঃসাধ্য কাজ। তা করতে গেলে অনেক মানুষের প্রাণহানির সম্ভাবনা আছে।
Labiche: We started with eighteen. Like your paintings, mademoiselle, we couldn’t replace them. For certain things we take the risk, but I won’t waste lives on paintings.
Miss Villard: They wouldn’t be wasted! Excuse me, I know that’s a terrible thing to say. But those paintings are part of France. The Germans want to take them away. They’ve taken our land, our food, they live in our houses, and now they’re trying to take our art. This beauty, this vision of life, born out of France, our special vision, our trust… we hold it in trust, don’t you see, for everyone? This is our pride, what we create and hold for the world. There are worse things to risk your life for than that.
Labiche: I’m sorry, mademoiselle, we can’t help you.
সুতরাং, কিউরেটর হতাশ হয়েই ফিরে যান।
কিন্তু পরবর্তীতে ঘটনাক্রমে ল্যাবিশ এবং রেজিস্ট্যান্সের কয়েকজন এই ট্রেন দেরী করাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠে। এবং এই ট্রেন থামানো নিয়েই গড়ে উঠেছে দ্য ট্রেইন ফিল্মের কাহিনী। যে ট্রেনের ভিতরে আছে মহামূল্যবান শিল্পকর্ম।
ফিল্মের ভিলেন চরিত্র, কর্নেল ওয়াল্ডহেইম; খুবই ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার। তার ভিতরে এই মহান শিল্পকর্মগুলোর জন্য মমতা বিদ্যমান। তিনি এর অর্থনৈতিক মূল্য দেখিয়ে জার্মান অথরিটির অনুমতি নেন যাতে এগুলো জার্মানীতে নিয়ে যেতে দেয়া হয়।
ফিল্মের প্রথমদিকে শিল্পের প্রতি কর্নেলের দূর্বলতার ব্যাপারে বুঝা যায় কিউরেটরের কথায়। কিন্তু দ্রুতই মনে হতে থাকে তিনি কেবল অর্থনৈতিক কারণে ছবিগুলো জার্মানীতে নিয়ে যেতে চান।
কর্নেলকে বুঝতে একেবারে শেষ পর্যন্ত যেতে হয় ফিল্মের। যখন ছবিগুলো নেবার সব চেষ্টাই ব্যর্থ, তখন তার আকুলতা দেখে মনে হয় শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণে তিনি এসব করেন নি। এই শিল্পকর্মের সৌন্দর্যের মায়ায় তিনি বাঁধা পড়ে গেছেন।
সব জার্মান সেনারা চলে গেলেও তাই কর্নেল ছবিগুলোর পাশেই রয়ে যান। প্রকৃত সৌন্দর্য মানুষকে উন্মাদ করে দেয়। হিতাহিত বাস্তবিক জ্ঞান তার লোপ পায়। কর্নেল যাওয়ার সুযোগ পেয়েও তাই যান নি।
শেষ দৃশ্যে ল্যাবিশের সাথে তার দেখা হয়।
ক্ষুব্দ ও অবজ্ঞাভরা কন্ঠে তিনি ল্যাবিশকে যা বলেন, তা আমার এ পর্যন্ত দেখা ফিল্মগুলোর মধ্যে, অন্যতম শ্রেষ্ট একটি ডায়লগ,
Labiche! Here’s your prize, Labiche. Some of the greatest paintings in the world. Does it please you, Labiche? Give you a sense of excitement in just being near them? A painting means as much to you as a string of pearls to an ape. You won by sheer luck: you stopped me without knowing what you were doing, or why. You are nothing, Labiche — a lump of flesh. The paintings are mine; they always will be; beauty belongs to the man who can appreciate it! They will always belong to me or to a man like me. Now, this minute, you couldn’t tell me why you did what you did.
দ্য ট্রেইনে ফিল্ম একটি সত্য ঘটনার উপরে নির্মিত। ফ্রেঞ্চ আর্ট হিস্টোরিয়ান রোজ ভ্যালান্ড ফ্রেঞ্চ রেজিসট্যান্সের সাথে মিলিতভাবে, হাজারো মহান শিল্পকর্ম বাঁচিয়ে ছিলেন। তার লেখা নন ফিকশন একটি বইয়ের উওর ভিত্তি করে দ্য ট্রেইন ছবির গল্পটি সাজানো হয়েছে।
গল্পে কোন টুইস্ট নেই। সাদামাটা গল্প। কিন্তু সাসপেন্স ধরে রাখা হয়েছে। উপভোগ্য ও চমৎকার চলচ্চিত্র। পরিচালনা করেছেন জন ফ্রাংকেনহেইমার। বেস্ট স্ক্রিনপ্লে ক্যাটাগরিতে ১৯৬৪ সালের অস্কারে মনোনীত হয়েছিল।
দ্য ডেড রিংগার
সমাজে যেকোন মানুষের একটা ইমেজ থাকে। এই ইমেজ হয়ত সে ইচ্ছে করেই তৈরী করে সচেতনভাবে অথবা এমনিতেই তার আচার আচরনের উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়ে যায়। এই ইমেজের উপর নির্ভর করেই তাঁকে লোকে বিচার করে অনেকাংশে। এখন প্রশ্ন হলো, যদি কখনো কোন ব্যক্তির ইমেজ এবং সে মুখোমুখি অবস্থানে পৌছে যায়, একটাকে বাঁচাতে অন্যটাকে বিসর্জন দিতে হবে, তখন সে কী করবে?
সহজ প্রশ্ন হয়ত। কিন্তু পরিস্থিতি একে জটিল করে তুলতে পারে।
ডেড রিংগার একটি ১৯৬৪ সালের থ্রিলার ফিল্ম, একইরকম চেহারার দুই বোনকে নিয়ে। একজন ভালো এডিথ ফিলিপস, আরেকজন খারাপ মার্গারেট ডেলোরকা।
ফ্র্যাংক ডেলোরকা নামে একজন সেনা অফিসার ও প্রভাবশালী ধনী লোকের সাথে প্রায় আঠার বিশ বছর আগে এডিথের প্রেম ছিল। তাদের বিয়ে হবার কথা। কিন্তু যেহেতু একই চেহারার তাই ফ্র্যাংক মার্গারেট এর সাথেও জড়িয়ে পরে। এবং মার্গারেট দাবী করে সে প্রেগন্যান্ট। তাই ফ্র্যাংক ডেলোরকা তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়।
এদিকে বিশ বছর পরে ফ্র্যাংক ডেলোরকার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আসে এডিথ ফিলিপস। দুই বোনের তখন দেখা হয়। এডিথ একটি ককটেইল বার চালায়। অর্থনৈতিক সমস্যায় আছে। দুই মাসের ভাড়া বাকী তার। অন্যদিকে মার্গারেট ধনী ফ্র্যাংক ডেলোরকার রেখে যাওয়া বিশাল সম্পত্তির মালিক।
এডিথ ঘটনাক্রমে জানতে পারে মার্গারেট এবং ফ্রাংকের কোন সন্তান হয় নি। সে বুঝতে পারে মার্গারেট মিথ্যা অভিনয় করে ফ্রাংককে বিয়ে করেছিল। তার মনে জেগে উঠে প্রতিশোধ স্পৃহা।
বিয়িং সাইরাস
ইন্ডিয়ান ফিল্ম নির্মাতা হোমি আদাজানিয়ার প্রথম ফিল্ম বিয়িং সাইরাস। বিয়িং জন মালকোভিচের সাথে শুধু নামেই মিল। এটি একটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। এর নির্মান এবং গল্প বলার ধরণ ভালো।
একজন পার্সী কৃপণ ধনী ব্যক্তির দুই ছেলে। একজন বিখ্যাত শিল্পী ছিলেন, মাটির শিল্পকর্ম তৈরী করেন। নাসিরউদ্দিন শাহ এবং তার আছে এক অসুখী বউ। আরেক ছেলে বোমান ইরানী। এই ছেলে পত্রিকাতে বিয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। তার বিজ্ঞাপনে এক মেয়ে সাড়া দেন। তাদের বিয়ে হয়।
নাসিরউদ্দিন শাহের অভিনয় অসাধারণ, একজন বিখ্যাত অবসর নেয়া শিল্পীর মতই। এবং বোমান ইরানীও তার চরিত্রে সার্থক অভিনয় করে গেছেন। নাসিরউদ্দিন এবং বোমান ইরানীর ক্ষেত্রে তা স্বাভাবিক বিষয়, প্রায় ফিল্মেই তারা চরিত্রের সাথে মিশে যেতে পারেন।
সাইরাস চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাইফ আলী খান। সাইফ আলী সম্ভবত তার সেরা একটি অভিনয় করেছেন এই ফিল্মে।
সাইরাস মিস্ত্রী, ভাস্কর নাসিরউদ্দিন শাহের একজন ভক্ত এবং তার কাছে সহযোগী হয়ে কাজ শিখতে যায়।
প্রাথমিকভাবে এই বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে গল্পের নির্মাণ। গল্প বর্নিত হয়েছে সাইরাসের কথায়, উত্তম পুরুষে। গল্পের ব্যাপ্তী বা ম্যাটেরিয়ালস খুব বেশী নয়। কিন্তু বর্ননার কারসাজির গুণে দেখতে খারাপ লাগে না।
সাধারণ বলিউডি ফিল্ম থেকে আলাদা হয়ে গল্প বলার চেষ্টা করেছেন নির্মাতা। সেখানে তিনি সফল।