নিউজিল্যান্ডের এক ছোট কাল্পনিক শহরে টপ অব দি লেইকের গল্প। শহরের মধ্যে একটি লেইক আছে এবং সেই লেইক নিয়ে নানা গল্পও আছে। প্রথম পর্ব শুরুই হয় এমন দৃশ্য দিয়ে যে টুয়ী নামের এক বারো তেরো বছরের কিশোরী লেইকে ডুবে মরতে যায়, এবং তাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনেন পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে থাকা স্কুলবাসের একজন শিক্ষিকা। স্কুলে গিয়ে দেখা যায় টুয়ী পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট।
নিউজিল্যান্ডের কুইনস্টাউনে তখন ছিল সিডনী বেইজড একজন গোয়েন্দা অফিসার ও শিশু অপরাধ বিশেষজ্ঞ রবিন গ্রিফিন। সে তার ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের সাথে সময় কাটাতে আসে। টুয়ীর ঘটনায় তার ডাক পড়ে পার্শ্ববর্তী সেই লেইক তীরবর্তী শহরে, যে শহর তার জন্মস্থান; এবং এখানেই জড়িয়ে আছে তার জীবনের এক দুঃসহ স্মৃতি।
রবিন টুয়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কে এই সন্তানের বাবা, কিন্তু টুয়ী কিছু বলে না। লিখে জানায় ‘নো ওয়ান’। এই নো ওয়ান বিশেষ এক অর্থ বহন করে যা জানতে যেতে হয় সিজনের শেষ পর্যন্ত।
টুয়ীর বাবা শহরের বিশিষ্ট ভিলেন প্রকৃতির লোক ম্যাট মিচেম, এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভালো অভিনেতা পিটার মুলান। তার দুই ছেলে এবং অন্যান্যদের নিয়ে আইন বহির্ভূত নানা কাজকর্ম করে বেড়ায়। শক্তিশালী রাফ লোক বলতে যা বুঝায় ম্যাট মিচেম তাই। শহরের সবাই তাকে ভয় পায়, সমীহ করে চলে।
শহরে একজন ধর্মগুরু আসে, যার নাম জিজে। এসে একটা জায়গায় তার অনুসারীদের নিয়ে বসতি স্থাপন করে। সেই জায়গাটার নাম তারা দেয় প্যারাডাইজ। জিজের অনুসারীরা প্রধানত বিবাহবিচ্ছেদ, পারিবারিক ভায়োলেন্স ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়া মহিলারা, যারা শান্তির খোঁজে বা জীবনের অর্থের খোঁজে অথবা বেঁচে থাকার প্রেরণার জন্য জিজের সাথে আছে। জিজে এক ধরনের জেন বুদ্ধগুরুর মত কথা বলে তাদের সাহায্য করে।
একসময় টুয়ী হারিয়ে যায়। তার সন্তানের বাবা কে, এবং তাকে কী খুন করা হয়েছে, নাকী তাকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, লুকিয়ে রাখা হলে কোথায়? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মাধ্যমে গল্প এগিয়ে চলে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা রবিন তার নিজের জীবনের ভয়ংকর ঘটনার সাথে মিল পায় টুয়ীর ঘটনার, এবং তাই সে টুয়ীর কেইসে খুবই ইমোশনালি জড়িয়ে পড়ে। এদিকে ম্যাট মিচেমের আরেক পুত্র জনো মিচেম, যে দীর্ঘদিন জেল খেটে শহরে ফিরে এসেছে। সে বাপকে অপছন্দ করে এবং ফ্যামিলিতে ফিরে যায় না, তাঁবু খাটিয়ে থাকে বাইরে। এই জনো ডিটেক্টিভ রবিনের ছোটকালের প্রেমিক, এবং গল্পের বিস্তারের সাথে সাথে দেখা যায় তাদের প্রেমের পুনরায় জেগে উঠা।
সাধারণভাবে স্পয়লার ছাড়া বলতে গেলে, এই হলো টপ অব দ্য লেইকের ভূমিকা। এর রহস্য গল্পটি অস্বস্থিকর বিষয়ে পূর্ন, ও ব্যতিক্রমী। টুয়ীর বিষয় সামনে রেখে এগুতে এগুতে অন্যসব চরিত্রদের বিষয়ে নানা অস্বস্থিকর সত্য সামনে আসে, এবং সেগুলির সাথে মূল গল্পের সংযোগ স্থাপিত হয় কম বেশী। তবে সব রহস্য যে সমাধান হয় এমন নয়। কারণ বাস্তব জীবনে সব রহস্যের সমাধান হয় না।
ভিন্নধর্মী এই ক্রাইম থ্রিলার সিরিজের আরেকটি ভালো দিক বলা যায় এর প্রধান ডিটেক্টিভ রবিন গ্রিফিন বা এলিজাবেথ মস দেখতে সুন্দর। এবং তার সাথে সাপোর্টিং এক্টর জনো মিচেমের প্রেমও খুবই সুন্দরভাবে উঠে এসেছে।
রবিন গ্রিফিন, জনো, ম্যাট মিচেম এবং জিজে’র অভিনয় অসাধারণ।
উৎকৃষ্ট ক্রাইম থ্রিলারের বৈশিষ্ট্য হলো তা কেবল ক্রাইম থ্রিলারের চাইতে বেশী কিছু হয়ে ওঠে। শুধু ক্রাইমের সমাধান করাই এর উদ্দেশ্য হয় না। টপ অব দ্য লেইকের প্রথম সিজন সেরকম কিছু হয়ে উঠতে পেরেছে। একে কোন কোন দিক থেকে ফেমিনিস্ট ক্রাইম থ্রিলার বলা যায়।
এর স্ক্রিণরাইটারদের একজন জ্যান ক্যাম্পিয়ন, যিনি মহিলাদের মধ্যে একমাত্র যিনি পাম ডি’ওর জিতেছেন। পিয়ানো ফিল্মের স্ক্রিনপ্লের জন্য ওস্কারও জিতেছেন এই নিউজিল্যান্ডে জন্ম নেয়া ক্রিণরাইটার ও নির্মাতা। টপ অব দ্য লেইকের পরিচালনাও তিনি করেছেন আরেক অষ্ট্রেলিয়ান পরিচালক গার্থ ড্যাবিসের সাথে।