নিজের প্রিয় আইডিয়া হত্যা

তিনি বলেন, “দুই ধরনের মাইন্ডসেট থাকতে পারে মানুষের। এক ফিক্সড মাইন্ডসেট যারা মনে করে তাদের প্রতিভা দক্ষতা এগুলি ফিক্সড, অপরিবর্তনীয়। আরেক ধরনের লোক আছে যাদের মাইন্ডসেট হলো গ্রোথ মাইন্ডসেট। তারা মনে করে প্রতিভা দক্ষতা এগুলি উন্নত করা যায়। ফিক্সড মাইন্ডসেটওলারা সব এনকাউন্টারকে দেখে তাদের যোগ্যতা প্রমাণের পরীক্ষা হিসেবে। গ্রোথ মাইন্ডসেটওলাদের কাছে একই এনকাউন্টার নিজেদের উন্নত করার সুযোগ।

ড্রাইভ, ড্যানিয়েল এইচ পিংক।

আমাদের চিন্তার বড় এক ভ্রান্তি হলো আমরা যে ঠিক তা প্রমাণ করতে চাই, দেখাতে চাই। এর জন্য প্রাণপাত পরিশ্রম করে যাই।

কাকে দেখাতে চাই?

দুনিয়াকে, জগতবাসীকে।

কিন্তু আদৌ কি দুনিয়ার বা জগতবাসীর এদিকে কোন লক্ষ্য আছে?

সবাই কি যার যার জীবন, যার যার সমস্যা ও সমাধান নিয়ে ব্যস্ত নয়?

আর নিজেকে ঠিক প্রমাণ করে আমাদের লাভ কী?

ধরা যাক, আমি মনে করছি একটা জিনিস, আমাদের বাড়ির পাশের নারকেল গাছে সোনার নারকেল ধরবে। সে নারকেল ধরলে আমি তা বিক্রি করে ধনী হয়ে যাব।

আরেকজন লোক বললেন এই গাছে সোনার নারকেল ধরবে না, লাউ ধরবে।

এখন, আমার কি উচিত হবে নিজের কথা ঠিক প্রমাণ করার জন্য মাথা বেঁধে তার বিরুদ্ধে লেগে যাওয়া?

না।

কারণ তার কাছে বা অন্যের কাছে আমার নিজেকে ঠিক প্রমাণ করার দায় নেই। দরকারও নেই। বরং এই সময়ে আমি শান্তিতে থাকতে পারি। আমার নারকেল গাছে জল দিতে পারি। সার দিতে পারি। এই জল দেয়া, এবং সার দেয়া এসব হচ্ছে আমার কাজ, যা সোনার নারকেল তৈরীর পেছনে সরাসরি লাগছে। আমি যদি নিজেকে ঠিক প্রমাণের জন্য যুক্তি তর্ক ও যুদ্ধে লাগতাম তাহলে শক্তিক্ষয় হতো বৃথাই।

নিজেকে ঠিক প্রমাণ করার মানসিকতা অপ্রশস্ত চিন্তাশক্তির পরিচয়, এবং চাকরসূলভ কাজ। চাকরের এই দায় থাকে তার কথা যেন সে মালিক ঠিক মনে করেন। যেন অন্য চাকরদের চাইতে তার কথা ঠিক হয়। এতে মালিকের কাছে তার মর্যাদা বাড়ে।

নিজেকে ঠিক প্রমাণ করার দিকে সময় ব্যয় করার চাইতে সময় ব্যয় করা উচিত ফলাফলের দিকে। সেই ঘটনা থেকে সেরা ফলাফলটি আমি পাচ্ছি কি না, তাই হওয়া উচিত আমাদের লক্ষ্য। আমার সোনার নারকেলটি পেলেই হয়, আগে আমাকে লোকে ঠিক মনে করলে কী, আর বেঠিক মনে করলেই বা কী!

মানুষের প্রায় সম্পর্ক-সমস্যাতেও এটা দেখা যায়। নিজেকে ঠিক প্রমান করতে গিয়ে মানুষ ব্যাপারটাকে আরো জটিল করে তোলে।

এছাড়াও একজন লোক সব সময় ঠিক হন না। চিন্তায় উদার যারা আছেন তারা নিজের প্রিয় আইডিয়াকেও চ্যালেঞ্জ করেন, এবং যুক্তি তর্কে অন্য লোক যৌক্তিক কথা বললে মেনে নিতে তাদের বাঁধে না।

কারণ আইডিয়া প্রিয় হলেই তা ঠিক হবে এমন কোন কথা নেই।

নিয়মিত ভাবে নিজের প্রিয় আইডিয়াকে চ্যালেঞ্জের উপরে রাখা খুবই জরুরী। তাতে নানা বায়াসড চিন্তা ভ্রান্তি থেকে আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।

চার্লি মাঙ্গারের একটা কথা হলো, একটা বছর গেল আর আপনি আপনার কোন প্রিয় সেরা আইডিয়া ধ্বংস করলেন না এমন হলে সেই বছর হলো এক অপচয়।

২০১৭ সাল চলে যাচ্ছে। পাঠকেরা, ভাবতে বসুন আপনার প্রিয় সেরা আইডিয়াগুলি কী কী।

সমাজ নিয়ে, দেশ নিয়ে, জাতি নিয়ে বা অন্য যেকোন বিষয় নিয়ে।

এদের চ্যালেঞ্জ করুন। এদের বিরোধী যুক্তিগুলো খুঁজে দেখুন। সতর্কতার সাথে বিবেচনা করুন। যদি দেখতে পান আপনার প্রিয় সেরা আইডিয়াটি অযৌক্তিক এবং এর বিরোধী যুক্তিসমূহ ঠিক, তাহলে নিজের প্রিয় ঐ আইডিয়াটিকে বাদ দিন।

এভাবেই মানুষ চিন্তায় গ্রো করে, উদার হয়ে উঠে।

তবে চিন্তায় উদার হওয়া এমন কোন ব্যাপার না যে এক বিষয়ে একবার হয়ে গেলেই শেষ। নিয়মিত ভাবে উদার মানসিকতায় থাকাই চিন্তায় উদার হওয়া। গ্রহণ ও বর্জনের মানসিকতায় থাকা। যুক্তি দিয়ে বিচারের মানসিকতায় থাকা।

আর অন্য কারো যুক্তির অযৌক্তিকতা ও ভুল দেখার সাথে সাথে এটাও দেখা জরুরী যে সে কোথা থেকে এসেছে। কোন আর্থ-সামাজিক ক্লাস ও শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে। এগুলি বিবেচনায় নিলে তার অবস্থান বুঝা অনেকটাই সহজ হয়।