ভূমিকা
ড্যান আরিয়ালির নতুন বইটি শুরু হয়েছে এক চমৎকার লাইন দিয়ে। আমরা প্রত্যেকেই আমাদের নিজেদের জীবনের সিইও। আমরা প্রতিদিন কাজ করি, সিদ্ধান্ত নেই এবং অন্যদের আমাদের হয়ে কাজ করতে মোটিভেট করি। বইটি মোটিভেশন নিয়ে। মনস্তাত্ত্বিক ড্যান আরিয়ালি মোটিভেশন কী তা জানতে গভীরে গিয়েছেন। তিনি দেখতে চেয়েছেন মোটিভেশন কাজ করে কীভাবে।
আমাদের সমাজে মোটিভেশন বর্তমানে যে হালকা, ভ্রান্ত ও অসুস্থ রূপ পরিগ্রহ করেছে সেক্ষেত্রে এই বই মোটিভেশন বিষয়ে বুঝার জন্য চমৎকার।
সাধারণত মোটিভেশন বলতে বুঝায় কোন কাজের বিনিময়ে কোন পুরস্কার বা সুফল পাওয়া যাবে এমনভাবে কাউকে বুঝিয়ে কাজটি করানো বা করতে উৎসাহ দেয়া। মেরিয়েম ওয়েবস্টার অনলাইন অভিধান মতে মোটিভেশনের অর্থ হলো কাউকে কোন কাজ করার যুক্তি দেয়া বা তাকে কারণ দেখানো কেন কাজটি তার করা দরকার।
আমরা আমাদের বন্ধুদের, পরিচিতদের, শিশু সন্তানদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজ করতে মোটিভেট করি। এটা হতে পারে আপনার শিশুকে লাল জামাটি পরানোর জন্য অথবা বন্ধুকে জিমে নেয়ার জন্য বা ছোট ভাইয়ে দিয়ে কোন কাজ করানোর ক্ষেত্রেও।
কিন্তু মোটিভেশনের ভেতরটা খুব পরিস্কার ফকফকা না। আরিয়ালির কথায়, মোটিভেশন এমন এক জঙ্গল, যার ভেতরে রয়েছে নানা অদ্ভূত ব্যাকাত্যাড়া গাছ-বৃক্ষ, রয়েছে অনাবিষ্কৃত নদীসমূহ, রয়েছে ভয়ংকর পোকামাকড়, রয়েছে অদ্ভূত লতাগুল্ম, রয়েছে রঙ বেড়ঙের পক্ষীকূল।
তাই মোটিভেশনকে কেবল পুরস্কারের জন্য কাজ তথা ‘র্যাট-সিকিং-বিহেভিওর” হিসেবে দেখার কোন উপায় নেই। সাইকোলজিক্যালি মোটিভেশন গভীরভাবে জটিল এবং একেবারে মানবিক এক বিষয়। এই মোটিভেশনের জঙ্গলে থাকা এমন কিছু বিষয় আছে যাকে আমরা মনে করি খুবই দরকারী, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। এবং এমনো সব জিনিস আছে যা আমরা এড়িয়ে যাই, দেখি না, কিন্তু সেগুলিই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
মোটিভেশনের মূলে আছে মিনিং
নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক আলবেয়ার কাম্যু মানুষের জীবনকে বলেছিলেন সিসিফাসের পাথর পাহাড়ে তোলার মতো। সিসিফাস প্রাচীন গ্রীক পুরাণের এক রাজা। দেবতা জিউস তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। তার শাস্তি হলো একটি পাহাড়ে বড় পাথর খন্ডকে গড়িয়ে উপরে তোলা। উপরে তোলার পর পাথর আবার নিচে পড়বে। আবার তুলবে সিসিফাস। এভাবে চলতে থাকবে অনন্তকাল। এটাই তার শাস্তি।
কাম্যুর কথায় মানুষের জীবনও এমন।
কাম্যুর এই উদাহরণ, একটা জিনিস ভালো করে সামনে আনে যে মানুষ তার জীবনের এক অর্থ চায়, তার কাজের এক অর্থ চায়। আরিয়ালি তার বইতে এই জিনিসটাই দেখিয়েছেন। মানুষের মোটিভেশনের মূলে আছে একটা মিনিং, মিনিংফুল কিছু একটা সে করতে চায়।
এই মিনিং এর জন্য সে পেইনফুল বা কষ্টদায়ক কাজ করতেও পিছপা হয় না।
হ্যাপিনেস বা সুখ এবং মিনিং বা অর্থ এর মধ্যে বড় পার্থক্য আছে। ধরা যাক, আপনি ভাবেন কোন এক সুন্দর সমুদ্রতটে বসে থাকতে এবং সেইসময়ে আপনার প্রিয় কোন ড্রিংক সাথে থাকলে আপনি হবেন সুখী। কিন্তু প্রতিদিন এইভাবে থাকলে আপনার সুখ আর থাকবে না। এখানেই হেডোনিস্ট বা সুখবাদী চিন্তার সীমাবদ্বতা।
গবেষণায় দেখা গেছে যেসব জিনিস আমাদের মিনিং দেয় তারা সব সময় আমাদের সুখী করে না। যারা বলেছেন তারা অর্থপূর্ন বা মিনিংফুল জীবন কাটিয়েছেন দেখা গেছে তারা তাদের জীবনে অন্যের জন্য অনেক করেছেন। আবার যারা কেবল নিজের জন্যই করেছেন জীবনে, দেখা গেছে তারা ভাসা-ভাসা ভাবে নিজেদের সুখী মনে করেন কেবল।
মানুষের প্রতিকূলতা ও পেইন তাকে সেন্স অব মিনিং দিতে পারে। ড্যান আরিয়ালির শরীরের প্রায় ৭০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল এক দূর্ঘটনায়। এই বইতে তার বর্ননা আছে কিছু। কী এক ভয়াবহ পেইনের ভিতর দিয়ে তিনি গিয়েছিলেন। বইতে একটি কাহিনী আছে যেখানে আরেকটি ছেলে একইভাবে পুড়ে যায়। তার মা আরিয়ালির সাহায্য চান, তিনি যেন গিয়ে ছেলেটিকে মোটিভেট করে। আরিয়ালি ছেলেটির সাথে হাসপাতালে দেখা, তার সাথে কথা বলা ইত্যাদির মাধ্যমে তার অতীতের সেই দুঃসহ স্মৃতিকে, সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতাকে যেন পুনরাবিষ্কার করেন।
মানুষ চরম দুরাবস্থায় মিনিং খুঁজে পেতে পারে। আরিয়ালি তার এক বন্ধুর কথা বলেন। যিনি মৃত্যুপথযাত্রী লোকদের সাথে কাজ করতেন। তিনি নিজেকে মনে করতেন মিড ওয়াইফ অব ডেথ। এবং বলতেন তার মানুষের জন্মের শেষ ধাপ হলো মৃত্যু, সেই পথে এগিয়ে যেতে শেষ সময় পর্যন্ত তিনি তাদের সাহায্য করেন।
অনেক মানুষ কাজ করেন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায়। দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য, মা বাবাহীন বাচ্চাদের জন্য। তাদের এইসব কাজের মোটিভেশন হলো তারা মিনিংফুল একটা কিছু করছেন। আমাদের আকাঙ্খা আছে মানুষ জন্মের উপরে উঠে এটা বিশ্বাস করা যে আমাদের জীবনের এক বড় উদ্দেশ্য আছে। এর জন্য কাজ করতে, পরিশ্রম করতে পারি আমরা, জীবনে আরো মিনিং যোগ করতে।
এই আপাতদৃষ্টিতে অযৌক্তিক মোটিভেশন, জীবনের অর্থ তৈরী করা আমাদের সব ক্ষেত্রে মোটিভেট করে। কেবল অন্যকে সাহায্য করার বেলায় নয়, ব্যক্তিগত জীবনের সম্পর্কতে বা ব্যক্তিগত কোন লক্ষ্যে পৌছানোর বেলাতেও। কারণ মানব মোটিভেশন সময় স্কেল খুব দীর্ঘ, এমনকী আমাদের জীবনের ব্যাপ্তীর চাইতে বেশী। এবং এই মোটিভেশন আমাদের অস্তিত্বকেও ছাড়িয়ে যায় অনেক সময়, কারণ এর মূলে আছে মিনিং এর প্রতি আমাদের আকাঙ্খা।
মানুষের মানব জন্মের চাইতে বড় হয়ে উঠা শিল্প সৃষ্টি ও উপভোগের তাড়নাও তৈরী করে। এ ব্যাপারে নেসেসিটি অব আর্টে শিল্প সমালোচক আর্নস্ট ফিশার লিখেছিলেন, যা নিয়ে এই ব্লগে একটি লেখা আছে।
সহজে মানুষকে ডি-মোটিভেট করা যায় যেভাবে
মোটিভেশন নিয়ে বুঝতে হলে সহজে কীভাবে মানুষকে কোন কাজে ডি-মোটিভেট করা যায় তা নিয়ে বুঝা যেতে পারে। গণিতবিদ জাকোবির নীতি “ইনভার্স, ওলয়েজ ইনভার্স” অনুযায়ী এটা হচ্ছে ইনভার্স করে বুঝা।
মানুষকে ডি-মোটিভেট করা যায় সহজে তার কাজের মিনিং কেড়ে নিয়ে। আরিয়ালি তার কলিগের সাথে এ নিয়ে একটি সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা করেন। তারা লোকদের দুই ভাগে ভাগ করেন ও লেগো বায়োনিকল মেলাতে দেন।
একভাগকে বলা হয় তারা বায়োনিকল মেলানোর পরে তাদের ২ ডলার দেয়া হবে। বায়োনিকল বাক্সে রাখা হবে। এবং পরবর্তীতে পরের জনকে এর পার্টসগুলি খুলে দেয়া হবে, ও সেই ব্যক্তি আবার মেলাবেন।
একজন ব্যক্তি বায়োনিকল মিলিয়ে নিয়ে আসলে তারা সেটি বাক্সে রেখে দেন, ও তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি আরেকটি মেলাতে চান? এবার এগারো সেন্ট কম পাবেন দুই ডলার থেকে।
তিনি হ্যা বলে তাকে আরেকটি বায়োনিকল দেয়া হতো। এভাবে প্রতিবারে এগারো সেন্ট কম দেয়া হতো মেলানোর জন্য। দেখা গেল এই পরীক্ষা একজন অংশগ্রহণকারী গড়ে এগারোটি বায়োনিকল মিলিয়েছেন। এরপর যখন টাকা কমে যায় তখন আস্তে আস্তে মিলানো কমে। কিন্তু দেখা গেছে যারা বায়োনিকল বানাতে খুব পছন্দ করেন তারা টাকা কমে যাবার পরেও অনেক বানিয়েছেন।
দ্বিতীয় ভাগে আরিয়ালি ও তার কলিগ একটু বদলান বিষয়টাকে। এবার টাকার পরিমাণ একই থাকে। কিন্তু বায়োনিকল মিলিয়ে নিয়ে আসলে তা আর বাক্সে রাখা হতো না। বরং ঐ ব্যক্তিকে নতুন সেট মিলাতে দিয়ে তার চোখের সামনেই পুরনোটির অংশ খুলে ফেলা হতো। খুলে বাক্সে রাখা হতো।
এই পরীক্ষায় দেখা গেল যারা বায়োনিকল বানাতে পছন্দ করেন এবং করেন না এরা উভয়ই ৭ টি করে বানিয়েছেন। অর্থাৎ, চোখের সামনে ভাঙ্গা যারা বায়োনিকল বানাতে পছন্দ করতেন তাদের মোটিভেশন প্রচুর কমিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে।
প্রথম ক্ষেত্রে যারা কাজটি করেছেন তারা এর পেছনে একটি মিনিং খুঁজে পেয়েছেন। তাদের বানানো বস্তুটি বাক্সে রাখা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এই মিনিং আর রক্ষিত হয় নি। তাই মোটিভেশন কমে গেছে।
এইজন্যই জিউসের সিসিফাসকে দেয়া শাস্তিটি ভয়ংকর। তার পরিশ্রমের জন্য নয়, পরিশ্রমের অর্থহীনতার জন্য। কারণ এখানে চোখের সামনে সিসিফাস দেখতে পায় পাথর গড়িয়ে পড়ছে, অর্থাৎ তার কাজ ও পরিশ্রম একেবারে অর্থহীন।
আরিয়ালি আরেকটি প্রায় একইরকম পরীক্ষা করেন। এবার তারা অনেক কাগজে অক্ষর প্রিন্ট করেন, ও অংশগ্রহনকারীদের বলেন একইরকম বর্ন খুঁজে বের করে পাশাপাশি সাজাতে। প্রথম কাগজের জন্য ৫৫ সেন্ট করে দেয়া হবে। এরপর থেকে প্রতিবারে ৫ সেন্ট করে কমবে।
এখানে তারা তিনটা ভাগ করলেন।
একভাগে কাগজের উপরে নাম লিখতে পারতেন অংশগ্রহনকারী। কাগজ মিলিয়ে নিয়ে গেলে পরীক্ষর্থা তা দেখেন। মুখ দিয়ে “হুম” জাতীয় শব্দ করেন ও ডেস্কের পাশে ফাইল করে রাখেন। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করেন তারা আর কাজ করতে চায় কি না।
আরেক ভাগ ছিল, যেখানে কাগজে নাম লেখার ব্যবস্থা নেই। মিলিয়ে নিয়ে গেলে পরীক্ষর্থা দেখেনও না। উপেক্ষা করে পাশের ফাইলে রেখে দেন। এরপর জিজ্ঞেস করেন এরকম নতুন কাজ তারা করবে কি না।
তিন নম্বর ভাগে, পরীক্ষর্থা কাগজ দেখেন না, এবং তা শ্রেডারে ফেলে দেন সাথে সাথেই, এবং কাগজ কুচিকুচি হয়ে যায়। এরপর জিজ্ঞেস করেন তারা পাঁচ সেন্ট কমে আর কাজ করবে কি না।
এখানে মনে হয় যে যেহেতু শেষের দুই ভাগে পরীক্ষর্থা কাগজ দেখছেন না তাই ভুলভাল যেকোন ভাবে মিলিয়ে নিয়ে গিয়ে টাকা লাভের সুযোগ আছে তাই লোকে এটি বেশী করবে। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রথম ভাগে ১৫ সেন্ট হলে নতুন কাজ করা বন্ধ হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগে ২৭.৬ সেন্টে। এবং তৃতীয় ভাগে ২৯ সেন্টে।
অর্থাৎ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগে লোকেরা কাজ করতে মোটিভেশন পায় নি। কারণ তাদের কাজের কোন স্বীকৃতি তারা পাচ্ছে না।
সুতরাং, কোন ম্যানেজার যদি চান তার কোম্পানির লোকদের কাজে ডি-মোটিভেট করতে তাহলে তাদের কাজকে স্বীকৃতি না দেয়া ও ইগনোর করা কাজে দেবে।
গ্যালাপ কর্মক্ষেত্রে আমেরিকানরা কেমন মোটিভেটেড তা নিয়ে ডাটা সংগ্রহ করছে ২০০০ সাল থেকে। তাদের প্রাপ্ত তথ্য মতে আমেরিকান কর্মজীবী ডি-মোটিভেটেড লোকের সংখ্যা প্রতি বছর ২ শতাংশ করে বাড়ছে। প্রায় ৫০ শতাংশ আমেরিকান কর্মজীবী লোক তাদের কাজে এনগেইজ না এবং প্রায় ১৭ শতাংশ সক্রিয়ভাবে ডিস-এনগেইজ।
এই কাজে ডি-মোটিভেটেড ডিস-এনগেইজ হওয়ার কারণে তারা দেরীতে অফিসে যাবে, তাড়াতাড়ি অফিস ছাড়বে, কাজে মনযোগ পাবে না; মোটকথা ঐ কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরিয়ালি মনে করেন এইসব মানুষদের ডি-মোটিভেশনের এক বড় কারণ শ্রম সম্পর্কে শিল্প বিপ্লবকালীন ধারণা। যার উৎস এডাম স্মিথের দ্য ওয়েলথ অব নেশনস। সেই ধারণা থেকে লোকে মনে করে মানুষেরা কাজ করবে বিনিময়ে টাকা পাবে। সে কী তৈরী করল, বা আদৌ কিছু তৈরী করল কি না তা গুরুত্বপূর্ন নয়। অর্থাৎ তাকে এখানে মেশিনের মতো করে দেখা হয়। একেকজন একেক পার্টস বানাবে, ফলে পুরা বস্তুটি বানানোর যে একটা মিনিং ছিল তা থাকবে না তার কাছে।
আমেরিকায় ছোট ছোট বক্স কিউবিকল ধরণের কর্মক্ষেত্রের একটা সমস্যা আছে, তা কর্মীদের মানসিকভাবে দূর্বল করে দেয়। আরিয়ালি এক কোম্পানির কথা লিখেছেন যারা প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য কিউবিকল বা বাক্সের কোন মালিকানা দিত না, যে কর্মী আগে আসবেন তিনি জানালার পাশেরটা বা যেকোনটায় বসতে পারতেন। একটা কোম্পানি একবার লক্ষ করলো তাদের এমপ্লয়ীরা তাদের কিউবিকল ডেস্কে ব্যক্তিগত কিছু জিনিসপত্র রাখেন। এটা দেখে তারা ডেস্কের আকার ছোট করে ফেললো, যাতে তারা এসব না রাখতে পারেন।
এইসব প্রবণতা মানুষকে কাজে ডি-মোটিভেট করে। এগুলি হচ্ছে কর্মীদের মোটিভেশন কিলিং ট্র্যাপস।
আরিয়ালি আরেক কোম্পানির উদাহরণ দিয়েছেন, জাপ্পোজ, যারা এই ট্র্যাপ কাটিয়ে উঠেছিল। তারা তাদের কর্মীদের বলেছিল নিজেদের কিউবিকল তারা নিজেদের মতো করে সাজাতে পারবেন, তা অদ্ভূত হলেও সমস্যা নেই।
এটা কর্মীদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র ও সৃষ্টিশীলতা উসকে দেয়। তারা তাদের কাজের ক্ষেত্রটিকে নিজের মনে করতে পারে। জাপ্পোজ কর্মীদের জন্য কর্ম পরিবেশ বিবেচনায় ফোর্বসের বিচারে সেরা কোম্পানিদের কাতারে থাকে তাই।
মানুষ মেশিন নয়। মানুষ একটি সাইকোলজিক্যাল প্রাণী, এবং তাকে মিনিং ও একটা সংযোগের সুযোগ দেয়া হলে সে হয়ে উঠবে ভালো রিসোর্স, কাজে মোটিভেট হওয়ার সাথে সাথে।
কীভাবে কাজে আপনাকে আপনি মোটিভেট করবেন
ভাবুন যে আপনার কাজটি কীভাবে মানুষকে সাহায্য করছে। তখন কাজটির মধ্যে মিনিং তৈরী হবে এবং তা করতে আপনি মোটিভেটেড থাকবেন। আরিয়ালি তার পরিচিত এক ছেলের কথা বলেন যে হাসপাতালে আবর্জনা ফেলার কাজ করত। তার কাজে সে উৎসাহ পেত না। কয়েক মাস পরে সে ছেড়ে দিতে চাইল। কিন্তু তার মা তাকে বুঝালেন কিভাবে তার কাজ মানুষের উপকার করছে। কীভাবে হাসপাতালে আসা রোগীদের জীবাণু থেকে বাঁচাতে, তাদের ভালো জীবন যাপনে এই ময়লা ফেলার কাজটি সাহায্য করছে। এতে ছেলেটি তার কাজের মোটিভেশন ফিরে পায়। মায়ের কথাটির কারণে সে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে দেখে তার কাজের অর্থ খুঁজে পেয়েছে। আগে যেটি ছিল ময়লা ফেলা এখন তা হয়ে উঠেছে রোগীদের সাহায্য করাও।
এইজন্য আমি নিজের ওয়েবসাইটে লেখার পক্ষে লিখেছি। কারণ আপনার ওয়েবসাইটে লেখা আর অন্যান্য ওয়েবসাইটে লেখার মিনিং এর মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে। নিজের ওয়েবসাইটে লেখা ভিন্ন ধরণের মিনিং ও পূর্নতার বোধ নিয়ে হাজির হবে আপনার সামনে। এখানে আপনি একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন, ইচ্ছেমত সাজাতে পারছেন, এই নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাবোধ লেখা ও সাইট নিয়ে মোটিভেটেড থাকতে, দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে সাহায্য করবে। উপরন্তু অন্যকে সাহায্য করতে পারছেন, অন্যের উপকার হচ্ছে এমন হলে নিজে সুখী বোধ করবেন।
আই কে ই এ ইফেক্ট ও আত্মপরিচয়বোধ
আইকেইএ একটি ফার্নিচার কোম্পানি যারা পার্টস হিসেবে ফার্নিচারের অংশগুলি দেয়, সাথে ইন্সট্রাকশন। ইন্সট্রাকশন দেখতে দেখতে এমন এক ফার্নিচার ঠিক করতে মনস্তাত্ত্বিক ড্যান আরিয়ালি প্রায় হিমশিম খেয়ে যান। কিন্তু পরে তিনি লক্ষ করেন ঐ ফার্নিচারটিকে তার কাছে বেশী ভালো লাগে। তিনি এর প্রতি আলাদা আকর্ষণ অনুভব করেন এবং মায়ার দৃষ্টিতে এর দিকে তাকান।
নিজের তৈরী জিনিসের প্রতি মানুষের মমতা থাকে বেশী। রিসার্চে দেখা গেছে নিজের তৈরী জিনিস কিনতে মানুষ পাঁচ গুণ বেশী দামও দিয়ে থাকে।
১৯৪০ সালে আইকেইএ’র আগেও মানুষের সাইকোলজিক্যাল এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছিল আমেরিকান কেক মিক্সিং কোম্পানি পি ডাফ এন্ড সনস। তারা প্রথমে এক ধরণের কেক মিক্স বাজারে আনে। যা পানিতে মিশিয়ে গরম করেই কেক বানানো যায়।
কিন্তু দেখা গেল ৪০’এর গৃহিণীরা এটা ঠিকমতো গ্রহণ করছেন না। এগুলি ভালো বিক্রি হলো না।
ডাফ কোম্পানি তাদের সমস্যাটি বুঝতে পারলো। তারা কেক মিক্স থেকে ডিম ও দুধ সরিয়ে নিল।
তখন গৃহিণীদের কাজ করার জায়গা থাকে। তারা কেক মিক্সে দুধ যোগ করেন, ডিম যোগ করেন। তখন যে কেক হয় তা হয় তাদের নিজের তৈরী। সেই খাবার অন্যে যখন ভালো বলে তখন তাদের ভালো লাগে।
তারা তখন রান্নাটিকে ঔন করতে পারেন, নিজের মনে করতে পারেন।
সেন্স অব আইডেন্টিটি বা আত্মপরিচয়ের এক বর্ধিত রূপ হয় মানুষের তৈরী বস্তুটি। একজনের হাতের রান্না ভালো মানে এটা তার পরিচয়ের সাথে যুক্ত একটি বিষয়। সে এটি মনে করে। এজন্যই নিজের লেখা অন্য কেউ তার নামে চালিয়ে দিচ্ছে বলে আমাদের খারাপ লাগে ও আমরা উত্তেজিত হই। কারণ ঐ লেখাটি তৈরীর প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে যেতে আমরা একে আমাদের আত্মপরিচয়ের এক অংশ ভাবি।
বাংলাদেশে বড় কোম্পানি রাঁধুনি তাদের কিছু বিজ্ঞাপনে ভোক্তার এই সেন্স অব আইডেন্টিটিকে আঘাত করে এমন দেখেছি।
যেমন, রাঁধুনি মিট মসলার বিজ্ঞাপনে বলা হয়, “এটা থাকলে যে কেউই রাধতে পারে সুস্বাদু মাংস!” অথবা ফিরনি মিক্সের বিজ্ঞাপনে মিক্সকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে এই মিক্স হলেই যে কেউ ভালো রাঁধতে পারবেন।
এইসব বিজ্ঞাপনে মসলা রান্না যিনি করেন তাকে অস্বীকার করতে চায়। এমন বিজ্ঞাপন ভোক্তার সেন্স অব আইডেন্টিটিকে পাত্তা দেয় না তাই মোটিভেশন কমাবে ভোক্তার এই জিনিস কেনার জন্য।
কেউ নিশ্চয়ই চান না তার রান্নার গুণের কথা বলতে গিয়ে অন্যরা তার কৃতিত্ব না বলে মসলার কৃতিত্বের কথা বলুক। বিজ্ঞাপনের এই মেসেজ তাই ডি-মোটিভেটিং।
আবার, মসলার বিজ্ঞাপনে মসলা নিয়েও বলতে হয়, এখানে তাই মসলা ও রান্নাকারীকে ব্যালেন্স করে উপস্থাপন করা দরকার। রাঁধুনীর সবচাইতে সেরা একটি বিজ্ঞাপনে যেমন এরকম ভালো ব্যালেন্স ছিল।
আইডেন্টিটি কেন গুরুত্বপূর্ণ
ধরা যাক আপনার দুইটা সুন্দর বাচ্চা আছে। আপনি তাদের দিনের পর দিন লালন পালন করেছেন বড় করেছেন। তাদের সাথে আপনার কতো স্মৃতি। একদিন তারা পার্কে খেলাধুলা করছে। এমন সময় একটি লোক এলো, তাদের সাথে খেলাধুলায় অংশ নিলো। যাবার সময় লোকটি আপনাকে জিজ্ঞেস করল, ভাই, আপনার বাচ্চাগুলো খুব সুন্দর। আমি কিনতে চাই। কতো করে বিক্রি করবেন?
এখানে, কতো দাম হাঁকবেন আপনি?
আবার ভাবুন, আপনি একদিন পার্কে গিয়েছেন। দেখলেন দু’টি সুন্দর বাচ্চা খেলাধুলা করছে। আপনি তাদের সাথে খেললেন। খেলা শেষে আপনি যখন চলে আসবেন তখন এদের মা বাবা এলো। এসে বলল, ভাই, আপনি দেখলাম এদের সাথে খেলছেন। এরা আমাদের সন্তান। আমরা এদের বিক্রি করতে চাই। কতো করে দেবেন পার পিস?
এই দুই ঘটনার ক্ষেত্রে, প্রথমটাতে আপনি যদি দাম হাঁকেন তাহলে অতি বেশী হাঁকবেন। কারণ আপনার কাছে আপনার সন্তান, যাদের আপনি বড় করেছেন, তারা অমূল্য।
আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আপনি বেশী দাম দিতে রাজী হবেন না। কারণ এই বাচ্চাদের সাথে আপনার আইডেন্টিটি জড়িত হয় নি।
ড্যান আরিয়ালি বলেন বাচ্চাদের যে মানুষ লালন পালন করে, বড় করে এটা এক দীর্ঘ “ডো ইট ইওরসেলফ বা নিজে করো” প্রসেস। এই প্রসেসের ভিতর দিয়ে যেতে তার কষ্টও হয়। কিন্তু সে এর মিনিং খুঁজে পায়।
তাই পরবর্তীতে বাচ্চাদের সাথে তার আইডেন্টিটি বা আত্মপরিচয় জড়িত হয়ে পড়ে।
আরিয়ালির এই কথাটির পক্ষে শিশু হত্যার ইতিহাসেও এক দলিল আছে। ইনফ্যান্টিসাইডের ইতিহাসে দেখা যায় নতুন জন্ম নেয়া শিশুদেরই হত্যা করা হতো। কখনো বড় হওয়া নারী শিশু বা বিকলাঙ্গ শিশুকেও হত্যার নজির পাওয়া যায় না। এরও কারণ সম্ভবত সন্তান বড় করতে করতে এর উপর পিতামাতার সেন্স অব বিলংগিং তৈরী হয়।
It’s worth emphasising that it is newborns who are the focus of virtually all culturally sanctioned infanticide. There is no custom in which poor parents kill an older female child to make room for a newborn boy, or kill an older disabled child to make room for an apparently healthy newborn.
- Sandra Newman [ ইনফ্যান্টিসাইডের ইতিহাস রেফারেন্স – এইওন ম্যাগাজিন।]
মানুষকে মোটিভেট করতে তাই সৃষ্টি করার আনন্দ এবং সেন্স অব আইডেন্টিটি বা আত্মপরিচয় দিতে হবে।
আপনি একটি বাগান করবেন। এর জন্য যা যা দরকারী তা অন্যদের দিয়ে করালে একে আপনার নিজের মনে হবে না সাইকোলজিক্যালি, যেমন মনে হবে নিজে ওখানে কাজ করলে। নিজে কাজ করলে অসুন্দর হলেও তা আলাদা তৃপ্তি দেবে।
এইরকম যেকোন কাজে নিজে অংশ নিলে, এই সামান্য ঘাম ঝরানো হলে, তা কাজটির ভেতরে অন্যভাবে মিনিং আনে আপনার জন্য। আপনি অনুভব করতে থাকেন ঐ কাজের মধ্যে নিজেকে।
মোটিভেটর হিসেবে টাকা কেমন
কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের কাজে মোটিভেট করতে বিভিন্ন ধরণের টাকা সংস্লিষ্ট অফার দিয়ে থাকে। বোনাস সহ নানা নামে একে ডাকা হয়। কিন্তু এই টাকা কি তাদের কর্মীদের মোটিভেট করতে পারে?
আরিয়ালি, লোয়েনস্টাইন এবং নিনা মাজার এ নিয়ে সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা করেন। তাদের পরীক্ষায় তারা দেখতে পান যখন বোনাস সাইজ বাড়তে থাকে তখন কর্মচারীদের পারফর্মেন্স মারাত্মক ভাবে কমে যায়।
কেবল ল্যাব এক্সপেরিমেন্ট নয়। ইনটেলের ইজরাইল অফিসে বাস্তবেও তারা এই পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
এখানে কর্মীদের কাজের প্রথমদিনে পুরস্কৃত করতে চার ভাগ করা হয়।
প্রথম ভাগ, যারা টাকা পাবেন বোনাস হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ চিপস বানাতে পারলে। এটা সেদিন কাজে আসলেই তাদের জানানো হলো।
দ্বিতীয় ভাগ, যারা নির্দিষ্ট পরিমান চিপস বানাত পারবেন তারা পাবেন পিৎজা বাউচার।
তৃতীয় ভাগ, এদের জানানো হলো তারা নির্দিষ্ট পরিমান চিপস বানাতে পারলে বস তাদের অভিনন্দন জানিয়ে মেসেজ দিবেন।
চতুর্থ ভাগ, এটা কন্ট্রোল গ্রুপ। এদের কিছুই দেয়া হবে না।
অফিসের বড়কর্তাদের জিজ্ঞেস করা হলো তারা কী মনে করেন, কোনটা কর্মীদের কর্মক্ষমতা বেশী বাড়াবে বলে মনে হয়। বড়কর্তারা সবাই বললেন টাকা বেশী কাজ করবে, এরপর পিৎজা বাউচার।
এই পরীক্ষায় দেখা গেল প্রথমদিনে প্রথম তিন পুরস্কারই কর্মীদের পারফর্মেন্স বাড়িয়েছে।
সবচেয়ে ভালো করেছে পিৎজা বাউচার ৬.৭ শতাংশ। এরপরেই একেবারে কাছাকাছি করেছে বসের অভিনন্দন ৬.৬ শতাংশ। তিনটার মধ্যে টাকা বোনাস করেছে ৪.৯ শতাংশ।
দেখা গেল একেবারে কিছু না দেয়ার চাইতে ইনসেন্টিভস দেয়া কাজে দেয়।
তবে দ্বিতীয়দিনে দেখা গেল অদ্ভূত অবস্থা। এইদিনে আর পুরস্কার দেয়া হয় নি। দেখা গেল যাদের টাকা বোনাস দেয়া হয়েছিল আগের দিন তাদের পারফর্মেন্স খুব খারাপ হয়েছে। এমনকী যাদের প্রথমদিনে কিছু দেয়া হয় নি এদের পারফর্মেন্স থেকেও ১৩.২ শতাংশ কম।
কর্মচারীরা এখানে ভেবেছে ওরা আমাকে কাল কাজের জন্য পুরস্কার দিয়েছে আজ কিছু দিচ্ছে না, অতএব আজ আমার কম কাজ করলেও হবে। এইভাবে আগেরদিনের টাকা বোনাস ডি-মোটিভেটিং হয়ে কাজ করেছে।
এভাবে এক সপ্তাহের তথ্য দিয়ে দেখা গেল টাকা বোনাস যাদের দেয়া হয়েছিল তাদের পারফর্মেন্স যাদের কিছু দেয়া হয় নি এদের থেকে গড়ে ৬.২ শতাংশ বাজে ছিল।
পিৎজা বাউচার এবং অভিনন্দন এই দুইয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেল অভিনন্দনে পারফর্মেন্স যা বেড়েছিল তিনদিনে তা আস্তে আস্তে কমে কন্ট্রোল গ্রুপের সমান হয়ে যায়। কিন্তু পিৎজা যাদের দেয়া হয়েছিল তাদের পারফর্মেন্স টাকা গ্রুপ এবং অভিনন্দন গ্রুপের মাঝামাঝি অবস্থায় ছিল।
অর্থাৎ, কমপ্লিমেন্ট বা অভিনন্দন তিনদিন পর্যন্ত কর্মীদের পারফর্মেন্স বাড়াতে সক্ষম হলো। এবং টাকা বোনাস ডি-মোটিভেট করলো কর্মীদের।
এক্সট্রিনসিক মোটিভেটর এবং ইন্ট্রিনসিক মোটিভেটর
রিসার্চাররা (উলি ও ফিশব্যাখ) গবেষণা করে দেখেছেন যখন মানুষ কোন কাজ করে তখন কাজটা ভালোভাবে করাটাই তার কাছে মূখ্য হয়। জিমে এই রিসার্চ হয়। দেখা গেছে এক্সারসাইজের সময় এক্সারসাইজটি ঠিকমত করা, করতে যাতে তাদের ভালো লাগে, উপভোগ করেন এটাই তারা চান। এটাকে বলা হয় ইন্ট্রিনসিক বা অন্তঃস্থ মোটিভেটর।
কিন্তু কাজটি করার আগে তারা এক্সট্রিনসিক বা বহিঃস্থ মোটিভেটরকে প্রাধান্য দেন। অর্থাৎ এক্সারসাইজ করলে তাদের স্বাস্থ্য ভালো হবে ইত্যাদি বিবেচনা করে জিমে যান। অন্য কাজ হলে এমন মোটিভেটর হয় কেমন টাকা পাবেন ইত্যাদি ভাবেন।
অর্থাৎ, মানুষ ভাবে যে বহিঃস্থ মোটিভেটর তাকে কাজটি করায়। কিন্তু আসলে কাজটি করায় অন্তঃস্থ মোটিভেটর, এই মোটিভেটরের জন্যই সে ভালোভাবে কোন কাজ করে যায়। দিনের পর দিন করার উৎসাহ পায়।
এইজন্য চাকরি বা অন্য কোন কাজের আগে একজনের কখনো ইন্ট্রিনসিক বা অন্তঃস্থ মোটিভেটরকে উপেক্ষা করে যাওয়া ঠিক না। যেটা প্রায় মানুষই করে থাকেন, এবং পরে কাজটি করতে করতে অসুখী হয়ে পড়েন।
মোটিভেশন বিষয়ে আপাত সারমর্ম
ড্যান আরিয়ালির কথায় মোটিভেশন আমাদের প্রতিটা কাজের সাথে জড়িত এবং এতো জটিল যে একে পুরোপুরি বুঝা অসম্ভব ব্যাপার। তাই এখানে একটা আপাত সারমর্ম দেয়া যায়।
মোটিভেশনের মূল কিছু নির্ধারক ফ্যাক্টর বা বিষয়ের ধারণা পাওয়া গেছে সাইকোলজির রিসার্চ থেকে। এবং এইসব নির্ধারকদের মধ্যে টাকা গুরুত্বপূর্ন একটি নয়।
প্রথমত, মিনিং এবং সংযোগ মোটিভেট করতে পারে বেশী। মিনিং ও সংযোগ বলতে ঐ কাজটি যা করা হচ্ছে তার মিনিং , এটি সমাজে কী প্রভাব ফেলছে অথবা কেবলমাত্র একটা পূর্ণতার বোধ যে কাজটি আমি করতে পেরেছি, এটি একটি ক্রিয়েটিভ কাজ হয়েছে, এই অনুভূতি।
দ্বিতীয়ত, মানুষের আত্মপরিচয়ের আকাঙ্খা। কাজটি তার পরিচয়কেই বর্ধিত করে নিয়ে যায়। এই আকাঙ্খাও তার কাজ করাকে মোটিভেট করে থাকে। কোম্পানিগুলোর উচিত কর্মীদের আত্মপরিচয় ব্যাপ্ত করার সু্যোগ রাখা।
তৃতীয়ত, টাকা মোটিভেটর হিসেবে খুব ভালো নয়। এর চাইতে সুসম্পর্ক ও সোশ্যাল নর্ম (অভিনন্দন, গিফট ইত্যাদি) ভালো মোটিভেটর। যেসব জায়গায় সোশ্যাল নর্ম প্রযোজ্য সেখানে টাকা মোটিভেটর হিসেবে প্রয়োগ করলে ফল হবে মারাত্মক নেগেটিভ।
চতুর্থত, কার্যক্ষেত্রে কর্মীদের কাজে মোটিভেট করতে সুসম্পর্ক, বিশ্বাস রাখা এবং দীর্ঘ নিশ্চয়তা প্রদান করা উচিত। দীর্ঘ নিশ্চয়তা বলতে দীর্ঘকালীন সম্পর্ক, যাতে কর্মীটি বুঝতে পারে এখানে কাজ করে তার কেরিয়ারের উন্নতি সম্ভব, ভালো স্বাস্থ্য-অবসর ভাতা ইত্যাদি এখানে কোম্পানি দিবে। অর্থাৎ এখানে তার ভবিষ্যত নিশ্চয়তা আছে।
ড্যান আরিয়ালি সম্পর্কেঃ
ড্যান আরিয়ালি একজন সাইকোলজিস্ট। তিনি ডিউক ইউনিভার্সিটির জেমস বি ডিউক সাইকোলজি ও বিহেভিওরাল ইকোনমিক্স এর অধ্যাপক। তার বই অনেস্ট ট্রুথ এবাউট ডিজওনেস্টি নিয়ে এই ব্লগে আগে লিখেছিলাম (লিংক), এবং ব্লগের আরো নানা পোস্টে তার কাজের উল্লেখ রয়েছে।
যে বইটির উপর ভিত্তি করে লেখাটি তার নাম পেওফঃ দ্য হিডেন লজিক দ্যাট শেইপস আওয়ার মোটিভেশনস।