মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » লজিক্যাল ফ্যালাসিঃ অন্যের কথাকে পরিবর্তন করা

লজিক্যাল ফ্যালাসিঃ অন্যের কথাকে পরিবর্তন করা

লজিক্যাল ফ্যালাসি বা তর্কে যেসব ভুল করা যাবে না এ নিয়ে আমি লিখেছিলাম এই ব্লগে। একজন ব্যক্তি তর্কের ফ্যালাসি নিয়ে দুইভাবে সতর্ক থাকবেন।

এক, নিজে যাতে কখনো ভুল করেও ফ্যালাসি করেন না।

দুই, অন্য কেউ তার সাথে করলে, বা অন্য কোথাও করলে তিনি যেন তা ধরতে পারেন।

একথা মনে রাখতে হবে যে এই ফ্যালাসিগুলি একেকটা ডিভাইস অন্যকে তর্কে ধরাশায়ী করার জন্য। প্রথমত তর্কে অন্যকে হারানোর উপায় হলো তার যুক্তিকে ভেঙ্গে বা ভুল প্রমান করে নিজে শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করা। কিন্তু এটি করা সহজ নয়। তাই তর্কে ধরাশায়ী করতে লোকে ফ্যালাসি ব্যবহার করে।

কখনো কখনো কেউ ইচ্ছা করেও এসব ফ্যালাসি ব্যবহার করতে পারে অন্যকে ধরাশায়ী করতে।

আমার লেখায় যে কয়টি লজিক্যাল ফ্যালাসির উল্লেখ আছে, তার চাইতে অনেক বেশী ফ্যালাসি সম্ভব।

টিভি টকশোতে এক ধরণের এমন টেকনিক কেউ কেউ ব্যবহার করেন, বক্তার মুখের কথা বদলে দিয়ে।

ধরা যাক এক বিতর্কে বক্তা বলছেন, আমার পাখিটি বাংলায় কথা বলতে পারে এবং…

উপস্থাপক বা উপস্থাপিকা পরে বললেন,   আপনি আগেই বলেছেন আপনার পাখিটি একমাত্র পাখি যে বাংলায় কথা বলতে পারে…

এইরকম একটা দুইটা শব্দ বদলে দিয়ে, বলার ভঙ্গি বদলে দিয়ে বক্তার কথাকে ভিন্নার্থ দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এখানে উপস্থাপক বা উপস্থাপিকার এমন আচরণ একটা ট্র্যাপ তৈরী করা। বক্তা যদি মনযোগ দিয়ে না শুনতে থাকেন তাহলে তিনি ফাঁদে পা দিবেন, এবং উপস্থাপক বা উপস্থাপিকার কথাটিকেই নিজের কথা মনে করে তাকে ব্যাখ্যা করতে যাবেন।

কিন্তু একটু পরেই তিনি বুঝতে পারবেন তিনি ঐ কথা বলেন নি।

তখন আর ফিরে যাবার উপায় থাকবে না। কারণ দর্শক দেখছে এবং তিনি বলে ফেলেছেন।

অর্থাৎ, এইভাবে তিনি তর্কে হেরে যাবেন সবার সামনে। সবাই ভাববে তার যুক্তি ভুল ছিল। কিন্তু আসলে তিনি যুক্তিতে হারেন নি। চালাক উপস্থাপিকার ফাঁদে পা দিয়ে ধরাশায়ী হয়েছেন।

এমন একটি তর্কের উদাহরণ জর্ডান পিটারসনের সাথে ক্যাথি নিউম্যানের বিবিসি ইন্টারভিউ। এখানে বার বার ক্যাথি নিউম্যান এই অসৎ টেকনিক অবলম্বন করে জর্ডান পিটারসনকে ধরাশায়ী করার চেষ্টা করেছেন।

পিটারসনের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি পেশার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাই সম্ভবত তাকে তীক্ষ্ণ মনযোগের ক্ষমতা দিয়েছে। তাই তিনি যতবারই ক্যাথি তার মুখে অন্য কথা বসিয়েছেন ততোবারই ধরতে পেরেছেন ও বলেছেন, ‘না আমি তো এটা বলি নি।’ এবং এরপর স্পেসিফিক ভাবে বলে গেছেন তিনি আসলে কী বলেছেন। এটা বেশ কয়েকবারই হয়েছে এখানে, অবশ্যই দৃষ্টিকটু ভাবে। পিটারসন উত্তেজিতও হন নি।

এই ভিডিওটি দেখা যেতে পারে।

1 thought on “লজিক্যাল ফ্যালাসিঃ অন্যের কথাকে পরিবর্তন করা”

  1. আপনার লেখাও আজকে পড়লাম আর এর উলটা একটা ঘটনাও প্রত্যক্ষ করলাম।
    CGTN America এর একটা শো তে দেখলাম নিরীহ মতন একজন হোস্ট বাংলাদেশের উন্নতি অগ্রগতিতে গার্মেন্ট সেক্টরের অবদান বিষয়ে।CPD এর executive director এর সাথে স্কাইপে কথা বলে। এছাড়াও আরো দুইজন যুক্ত হয়; একজন প্রফেসর, একজন জার্নালিস্ট। তিনজন ই বাংলাদেশী। আপনার লেখায় যেমনটা বললেন হোস্টরা বিভিন্ন টেকনিকে বক্তাদের ধরাশায়ী করতে চায়, তেমন কোন চেষ্টাই ছিলনা এই ইন্টারভিউতে। তবু তিনজন বক্তাই কমবেশি স্বপ্রণোদিত হয়ে দেশের অর্থনীতি বিশেষ করে গার্মেন্ট সেক্টরের খারাপ দোষগুলা বললেন! একজন ভারতীয়-আমেরিকান লেখক ও ছিলেন যিনি বাংলাদেশের পজিটিভ দিক কিছু বলেন আর উল্লেখ করেন কনটেক্সট না বলে শুধু নেতিবাচক তথ্য গ্লোবাল প্লাটফর্মে না দেয়াই ভাল।
    This made me wonder why the 3 guests made such a stand without provocation.
    আপনার লেখার বিষয়ে বলতে হয়, খুব ভাল লেগেছে।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং