এজ-এ থিংকারদেরকে তাদের “শেষ প্রশ্ন” কী জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এবং অক্সফোর্ড মোরাল প্রোজেক্টের অলিভার স্কটের উত্তর ছিল তার কাছে শেষ প্রশ্নটি হলো, “কেন ভালো হবো?”
আমাদের ভালো হবার, ভালো আচরন করার বা ঠিক কাজটি করা কেন দরকার? কেন আমরা খারাপ কাজ করবো না?
এটি অবশ্যই একটি গভীর দার্শনিক প্রশ্ন। তারো আগে আমাদের ভাবতে হয় কোন কাজ কোন বিচারে ভালো না মন্দ তা নির্ধারিত হবে? সেটা কী নির্দিষ্ট কিছু নির্ধারণ করা বিষয়ের উপর (কান্টের ক্যাটেগোরিক্যাল ইম্পারেটিভ) নাকি যে কাজটি আমরা করছি তার ফল কী হবে তার উপর ভিত্তি করে?
সাধারণত মানুষের মনে ছোটবেলায় এইসব গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন আসতে থাকে। কোন কাজ কেন ভালো এবং কেন মন্দ হয়। কেন সত্য কথা বলবো, ইত্যাদি। কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে পারিপার্শ্বিকের কারণেই বলা যায় তার চিন্তা ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং সিংহভাগেই এইসব প্রশ্ন থেকে দূরে সরে যায়।
ভালো মন্দের আপাত ভাসা ভাসা এক রেফারেন্স পয়েন্ট নিয়ে তারা বাস করে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সময়ে সময়ে তারা সেই রেফারেন্স পয়েন্ট বদলায়। ফলে তারা হয় নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদী, যাদের কোন নৈতিক অবস্থানই থাকে না। এরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সেলফ সার্ভিং বায়াস থেকে নিজেদের অন্যায় কাজের জাজমেন্ট তৈরী করে, যাকে বলা যায় তলস্তয় ইফেক্ট। এবং যাপন করে একটি অনৈতিক জীবন।
মাইকেল শ্যুর এর দ্য গুড প্লেইস কমেডি টিভি সিরিজটি নৈতিকতা নিয়ে কাজ করেছে। ঘটনার স্থান পরকাল। সেখানে দ্য গুড প্লেইস ও ব্যাড প্লেইস নামে দুইটা জায়গা আছে। গুড প্লেইসে গুড মানুষেরা গিয়েছেন, যারা দুনিয়াতে খুবই ভালো সব কাজ করে এসেছেন।
কিন্তু এখানে সামান্য সমস্যা দেখা দেয়। এলিনর শেলসথ্রপকে ভুল করে গুড প্লেইসে নিয়ে আসা হয়। সে আসলে দুনিয়াতে তেমন কোন ভালো কাজই করে নি। একই নামের একজন ভালো মানুষের পরিবর্তে তাকে গুড প্লেইসে নিয়ে আসা হয়েছে সে বুঝতে পারে।
গুড প্লেইসে তার জন্য যে সোল মেইট নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল তার নাম চিডি। চিডি দুনিয়াতে ছিল একজন মোরাল দর্শনের অধ্যাপক। এলিনর চিডিকে সব খুলে বলে, এবং তার সাহায্য চায়। চিডি মোরাল দর্শন শিক্ষা দেবার মাধ্যমে এলিনরকে একজন ভালো মানুষ ও গুড প্লেইসের যোগ্য করে গড়ে তুলতে চায়।
এই পর্যন্ত শুনে যদি মনে হয়ে থাকে গল্পটিতে কেবল মোরাল দর্শনই বিদ্যমান, তাহলে সেই মনে হওয়া ভুল। কারণ গল্পটিতে কমেডি সব সময়ই রাখা হয়েছে, রাখা হয়েছে চিত্তাকর্ষক টুইস্ট। নৈতিকতা বিষয়ক দর্শন যা ঢুকানো হয়েছে তা অল্প এবং গল্পের সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এবং ঐসব দার্শনিক তত্ত্বের সাথে পরিচয় না থাকলে কোথায় কোন দার্শনিক আইডিয়া উপস্থাপন করা হয়েছে তা ধরা যাবে না।
এই সিরিজ এর সিজন টু নির্মানের সময় পরিচালক যোগাযোগ করেছিলেন দার্শনিক টড মে এর সাথে। লেখকদের একজন এই দার্শনিকের বই “ডেথ” পড়েছিলেন, এবং তিনিই পরিচালককে যোগাযোগ করতে বলেন। টড মে এর কনসালটেশন নেয়া হয়। তিনি স্কাইপে প্রায় তিন ঘন্টা বিভিন্ন পরামর্শ দেন লেখকদের ও পরিচালককে। মূলত, এই দার্শনিকের ইন্টারভিউ থেকেই আমি সিরিজটির ব্যাপারে জানতে পারি।
সিজন-১ এ রোবট সাহায্যকারী জেনেট এর খুন এক নৈতিক সমস্যা তৈরী করে যা আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতির যুগে তৈরি হচ্ছে বা হবে। গুড প্লেইসে রোবট সাহায্যকারী জেনেট মানুষের মতো অনুভূতি অর্জন করে ফেলে। যদি কোন রোবট মানুষের মতো সুখ দুঃখ হাসি কান্না তথা চেতনার অনুভূতি অর্জন করে ফেলে, তখন তার প্রতি মানুষের আচরন কেমন হওয়া উচিত, তা এক গুরুত্বপূর্ন নৈতিক প্রশ্ন। যা নিয়ে এই ব্লগে আমি আগে লিখেছিলাম।
শেষকথায়, অভিনেতা অভিনেত্রীদের অভিনয় ভালো, কাহিনীতে যথেষ্ট পরিমাণ হাস্যরস আছে তাই সিরিজটির সিজন ওয়ান দেখে আমার ভালো লেগেছে। যারা দর্শনে আগ্রহী ও কমেডি পছন্দ করেন তাদের হয়ত ভালো লাগবে।