স্কিন ইন দ্য গেইম কী
সাধারণত স্কিন ইন দ্য গেইম বলতে বুঝায় যে ঘটনা নিয়ে আপনি কাজ করছেন বা কথা বলছেন তাতে আপনার লাভ ক্ষতি জড়িত আছে কি না। সহজ উদাহরণের মাধ্যমে এটি বুঝা যেতে পারে। ধরা যাক আপনার ছোটভাই যে গাইতে পারে না কিন্তু গান গাইতে ও গান গাইতে গাইতে বিখ্যাত হবার স্বপ্নে বিভোর। আপনি তাকে উপদেশ দিলেন গান গাওয়া বাদ দিয়ে একাডেমিক পড়ালেখায় মনযোগী হতে। কারণ সাধারণ বিচার ও বুদ্ধিতে আপনি বুঝতে পেরেছিলেন আপনার ভ্রাতার গানের গলা নেই।
আপনি যেই বিষয়টি নিয়ে উপদেশ দিলেন, এখানে আপনার লাভ ক্ষতি আছে। অর্থাৎ, খেলায় নিজের স্কিন আছে। আপনার ভাই জীবনে ব্যর্থ হলে কোন না কোনভাবে সরাসরি আপনারই ক্ষতি। এবং ভাইয়ের সাথে আপনার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের, সামাজিক নিয়ম অনুসারে।
ওপরদিকে, আপনার ভাইকে একজন মোটিভেশনার স্পিকার বললো নিজের প্যাশনকে অনুসরন করার জন্য। সে নানা উদাহরণ দিল। শচীন টেন্ডুলকারের বাবা তাকে ডাক্তার বানাতে চাইলে কী হতো ইত্যাদি নানা উদাহরণ দিয়ে সে মোটিভেশনাল ভিডিও বানালো। আপনার ভাই এটি দেখে বেশ উৎসাহিত হয়ে বেসুরো গলায় গানের চেষ্টা শুরু করতে লাগলো ধরা যাক।
এখানে, এই মোটিভেশনাল স্পিকারের স্কিন কিন্তু খেলায় নাই। আপনার ভাই তার অসংখ্য ফ্যানদের মাঝে একজন। আপনার ভাই জীবনে বিখ্যাত গায়ক হতে ব্যর্থ হলে তার কিছু আসে যায় না। তার কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের জায়গা হলো তার বার্তাটি কতটুকু মোটিভেশনাল হলো, এবং এর দ্বারা কয়জন মোটিভেটেড হয়ে সফল হলো। আসলেই যাদের প্রতিভা আছে, এবং অন্যসব সামাজিক-অর্থনৈতিক অনুকূলতা তারা মোটিভেটেড হয়ে সফল হতেও পারে, এবং এর মাধ্যমে স্পিকারের প্রসার আরো বাড়তে পারে। কিন্তু মোটিভেটেড হয়ে ব্যর্থ হওয়া অসংখ্যদের ব্যর্থতার দায়ভার স্পিকার নিবে না। আপনি নেয়াতেও পারবেন না কারণ শেষপর্যন্ত এই ধরণের লেকচার হচ্ছে নিছক বিনোদন।
যার স্কিন খেলায় আছে তার উপদেশ বিচারে নেয়াটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। যেমন মা বাবা ভাই বোন ইত্যাদি। যার স্কিন খেলায় নাই তার উপদেশের ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরী।
এইক্ষেত্রে এটা বলছি না যে অনেক প্রতিভাবানদের প্রতিভা বিকাশে বাবা মা’রা বাঁধা দেন না। তারা দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য থাকে না সন্তানের ক্ষতি করা। কেউ যদি এই নিশ্চয়তা পান যে তার ছেলে হতে যাচ্ছে নোবেল বিজয়ী লেখক, তাহলে তিনি শুরু থেকেই ছেলেকে বা মেয়েকে হরলিক্স ইত্যাদি খাইয়ে লেখালেখিতে সাহায্য করতে লেগে যাবেন।
বিশেষত যেসব পেশায় সামাজিক ভাবে ভবিষ্যত অনিশ্চিত বলে ভাবেন পিতামাতারা, সেসব পেশা থেকে সন্তানদের দূরে রাখতে চান। নেরুদার বাবা ছেলের কবিতা লেখা পছন্দ করতেন না। কবি তাই ছদ্মনাম নিয়েছিলেন পাবলো নেরুদা। তার বুক অব কোশ্চেনে এইরকম লাইনও আছেঃ
Is there anything sillier in life
than to be called Pablo Neruda?
এছাড়া, শোয়ার্জনেগার বিষয়ক লেখাটি পড়া থাকলে আপনি হয়ত জানেন যে শোয়ার্জনেগারের বডি বিল্ডিং বা ওয়েট ট্রেইনিংকে তার বাবা পছন্দ করতেন না। তাকে প্রহার পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু বিখ্যাত ও বিশাল হবার পরে শোয়ার্জনেগার এজন্য বাবাকে দোষারূপ করেন নি। বরং বলেছেন তার বাবা এরকম খারাপ আচরণ না করলে হয়ত তার জেদ চাপত না, এবং এতদূর আসতে পারতেন না।
নাসিম তালেবের বই স্কিন ইন দ্য গেইম
নাসিম তালেবের এই বইটির নাম দেখে আমার প্রথমে মনে হয়েছিল এটি হয়ত কেবল স্কিন ইন দ্য গেইম নিয়ে আলোচনা করবে। কিন্তু ভূমিকা পড়েই ধারনা বদল হয়, এবং পরবর্তীতে দেখতে পাই যে স্কিন ইন দি গেইমের নানা ধরণ নিয়ে দার্শনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ করেছেন তালেব, যেরকম তিনি তার আগের বইগুলিতে করেছেন। এবং আগের বইগুলির সাথে এই বইটির যোগসূত্র আছে।
তাই প্রাথমিকভাবে ও স্বল্প পরিসরে নাসিম তালেবের প্রধান আইডিয়াগুলি জানা দরকার।
তার কাজের মূল লক্ষ্য হলো সহজ কথায়, জগতের অনিশ্চয়তা এবং এই অনিশ্চিত পৃথিবী, যাকে আমরা পুরোপুরি বুঝি না, সেখানে আমরা কীভাবে সিদ্ধান্ত নিব, ও জীবন যাপন করবো সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা।
কোন স্ট্যাটিস্টিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশনে কিছু রেয়ার ইভেন্ট থাকে, যেসব অনুমান করা সবচাইতে কঠিন, কিন্তু এইসব ইভেন্ট বিশাল প্রভাব নিয়ে আসে। এইসব ইভেন্ট নিয়ে তালেবের পরিসংখ্যানিক কাজ, মূলত তিনি একজন পরিসংখ্যানবিদ।
অনুমান করা অসম্ভব, কিন্তু মারাত্মক ফল বিস্তারি ঘটনাকে ব্ল্যাক সোয়ান নাম দিয়ে জনপ্রিয় করেছেন নাসিম তালেব। তার ব্ল্যাক সোয়ান বইটি অন্যতম সেরা একটি বই বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।
দার্শনিকভাবে ব্ল্যাক সোয়ান টার্মটি এসেছে দার্শনিক কার্ল পপার থেকে। কোন একটি জিনিসের আবির্ভাব আমাদের জানা জ্ঞানতত্ত্ব ভেঙ্গে দিতে পারে, এটি বুঝাতেই ব্যবহৃত হতো ব্ল্যাক সোয়ান। যেমন, একসময় মনে করা হতো পৃথিবীর সব সোয়ান বা রাজহাঁস হলো সাদা। তারপর অষ্ট্রেলিয়ার কোথাও মাত্র একটি কালো রাজহাঁস দেখা গেল, এবং সাথে সাথেই আমাদের জানা “সব রাজহাঁস হলো সাদা” তথ্যটি ভেঙ্গে পড়লো।
তালেব এখান থেকে ব্ল্যাক সোয়ান টার্মটি নিলেও একে ভিন্নরকম, ও বিস্তৃত করেছেন।
নাসিম তালেবের পড়ালেখা প্রচুর। সপ্তাহে ৬০ ঘন্টা পড়ালেখা করে তিনি মাসের পর মাস কাটিয়েছেন, এটি তিনি দাবী করে থাকেন। ফলে দার্শনিক ও ঐতিহাসিক নানা বিষয় ও ঘটনা উঠে আসে তার লেখায়। তিনি খুবই আক্রমণাত্মক, ও একাডেমিক জ্ঞানব্যবসার প্রতি মারাত্মক উদ্ধত। তার কথা মতে, পতিতাবৃত্তির কাছে প্রেম যা, একাডেমির কাছে জ্ঞান তাই। এই ব্লগে তার বেড অব প্রক্রাস্টেস বইটির কিছু অনুবাদ প্রকাশ করেছিলাম, পড়ে দেখতে পারেন।
ব্ল্যাক সোয়ান বই বিষয়ে ইনভেস্টর পডকাস্টের আলোচনায় আলোচক একজনের বলা কথাটি এখানে আমি বলতে পারি, আমার কাছে এটি যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। তার মতে, ব্ল্যাক সোয়ান অতি-আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে লেখা অতি-আত্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে একটি বই।
নাসিম তালেবের আক্রমণে তার উইটেরও প্রমাণ মিলে।
আনতেউস, লিবিয়া ও স্কিন ইন দ্য গেইম
গ্রীক লিবিয়ায় মাদার আর্থ গাইয়া ও সমুদ্রদেব পসেইডনের পুত্র আনতেউস থাকতো। তার এক বিচিত্র শখ বা পেশা ছিল। দেশের পাশ দিয়ে যাওয়া পথচারীর সাথে সে যুদ্ধ করতো এবং মাটির সাথে থেঁৎলে হত্যা করতো।
তার কাজের অবশ্য এক উদ্দেশ্যও ছিল। পিতা পসেইডনের প্রতি ভক্তি দেখানোর জন্য মৃত লোকদের খুলি দিয়ে মন্দির বানানো।
আনতেউস ছিল অজেয়। তবে একটি দূর্বলতা ছিল তার। সে সকল শক্তি পেত তা মা তথা মাদার আর্থ বা ভূমি থেকে। হারকিউলিসের বিখ্যাত বারোটি কাজের একটি ছিল এই আনতেউসকে শায়েস্তা করা। হারকিউলিস আনতেউসের দূর্বলতা জেনেই তার সাথে যুদ্ধে নামেন।
আনতেউসকে শূন্যে তুলে হারকিউলিস তাকে থেঁৎলে দেন। আনতেউস মারা যায়।
নাসিম তালেব এই ঘটনা দিয়েই শুরু করেছেন বই। এখানে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, আনতেউস এর শক্তি যেমন ভূমি, তেমনি নলেজ বা জ্ঞানের শক্তি হচ্ছে ভূমি বা বাস্তব পৃথিবী। বাস্তবতা থেকে জ্ঞানকে সরাতে আপনি পারবেন না। বাস্তব দুনিয়ার সাথে জ্ঞানের সংযোগ থাকলেই স্কিন থাকে খেলায়।
যেসব জিনিস আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আবিষ্কার করেছে সেসব আসলে বিভিন্ন ট্রায়াল এন্ড এরর করে বের করা। সুতরাং, নলেজ বা জ্ঞান আমরা পাই বাস্তবতা থেকেই, চিন্তাকে ট্রায়াল এন্ড এররের মাধ্যমে প্রয়োগ করে করে।
আনতেউস এর লিবিয়া এখন দাস ব্যবসার বাজার। তথাকথিত শাসক পরিবর্তনের “বাইরের হস্তক্ষেপে” মিশনে পর্যুদস্ত দেশটি। একই ব্যাপার ঘটেছে ২০০৩ এর ইরাক আগ্রাসনে। এসব ব্যাপার ঘটে কারণ এগুলির পলিসি যারা তৈরী করে তাদের স্কিন খেলায় নেই। তারা আমেরিকায় তাদের নিজস্ব আরামদায়ক বাড়িতে কুত্তা, গাড়ি, ও সন্তানাদি নিয়ে আয়েশেই জীবন যাপন করছে।
নাসিম তালেব এদের নাম দিয়েছেন ইন্টারভেনশনিস্তা। বাংলায় একে আমরা হস্তক্ষেপপন্থী বলতে পারি।
আগেকার যোদ্ধারা যখন যুদ্ধ করতেন, তখন তারা যুদ্ধ পরিচালনায় থাকতেন। তাদের স্কিন সরাসরি থাকতো খেলায়। এজন্য অনেক অনেক আগেই সান জু তার আর্ট অব ওয়ারে বলে গিয়েছিলেন সেরা যুদ্ধ হলো যুদ্ধ না করে শত্রুকে পরাজিত করা।
রোমান সম্রাটদের মধ্যে তিনভাগের এক ভাগ মারা গিয়েছিলেন তাদের বিছানায়। এদের অনেকেই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
১৯৮২ সালে ফকল্যান্ড যুদ্ধে ব্রিটিশ রয়াল ফ্যামিলির প্রিন্স এন্ড্রু’র হেলিকপ্টার ছিল সবার সামনে। এই ঝুঁকি নেয়া হয়েছিল পরিবারের মহানতার জন্য, তারা জনগণের রক্ষক।
আমাদের ছদ্ম গণতান্ত্রিক দেশে আমরা দেখি রাষ্ট্র যারা চালান তারা চিকিৎসার জন্য সিংগাপুরে যান। শিক্ষাবিদেরা, রাষ্ট্রচালকেরা তাদের সন্তানদের বিদেশে পড়ান। এমতাবস্থায় যেহেতু খেলায় তাদের স্কিন নেই খেলায় তাহলে কীভাবে আশা করা যেতে পারে তারা শিক্ষা ও অন্যান্য ব্যবস্থা ঠিক করবেন?
এটি বড় আশংকার কথা।
প্রতিসাম্য ও স্কিন ইন দ্য গেইম
স্কিন ইন দ্য গেইমের আরেক রূপ হলো প্রতিসাম্য। ব্যবিলনে জনগণের সামনে কিছু কোড ঝুলিয়ে রেখেছিলেন হাম্মুরাবি, ব্যাসাল্টের স্টিলে লিখে। যাতে সবাই পড়তে পারে ও অন্যদের বলতে পারে। ৩৮০০ বছর আগের এই ঝুলিয়ে রাখা নির্দেশিকায় আইন ছিল ২৮২ টি।
হাম্মুরাবির এইসব আইনে প্রতিসাম্য রাখা হয়েছিল যাতে কেউ একজন বেশী লাভবান হতে না পারে। জগতের প্রাচীন আইনের উৎসই এই প্রতিসাম্য। যেমন হাম্মুরাবির বিখ্যাত আইনটি ছিলঃ
“যদি কোন বাড়ি নির্মাতা বাড়ি বানায়, সে বাড়ি ধ্বসে পড়ে ও মালিকের মৃত্যু হয়, তাহলে বাড়ি নির্মাতার মৃত্যুদণ্ড হবে।”
বিখ্যাত আইন বা কথাটি “চোখের বদলে চোখ” এসেছে হাম্মুরাবির এই কোড থেকেই। এটি শুনতে অদ্ভূত বা অন্যায্য ঠেকলেও এটি আসলে আক্ষরিক অর্থে নয়, চোখের বদলে চোখ তুলে নেয়া। একজন রাব্বি একবার এই যুক্তি দিয়েছিলেন, একজন এক চোখের লোক দুইজন লোককে অন্ধ করলে তার ক্ষেত্রে শাস্তি কী হবে? তার তো একটা চোখই আছে, তা তুলে নিলে তো একটা শাস্তিতে সে ছাড় পেয়ে যায়। এছাড়া, একজন সাধারণ লোক একজন হিরো’কে হত্যা করলেও একই সমস্যার উদ্ভব হয়, কারণ দুইজন তো নানাদিক থেকেই সমান নয়।
মূলত এই আইনের মাধ্যমে প্রতিসাম্যের কথা বলা হয়েছে। এই আইনের মূল কথার ভিন্নরূপই পরবর্তীকালের বড় আইনের মধ্যে আছে। যেমনঃ
হাম্মুরাবি | পবিত্রতা ও ন্যায় বিচারের ১৫ তম আইন |
সিলভার রুল |
গোল্ডেন রুল | ইউনিভার্সাল আইনের/নীতির সূত্র | |
“চোখের বদলে চোখ”
(হাম্মুরাবি, এক্সোদাস, ২১.২৪) |
“নিজেকে যেমন ভালোবাসেন তেমন প্রতিবেশীকে ভালোবাসুন।”
(লেভিটিকাস, ১৯.১৮) |
“অন্যের প্রতি এমন আচরন করবেন না, যা আপনি অন্যে আপনার সাথে করুক প্রত্যাশা করেন না। | “অন্যের প্রতি সেই আচরনই করুন যা আপনি অন্যের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন। (ম্যাথিউ, ৭.১১) | “এমন ভাবে আচরন করুন যেভাবে দুনিয়ার সবাই আচরন করুক আপনি প্রত্যাশা করেন বা ইউনিভার্সাল নীতি হোক আপনি চান।”
(কান্ট, ১৭৮৫, ৪.৪২১) |
এখানে কান্টের রুলের সহজ বঙ্গানুবাদ করা হয়েছে। এখানে সিলভার রুলটি সবচেয়ে ভালো, কারণ এখানে অন্যের প্রতি নিজের আচরনকে প্রথম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
প্রতিসাম্য নৈতিক আইনের ভিত্তি হলেও আধুনিক দুনিয়ার সমাজে এই প্রতিসাম্য এবং স্কিন ইন দ্য গেইম বিশালাকারে অনুপস্থিত।
নাসিম তালেব তার বইটে একটি টেবিল দিয়েছেন তাদের স্কিন খেলায় নেই, যাদের আছে, এবং যাদের কেবল স্কিন নয়, সোলও খেলায় আছে এদের উল্লেখ করে। এই তালিকাটি নিম্নরূপঃ
স্কিন খেলায় নাই | স্কিন খেলায় আছে | স্কিন আছে, সোলও আছে খেলায় |
এরা লাভের অংশ নিজের কাছে রাখে, ক্ষতিটা অন্যের কাছে দেয় এবং গোপন অপশন নিজের হাতে রাখে যা অন্যদের ব্যবহার করে সে পায়।
|
ক্ষতি নিজের কাছেই রাখে, ঝুঁকি নেয়। | অন্যের ক্ষতিও এরা নেয়, বা ইউনিভার্সাল নীতির বা আদর্শের জন্য নিজে ক্ষতিটা নেয়। |
ব্যুরোক্রেট, পলিসি মেকার
|
নাগরিকবৃন্দ | সেইন্ট, নাইটস, যোদ্ধা, সেনা সদস্য |
কনসালটেন্ট, সোফিস্ট | ব্যবসায়ী, সওদাগর | প্রফেট, ফিলোসফার (প্রি-মডার্ন) |
বড় কর্পোরেশন যাদের সরকারের সাথে যোগাযোগ আছে
|
কারিগর | শিল্পী, কিছু কারিগর |
শ্যুট পরা কর্পোরেট একজিকিউটিভ
|
উদ্যোক্তা | উদ্যোক্তা/উদ্ভাবনকর্তা |
সিস্টেমের ভেতরে থাকা বিজ্ঞানী, ডাটা মাইনারস, পর্যবেক্ষণিক স্টাডি
|
ফিল্ড স্টাডি | মেভেরিক বিজ্ঞানী যিনি চিরাচরিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নেন |
কেন্দ্রিয় সরকার
|
রাজ্য সরকার | নগর সরকার |
কপি এডিটরস
|
লেখক, কিছু সম্পাদক | সত্যিকার লেখক |
সাংবাদিক যারা “বিশ্লেষণ” করে ও অনুমান করে
|
স্পেকুলেটরস | সাংবাদিক যারা ঝুঁকি নিয়ে ফ্রড বা চাতুরি (কোন শাসক বা বড় কর্পোরেশনের) উন্মোচন করে দেয়, বিদ্রোহী |
রাজনীতিবিদ
|
একটিভিস্ট | ডিসিডেন্ট, বিপ্লবী |
ব্যাংকার
|
হেজ ফান্ড ট্রেডারস | তারা কুৎসিত ব্যবসায় জড়ায় না |
এরা পুরস্কার, প্রাইজ, সম্মান, অনুষ্ঠান, পদক, ইংল্যান্ডের রানীর সাথে চা পানের সুযোগ, একাডেমির সদস্যপদ, ওবামার সাথে হাত মেলানোর সুযোগ ইত্যাদি খুঁজে | এদের চিন্তা বা অবস্থানের সর্বোচ্চ পুরস্কার হলো মৃত্যুদণ্ড। যেমন, যিশু, সক্রেটিস, জোয়ান অব আর্ক, সেইন্ট ক্যাথেরিন, হাইপেশিয়া |
এই টেবিলটি আমাদের স্কিন যাদের খেলায় নেই এদের ব্যাপারে বুঝতে ও সাবধান হতে সাহায্য করতে পারে।
আমাদের সমাজের যাদের স্কিন খেলায় নাই তাদের চিহ্নিত করার জন্য আমরা এই তালিকা ব্যবহার করতে পারি।
স্বাধীনতার মূল্য
স্বাধীনতার এক মূল্য আছে, এর জন্য ঝুঁকি নিতে হয়। স্কিন খেলায় রাখতে হয় স্বাধীন থাকতে হলে। এই পর্যায়ে একটি অতি প্রাচীন গল্পের মাধ্যমে ব্যাপারটা বুঝতে পারি।
একবার এক নাদুশ নুদুশ কুত্তার সাথে দেখা হলো এক বন্য নেকড়ের। নেকড়ের স্বাস্থ্য ভালো, স্কিনি। খাবার ঠিকমতো পায় না।
সে কুত্তারে বললো, ব্রাদার, তোমার স্বাস্থ্য এতো ভালো কীভাবে? এত খাবার কই পাও?
কুত্তা বললো, আসো মিয়া আমার সাথে। খাবারের কোন অভাব আছে নি।
তারা হাঁটলো। তারা একটি বাড়ির কাছে গেল। দেয়াল টপকানোর সময় নেকড়ে দেখতে পেল কুত্তার ঘাড়ের কাছে কিছু লোম নাই। তার কৌতুহল হলো।
সে কুত্তারে জিজ্ঞেস করল, কুত্তা ভাই, তোমার ঘাড়ের এই অবস্থা কেন?
কুত্তা বললো, আরে এইটা কিছু না। কলারে এইটা হয়।
নেকড়ে আবার জিজ্ঞেস করে, কী ব্যাপার? বুঝাইয়া বলো তো ব্রাদার?
কুত্তা বলে, আরে আমার মালিক তো আমারে গলায় কলার লাগাইয়া বেল্ট দিয়া বাইন্ধা রাখে। তাই এই জায়গায় দাগটা আছে।
নেকড়ে তখন দেয়াল থেকে নেমে গেল। কুত্তারে বলল, তোমার ভালো খাবার খাইয়া আমার কাম নাই ভাই। যাই।
এটা ঈশপের গল্প।
এখানে স্বাধীনতার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। নেকড়ে খাবারের বিনিময়ে তার স্বাধীনতা বিক্রি করতে চায় নাই।
তবে স্বাধীনতার আসলে এক মূল্য আছে, মূল্য দিয়েই স্বাধীনতা পেতে হয়।
ঈশপের গল্পটি আসলে মূল আরমায়িক টেক্সটে, আহিকার থেকে আসা। প্রায় ৬০০ বিসিইতে গল্পটির জন্ম ধরা যায়।
মূল গল্পটিতে নেকড়ের জায়গায় ছিল একটি বন্য গাধা।
সেই গল্পে বন্য গাধাটি কুকুরের কাছ থেকে সরে যখন বনে যায় তখন বনে তাকে ধরে খেয়ে ফেলে একটি সিংহ।
কুত্তার জীবন মোটামোটি নিরাপদ। তার মালিকের মৃত্যু না হলে সে ভালোই আয়েশে জীবন যাপন করতে পারবে।
কিন্তু বন্য গাধাকে নিয়ত বনে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। যেকোন সময় হিংস্র প্রাণীর খপ্পরে পড়তে হতে পারে।
গাধার স্বাধীন থাকার জন্য এটাই তার মূল্য দেয়া।
এই কুত্তার নিরাপত্তা আবার একশোভাগ নিশ্চিত না। মালিকের মৃত্যু হলে সে ঝামেলায় পড়তে পারে।
এই কুত্তাকে আপনি কখনো ক্রিটিক্যাল জাজমেন্টের ব্যাপারে বিশ্বাস করতে পারবেন না। কারণ সে তার মালিকের অধীন। এবং স্বাধীনভাবে ক্রিটিক্যাল চিন্তা করলে মালিকের শুভদৃষ্টি সে হারাতে পারে। একই কথা এখানে এমপ্লয়ীদের জন্য প্রযোজ্য, যেসব এমপ্লয়ীরা তাদের মালিকের অধীন।
নাসিম তালেবের কথায়ঃ
People whose survival depends on qualitative “job assessments” by someone of higher rank in an organization cannot be trusted for critical decisions.
Freedom is always associated with risk taking, whether it leads to it or comes from it. You take risks, you feel part of history. And risk takers take risks because it is in their nature to be wild animals.
সিনিক দার্শনিক ডায়োজিনিস পাইপের মধ্যে বাস করতেন। একবার আলেকজান্ডার এসেছিলেন তার সাথে দেখা করতে। তিনি আলেকজান্ডারকে সরে দাঁড়াতে বলেছিলেন। এই গল্প আপনারা অনেকেই শুনে থাকবেন।
ডায়োজিনিস এখানে আলেকজান্ডারকে যা বলেছেন, তা সচেতনভাবে নিজের স্বাধীনতাকে প্রকাশ করা। অর্থাৎ, স্বাধীনতার সিগনালিং। তিনি এই সিগনাল দিয়ে বুঝাচ্ছিলেন তিনি স্বাধীন।
এই স্বাধীনতার মূল্য হিসেবে তিনি যাপন করছিলেন এক সিনিক জীবন।
স্বাধীনতা সমাজ সহ্য করতে পারে না। এখন কি চিন্তা করতে পারেন ডায়োজিনিসের মতো আচরণ করে কেউ আমাদের আধুনিক সমাজে টিকে থাকতে পারবে? তাকে দুইদিনের মধ্যেই পাগলা গারদে ভরা হবে।
তালেবের বইতে গাইরোভগস নামে একধরনের সন্ন্যাসীদের কথা আছে। চার্চ যখন ইউরোপে সবে মাত্র আসন গাড়তে শুরু করেছে তখন এরা ছিলেন। কোন চার্চ বা প্রতিষ্ঠানের অধীন না। স্বাধীন। ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে তারা জীবনধারণ করতেন।
কিন্তু পঞ্চম শতক থেকে চার্চ এদের বিরুদ্ধে লাগে এবং তাদের নিঃশেষ করে দেয়। এর একটাই কারণ ছিল, তারা ছিলেন স্বাধীন। চার্চের অধীনতা মানতেন না, আর ধর্মজাতীয় জিনিসের জন্য অধীনতা না মানা স্বাধীন সন্ন্যাসীরা হুমকিস্বরূপ।
লিন্ডি ইফেক্ট
বিনাশী বস্তু যেমন মানুষ সময়ের সাথে সাথে তার স্থায়ীত্ব হারায়। বয়স বাড়লে তার শক্তি সামর্থ্য কমতে থাকে একটা সময়, এবং দূর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু কোন আইডিয়া, প্রযুক্তি, বই ইত্যাদি অ-বিনাশী জিনিসের ক্ষেত্রে কাজ করে লিন্ডি ইফেক্ট। লিন্ডি ইফেক্ট এর কথা হলো, ঐ আইডিয়া বা প্রযুক্তিটি যতদিন ধরে টিকে আছে, সেটি আরো ততদিন টিকবে।
এই জন্য প্রাচীন যেসব বই ও চিন্তা টিকে আছে সেগুলো গুরুত্বপূর্ন। কারণ এতদিন টিকে থাকার দরুণ এগুলো আরো এতদিন টিকে থাকবে।
সাময়িক তুমুল জনপ্রিয় হওয়া কোন বই বা আইডিয়া কয়েকবছরের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে। এমন প্রচুর হয়ে থাকে।
এই লিন্ডি ইফেক্টের আইডিয়াটি নিজেই লিন্ডি প্রুফ। অর্থাৎ, প্রাচীন কালে মানুষ এর সম্পর্কে জানতো।
যেমন, সক্রেটিসের আগেকার সময়ের চিন্তক পেরিয়ান্দার অব করিন্থ বলেছিলেন, “সেসব আইন ব্যবহার করো যেগুলো পুরনো এবং সেসব খাবার খাও যেগুলো সতেজ।”
স্পেইনের আলফানসো এক্স, যাকে “দি ওয়াইজ” নামে ডাকা হতো তিনি বলেছিলেন, “পুরনো ওয়াইন পান করো। পুরনো বই পড়ো। পুরনো বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব রাখো।”
জ্ঞান বা নলেজ প্রতিযোগীতামূলক নয়, বরং জ্ঞানের ক্ষেত্রে যিনি শেষে শেষ করেন, তিনিই বিজয়ী; এমন বলেছিলেন দার্শনিক ভিটগেনস্টাইন। একাডেমির রিসার্চ পেপার পাবলিকেশন ভিত্তিক যে জ্ঞানের সমালোচনা তার সমালোচনা করতে গিয়ে প্রসঙ্গটি আনেন নাসিম তালেব। তার মতে একাডেমির এই প্রতিযোগীতামূলক রিসার্চ পেপার প্রকাশনা, একাডেমির ভেতরের অন্যদের দ্বারা সাইটেশন পাওয়া ও এর মাধ্যমে গুরুত্ব তৈরীর ব্যাপারটি হলো একাডেমির একটা রিচুয়ালিস্টিক ব্যাপার। এর সাথে জ্ঞানের কোন যোগসূত্র নেই।
যেসব রিসার্চ পেপার হয়, তাদের বিশাল সংখ্যক পুনরায় পরীক্ষা করলে একই ফলাফল দিতে পারে না। সাইকোলজির একটা গবেষণায় দেখা গেছে প্রেস্টিজিয়াস অর্থাৎ বড় জার্নালে প্রকাশিত হওয়া ১০০ টি পেপারের মধ্যে পুনঃপরীক্ষায় মাত্র ৩৯ টি আগের মতো ফলাফল দিয়েছে, বাকীগুলো দেয় নি, এসেছে ভিন্ন ফলাফল। অর্থাৎ, লিন্ডি ইফেক্টের দিক থেকে বিজ্ঞান খুবই ভালনারেবল বা দূর্বল।
এক্ষেত্রে প্রাচীন জ্ঞান বা প্রজ্ঞা, যেগুলো বয়স্করা বলে থাকেন, সেসব বেশী লিন্ডি প্রুফ। সাইকোলজির যেসব রিসার্চ লিন্ডি প্রুফ, দেখা যায় তাদের বেশীরভাগই সেইসব প্রাচীন বিশ্বাসের সাথে যায়।
অসমতার রকম রকম
একধরনের অসাম্য আছে যা আমরা সহ্য করি। এইসব মানুষ যারা বড় শিল্পী, উদ্যোক্তা, গণিতবিদ, বিজ্ঞানী, যাদের আমরা ফ্যান হতে পারি। হিরো ভাবতে পারি। অনুকরণ করতে পারি। তাদের মতো হতে চাইতে পারি। কিন্তু তাদের আমরা হিংসা করি না। যেমন সক্রেটিস, বব ডিলান, মার্কাস ওউরেলিয়াস ইত্যাদি, এদের আমরা হিংসা করি না।
দ্বিতীয় ধরণের অসাম্য হলো, সেইসব মানুষ যাদেরকে আমরা আমাদের মতো মনে করি। যারা আমাদের মতো হয়েও সিস্টেমকে ম্যানিপুলেশন করে বা ব্যবহার করে বা অন্য কোনভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। এমন জিনিস অর্জন করেছে যেগুলি আমাদের থাকলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। এই ধরণের লোকদের প্রতি ঈর্ষা জাগ্রত হয়। এই ধরণের অসাম্য মানুষ সহ্য করতে পারে না।
আমেরিকার বিশাল ধনীদের ব্যাপারে তাদের ওয়ার্কিং ক্লাসের কোন হিংসা নেই। বরং ওয়ার্কিং ক্লাস তাদের রোল মডেল হিসেবেই ধরে নেয়।
এনভি বা ঈর্ষা সামাজিক ক্লাসের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকে।
এরিস্টটল বলে গিয়েছিলেন যে নাপিত ঈর্ষা করে আরেক নাপিতকে। একইভাবে ইকোনমিক লোয়ার ক্লাসের ঈর্ষা থাকে তাদের ক্লাসের মধ্যে অথবা তাদের কাছের ক্লাস মিডলক্লাসের মধ্যে, ধনীদের প্রতি নয়।
নাসিম তালেব মনে করেন অসাম্য নিয়ে ইন্টেলেকচুয়ালদের বেশীরভাগ আলাপই এই ঈর্ষা থেকে। তিনি পিকেটির সমালোচনা করেছেন।
তার মতে কিছু জিনিস চরিত্রগত ভাবেই এক্সট্রিমিস্তানের মধ্যে পড়ে। এখানে খুবই অল্প সংখ্যক মানুষই বিশাল সংখ্যক ফল নিয়ে নিতে পারে। উইনার’স টেইক অল। সম্পদ অর্জনের ব্যাপারটাও এমন এক্সট্রিমিস্তান। একস্ট্রিমিস্তান ও মেদিওক্রিস্তান বিষয়টি নিয়ে ব্ল্যাক সোয়ানে ব্যাখ্যা ছিল, যা নিয়ে ব্লগের এই লেখাটি পড়তে পারেন বুঝার জন্য। এবং পারেতোর ল নিয়ে লেখাটি পড়তে পারেন।
সুতরাং, খুব অল্প সংখ্যক মানুষের কাছে বেশী সম্পদ থাকা স্বাভাবিক। এবং এটাকে তখনই অসাম্য বলা যাবে যখন দেখা যাবে সময়ের ব্যবধানে এই কিছু সংখ্যক ব্যক্তি অপরিবর্তীত রয়ে গেছে। কিন্তু তা হয় না। এই কিছু সংখ্যক ব্যক্তি পরিবর্তীত হয়। তালেবের মতে পিকেটি দেখাতে পারেন নি বছরে বছরে এই কিছু সংখ্যক লোক অপরিবর্তীত রয়ে যাচ্ছে।
ইন্টেলেকচুয়ালদের অসাম্য নিয়ে আলাপের কারণ হলো তারা সব কিছু হায়ারার্কিক্যাল (উঁচু নিচু শ্রেণীতে বিভক্ত) মনে করেন, ও সেভাবে চিন্তা করেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ এভাবে ভাবে না।
আগেকার দিনে ধনী মানুষেরা অন্য ধনীদের সাথে সংযোগে থাকতো না বেশী। দেখা যেত কোন লর্ড তার জায়গা জমি ও প্রাসাদ নিয়ে এক এলাকায় বাস করছেন। তার সন্তানেরা চাকর বাকরের সন্তানের সাথে খেলে বড় হচ্ছে।
কিন্তু শহুরে সমাজ ব্যবস্থা তৈরী হবার পরে ধনীরা অন্য ধনীদের সাথে মিশতে শুরু করলেন। ধনীদের ধন সম্পর্কে তখন অন্যেরা বেশী জানতে থাকলো। অন্য ধনীদের সাথে প্রতিযোগীতাও বাড়তে লাগল।
এইসব ধনীদের সাথে আবার মধ্যবিত্ত ক্লাসেরও সংযোগ হলো। তাদের মধ্যেও তখন ধনীদের সাথে তাল মেলানোর প্রতিযোগীতা ও ধনীদের প্রতি ঈর্ষা তৈরী হলো।
তালেবের মতে এই কারণে সমাজতান্ত্রিক আইডিয়া এইজন্য সবখানে প্রথমে গ্রহণ করেছে বুর্জোয়ারা বা মিডলক্লাস।
এখানে বাম রাজনীতির ৬২ বছর বইটি থেকে একটা অংশ উল্লেখ করতে হচ্ছে, প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায়, লেখক ফাইজুস সালেহীন লিখেছেন,
“সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বামপন্থী নেতৃত্ব। প্রায় প্রতিটি বামপন্থী পার্টির নেতৃত্ব শহরবাসী এক শ্রেণীর মধ্যবিত্তের দখলে। গ্রামাঞ্চল কিংবা শিল্পাঞ্চলের নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের নেতৃত্ব পার্টিতে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বামপন্থী দলগুলো সাফল্য লাভ করতে পারবে বলে মনে হয় না। অন্যান্য মধ্যপন্থী দলের সহযোগী হিশাবে কাজ করা ছাড়া এদের আর গত্যন্তর নেই। একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, সর্বহারাদের আন্দোলন কোনো দিনই মধ্যবিত্ত নেতৃত্বে সম্ভব নয়।”
লেখকের শেষের কথার সাথে কেউ একমত না হলেও প্রথম কথা হচ্ছে বাস্তবতা। মধ্যবিত্তরাই বামপন্থী নেতৃত্বে, প্রথম আলোতে লেখা সামাজিক-অর্থনৈতিক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা বুদ্ধিজীবীরাই এর বাহক। এর সমস্যা হলো, তাদের স্কিন খেলায় নেই। এজন্য তৃণমূল পর্যায়ে বা সর্বসাধারণের কাছে তারা আবেদন তৈরী করতে পারছে না।
মধ্যবিত্তের বামপন্থী চেতনাকে বেশীরভাগই ধনীদের প্রতি শ্রেণী ঈর্ষা থেকে আগত ধরা যায়।
পাইরেটস, হাশাসিনস, ও শত্রুর স্কিন খেলায় আনা
শত্রুকে নিজের কথামতো চালানোই বেশী ভালো তাকে হত্যা করার চাইতে। কারণ মৃত শত্রু তো আসলে কোন কাজে আসে না। হাসান সাব্বাহ যে কারণে বিখ্যাত, ইরানের সেই গুপ্ত ঘাতক দল হাশাসিনসরা তাই শত্রুকে খুন করতে চাইত না। তাদের লক্ষ্য থাকতো ভয় দেখিয়ে শত্রুকে নিজের বসে আনা।
শেলজুক তুর্কী সাম্রাজ্যের সম্রাট আহমাদ শানজার ১১১৮ সালের এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার বিছানার পাশের টেবিলে ধারালো ছুরি গাঁথা আছে। এবং একটি কাগজ। তাতে লেখা, “ছুরিটি আপনার বুকের চাইতে এখানে বিদ্ধ থাকাই ভালো।”
শানজার কিছুদিন আগে হাশাসিনদের শান্তি আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু এই থ্রেটের পর দ্বিতীয়বার সে পথে হাঁটতে আর সাহস করেন নি। পরবর্তীতে হাশাসিনদের সাথে সমঝোতা করেই ছিলেন ক্ষমতায়।
গডফাদার ফিল্মে যেমন দেখা যায় হলিউড একজিকিউটিভ ঘুম থেকে উঠে দেখেন ঘোড়ার কাটা মাথা তার চাদরের নিচে। এটা হাশাসিনদের স্টাইলে দেয়া এক থ্রেট।
আলামুত দুর্গে ছিল শিয়া এই গুপ্তঘাতকদল হাশাসিনদের নেতা হাসান সাব্বাহর বাসস্থান।
এই হাশাসিনরা সুলতান সালাদিনকেও পর্যন্ত থ্রেট দিয়েছিল, “যে কেক তিনি খেতে যাচ্ছেন তাতে তারা বিষ মিশিয়ে রেখেছে।”
ক্যারিবিয়ান সাগরে গোল্ডেন এইজ অব পাইরেসী বা ডাকাতির স্বর্নযুগ বিষয়ে পড়তে গিয়ে ডাকাতদের ভয়ংকর আচরনের ব্যাখ্যা পেয়েছিলাম জেনারেল হিস্টরী অব পাইরেটস বইতে। ডাকাতেরা জাহাজ আক্রমণ করলে খুবই হিংস্রভাবে মানুষ মারতো। এবং তাদের ভয়ংকর সব কাহিনী মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল। এসব শুনলে যে কেউ ভাববে ডাকাতেরা হয়ত মানুষ নয়, অন্য গ্রহের কোন হিংস্র জন্তু বা মানসিক বিকারগ্রস্ত।
কিন্তু ডাকাতেরা মানুষই ছিল। তাদের নিজস্ব কোড বা আইন ছিল। সেসব আইন তারা কঠোরভাবে মেনে চলতো। এবং তারা সমষ্টিগত ভাবে সমাজ তৈরী করে স্বাভাবিক বসবাসই করতো।
জাহাজে তাদের হিংস্র আচরণ ছিল নিজেদের প্রয়োজনেই। যত হিংস্র ভাবে তারা আচরণ করবে মানুষের মনে ততো বেশী ভয়ের জন্ম নেবে। আর মানুষের মনে ভয় বেশী হলে তারা ডাকাতদের সাথে যুদ্ধ করবে না। ফলে বিনাযুদ্ধে বা অল্প যুদ্ধে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে তারা।
সুতরাং, আত্মরক্ষার তাগিদেই তারা এই পদ্বতি অবলম্বন করতো।
তাদের তৎপরতাতেও ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল কাজ করছে। একই কাজ করতো মঙ্গোলরা। তারা যে সবাইকে হত্যা করতে চাইত এমনিতেই এমন নয়, তারা চাইত সবাই যেন তাদের সামনে পুরোপুরি নত নয়।
মৃত্যুর হুমকি দিয়ে যে এখন আধুনিক ব্যবস্থায় ভয় দেখানো হয়, এমন নয় সব সময়। প্রযুক্তি ব্যপারটাকে আরো নানা মাত্রা দিয়েছে। এখন প্রযুক্তির কারণে ক্যামেরা দিয়ে ছবি, ভিডিও রেকর্ড করে তা প্রকাশের হুমকি দিয়েও অন্যকে নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগায় অনেকে, এবং অনেক প্রফেশনাল সংস্থাও।
অনিশ্চিতে প্রতিসাম্য
কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মজলিশ বইটি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে। সেখানে বেগম আখতার এবং সিদ্ধেশরী দেবীর একটি কথোপকথনের বর্ননা আছে। বেগম আখতার গিয়েছিলেন সিদ্ধেশরী দেবীর বাসায়, তার এক শিষ্যাকে নিজের সাগরিদ বানানোর আবেদন নিয়ে। তাদের মধ্যে ইগো কেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব ছিল। সেখানে, সিদ্ধেশরী দেবীর বাসায় চা জাতীয় পানীয় খাবার সময় তারা পরস্পর পেয়ালা বদল করেন। এটা ছিল প্রাচীন এক রীতি, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিল্পীদের মধ্যে। যাতে করে অন্যজন গলা নষ্ট করার জন্য জড়িবুটি কিছু না মেশাতে পারে।
এই পদ্বতিটি প্রতিসাম্য রাখার এক দারুণ ব্যবস্থা।
এটা আমার মনে পড়ল তালেবের বইতে কচ্ছপের কাহিনী শুনে। প্রাচীন একটি কথা আছে, কচ্ছপ ধরেছো যখন তুমি, তোমার খেতে হবে। এই কথার উৎপত্তির গল্পটি এমন, একবার কিছু জেলে বেশ কিছু কচ্ছপ ধরে ছিল। রান্নার পরে দেখা গেল খেতে হয়েছে খুব বাজে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন দেবতা মার্কারী। জেলেরা তাকে ডেকে এনে কচ্ছপ খেতে দিল।
মার্কারী বুঝতে পারলেন জেলেরা খাবার নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতেই তাকে খাওয়াচ্ছে, কিন্তু তারা খাচ্ছে না। তখন তিনি জোর করে সবাইকে কচ্ছপ খাওয়ালেন।
প্রতিসাম্যের নীতিমূলক কথাটির উৎপত্তি এভাবে।
বেচা কেনার ক্ষেত্রে মারাত্মক একটি সমস্যা হলো তথ্যের অপ্রতিসাম্য। যেমন, যিনি বিক্রেতা তার কাছে এমন তথ্য থাকতে পারে পন্য সম্পর্কে যা ক্রেতার কাছে নেই। এই সমস্যা সমাধান কল্পে প্রাচীনকাল থেকেই চিন্তাশীল মানুষেরা ভেবেছেন।
যেমন, আপনি যদি জানেন কোন পন্যের দাম কমে যাবে তাহলে সেই পন্য অন্যের কাছে বিক্রি কি নৈতিকভাবে ঠিক?
দুইজন স্টোয়িক দার্শনিক ডায়োজিনিস অব বেবিলন এবং তার ছাত্র এন্টিপ্যাটার অব টারসাসের মত পার্থক্যই ধরা যায় এই আলোচনার শুরু।
সিসেরো’র বয়ানে কাহিনীটি এমন। ধরা যাক এক লোক আলেকজান্দ্রিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ শস্য কিনে জাহাজে করে নিয়ে এলো রোডসে। রোডসে তখন শস্য কম, দূর্ভিক্ষ, তাই শস্যের দাম বেশী।
ধরা যাক, লোকটি আসার সময় দেখেছে আরো অনেক বড় নৌকা আরো অনেক শস্য নিয়ে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে রোডসের দিকে রওনা হয়েছে।
এখন এই তথ্য কি সে রোডবাসীকে জানাবে? বা তার জানানো কি উচিত ও না জানানো কি অনৈতিক?
ডায়োজিনিস অব বেবিলন বলেছিলেন, আইন অনুসারে যতটুকু তথ্য জানানো উচিত তার ততটুকু জানালেই চলবে।
কিন্তু তার ছাত্র এন্টিপ্যাটার এতে দ্বিমত জানালেন। তিনি বললেন, তাকে অবশ্যই সব তথ্য জানাতে হবে। এমন কিছু থাকতে পারবে না যা বিক্রেতা জানেন ও ক্রেতা জানেন না।
এন্টিপ্যাটার আইনের উর্ধ্বে উঠে নৈতিকতাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সব সময়ই আইনের চেয়ে নৈতিকতা বেশী গুরুত্বপূর্ন। এইজন্য এন্টিপ্যাটারের অবস্থান এখনো বা ভবিষ্যতেও বেশী নৈতিক হয়ে থাকবে।
এই বিতর্ক উপস্থাপনের পরে সিসেরো প্রশ্ন তুলেছিলেন, “নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এমন মদ যদি কেউ বিক্রি করতে বাজারে তোলে, তাহলে সে কি তা ক্রেতাকে বলবে?”
ব্যবসা বাণিজ্যের ইসলামের শরীয়া আইন প্রাচীন ভূমধ্যবর্তী, বেবিলনিয়ান আইনকেই বাঁচিয়ে রেখেছে। এই আইন গ্রেকো-রোমান আইন, পয়েনিশিয়ান বাণিজ্য আইন, বেবিলনিয়ান আইন, আরবদের ট্রাইবাল রীতি ইত্যাদির মিলিত অবস্থানের এক মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করে।
আদান প্রদান বা কেনা বেঁচায় স্বচ্ছতা বা প্রতিসাম্য রাখার ক্ষেত্রে শরীয়া হলো আগের প্রতিসাম্য ভিত্তিক আইনসমূহের এক যাদুঘর স্বরূপ, বলেই অভিমত তালেবের।
শরীয়াতে ঘারার নামে একটি বিষয় আছে, এ ধরণের ব্যবসা নিষিদ্ধ।
কেউ বেশী তথ্য জেনে, তা লুকিয়ে রেখে যাতে অনিশ্চিতে বেশী সুবিধা লাভ করতে না পারে তাই ঘারারের ব্যবস্থা।
একজনের কাছে যদি নিশ্চিত তথ্য থাকে এবং অন্যজনের কাছে তথ্য না থাকার কারণে তার কাছে ফলাফল অনিশ্চিত হয় তাহলে ঘারার হবে। যেমন, কোন ফলের ভেতর পচা বিক্রেতা জানেন। এটি না জানিয়ে বিক্রি করলে ঘারার হবে।
সিসেরো’র প্রশ্নের, ওই পচে যাওয়া মদ বিক্রি করা তথ্য না জানিয়ে শরীয়া আইনে ঘারার বা নিষিদ্ধ।
কিন্তু সামান্য তথ্য থাকার কারণে বেশী সুবিধা পাওয়া, যেমন আরো জাহাজ শস্য নিয়ে আসছে এই তথ্য জেনে গোপন করলে তা ঘারার নয়।
বিভিন্ন চিন্তার স্কুল বিভিন্ন ভাবে এই অপ্রতিসাম্যের সমস্যাকে সমাধান করার চেষ্টা করেছে।
যেমন তালমুদিয়ান স্কুলের ভাবনাটা আরো গুরুতর। ধরা যাক আপনি ঠিক করেছেন একটি পন্য বিক্রি করবেন দশ টাকায়। কিন্তু ক্রেতা এসেই বলল, ভাই আমি বারো টাকা দেব, পন্যটি দিয়ে দেন।
এখন আপনি কোন দামে বিক্রি করবেন? দশ টাকায় না বারো টাকায়?
তৃতীয় শতকের বেবিলোনিয়ান স্কলার রাব শাফরা একই ধরণের সমস্যায় পড়েছিলেন। কিন্তু তিনি দাম বাড়ান নি। তার কাছে মনে হয়েছিল তিনি প্রথমে যে দাম নির্ধারণ করেছিলেন, তার সেই ইন্টেন্ট এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত ও সেই দামেই বিক্রি করা উচিত। জ্যুইশ বা ইহুদি নৈতিকতা এই ইনটেন্ট বা বিক্রেতার উদ্দেশ্য পর্যন্ত সামনে এনে প্রতিসাম্য বা স্বচ্ছতা দিতে চায়।
ভুল খেলায় স্কিনঃ আরেক ধরণের অপ্রতিসাম্য
ডাক্তারদের ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থাটা রাখা হয়েছে, তাদের চামড়া রাখা হয়েছে ভুল খেলায়। ডাক্তারি বা চিকিৎসায় যেসব টেস্ট ফেস্ট ও যন্ত্রপাতি, পরীক্ষা নিরীক্ষা এসবের ভুলসংস্লিষ্ট ঝুঁকি গিয়ে পড়ে ডাক্তারের কাঁধে। যদিও সবটা তার উপর পড়ার কথা না কারণ তিনি পেশাগত ভাবে কেবল তার কাজটির জন্য দায়ী।
খেলায় ডাক্তারের স্কিন বেশী রাখা হয়েছে। এখানে রোগীরও স্কিন আছে, কারণ টেস্ট ভুল রেজাল্ট দেখালে বা ওষুধের বাজে প্রতিক্রিয়ায় তার সরাসরি ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু যারা নিয়ন্ত্রক বা এডমিনিস্ট্রেটর তাদের সরাসরি স্কিন খেলায় নাই।
ভাব ধরা যার ভাব ধরেছে তা সে নয়
লেখার ক্ষেত্রে আমাদের এখানে যা হয়, বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় অযাচিত ইংরেজি শব্দের ব্যবহার। এটা একটা নতুন ট্রেন্ড। এর মাধ্যমে লেখক নিজের বুদ্ধিবৃত্তি ও পড়ার সিগনাল দিতে চান। এবং যিনি এই সিগনাল দিতে চান তিনি অবশ্যই বুদ্ধিজীবী নন, তালেবের কথায় তিনি হবেন ইন্টেলেকচুয়াল ইয়েট ইডিয়ট।
বুদ্ধিজীবীর আসলে বুদ্ধিজীবী ভাব ধরতে হয় না।
যেমন বিজ্ঞানবাদ বিজ্ঞান নয়। বিজ্ঞানবাদ হচ্ছে বিজ্ঞানের নামে একধরনের বুজরুকী চর্চা যা দেখতে বিজ্ঞানের চাইতেও বেশী বৈজ্ঞানিক মনে হয়। কিন্তু আসলে এটি বিজ্ঞান নয়।
যখন দরকার না তখন গণীতের ব্যবহার, গ্রাফের ব্যবহার, বিজ্ঞানকে একটি স্কেপটিক বা অনুসন্ধিৎসু নিয়ত পদ্বতি না ভেবে কোন শেষ অবস্থা ভাবা বিজ্ঞানবাদ।
যেখানে আপনার সুস্থ হাত দিয়ে কাজ করতে পারেন সেখানে কোন প্রযুক্তির অহেতুক সাহায্য নেয়া বৈজ্ঞানিক নয়।
অতি-যুক্তিবাদের এক সমস্যা বিজ্ঞানবাদ নিয়ে আসে।
যেমন, রিচার্ড ডকিন্স একজন বেইজবল খেলোয়াড় কীভাবে বল ধরে তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তার মাথায় তখন জটিল সব গণিতের সমীকরণ খেলে যায় এবং এদের যোগ বিয়োগের ফলে দ্রুত সে সিদ্ধান্ত নেয়, ও বল ধরে।
কিন্তু সত্যিকার অর্থে বেইজবল খেলোয়াড় এসব সমীকরণ জানেই না। সে কিছু “হিউরিস্টিক্স” বা দ্রুত অনুমান ভিত্তি সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ ওই সময়ে তার সমীকরনের চিন্তা করলে হবে না।
শোয়ার্জনেগার নিয়ে লেখাটিতে ছিল, আপনি বক্সিং করার আগে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করতে পারেন কখন পাঞ্চ মারবেন কখন মারবেন না ইত্যাদি নিয়ে। কিন্তু খেলায় নামার পর এসব ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে ঝামেলায় পড়বেন। তখন দ্রুত অনুমান ভিত্তিক সিদ্ধান্ত আপনার নিতে হবে। বিভিন্ন টেকনিক জানা থাকলে হয়ত অনুমানটি একটু বেশী ভালো হবে। কিন্তু কখনোই আপনি ভেবে সিদ্ধান্ত নেবার সময় পাবেন না ঐ অবস্থায়।
একই ব্যাপার ধর্মের ক্ষেত্রে। ধর্ম দিয়ে মানুষ তার কিছু সমস্যার সমাধান করে। কীভাবে সে করে তা সে নিজেও বুঝে না। এখানে হিউরিস্টিক্স কাজ করে তার।
হিউরিস্টিক্সের কিছু সমস্যা আছে ও কিছু সমস্যা দূর করা সম্ভব। কিন্তু হিউরিস্টিক্স কখনোই দূর করা সম্ভব নয় পুরোপুরি।
বিজ্ঞানবাদ বিজ্ঞানের ভাব ধরে, এবং ভাব ধরে বলেই তা বুজরুকী ও বিজ্ঞান তো নয়ই।
একইভাবে কোট শ্যুট ও জেলমারা চুলসহ যে স্পিকার মোটিভেশনের ডায়লগ দিচ্ছে, বা একেডেমিশিয়ান পরামর্শ দিচ্ছে, পোষাকের মাধ্যমে সফলতার যে সিগনাল দিয়ে, তা সে নয়। সত্যিকার সফল ব্যক্তি আসলে এসব কেয়ার করবে না। কারণ সে তো সফল এই ফিল্ডে, তার আলাদা ভাব লাগে না।
সদগুণ দেখানো, হিপোক্রিসি ও এর অনৈতিকতা
ভার্চ্যু বা সদগুণ হলো এমন কিছু গুণ যা শ্রেষ্ট মানুষ হবার জন্য একজনের দরকার হয়, এবং ক্লাসিক পিরিয়ড থেকেই তা আকাঙ্খিত। কিন্তু সদগুণ অর্জন করা সহজ নয়, এবং এসব গুণ সব সময় জনপ্রিয় হয় না। ফলে নিজের স্বার্থের জন্য মানুষ সদগুণ প্রদর্শন করে কিন্তু ধারণ করে না। এই হিপোক্রিসি অনৈতিক, এবং এটি গুণ হয় বরং দোষ।
নাসিম তালেব লেখিকা সুজান সনটাগের সাথে তার এক সাক্ষাতের কথা বললেন। এও জানালেন যে তার মৃত্যুর পনের বছর পর তিনি কাহিনীটি বলছেন।
২০০১ সালে একবার তালেবের সাথে সুজান সনটাগের আলাপ হয়। লেখিকা তার প্রতি আগ্রহী হয়েছিলেন তিনি “র্যানডমনেস” নিয়ে কাজ করছেন জেনে। কিন্তু যখনই তিনি জানতে পারলেন তালেব একজন ট্রেডার তখন তিনি তার সাথে কথা না বলে উঠে গেলেন ও জানালেন তিনি মার্কেট সিস্টেমের বিরুদ্ধে।
নাসিম তালেব ভেবেছিলেন হয়ত লেখিকা কোনো গ্রামে থাকেন। নিজ হাতে সব্জী ফলান। সাধারণ জীবন যাপন করেন ইত্যাদি।
কিন্তু দুই বছর পরে সনটাগের অর্বিচুয়ারি পড়তে গিয়ে দেখলেন লোকে অভিযোগ করছে তিনি কীভাবে তার প্রকাশকদের শুষে টাকা নিয়েছেন। কয়েক মিলিয়ন ডলার। তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে নিউইয়র্কে যে প্রাসাদে বাস করতেন তা পরে বিক্রি হয় ২৮ মিলিয়ন ডলারে।
এই ধরণের হিপোক্রিসি দেখা যায় আন্তর্জাতিক দাতাদের গরীবদের সাহায্য করার ব্যাপারে। অনেকেই পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে মিটিং এর পর মিটিং করে গরীবদের সাহায্য করার জন্য। সেসব মিটিং আরো অনেক মিটিং এ গড়ায়। এভাবে গরীব নামক সাবজেক্টকে ব্যবহার করে তারা সাহায্যের মেকি নাটকের মাধ্যমে নিজেরা তৃপ্ত হয়।
দার্শনিক পিটার সিংগারের মতো খুব কম লোকই আছেন যারা নিজেদের তত্ত্ব দেন যেমন গরীবদের সাহায্য করার জন্য, তেমনি নিজে সাহায্য করে ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করে দেখাতে পারেন। এটা ভার্চ্যু।
আমাদের দেশে বা বাইরেও গরীবদের দান করে ছবি তোলা হয়। আমি এর বিরোধীতা করি। এজন্য অনেকেই নানা ভাবে যুক্তি দিয়ে বুঝাতে চান যে এতে হাজার হোক গরীবের লাভ হচ্ছে। কিন্তু আমার অবস্থান লোক দেখানো ভার্চ্যু বা ভার্চ্যু সিগনালিং এর বিরুদ্ধে। কারণ এটি ভার্চ্যু নয়, ভাইস।
এ নিয়ে ফেইসবুকে বিতর্কের এক পর্যায়ে আমি কয়েকমাস আগে পিটার সিংগারকে একটা ইমেইল করি, নিজের অবস্থানের নৈতিকতার ব্যাপারে আরেকটু স্পষ্ট হবার জন্য। আমার কথা ছিল, আমি মনে করছি তারা যে এই বস্ত্র বা সাহায্য দিয়ে ছবি তুলছে তা অনৈতিক, কারণ এখানে যাকে দান করা হচ্ছে তার স্বাধীন মতামত দেবার সুযোগ নেই। সে যদি ক্যামেরার সামনে আসতে আপত্তি করে তাহলে সে হয়ত দান পাবে না। ফলে পরোক্ষ একটি প্রেসার আছে তার উপরে, কারণ সে দূর্বল ও অসহায়। এ ব্যাপারে সিংগার কী ভাবেন?
পিটার সিংগার আমার কথার সাথে একমত হয়ে জানান যে হ্যা এটা অনৈতিক। কারণ যারা দান নিচ্ছে তাদের ফ্রি কনসেন্ট বা স্বাধীন মত দেবার ক্ষমতা এখানে নেই।
ভার্চ্যু সিগনালিং হিপোক্রিসির আরেক উদাহরণ আমরা দেখতে পারি গ্লোবাল কনজিমারিস্ট সংস্কৃতিতে। স্লোভানিয়ান দার্শনিক স্ল্যাভো জিজেক এটি দেখিয়েছেন তার লেকচারে। স্টারবাকসের কফিতে লেখা থাকে ৫% যাবে গুয়েতেমালার দরিদ্র শিশুদের কাছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই বলে তারা আসলে কনজিউমারের অপরাধবোধ দূর করতে চায়। যাতে তারা অপরাধবোধে না ভুগে আরো বেশী কনজিউম করতে থাকে।
হোটেলে তোয়ালে যাতে লন্ড্রিতে কম পাঠানো হয় এজন্য লিখে রাখা হয় “পরিবেশ রক্ষা করুন”। এর মাধ্যমে মূলত হোটেল তাদের লন্ড্রির খরচ বাঁচাতে চায়, এনভায়রনমেন্টের প্রসঙ্গ তার ঢাল।
ভার্চ্যু এমন জিনিস যা আপনি বিজ্ঞাপনের মতো দেখিয়ে বেড়াবেন না।
চার্লি মাঙ্গারের একটি কথা আছে, “দেখেন, আপনি কি দুনিয়ার সেরা লাভার হবেন এবং দুনিয়ার কাছে পরিচিত হবেন সবচেয়ে খারাপ লাভার হিসেবে, নাকী দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ লাভার হয়ে পরিচিত হবেন ভালো লাভার হিসেবে?”
আপনার কাছে সেরা লাভার হওয়াটাই বিষয় হওয়া উচিত।
একইভাবে ভার্চ্যুর ক্ষেত্রেও। ম্যান অব ভার্চ্যু হওয়াই আপনার কাজ, অন্যে কী ভাবলো তা বিষয় নয়। অন্যের ভাবনা গুরুত্ব দিলেই হিপোক্রিসির মাধ্যমে ভার্চ্যু সিগনালিং করে লোকে।
কিছু কিছু ভার্চ্যু যেমন সৎসাহস, কখনোই জনপ্রিয় হবে না। এর জন্য লোকে আপনাকে ভালো বলবে না।
তালেব বলেন তার কাছে যেসব যুবকেরা আসে ও বলে দুনিয়ার দারিদ্র ও বড় সমস্যা নিয়ে কাজ করতে চায়, উপদেশ চায় তখন তিনি তাদের উপদেশ দেনঃ
১। কখনো লোক দেখানো ভালো কাজ বা ভার্চ্যু সিগনালিং করবে না।
২। কখনো নিজ স্বার্থের জন্য ম্যানিপুলেট করবে না।
৩। তোমাকে অবশ্যই একটা ব্যবসা শুরু করতে হবে। লাইনে দাঁড়াতে হবে। ঝুঁকি নিবে, এর দ্বারা বড় অর্থ উপার্জন হলে লোকদের সাহায্য করবে।
কারেজ বা সৎসাহস এমন ভার্চ্যু যা ফেইক করা যায় না। এবং কারেজ (ঝুঁকি গ্রহণ) হলো সেরা সদগুণ, তালেবের মতে।
কাঙ্গালিনী সুফিয়া, নারীবাদ ও স্কিন ইন দ্য গেইম
যারা মানুষের মুখের সামনে রক্তাক্ত প্যাড তুলে ধরে মধ্যবিত্ত স্মার্ট নারীবাদ করেন, এরা অনেক কিছু বুঝতে পারেন কাঙালিনী সুফিয়ার কাছ থেকে।
এই বড় বাস্তববাদী-নারীবাদী শিল্পী তার বিখ্যাত “বুড়ি হইলাম তোর কারণে” গানে অর্থনৈতিক লিঙ্গ বৈষম্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি নারীদের ত্যাগ, তাদের প্রতি করা শোষণ বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন সহজ ভাষায়।
কিন্তু সরাসরি কাউকে আক্রমণ করেন নি। বরং, পরোক্ষভাবে গভীর ও মর্মস্পর্শী আক্রমণ করেছেন সমাজ বা পুরুষকে। আবার তিনি পুরুষকে পরাণের বান্ধবও বলেছেন। পরাণের বান্ধব তার এক শ্লেষাত্মক আক্রমণ, যে আমি বুইড়া তোমার জন্য এত করলাম, তুমি করলা কী?
এই পরাণের বান্ধব বলে বুইড়ারে আক্রমণ করার গুরুত্ব অত্যধিক। এতে বুইড়াদের বা পুরুষদের আত্মোউপলব্ধির সম্ভাবনা বেশী। নিশ্চয়ই এই গান অনেক বুইড়াদের বুঝায় তার বুড়িদের গুরুত্ব, এবং ভবিষ্যতেও বুঝাবে। নারীবাদীরা এই গানকে থিম সং হিসেবে নিলে বুইড়ারাও দেখবেন এতে শরিক হবে। কারণ এই গান বুইড়াদের মনে অপরাধবোধ জাগাইতে চায় তাদের অবহেলার জন্য, কিন্তু তাদের পশু জানোয়ার বলে আক্রমণ করে না।
বুইড়াদের বা সমাজরে প্রতিপক্ষ ভেবে তাদের সাথে সরাসরি যুদ্ধে নেমে যে নারীবাদ, তা কখনো সফল হবে না।
কারণ বাস্তব সমাজ পুরুষ ও নারী মিলেই, এবং একে অপরের প্রতিপক্ষ না।
সুফিয়া এখানে যে নারীবাদ করেছেন তা বাস্তবসম্মত। এতে সমাজের নারীদের উপকার হবে। একেবারে নিচের অর্থনৈতিক ক্লাসে বাস করা নারীদের পর্যন্ত। মূলত সুফিয়ার শ্রোতা গ্রামীন লোকসকল, এবং ঐ জায়গাতেই নারী বৈষম্য বেশী প্রকট।
সুফিয়া এভাবে ভাবতে পেরেছেন কারণ তার উঠাবসা, চলাফেরা ও বাস ঐসব মানুষদের সাথেই। তার স্কিন সরাসরি ঐ খেলায়, এবং তিনি নিজের গল্পই যেন বলেছেন। তিনি এও বুঝতে পেরেছেন যে পরানের বান্ধব বুইড়ারে গাইল দিয়ে পশু জানোয়ার বললে কোন সমাধানই আসবে না।
এভাবে তাদের স্কিন খেলায় থাকে তারা সমাধান চান, বাস্তব জীবনে সমাধান। কোন মতাদর্শ, ইগো পরিতৃপ্তি ও অন্যকে ঘায়েল করা জাতীয় আন্দোলন তারা করেন না। আহমদ ছফা তার এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশী নারীবাদী আন্দোলনের বিষয়ে বলেছিলেন,
সোফিয়া অর্থ জ্ঞান বা প্রজ্ঞা। কাঙালিনী সুফিয়া এই গানে তার প্রজ্ঞারই পরিচয় দিয়েছেন।
ঝুঁকির ধরণ
তালেবের বই শেষের দুই অধ্যায় আগের বইগুলির মূল থিসিসের সাথে বেশী যুক্ত। এখানে তিনি ঝুঁকির মধ্যে পার্থক্য করেছেন এবং চিরাচরিত ইকোনমিস্ট ও এনালিস্টদের বিশ্লেষণ সত্য ধরে নিয়ে বড় ঝুঁকিকে (এক্সট্রেমিস্তানের ঝুঁকির নাম বড় ঝুঁকি দিলাম) ছোট ঝুঁকি (মেদিওক্রিস্তানের ঝুঁকিকে ছোট ঝুঁকি বললাম) হিসেবে না ধরতে সতর্কতা জারি করেছেন।
তার কথা হলো একটি বেঞ্চ থেকে নিচে লাফিয়ে পড়লে তা আপনার হাড় ও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু দুই তলা থেকে লাফিয়ে পড়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
মেদিওক্রিস্তান হলো অনিশ্চিত বা র্যানডমের থিন টেইলড ইভেন্ট, যা কেবল ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে।
এক্সট্রিমিস্তান হলো অনিশ্চিত বা র্যানডমের ফ্যাট টেইলড ইভেন্ট, যা প্রচুর মানুষকে প্রভাবিত করে।
ফলে, কখনোই এক্সট্রিমিস্তানের ঝুঁকিকে মেদিওক্রিস্তানের ঝুঁকি হিসেবে ধরে নিবেন না।
সাংবাদিক, ইকোনমিস্টেরা তাদের মেদিওক্রিস্তান জ্ঞান নিয়ে এক্সট্রিমিস্তানের বিচার করেন তাই তাদের বিচার ভুল বলে মনে করেন তালেব। যেমন, বলা হল আমেরিকায় বাথটাবে ডুবে মারা গেছে বছরে ১০ হাজার জন, যা ইবোলায় আক্রান্ত হয়ে মরাদের চাইতে বেশী। এটা বলে ইবোলার ঝুঁকি কম বুঝানোর চেষ্টা করা হলো।
কিন্তু বাথটাব কি আপনাকে মারার জন্য বসে আছে? কখনোই না।
পক্ষান্তরে ইবোলা ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে পারে ও মহামারী রূপ নিতে পারে।
দুইটা দুই ধরণের ঝুঁকি। এক্সট্রিমিস্তানের ঝুঁকিটা হলো ঝুঁকিই নয়, বরং রুইন বা ধ্বংস।
এবং যৌক্তিক অবস্থান হলো, রুইন বা বড় ঝুঁকি এড়িয়ে চলা।
টেইল রিস্ক এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন তালেব। এক্ষেত্রে তালেব ওয়ারেন বাফেটের প্রসঙ্গ আনেন। বাফেট সব সময় টেইল রিস্ক এড়িয়ে চলেছেন এবং অপেক্ষা করেছেন। একটা ফিল্টার তৈরী করে তিনি স্থির হয়ে বসেছেন। এই ফিল্টারে যেসব অপরচুনিটি আটকা পড়ে নি, সেসবই তিনি বিবেচনায় নিয়েছেন। বাফেটের কথায়, “সফল ও সত্যিকার সফল ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য হলো সত্যিকার সফল ব্যক্তিরা প্রায় সব কিছুতেই না বলেন।”
কারেজ
আপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বাজে ব্যাপার কী ঘটতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে বেশীরভাগ মানুষ বলে মৃত্যু। আধুনিক শিক্ষা ও সমাজ মানুষকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক হতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু মৃত্যু কি একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে বাজে হতে পারে?
এর চাইতে বাজে নয় কি, আপনার মৃত্যু এবং আপনার বাবা মা, ভাই বোন, সন্তান সন্তনী সবার মৃত্যু?
আপনি একজন নার্সিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজওর্ডারের রোগী ও সাইকোপ্যাথ না হলে অবশ্যই বলবেন নিজের মৃত্যুর চাইতে জ্ঞাতি গোষ্ঠী সহ মরাটা বেশী বাজে।
সুতরাং শ্রেণীবিভাগে ব্যক্তি প্রথমে নয়, বরং উলটা বিষয়টা। আগে ইকোসিস্টেম, মানবজাতি, তারপর জাতি ট্রাইব, এরপর আত্মীয় পরিজন, এরপর ব্যক্তি।
প্রাচীন গ্রীসে কারেজ বলতে কখনো সেলফিশ কারেজ বুঝাত না। কারেজ বলতে বুঝাত নিজের ভালো উপরে থাকাদের (মানবজাতি, ট্রাইব, পরিবার) ভালোর জন্য বিসর্জন দেয়া।
টেইল রিস্ক ইভেন্ট কেবল ব্যক্তিকে নয়, আরো অনেক মানুষকে প্রভাবিত করে, তাই এটি এড়িয়ে চলাই উচিত।
নাসিম তালেবের স্কিন ইন দ্য গেইমের সমালোচনা
বইটি যেভাবে লেখা হয়ে, নিয়ত আক্রমণ করে সাংবাদিক, ইকোনমিস্ট, বিজ্ঞান লেখক সহ নানা স্তরের ব্যক্তিদের, তাই এটি স্বাভাবিকই ছিল যে এর কঠোর প্রতিক্রিয়া হবে। বেশীরভাগ সাংবাদিকেরা এর বিরোধীতা করছেন, সমালোচনা করছেন, কিন্তু যারা তুলনামূলক বেশী যৌক্তিক চিন্তা করতে পারেন তারা এটা স্বীকার করে নিচ্ছেন যে তালেব যেমন তার আগের বইতে মৌলিক চিন্তা হাজির করতে পেরেছিলেন, তেমনি এই বইতেও অনেক মৌলিক কিছু বলেছেন।