আপনি যদি বই পড়েন অনেক তাহলে আপনার কথাবার্তায় এবং আচরনে এর একটা প্রভাব থাকবে। কখনো আপনি কোন বাস্তব ঘটনা বর্ননায় এর সাথে মিল থাকা বইয়ের কোন বিষয় তুলে আনতে পারেন কথায়।
যেমন ধরা যাক সন্তান জন্ম দানের নৈতিকতা অনৈতিকতা নিয়ে কথা হচ্ছে। বেনাটার পড়া থাকলে আপনি অবশ্যই তার নাম উচ্চারন করতে পারেন। তার যুক্তিগুলি দিতে পারেন।
আবার আরেকজন সন্তান জন্মদানের পক্ষে বলতে গিয়ে, মহাভারতের মুনি জগৎকারুর কথা বলতে পারে। যিনি একবার দেখতে পেয়েছিলেন খুব হালকা এক রশি ধরে যাযাবর ঋষিরা ঝুলছেন। তাদের এই অবস্থা হয়েছিল কারণ তাদের পূর্বপুরুষ উত্তরপুরুষ মুনি জগৎকারু সাধনায় এমন মগ্ন যে বিয়ে করার, সন্তান উৎপাদনের সময় পান নি। ফলে বংশ লোপের আশংকায় এই খারাপ অবস্থায় পতিত হয়েছিলেন যাযাবর ঋষিরা।
এইসব কথা, গল্প একজন সামনে আনেন তার উপস্থাপিত যুক্তিকে শক্ত এবং ইন্টারেস্টিং করে তোলতে।
কিন্তু এর জন্য আপনি বুকিশ উপাধী পেতে পারেন। এই উপাধী আপনাকে তারা দিতে পারে যারা বই পড়ে না, বা আপনি যেরকম পড়েছেন সেরকম তারা পারে নি পড়তে।
কারণ এসব ক্ষেত্রে মানুষের ইগোতে আঘাত লাগে। বিশেষত আপনি সামান্য বই পড়া, কালচারাল ঘরানার লোকদের থেকেই এই কথা বেশি শুনবেন। অর্থাৎ, যারা মনে করে তারা অনেক পড়েছে, অনেক জানে, কিন্তু আপনার সাথে কথায় তাদের সেই মিথ্যে অহমে আঘাত লাগবে। ফলে ডিফেন্স মেকানিজমের অংশ হিসেবে তারা আপনাকে বুকিশ বলতে পারে।
একেবারেই যারা বই পড়ার সাথে নেই তারা কম বলবে।
এবং, একেবারে খারাপ যদি আমরা কল্পনা করি, ধরা যাক এক যুবক সত্যিই অতিমাত্রায় বুকিশ। মানে যেকোন ক্ষেত্রে সে বই ছাড়া কিছু বুঝে না। বই থেকে ইনসাইট বের করাটা সে এখনো আয়ত্ত্ব করতে পারে নি।
এক্ষেত্রেও বুকিশ হওয়াটাই একজনের জন্য লাভজনক। কারণ বুক বা আসলে তার কথা বলার সময় অন্য অনেক বই সম্পর্কে বলে। অর্থাৎ, বই নিজেই বুকিশ। একটি ভালো বই আরো অনেক অনেক বইয়ের কাছে পাঠককে নিয়ে যায়। এবং বইয়ে যে চিন্তা থাকে, তা ঐ লেখকের এবং আরো অনেক লেখকের সম্মিলিত এক ইনসাইট।
একজন যখন বই পড়েন তখন লেখকের চিন্তার সাথে তার সরাসরি কথাবার্তা হয়, সংযোগ হয়।
এমনকী ফিকশনের ক্ষেত্রেও। ফিকশনে বিভিন্ন জনের দিক থেকে কোন সিচুয়েশনের বর্ননা থাকে। তখন একজন মানুষ নানা দিক থেকে সিচুয়েশনটাকে দেখতে শিখে। তার ভেতর অন্যের মত নিয়ে উদার মনোভাব, এবং সহমর্মীতা বা এম্প্যাথী জন্মে থাকে।
মূলত এভাবেই বই মানুষের বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে কাজ করে। বইয়ের কারণেই যে লোকে বুদ্ধিমান হয় এমন নয়। বরং বইয়ে উপস্থাপিত বিষয়গুলি সে যখন পড়তে থাকে তখন তার ব্রেইনের নানা ফাংশন কাজ করতে থাকে, এবং এর মাধ্যমে চিন্তা ক্ষমতা শার্প হয়ে উঠে। অর্থাৎ, ব্রেইনে বিদ্যমান ক্ষমতাই শার্প হয়ে উঠে বই পড়ার জন্য।
আমরা আবার, সবচেয়ে খারাপটা কল্পনা করি। ধরা যাক এক যুবক, বয়েস পঁচিশ বছর, সে মারাত্মক বুকিশ। আসলেই বুকিশ এবং বই থেকে ইনসাইট নিয়ে সে বাস্তব সমস্যার সাথে রিলেট করতে পারে না।
এমনকী, এই যুবক আরো বিশ বছর ঠিক এই অবস্থায় থাকলেও ক্ষতি আসলে নেই। বিশ বছর এইভাবে থেকে সে আরো আরো বই পড়ুক। তাতে অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই বই থেকে ইনসাইট বের করাটা সে আয়ত্ত্ব করে নিবে কোনভাবে। এবং সেটা আয়ত্ত্ব করে নিলে তার বিশাল পড়ালেখা তখন তাকে বুঝাপড়ার অন্য স্তরে নিয়ে যাবে। পয়তাল্লিশ বছর বয়েসে সে একজন প্রাজ্ঞ লোক হবে ধরা যায়।
কিন্তু আরেকজন যুবক, সেই পঁচিশ বছর বয়েসেই বুকিশ ট্যাগ খাবার ভয়ে, বুকিশ হবার ভয়ে বই পড়ল না। সে চাইল জীবন থেকে, নিজ অভিজ্ঞতা থেকে ইনসাইট নিতে। মাঙ্গার যেমন বলেছিলেন, সে তেমন বিদ্যুৎ প্রবাহীত হচ্ছে এমন ইলেক্ট্রিক তারে প্রস্রাব করলে কী হবে জানতে ওখানে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার পন্থায় চললো। এভাবে বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিত্তিক জ্ঞান নিয়ে সে বেশী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাবে না।
কারণ মানুষের জীবন খুব ক্ষুদ্র। এবং মানুষকে কেবল জ্ঞান অর্জন নয়, নানাবিদ আরো কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এবং পৃথিবী অনেক কমপ্লেক্স একটা সিস্টেম। এখানে অতি ব্রিলিয়ান্ট হবার চাইতে কম বোকা হবার চেষ্টা করাই নিরাপদ।