বেলা তার বা বিইলা তারর একজন হাঙ্গেরিয়ান ফিল্মমেকার। তিনি দার্শনিক থিমের উপর ভিত্তি করে ফিল্ম নির্মান করেন, এবং ফিল্ম নির্মানে তার নিজস্বতার জন্য বিখ্যাত, এবং একজন মাস্টার ফিল্মমেকার হিসেবে পরিচিত। সর্বশেষ ফিচার ফিল্ম দ্য তুরিন হর্স নির্মানের পর তিনি ফিল্ম নির্মান থেকে অবসর নেন। কারণ তার মতে তার যা বলার ছিল তা তিনি বলে ফেলেছেন, এখন নতুন আরো ফিল্ম নির্মান করলে একই কথাই বার বার বলা হবে। বর্তমানে ফিল্মমেকিং এর একটি স্কুল স্থাপন করে নতুন নির্মাতাদের শেখাচ্ছেন ফিল্ম নির্মান বিষয়ে।
বেলা তারের চিন্তার কিছু অসাধারণ অংশ তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে এখানে নিয়েছি, এবং বাংলায় অনুবাদ করেছি।
ফিল্ম স্টাইল পরিবর্তন বিষয়েঃ
আমার কেরিয়ারের শুরুর দিকে আমার অনেক ক্রোধ ছিল সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে। আমি সবাইকে বলতে চাচ্ছিলাম সমাজটি কীরকম শৃঙ্খলাহীন, বিভ্রান্ত। এটা ছিল শুরু। এরপর আমি বুঝতে শুরু করলাম এই সমস্যাসমূহ কেবল সমাজের না, এর গোড়া আরো গভীরে প্রোথিত। আমি ভেবেছিলাম এগুলি অস্তিত্বজনিত তত্ত্ববিদ্যার সমস্যা, কিন্তু পরে দেখলাম তা নয়। এই সমস্যাসমূহ হচ্ছে মহাজাগতিক। পুরো বিশৃঙ্খল, বিভ্রান্ত দুনিয়াই কেবল নয়। এটাই আমাকে বুঝতে হয়েছিল আর তাই আমার স্টাইল বদলেছে। আমি যখন নিচে যেতে শুরু করলাম, তখন আরো আরো নিচে যেতে লাগলাম। স্টাইল আরো আরো আরো নিচে যেতে লাগল, আর শেষপর্যন্ত, হলো আরো সহজ, খুবই বিশুদ্ধ। এটাই আমার জন্য মজার, আস্তে আস্তে এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে গিয়ে কোন জিনিস আবিষ্কার করা।
ফিল্মে গল্প বিষয়েঃ
আমি গল্প কেয়ার করি না। কখনোই করি নি। সব গল্পই আসলে একই গল্প। আমাদের কাছে নতুন কোন গল্প নেই। আমরা পুরনো গল্পগুলিই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছি। আমি আসলেই মনে করি না মুভি বানানোর সময় আপনাকে গল্প নিয়ে ভাবতে হবে। ফিল্ম গল্প নয়। এটা হলো বেশিরভাগই হচ্ছে ছবি, শব্দ এবং প্রচুর প্রচুর ইমোশন। গল্প হচ্ছে কেবল কোন কিছু ঢাকা দেবার জন্য। ড্যামনেশনের উদাহরণ দেই, হলিউডের স্টুডিও পেশাদার হলে আপনি এই গল্প বিশ মিনিটে বলতে পারবেন। এটা সাধারণ। কিন্তু আমি কেন এতো দীর্ঘ সময় নিলাম? আমি গল্প দেখাতে চাই নি। আমি দেখাতে চেয়েছি এই লোকটির জীবন।
অভিনেতা-অভিনেত্রী বিষয়েঃ
আমি যখন কোন দৃশ্য করি, আমি একেবারে বাস্তব সিচুয়েশন তৈরী করি, এবং আমি জানি এতে চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা অভিনেত্রীরা কীরূপে ব্যবহার করবে। আপনাকে জানতে হবে কীভাবে তারা রিয়েক্ট করবে কারণ তাদের থাকতে হবে ঐ সিচুয়েশনে। আপনি ক্রোধ, আনন্দের মত সত্যিকার ইমোশন পেতে পারেন তাদের চোখের দৃষ্টি থেকে।
তারকোভস্কির “আন্দ্রেই রুভিলভের” অনুপ্রেরণা বিষয়েঃ
আমি আন্দ্রেই রুভিলভ পছন্দ করি, কিন্তু তারকোভস্কি ছিলেন একজন ধার্মিক মানুষ, আমি তা নই।
দ্য তুরিন হর্স বিষয়েঃ
আমরা দুনিয়ার হঠাৎ ধ্বংসের কথা বলাবলি করি, এবং এরকম জিনিসের কথা, কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম এটি ঠিক নয়। জীবন আস্তে আস্তে, এক ধাপ এক ধাপ করে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। এটাই ছিল তুরিন হর্সের বিষয়, জীবনের ধীর সমাপ্তি।
দর্শক বিষয়েঃ
আমি আপনার জন্য যা চাই তা হলো, আপনি সিনেমা হলে যান, অন্ধকারে বসে থাকেন, এটি দেখুন আর যখন বের হবেনঃ আপনি কেমন আছেন? আপনি কি আগের চাইতে ভালো? আপনি কি আগের চাইতে শক্তিশালী অনুভব করছেন? আপনি কি কিছু পেয়েছেন? অথবা সিনেমা হলে ঢুকার সময় আপনি যা ছিলেন এখন তাই আছেন? এই সব।
নিজস্বতা বিষয়েঃ
আপনি যদি সত্যিকার ফিল্ম নির্মাতা হোন তাহলে আপনার নিজস্ব স্টাইল থাকতে হবে, নিজস্ব ভাষা থাকতে হবে। এগুলি নির্ভর করবে আপনার সাংস্কৃতিক পশ্চাদ্ভূমি, আপনার ইতিহাস, অবশ্যই বাজেট এবং আরো অনেক অন্যান্য জিনিসের উপরে যা আপনার ইতিমধ্যেই আছে। আমার মতে ফিল্ম নির্মান হচ্ছে দুনিয়ার প্রতি একজনের প্রতিক্রিয়া- আপনি অন্য লোকদের বলছেন কীভাবে আপনি দুনিয়াকে দেখেন, আপনার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে। এইজন্য আমি অন্যান্য অবস্থা, অন্যরা কী করছে এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাই না- কারণ অন্যদের অনুসরন করা অসম্ভব। ট্রেন্ডকে ঠিক বলে এগিয়ে যাওয়া, এটা অবশ্যই ফেইক এবং ভুল পথ। আপনার নিজেকে নিজে হয়ে উঠতে হবে। আপনার নিজস্ব ভাষা থাকলে দুনিয়াকে পাত্তা দেবার কিছু নেই, কোন কিছুকেই পাত্তা দেবার কিছু নেই, এটাই আমি অনুভব করি এবং এটাই আমি এই ৩৪ বছরে শিখেছি।
ইংরাজি সূত্রঃ
সাক্ষাৎকার – ইনডিওয়ার
সাক্ষাৎকার – মুবি ডট কম
সাক্ষাৎকার- হ্যামার টু নেইল