এক
পিটার প্যান সিন্ড্রোম একটা সাইকোলজিক্যাল সমস্যার নাম, যেখানে কিশোর বয়স থেকে যুবকে পরিণত হবার পরেও যুবক ম্যানে পরিণত না হয়ে চিরশিশু রয়ে যেতে চায়।
দায়িত্ব নিতে চায় না, কল্পলোকের রোমান্টিসিজমে বাস করে। তার অভিমান থাকে, ক্ষোভ থাকে কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে সে অপারগ।
আমাদের সমাজে এই সমস্যা বাড়তেছে। বিশেষত, শিল্প সাহিত্য করাদের ও রোমান্টিক বিপ্লবীদের বেশিরভাগেরই এই সমস্যা আছে।
আরেকজনের আছে ভাইবা যারা লাইক দিবে, তাদের অনেকেরও এই সমস্যা থাকতে পারে।
দুই
কোথায় গেল সে রূপকথার রাত
হাজার গল্প শোনা?
রাজার কুমার, কোটাল কুমার
পঙ্খীরাজ সে ঘোড়া।
– ওল্ড স্কুল ব্যান্ড।
রূপকথার রাত, পঙ্খীরাজ ঘোড়া বা রাজার কুমার কোথাও যায় নাই। বড় হইতে হইতে আমরা জাস্ট বুঝতে পারছি এগুলি ভুয়া, অস্তিত্ব নাই, কেবল গল্প।
ফলে, আমরা এগুলি আর বিশ্বাস করি না।
এটা আশীর্বাদ যে আমাদের এই রেশনালিটি ডেভলাপ করেছে। শিশু ও কিশোরবস্থার কম রেশনাল অবস্থা থেকে আমরা বের হয়ে আসছি। এই বেটার রেশনাল বুদ্ধির জন্য প্রাইস দিতে হয়েছে। প্রাইস হইল, রূপকথাকে রূপকথা বুঝতে পারা।
এটা কোন দুঃখের কথা নয়, আনন্দের কথা। শিশু কিশোর থাকা আনন্দের কিছু না। প্রাণীজগতে মানব শিশুই সবচেয়ে বেশি ভালনারেবল থাকে।
তিন
হুমায়ূন আহমেদের সবচাইতে জনপ্রিয় ও ক্যারিশমাটিক চরিত্র হিমুর জনপ্রিয়তার এক কারণ হল ক্যারেক্টারটি পিটার প্যান সিনড্রোমে আক্রান্তদের আদর্শ ক্যারেক্টার হিসেবে ধরা দেয়। তারা এই চরিত্রের সাথে নিজেকে রিলেট করতে পারে।
হিমু দায়িত্ব নেয় না। মায়া বলে এড়িয়ে যায়। সে ‘মহামানব’ নামে এক বিশেষ কিছু হতে চায়, অন্য সবার মত মানুষ নয়। গল্পে অন্য এডাল্ট লোকদের বেশিরভাগই দেখা যায় খারাপ মানুষ। এদের তুলনায় মহামানব লক্ষ্যটি বড় হয়ে দেখা দেয়। কিন্তু এটি পিটার প্যানের হারানো বালকদের রাজ্যের রাজা হবার মতই এক আকাঙ্ক্ষা।
হিমু, তার ক্যারেক্টারের কারণেই জনপ্রিয়। গল্পের কারণে না।
হুমায়ূন আহমেদের অন্য ক্যারেক্টার মিসির আলির জনপ্রিয়তা গল্পের হরর, এবং লেখকের জনপ্রিয়তার কারণে। হিমুর জনপ্রিয়তার তুলনায় তা অনেক কম।
[ প্রতিরক্ষা স্বীকার্যঃ লেখক হুমায়ূন আহমেদ খারাপ, তার লেখা খারাপ বলা হয় নি। তার লেখার সমালোচনাও করা হয় নি। তার তৈরি কাল্পনিক একটা চরিত্র এবং এর প্রভাব নিয়ে বলা হয়েছে। ]
পিটার প্যান সিন্ড্রোম থেকে মুক্তির উপায় –
চিরশিশু অবস্থা যে সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম এটি এমন নয় যে ঘাতক ব্যাধি, তাই কোন মানসিক রোগ হিসেবে এটি তালিকাভুক্ত নয়।
কিন্তু, এই সমস্যায় আক্রান্ত লোকদের পার্সোনাল এবং প্রফেশনাল লাইফে নানা সমস্যা দেখা দেয় তার চিরশিশু দশার জন্য। সুতরাং, আপনার এই সমস্যা থাকলে উচিত এ সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও বেরিয়ে আসা।
কেমনে?
প্রথমে স্বীকার করে নেয়া যে আপনি আর বাচ্চা নন। শিশু অবস্থা শেষ। লাইফ ফরয়ার্ডের দিকে বা সামনের দিকে গিয়ে বাঁচতে হয়, কীয়ের্কেগার্ডের গুরুত্বপূর্ন কথাটি মনে রাখুন।
নিজের দূরাবস্থার জন্য বাবা মা ও পরিবেশকে দায় দেবার আগে নিজে কী করেছেন তা ভাবুন। নিজের লাইফে দায়িত্ব নেয়া শুরু করুন। আপনার লাইফ, রেসপন্সিবিলিটিও আপনার। এন্ড ইন দিস ফাকিং লাইফ, আপনার যুদ্ধ আপনাকে একাই করতে হবে। এর থেকে পালিয়ে যাবার উপায় নাই।
টেইক রেসপন্সিবিলিটি। সরকার, ক্যাপিটালিজম বালছাল অভিযোগ করার হলে, দোষ দেবার হলে, কত কিছুরে দোষ দেয়া যায়। যারা সিরিয়াস ক্রিটিক করছেন, তারা ইন ডেপথে গিয়ে করছেন। এন্ড ইভেন, ওইসব ক্রিটিকের জন্য তাদের কেরিয়ার তৈরি হচ্ছে। গ্লোবাল ইনফ্লুয়েন্স, বড় ইউনিভার্সিটিতে চাকরি। তোতাপাখির মত আপনি এগুলি জপলে, ও নিজের দায় না নিয়ে নানা কিছুর উপর দোষ চাপালে কারো কোন ক্ষতি হবে না, ক্ষতি হবে দিনশেষে আপনার।
তখন এটা হয়ত বুঝতে পারবেন, যখন আপনার আশেপাশের লোকেরা অনেক দূরে চলে যাবে দুনিয়ার সাকসেসের দিক থেকে। মানুষ আপেক্ষিকভাবে বিচার করে। আপনি যখন কাছের লোকদের এগিয়ে যেতে দেখবেন তখন হয়ত নিজের দিকে ফিরে তাকাবেন। তবে পিটার প্যানেরা তথা চির শিশুরা এমন অবস্থায় হতাশ হয়ে অন্যদের প্রতি অভিযোগ করতে থাকে, এবং মাদকাসক্তি বা অন্য কোন পলায়নপর আসক্তিতে ডুবে যেতে চায়।
অথবা চির শিশুরা বলতে পারে দুনিয়ার সাকসেস মূল্যহীন। টাকা তুচ্ছ। যদিও টাকা না থাকলে লজিক্যালি না খেয়ে মরতে হবে একজন লোককে। টাকা সব সমস্যার সমাধান করে না, এটা টাকার উদ্দেশ্যও নয়, কিন্তু টাকা রিলেটেড সব সমস্যার সমাধান টাকা করতে পারে, এটা মনে রাখবেন।
[ এগুলি ছিল পিটার প্যান সিন্ড্রোম নিয়ে আমার দেয়া স্ট্যাটাস। একসাথে করে এখানে দিলাম, হয়ত কেউ উপকৃত হতে পারেন এই আশায়। ]