কঠিন সত্যিটা হলো, দুনিয়া আপনারে পুছে না, পুছে আপনার স্কিলরে

ধরেন একদিন রাস্তায় আপনার প্রিয় একজন মানুষ ( বাবা মা, বান্ধবী বন্ধু, বা বউ, সন্তান ইত্যাদি) গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। রক্ত পড়ছে, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সে। আপনার দিশেহারা অবস্থা। এমন সময় একজন যুবক এগিয়ে আসল। ‘সরে দাঁড়ান, সরে দাঁড়ান’ বলতে বলতে সে গুলি খাওয়া ব্যক্তির কাছে গেল। গুলির স্থানটি দেখে সে তার পকেট থেকে একটি ছোট ছুরি বের করল সেখানেই চিকিৎসা করার জন্য।

আপনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই আপনি কি ডাক্তার?

লোকটি বলল, না।

আপনি বললেন, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি জানেন আপনি কী করছেন। অর্থাৎ গুলি বের করা ইত্যাদি নিয়ে আপনার ট্রেনিং আছে নিশ্চয়ই?

আপনার প্রশ্নে যুবকটি বিব্রত হোল। সে বলল, দেখেন আমি একজন সৎ মানুষ। আমি সর্বদা সত্য কথা বলি। সৎ চিন্তা করি। আমি সময়মত সব কাজ করি। আমি আমার বাবা মায়ের কথা শুনি। আমি অনেক ফেইসবুক ইউজ করি এবং অনেক বই পড়ি। কখনো কাউকে গালি দেই না।

আপনার তখন মহাবিরক্ত অবস্থা। আপনি বললেন, আরে ভাই, এগুলা দিয়া আমি কী করব? আমার বন্ধু পড়ে আছে গুলি খেয়ে। আপনার গুলি বের করা নিয়ে ট্রেনিং আছে কি না বলেন। না থাকলে হাত দিবেন না। খবরদার।

যুবকটি তখন আহত হল আপনার কথায়। সে বলল, ভাই আমি একজন ভালো ও সৎ মানুষ। আমি অনেক বই পড়ি। আমার এতোসব সৎ গুনের কি কোন মূল্য নেই আপনার কাছে? আপনি এতো সংকীর্ন স্বার্থপর চিন্তা কেন করছেন?

আপনার মেজাজ ততক্ষণে ভয়ানক খারাপ। আপনি বললেন, বান্দির পোলা, তুমি সৎ না অসৎ, গার্লফ্রেন্ডের বার্থডে মনে রাখো কি রাখো না, এইসব বালছাল দিয়া আমি কী করব? আমি চাই একজন যে আমার বন্ধুকে বাঁচাতে পারবে। তার রক্ত পড়া বন্ধ করতে পারবে। এই স্কিল যার আছে, এমন লোকই আমি চাই এখন।

এই গল্প তো আপনার কাছে লজিক্যাল বলেই মনে হল?

ঐ জায়গায় যুবক লোকটির গুলি খাওয়া রোগীর চিকিৎসা করার স্কিল আছে কি না সেটাই বিবেচ্য কেবল।

একইভাবে, কথাটি দুনিয়া সম্পর্কে ধ্রুবসত্য।

এই সমাজের অনেক চাওয়া আছে। মানুষেরা অনেক কিছু চায়। আপনাকে তার চাওয়ার জিনিসটাই দিতে হবে। যে জিনিস সে চাইতেছে না, সেটা আপনার থাকলেও এর কোন মূল্য নেই।

সমাজ হচ্ছে গুলি খাওয়া সেই রোগীর মত। আর আপনি আছেন  ছুরি হাতের সেই বিব্রত যুবকের অবস্থানে। যে ভাবতেছে যে আমি এত ভালো কিন্তু আমাকে কেন সমাজ সম্মান করে না। কেন আমার টাকা নেই। কেন আমার গার্লফ্রেন্ড নেই।

দুনিয়া আপনার কাছ থেকে কী নিতে পারবে তাতেই সে ইন্টারেস্টেড, আর কিছুতে নয়। আমি এই লেখা লেখতে পারছি, কিছু মানুষকে সাহায্য করতে পারছি তাদের এমন একটা জিনিস দিয়ে এটা হয়ত তারা অন্যত্র পাচ্ছে না, তাই তারা আমার লেখা পড়ছে, এবং আমার প্রতি তাদের রেসপেক্ট  তৈরি হচ্ছে। এটা আমি না দিতে পারলে কিছুই হত না।

এখন কি তাহলে সততা, দয়া ইত্যাদির কোন মূল্য নেই? অবশ্যই মূল্য আছে। কিন্তু আগে আপনার একটা ইউনিক স্কিল দরকার। বা কিছু ইউনিক স্কিলের সেট। যেগুলার মাধ্যমে আপনি মানুষরে তাদের চাহিদার কিছু জিনিস দিবেন। এটা দুনিয়ার সবচাইতে কঠিন একটি সত্য কথা। আপনার দেয়ার মত কিছু না থাকলে আপনে ভ্যালুলেস।

এইজন্য সমাজে একজন ডাক্তারের দাম একজন রম্য লেখকের চাইতে বেশি। বা পেশাভিত্তিক সম্মানের ভাগ বিভাজন থাকে।  সমাজের চাহিদার উপর নির্ভর করে এটি তৈরি হয়।

এইজন্য আবালচুদার মত খালি কনজিউম করে যাবেন না। এই ইন্টারনেটের দুনিয়ায় একটা থাম্বরুল আছে যে, এক পার্সেন্ট লোক ক্রিয়েট করে জিনিস, ৯% লোক কন্ট্রিবিউট করে, এবং বাকী ৯০% লোক প্যাসিভলি কনজিউম করে যায়।

আপনি যখন ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আসবেন, তখন ১% ক্রিয়েটরদের রাজত্ব দেখবেন। দেখবেন ৯% কন্ট্রিবিউটরদের। কিন্তু বাকি ৯০% প্যাসিব কনজিউমার কেবল সংখ্যায় আছে, ট্রাফিকের একটা সংখ্যা হয়ে, অন্য কোথাও নেই।

আপনি যদি টেবিলে কিছু না দিতে পারেন, দুনিয়ার আপনাকে চুদার টাইম নাই।

এই বিশাল মহাবিশ্বের, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম এক গ্রহে আপনার বাস। সাইন্টিফিক্যালি একটা দূর্ঘটনাই আপনার টিকে থাকা মানুষ হিসেবে। এখানে নিরেট বস্তু পৃথিবীর কাছে আপনার আবেগ, নাইসনেস, গার্লফ্রেন্ডের বার্থডে মনে রাখা ইত্যাদির কোন মূল্যই নেই যদি না আপনি তাকে কিছু দিতে পারেন। তাকে বলতে সমাজকে, সমাজের মানুষকে।

আপনি হয়ত নিজের একটা আরামদায়ক ভ্রান্তিতে আছেন, রাজনৈতিক আদর্শবাদী বিতর্ক আলোচনা, সাহিত্যের তৃতীয় শ্রেণির গার্বেজ, ও ফেইসবুকে নিজেকে পড়ুয়া ও বুদ্ধিমান প্রমাণের জন্য বই বই আলোচনায়। কিন্তু দিনশেষে এগুলার ফুটা পয়সাও দাম নাই যদি আপনার কাজের স্কিল না থাকে। যদি না আপনি দুনিয়াকে ও দুনিয়ার মানুষকে ভ্যালুয়েবল কিছু দিতে পারেন।

নিজেকে বোকা বানাবেন না। নিজেকে বোকা বানানোই সবচাইতে ইজি। এবং অনেক অনেক মানুষ পাবেন সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা নিজেকে বোকা বানাচ্ছে, এবং আপনাকেও বোকা বানানোর চেষ্টা করছে তাদের ভ্রান্ত মত ও আদর্শিক কথাবার্তা দিয়ে।

নিজে যা চান তার জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলুন। এটাই সহজ কথা। এর জন্য দরকার হয় পরিশ্রম, কাজ ও দায়িত্ব নেয়া।

আপনার ভেতরের ট্যালেন্ট, ভেতরের স্কিল ইত্যাদি দেখার আগ্রহ কারো নেই। ভিতরে কিছু থাকলে তা ব্যবহার করেন ও দেখান স্কিল এবং কাজ। অন্যথায় ঐ ভেতরের ট্যালেন্ট আপনার নিজের তৈরি করা এক ভ্রান্তি, যা আপনাকে টেনে রেখেছে অতল গহ্বরে।

এবং নিজেকে ইম্প্রুভ করেন। নিজের ট্যালেন্ট এবং স্কিলকে। এটাকে কেউ বলতে পারে সেলফ ইম্প্রুভমেন্ট। কেউ বলতে পারে, নিজের ইউনিকনেস বিসর্জন দিবেন না সেলফ ইম্প্রুভ করে। কিন্তু এইসব কথার সময়ে মনে রাখবেন, আপনে আসলে কী করছেন ও কী আসলে ম্যাটার করে। আপনি নিজের স্কিল বাড়াচ্ছেন, শিখছেন, ইউনিক স্কিল তৈরি করছেন যাতে সমাজকে এমন কিছু দিতে পারেন যা সে চাইতেছে। এটাই সম্মান, ক্রেডিভিলিটি এবং ওয়েলথ অর্জনের প্রথম কথা।