‘হসপিটাল উপন্যাসের গুরুত্ব এই কারণে যে, এটিতে মানসিক ভাবে অসুস্থ একজন মানুষের দিক থেকে দেখা হয়েছে তার এবং অন্যদের আচার আচরণ তথা জীবন। উপন্যাসে ঘটনা খুবই অল্প। এটিকে সাইকোলজিক্যাল উপন্যাস বলা যায়।
মানুষের ব্রেইন কীভাবে কাজ করে বিজ্ঞান এখনো তা জানে না। যাদের ব্রেইন অন্যদের মত কাজ করে না তারা হয় সমাজে আনফিট, এবং আমরা তাদের মানসিকভাবে অসুস্থ বলি। তাদের হসপিটালে বা এই ধরনের কোন কেয়ারে রাখা হয়।
কিন্তু সে আসলে কীভাবে দেখে তার চারপাশ?
কমেডির স্টাইলে ওয়ান ফ্লিউ অভার দি কাক্কো’স নেস্ট ফিল্মে দেখা গিয়েছিল কিছু, জ্যাক নিকলসনের অভিনয়ে। এর ইন্ডিয়ান ভার্সন সালমান খান অভিনীত কিউ কি। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে এরকম হয়েছে কি?
সুকুমার রায়ের পাগলা জগাই ছড়াটির কথা মনে পড়ে। পাগলা জগাইয়ের কার্যক্রম দেখিয়ে, তার দিক থেকে দেখা দুনিয়া আমাদের দেখিয়েছিলেন বড় লেখক সুকুমার রায়। হাসির ছড়া হলেও এর বাস্তবতা কখনো বিমর্ষ করে তোলার ক্ষমতা রাখে।
আমি একদিন সেলুনে চুল কাটতে গিয়ে একজনের গল্প শুনেছিলাম। শাহজালালের দরগার একজন মানসিকভাবে অসুস্থ লোক বসে থাকে, এবং কিছুক্ষণ পর পর ডায়রিতে কিছু লিখে রাখে। এটি দেখে ভদ্রলোকের আগ্রহ হলো। তিনি খাতির জমিয়ে দেখতে চাইলেন সে আসলে কী লেখে।
তিনি দেখেছিলেন খাতা জুড়ে নানা ধরনের আঁকিবুঁকি। কিন্তু অসুস্থ লোকটার মতে সে মারাত্মক সিরিয়াস কিছু লিখে রাখছে।
এই গল্প শুনে মনে হয়েছিল যে, এই লোকের খাতায় লেখা জিনিসপাতি তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সে অন্য একটা দিক থেকে এগুলি লিখে যাচ্ছে। অন্যদের কাছে গুরুত্ব নেই কারণ অন্যরা আরেকদিক থেকে দেখছে। যেমন এবস্ট্র্যাক্ট আর্টের ক্ষেত্রে হয়। এই ধরনের আর্ট শিল্পীর কাছে, বা যারা বুঝেন তাদের কাছে বিরাট অর্থবহ হলেও সাধারণ লোকের কাছে মিনিংলেস।
গঠনের দিক থেকে হসপিটাল উপন্যাসে আন রিলায়েবল ন্যারেটরের উপর নির্ভর করা হয়েছে। অর্থাৎ, যিনি কাহিনীটি বর্ণনা করে যাচ্ছেন তার মানসিক সুস্থতা প্রশ্নের মুখে পড়ে, তখন তার বলা কাহিনীও আমাদের সেই অনুসারেই দেখতে হবে। এই জায়গায় রাসেল ক্রো অভিনীত দি বিউটিফুল মাইন্ড ফিল্মের কথা বলা যায়। যেখানে মূল চরিত্র জন ন্যাশের প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া থাকে, হ্যালোসিনেশন হয়, এবং তখন তিনি হয়ে যান আন রিলায়েবল ন্যারেটর। আরেক উদাহরণ আকিরা কুরোসাওয়ার রাশোমন, যেখানে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির দেয়া ভিন্ন বক্তব্য সবাইকেই আনরিলায়েবল ন্যারেটরে ফেলে দেয়।
হসপিটাল উপন্যাসে মূল চরিত্রের মানসিক অসুস্থতা বিবেচনায় নিলে বর্ননার ভঙ্গি এবং চরিত্রগুলির গভীরতা না থাকা মেনে নেয়া যায়। অন্যথায় এদিক থেকে এই উপন্যাসটি দূর্বল হয় অন্যান্য চরিত্রের অগভীরতায়।
হসপিটাল উপন্যাসের মূল ভিত্তিভূমি তার কভার পেইজের ছবি দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কাহিনীর শুরু এই ছবি দিয়ে, আর শেষও। কানেক্টেড কিছু গাছ পাশাপাশি, আর একটা গাছ তাদের থেকে একটু দূরে, আলাদা। এই গাছ ঐ সমস্ত মানুষের প্রতীক মনে হলো, যারা আলাদা ভাবে দুনিয়ারে দেখার দরুণ মানসিক ভাবে অসুস্থ বলে পরিচিত হন, আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। হসপিটালে এইসব মানুষের খন্ড খন্ড গল্পও আছে, মূল চরিত্রের কাহিনীর সাথে সাথে। লেখাটি তাই আমাদের ঐসব মানুষদের বুঝতে সাহায্য করতে পারে, এবং সহমর্মী করে তুলতে পারে। ভালো ফিকশনের কাজের মধ্যে এটাও তো পড়ে, না কি?
এই কারণেই উপন্যাসটি গুরুত্বপূর্ণ।
পড়ুন, ও পড়ান অন্যদের।
বই, হসপিটাল
লেখক, সানিয়া রুশদী
প্রকাশক, বহিঃপ্রকাশ, কেনার লিংক।
সংযুক্তিঃ
I think something that people don’t appreciate is how little we know about the brain. If you think about brain diseases, like Alzheimer’s and Parkinson’s and epilepsy, basically none of these can be cured, and the treatments — if they do exist — are very partial and have a lot of side effects.
Similarly, we don’t actually have theories — detailed knowledge — enough to make predictive, interesting models, for example, of how we form emotions, of how we make decisions.
I sometimes half-jokingly say we should write a book about the brain called Ignorance: What We Don’t Know about the Brain. I’m not sure how many copies we’d sell, though.
Ed Boyden on Minding your Brain (Ep. 64) – Conversations with Tyler