ভালো সিদ্ধান্ত নিতে হলে কী আপনার জানার আয়ত্ত্বের মধ্যে, আর কী আপনি জানতে পারবেন না, এই দুই জিনিস সমান গুরুত্বপূর্ণ।
কোন কাজে দক্ষতার ভূমিকা আছে কি না তা বুঝার একটা সহজ ও দ্রুত উপায় আছে। সেটা হলো, জিজ্ঞেস করা যে ইচ্ছাকৃতভাবে আপনি ঐ কাজে হারতে পারেন কি না। যদি উত্তর হ্যা হয় তাহলে এই কাজে দক্ষতার ভূমিকাই প্রধান। যেসব জিনিসে ভাগ্যের ভূমিকা প্রধান যেমন রোলেট বা লটারী, এগুলিতে কেউ ইচ্ছা করে হারতে পারে না।
মাউবাসিনের মতে ভাগ্যের তিনটা মূল জিনিস আছে,
১। এটি ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ক্রিয়া করে।
২। এটি পজেটিভ বা নেগেটিভ হতে পারে।
৩। অন্য কিছু হতে পারত এই আশা করাটা যৌক্তিক হয়।
এই তিন মূল বৈশিষ্ট্য থাকে ভাগ্যের।
আমরা জীবনে যা কিছু এক্সপেরিয়েন্স করি তার বেশিরভাগই ভাগ্য এবং দক্ষতার সম্মিলিত প্রভাবে ঘটে থাকে।
গ্রেট সাকসেসের জন্য ভাগ্য এবং দক্ষতা দুইটারই প্রয়োজন। যেকোন একটার উপর ভর করে আপনি সেখানে যেতে পারবেন না।
যেসব জিনিসে ভাগ্যের ভূমিকা কম সেসবের ক্ষেত্রে সঠিক পদ্বতি সব সময় ঠিক ফল দেয়। কিন্তু যেসব জিনিসে ভাগ্যের ভূমিকা বেশি সেসবের ক্ষেত্রে সঠিক পদ্বতি ঠিক ফল দেয় কিন্তু তা একটা সময়ের ব্যবধানে।
মাউবাসিনের মতে সেরা ইনভেস্টমেন্ট হলো,
১। আপনাকে এমন একটা জিনিস খুঁজে বের করতে হবে যেটা মার্কেট বিশ্বাস করে না। এবং আপনার এই বিশ্বাসে আপনাকে সঠিক হতে হবে।
২। আপনার মনস্তাত্ত্বিক বায়াসের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে।
৩। আপনার সিদ্ধান্তে কোন অর্গানাইজেশনাল ইস্যুর প্রভাব থাকবে না।
আপনি যদি এমন কোন জিনিস নিয়ে কাজ করেন যেখানে ভাগ্যের ভূমিকা বেশি, যেমন স্টক ইনভেস্টিং, সেক্ষেত্রে আপনাকে ভালো উপায়ের দিকেই মনযোগ দিতে হবে, শর্ট টার্মে লাভ না ক্ষতি হলো তার উপর নয়।
গ্রেট সাকসেস তথা বিরাট সফলতার জন্য আপনার ভালো স্কিল, এবং প্রচুর লাকের সাহায্য দরকার। বিল গেটসকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি লাকের ‘প্রচুর’ প্রভাবের কথা স্বীকার করেন। তার কথায়, ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জন্য সফটওয়ার কোম্পানির করার ব্যবসার জন্য আমাদের টাইমিংটা ছিল আমাদের সাকসেসের জন্য প্রয়োজনীয়। আমি বলব না এই টাইমিং এর পুরোটাই লাকের অবদান, কিন্তু প্রচুর লাকের অবদান ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না।
গ্রেট সাকসেসে লাকের প্রচুর যে ভূমিকা আছে এটা আমরা আঁচ করতে পারি। অনেকে বলেন বা বিশ্বাস করেন বেশি পরিশ্রম করলে বেশি সফলতা আসে। কিন্তু এটি ভুয়া কথা। কারণ আপনি বেশি পরিশ্রম করে নিজের স্কিল বাড়াতে পারেন, কিন্তু লাক বাড়াতে পারেন না। সেটা অন্য ডোমেইনের জিনিস।
আপনাকে বুঝতে হবে কোন সাসকেসে বা ফেইলারে লাক এবং স্কিলের ভূমিকা কী। এটা বুঝতে পারলে আপনি অন্যদের চাইতে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। কারণ মানুষ এই দুই জিনিসের ভূমিকা নিয়ে আলাদাভাবে ভাবে না, এবং গুরুত্ব দেয় না।
মাইকেল মাওবাসিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি লাইন লিখেছেন তার বইতে,
যেগুলা গুরুত্বপূর্ণ তার সব পরিমাপ করা যায় না, আবার যেগুলা পরিমাপ করা যায় তার সব গুরুত্বপূর্ণ না।
এই লাইন বুঝায়, লাইফে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যেহেতু অনিশ্চয়তার উপর নির্ভর করে তাই কখনো মেজার করা যাবে না। এটা মেনে নিতে হবে আগে থেকেই। মেনে নিলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা।
অন্যদিকে প্রচুর জিনিস পরিমাপ করা যায়, যেগুলা আসলে অগুরুত্বপূর্ণ। এগুলাকে গুরুত্ব দিয়ে মানুষেরা অনিশ্চয়তার ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চান। বিশেষত তারা যারা প্রথম শর্ত, অর্থাৎ অনেক জিনিস পরিমাপ করা যাবে না – এটা মানেন না। ফলে তারা একটা ভুল মডেলে চিন্তা করেন ও ভুল ব্যাখ্যা দেন। যার ফলাফল ভুল সিদ্ধান্ত।
আমাদের মানুষের অনেক বায়াস আছে। এগুলা সবার মধ্যেই আছে। এর একটা হলো সফলতাকে গুরুত্ব দিয়ে সফল ব্যক্তির তরিকাকে রাইট মনে করা। সেখানে লাকের ভূমিকা ভুলে যায়। এটা নিজের ক্ষেত্রেও হয় স্বাভাবিক ভাবেই।
সারভাইভরশিপ বায়াস যাকে বলে।
যতই আপনি লাকের ভূমিকা, ও স্কিলের ভূমিকা নিয়ে পড়েন ও বুঝেন না কেন, কোন কাজে সফল হলে আপনি লাকের ভূমিকাটা ভুলে যাবেন। এর ফলাফল তীব্র হতে পারে। উদাহরণ,
ধরা যাক আপনি একধরনের এনালাইসিস করে ইনভেস্ট করে প্রচুর লাভ করলেন স্টক মার্কেটে।
এখানে স্কিলের সাথে লাকের ভূমিকা ছিল। কিন্তু সফল হবার পর আপনি লাকের ভূমিকা গ্রাহ্য করলেন না।
পরে আবার একই তরিকায় আরো বেশি ইনভেস্ট করলেন। কিন্তু এবার আর লাক ফেভার করল না। আপনার লস হলো।
আপনি দেখবেন প্রচুর মানুষের মধ্যে একটা খারাপ প্রবণতা, তারা নিজেদের সফলতাকে পুরোটাই নিজেদের স্কিলের অবদান বলে প্রচার করে। তাদের নৈতিক মান উচ্চ, তাদের পরিশ্রম বেশি, প্রতিভা বেশি। এগুলার একটা পরোক্ষ মেসেজ হলো, আপনি সফলতা পাচ্ছেন না মানে আপনার তা নেই। আপনি তার মত করলে আপনারও সফলতা আসবে।
কিন্তু এই অবস্থান ভুল।
এরকম হলে সফল ইনভেস্টরদের প্রসেস অনুসরণ করেই অন্যরা সফল হয়ে যেত। সফল মানুষের বায়োগ্রাফি পড়েই মানুষ সফল হয়ে যেত।
মাওবাসিন এইসব মানুষের প্রবণতাকে একটি গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন,
স্পেনে প্রায় দুই শতক আগে বিরাট ক্রিসমাস লটারী হতো। প্রায় সকল স্পেনিয়ার্ড এতে অংশ নিত। টাকার অংকে এটি ছিল দুনিয়ার সবচাইতে বড় লটারী। ১৯৭০ এর মাঝামাঝিতে এক লোক একটা লটারী টিকেট সংগ্রহ করল শেষ ডিজিট ৪৮। স্বাভাবিক ভাবেই সে টিকেট পেয়েছে, কিনেছে, ও লটারীর ভাগ্যে জিতে গেছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, কিভাবে সে জিতল, বা ঐ নাম্বার সংগ্রহ করতে আগ্রহী হলো? লোকটি উত্তর দিল, আমি পর পর সাত রাতে স্বপ্ন দেখি ৭। আর সাত সাতে হয় ৪৮। তাই এই নাম্বার কিনেছি!”
মানুষদের সফল হবার পর গল্প বানানোটা এই লোকের মত। লজিক মিললে মিলুক নাইলে নাই, গল্প তার বলতে হবে।
যেকোন কিছুতে লাক ও স্কিলের ভূমিকা থাকে, এটার পরেও কিছু জটিল কথা থাকে। লাক এমন জিনিস যা আপনার স্কিল বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এটা নিয়ে আগে লিখেছিলাম, যাকে বলে একিউমিলেটিভ এডভান্টেজ। আপনাকে অন্যদের চাইতে অল্প এগিয়ে দিবে, ফলশ্রুতিতে আপনি বেশি সুবিধা পেয়ে আরো বেড়ে উঠবেন আর দিন শেষে দেখা যাবে স্কিলে আপনি বহুদুর এগিয়ে গেছেন। এভাবে পাওয়ার ল কাজ করা শুরু করে।
এইজন্য আমি প্রতিভাবে, স্কিলকে, সাইন্টিফিক বেসিস মতেই সোশিও-ইকোনমিক ক্লাসের উপর নির্ভরশীল বলি। সেই হিসাবে লাকের উপর, কারণ কোন সোশিও ইকোনমিক ক্লাসে আপনার জন্ম হবে তা পিওরলি লাক, ওয়ারেন বাফেট যাকে বলেন ওভারিয়ান লটারী।