মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » ৫০০ শব্দেঃ কীভাবে ‘লার্নিং’ শেখা যায়?

৫০০ শব্দেঃ কীভাবে ‘লার্নিং’ শেখা যায়?

ভূমিকাঃ

এই ৫০০ ওয়ার্ডের সিরিজ কেন, যেখানে আমার সাইটের পাঠকেরা বড় লেখাই বেশি লাইক করেন?

উত্তর হলো, আমি মিনিমালিস্ট বা এসেনশিয়ালিজমে বিশ্বাস করি। অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় জিনিস বিয়োগ করা। ইন্টারনেটে অধিকাংশ লেখাতেই অপ্রয়োজনীয় জিনিস যোগ করে লম্বা করা হয়। এতে ক্ষতি দুইটা। এক যিনি পড়ছেন তার মূল্যবান সময় নষ্ট। যিনি লিখছেন তারো সময় নষ্ট।

সুতরাং, দুই পক্ষেরই সময় বাঁচানো যায় টু দ্য পয়েন্টে কথা বলে।

আর সবচাইতে বড় বিষয়, এই লেখাগুলি আমার লিটারারি ওয়ার্ক না। লিটারারি ওয়ার্কের উদ্দেশ্য থাকে আর্টিস্টিক কিছু তৈরি করা। সেখানে ভাষার ব্যঞ্জনা ও নানা আর্টিস্টক দিক বেশি গুরুত্ব পায়।

কিন্তু সাইটের লেখাগুলির প্রধান উদ্দেশ্য তা নয়, (যদিও একজন প্রকৃত আর্টিস্টের সকল কর্মেই আর্টের ছাপ থাকে বা আর্ট হইতে চায়, তা এক ভিন্ন কথা বা ধরেন এক স্বর্গীয় সীমাবদ্বতা)। এখানে আমার উদ্দেশ্য পাঠকের সাথে দ্রুত কমিউনিকেট করা ও তার কাজে লাগতে পারে এমন কিছু দিয়ে হেল্প করা।

 

কীভাবে লার্নিংটা শিখবেনঃ

প্রায় মানুষের এই সমস্যা হয়। কীভাবে শিখতে হয় এটা তারা জানেন না। উচিত ছিল স্কুলের এটা শেখানো। কিন্তু স্কুল অনেক পেছনে। আধুনিক নিউরোসাইন্স ও বিজ্ঞানের থেকে শত হাত দূরে। স্কুল এখন যেন হয়ে উঠেছে এক কুসংস্কারের নাম।

দুনিয়াতে প্রতিনিয়ত আমাদের শিখতে হয় নানা স্কিল। কীভাবে বিজনেস ম্যানেজ করতে হয়, ফাইনানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট, কীভাবে নিজের যত্ন নিতে হয় মানসিক ও শারিরীক, কীভাবে ক্রিটিক্যালি ভাবতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। সুতরাং, যখন আমরা কীভাবে শিখতে হয় এই জিনিসই বুঝি না, তখন এসব স্কিল শেখা আমাদের জন্য অতি দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়।

ব্রেইনের দুইটা অবস্থা আসে শেখার। একটা হলো ফোকাসড মুড। যেমন এখন আপনি ফোকাসড মুডে এই লেখা পড়ছেন ও এখান থেকে শিখছেন।

আরেকটা মুড আছে ডিফিউজড মুড। তখন আপনি ফোকাসড থাকেন না। কিন্তু ব্রেইন স্বয়ংক্রিয় ভাবেই কানেকশন তৈরি করে। এজন্য শাওয়ারে গিয়ে রিল্যাক্স হতেই দেখা যায় দারুণ একটি আইডিয়া চলে এসেছে। এবং এইজন্যই অনেক অনেক ক্রিয়েটিভ মানুষ ঘুমের মধ্যে আইডিয়া পান। জার্মান কেমিস্ট কেকুলের বিখ্যাত স্বপ্নটির কথা মনে করা যায়। তিনি স্বপ্নে দেখলেন অণুগুলা নাচছে। পরে স্বপ্ন দেখেন নাচতে নাচতে তারা সাপের আকৃতি ধারণ করেছে ও সেই সাপ তার লেজ খেয়ে ফেলছে। ঘুম থেকে উঠে কেকুল বেনজিনের রাসায়নিক গঠন আঁকেন।

ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ লার্নিং এর জন্য। নিউরোসাইন্সের সাম্প্রতিক গবেষণা বলে, মানুষের সুখের জন্য এক নাম্বার ফ্যাক্টর হলো ভালো ঘুম।

কোন মাধ্যম থেকে আপনি শিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বা কোনটি আপনার জন্য সেরা হবে এ নিয়ে একটা টেস্ট আছে, যেটাকে বলে ভারক টেস্ট। এই ফ্রি টেস্টে অংশ নিয়ে আপনি আপনার শেখার ধরণ সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।

তবে আধুনিক অনেক নিউরোবিজ্ঞানিরা শেখার ধরণকে বেশি গুরুত্ব দিতে চান না। তাদের মতে এটা নিউরোমিথ। এবং এর একটি অসুবিধা আছে।

সেটা হলো, আপনি দেখলেন পড়ে আপনি ভালো শিখতে পারেন কিন্তু ভিডিও থেকে ভালো শিখতে পারেন না।

এ থেকে আপনার ধারণা হতে পারে, ভিডিও থেকে না শেখার। এই ফিক্সড মাইন্ডসেট আপনার লার্নিং এর ক্ষতি করতে পারে।

তাই লার্নিং এর ধরণ, অর্থাৎ ভিডিও থেকে, অডিও থেকে, বই পড়ে না ব্লগ পড়ে, না সরাসরি কথা বলে, না চ্যাট করে – অর্থাৎ কীভাবে শিখছেন তাকে অত গুরুত্ব না দিয়ে শেখাটাকেই প্রাধান্য দিন।

মূল জিনিসটা মাথায় রাখুন। আপনাকে ফোকাসড মুডে গিয়ে নানা ভাবে টপিকটাকে এক্সপেরিয়েন্স করতে হবে। ধরা যাক, আপনি ভ্যালু ইনভেস্টিং নিয়ে শিখব। ফোকাসড মুডে যেসব ম্যাটেরিয়াল পাওয়া যায়, যেমন বই, ব্লগ, ভিডিও, পডকাস্ট থেকে আমি শিখলাম। ফোকাসড মুডে আমি অন্যদের সাথে আলোচনা করলাম। আবার সেটা নোট আকারে লিখলামও। এতে করে বার বার আমি জিনিসটাকে এক্সপেরিয়েন্স করলাম।

এর মাধ্যমে আমি ব্রেইনকে ডিফিউজড মুডে কাজ করার অনেক উপাদান দিয়ে দিলাম। তখন ব্রেইন ডিফিউজড মুডে নানা কানেকশন তৈরি করবে।

শেখার ক্ষেত্রে একটা বাঁধা হয়ে উঠে আলস্য। আলস্যের কারণে শুরু করতে ইচ্ছা করে না। বৃথা সময়ক্ষয় হয়। এর থেকে বের হবার কিছু টেকনিক আছে।

১। পমোডোরো টেকনিক।

এর মূল কথা হলো যে কাজ করতে চান তা ২৫ মিনিট করুন। এরপর ৫ মিনিট ব্রেক নিন। আবার ২৫ মিনিট করুন। আবার ৫ মিনিট করুন। এভাবে চার বার করার পর লম্বা, ১৫-৩০ মিনিটের ব্রেক নিতে পারেন।

 

২। ভাগ ভাগ করা।

পুরো প্রজেক্টটাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে একেক ভাগ নিয়ে কাজ করতে শুরু করুন।

 

৩। সিস্টেম বা প্রসেসকে গুরুত্ব দিন।

আপনি সেরা লেখক হতে গেলে, প্রতিদিনই লেখক হবার চেষ্টা করতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। এই প্রতিদিনের চেষ্টাকে ভালোবাসুন, তাহলে আউটকাম এমনিতেই ভালো হবে। প্রায় যেকোন জিনিসের ক্ষেত্রেই এটা সত্য। শুধু গোল সামনে রেখে আগালে মানুষ হতাশ হয়ে পড়বে।

 

বি দ্রঃ এই লেখাটি হয়েছে ৭০৩ শব্দের। ৫০০ শব্দে হুবহু বান্ধা তো যাবে না, যেহেতু এটা লেখা। কিন্তু নাম ৫০০ শব্দ সিরিজই থাকলো। চেষ্টা থাকবে এর মধ্যে বান্ধার। গড়ে ৫০০ থেকে ৮০০ শব্দের মধ্যে হবে।

 

2 thoughts on “৫০০ শব্দেঃ কীভাবে ‘লার্নিং’ শেখা যায়?”

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং