কেন বুদ্ধিজীবীর তালিকা বাজে ব্যাপার

বুদ্ধিজীবীর যে লিস্ট পপুলার হইল, এটা সম্পর্কে অনেকে বলতে পারেন, এমন লিস্ট একজন করতেই পারে, এখানে আপত্তি থাকার কিছু নাই। 

ব্যক্তির অধিকারের দিক থেকে এই কথা ঠিক আছে। যে কোন কিছুর তালিকা যে কেউ করতে পারে। 

কিন্তু যেহেতু এইটা পপুলার হইল, এবং ফেসবুক্সফিয়ারে বিনোদন ও আলোচনা তৈরি করতে পারল, তাই এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট খেয়াল করতে হবে। 

 বলা হইতেছে বুদ্ধিজীবিতা কেন একাডেমীতে থাকবে, কেন স্যার বা অধ্যাপকেরাই কেবল বুদ্ধিজীবী হইবেন। আমরাও হইতে পারি। ফলে এটা একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধী ব্যাপার। 

এটাই মূল আর্গুমেন্ট। 

কিন্তু ভুয়া ও নিম্নস্তরের চালাকি। 

কারণ “বুদ্ধিজীবী” নিজেই এক প্রতিষ্ঠান। 

ইন্টারনেটের মত ডিসেন্ট্রালাইজড মাধ্যমের কারণে, এখন এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব কমে গেছে এমনিতেই। এখন একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তার মত দিতে পারেন, বিশ্লেষণ করতে পারেন, অন্যদের প্রভাবিত করতে পারেন। তার বুদ্ধিজীবী আর হওয়া লাগে না। 

যারা এই ইন্টারনেটের সময়কালেও পুরানা বুদ্ধিজীবীর আধিপত্য বজায় রাখতে চায়, তারাই এই নব্য বুদ্ধিজীবী হইতে চায়। 

এবং আয়রনি হইল, এটারে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হিসেবে প্রচার করে। 

কিন্তু এখানে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা হবে “বুদ্ধিজীবী” প্রতিষ্ঠানেরই বিরোধিতা, একজনের বুদ্ধিজীবী হবার দরকারই নাই। মিডিয়া তার কাছে আছে। ইউটিউব আছে নিজেরে ব্রডকাস্ট করতে। 

মানুষরে কীভাবে নীচায় রেখে, একটা আলাদা জাতে নিজেদের উন্নীত করা যায়, সেই চেষ্টার এক প্রকাশ এই বুদ্ধিজীবী বুদ্ধিজীবী গেইম। 

ধরা যাক, একজন বুদ্ধিজীবীর এক তালিকা করল। স্বভাবতই সে কিছু লোকরে রাখবে, কিছু বাদ দিবে। এখন এই তালিকা সবাই এক বাক্যে মেনে নিলে কী হবে ভাবেন? 

ওই তালিকার লোকেরাই বুদ্ধিজীবী হবেন। 

এবং অন্যান্যদের এই সোশ্যাল স্ট্যাটাস ( সমাজের কাল্পনিক হায়ারার্কিতে) এ যাইতে কী করতে হবে? 

তালিকা যে করছে তার বা তার গ্রুপের মর্জিমত নিজেরে তৈরি করতে হবে। তখন সে আপনারে জায়গা দিতে পারে বুদ্ধিজীবীর তালিকায়। 

ইন্টারনেট পূর্ব  শাহবাগের পলিটিক্স। 

তরুণ হনু বুদ্ধিজীবীরা তালিকা যে করছে তার বা তার গ্রুপের লেখা পড়বে। তাদের বড় বুদ্ধিজীবী হিসাবে মানবে। 

তারা পেরিফেরিতে অবস্থান করবে। তালিকাকার ও তার গ্রুপের লোকদের মাউথ পিস হিসাবে বা এমপ্লিফায়ার হিসাবে কাজ করবে। এবং আশা রাখবে একসময় বুদ্ধিজীবী হয়ে যাবে। 

মূলত এদের লক্ষ্য করেই এসব তালিকা। কারণ এরাই আগ্রহী পাঠক, উল্লিখিত তালিকাকারদের কাছে ব্যবহৃত হবার শক্তি। 

এবং যদি এটা হয়, ও চলতে থাকে তাহলে নানা মত, যুক্তি ও পথ আলোচনায় যে ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তালিকাকাররা নিয়ন্ত্রণ করবে তথাকথিত বুদ্ধিজীবিতা। 

তবে, স্বাভাবিক ভাবেই এটা হয় নি ও হবে না। কারণ এসব তালিকাকে এক বাক্যে কেউ মেনে নেন নি। 

এইসব তালিকা যেহেতু পুরানো বুদ্ধিজীবী প্রতিষ্ঠানের বর্ধিত সংস্করণ তাই, এইসব তালিকা করা এপ্রোচের/স্যুডো এলিটিজমের বিরোধীতা করতে হবে। 

বর্তমান সময়ে এতদঞ্চলের ঐ পুরানো ‘বুদ্ধিজীবী’ একটা মৃত টার্ম।