আহমেদুর রশীদের মনে হল যা ঘটছে তা অস্বাভাবিক এবং ভয়ংকর। এরকম হওয়ার কথা ছিল না কখনোই কিন্তু হয়ে যাচ্ছে। ঠিক মধ্যরাতে তিনি যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখনি এই ধরনের ঘটনার জন্য তিনি কখনোই প্রস্তুত ছিলেন না। প্রস্তুত থাকার কথাও না কারণ এরকম ঘটনার জন্য কেউ প্রস্তুত থাকে না বিশেষ করে সে লোকটি যদি হয় আহমেদুর রশীদের মত নিরীহ।
আহমেদুর রশীদ ভয়ার্ত কন্ঠে নির্বিকারভাবে বসে থাকা দুজন বিশেষ বাহিনীর সদস্যের দিকে তাকিয়ে বললেন, দয়া করে আমাকে দু মিনিট সময় দিন। আমি বাথরুম থেকে কাপড় পালটিয়ে আসবো।
বসে থাকা দুজন লোকের মধ্যে একজন যান্ত্রিকভাবে বলল, অসম্ভব! আপনি কোথাও যেতে পারবেন না। দুই মিনিট! বলেন কি আপনি! আপনাকে দুই সেকেন্ডের জন্য ও ছাড়া হচ্ছে না।
বসে থাকা অপর ভদ্রলোক তার স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, অবশ্যই না। অবশ্যই না।
আহমেদুর রশীদের মুখ আগেই রক্তশূন্য হয়ে গিয়েছিল। যখন তিনি প্রথম কলিংবেলের শব্দ শোনে দরজা খুলেন এবং খুলে দেখতে পান দুজন বিশেষ বাহিনীর সদস্য তাকে ধরে নিতে এসেছে।
আহমেদুর রশীদ অস্বস্থি, ভয় এবং ভয়ংকর দুশ্চিন্তায় কাবু হয়ে গেছেন। তিনি বুঝতে পারছেন না ঠিক কি কারণে তাকে ধরে নেয়া হচ্ছে। তিনি একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিন্তু আমাকে কি অপরাধে আপনারা গ্রেফতার করছেন?
বিশেষ বাহিনীর একজন সদস্য নির্বিকার ও বিরক্তমুখে পালটা জিজ্ঞেস করেছিল, আপনাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে কে বলল?
সে তার পাশে বসা বিশেষ বাহিনীর অন্য সদস্যের দিকে তাকাল। তাদের দুজনের মুখে এক ধরনের কৌতুক ফুটে উঠেছিল।
আহমেদুর রশীদ তখন অবাক হয়ে আবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, গ্রেফতার করা হচ্ছে না? তাহলে ধরে নিবেন কেন?
তখন একজন সদস্য হাই তোলার মত ভঙ্গি করে উত্তর দিয়েছিল, ক্রসফায়ার। আপনাকে আজ মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। ঠুশ করে গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হবে। ক’দিন পরে তা আবার ভুশ করে ভেসে উঠবে।
ভয়ে আহমেদুর রশীদের গলা শুকিয়ে গিয়েছিল তখন। তখন থেকেই তার শরীর কাঁপছে। কিন্তু বিশেষ বাহিনীর দুজন সদস্য নির্বিকার ভাবে বসে আছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে।
ঘড়ির কাটার চলার শব্দ কানে আসছে অন্ধকার রাত্রির নিরবতা ভেদ করে। একটি ত্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও পাতলা সাদা টি শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছেন মধ্যবয়স্ক আহমেদুর রশীদ যিনি নিজেও জানেন না ঠিক কোন অপরাধের কারণে আজ বিশেষ বাহিনীর হাতে ক্রসফায়ারে মারা যাবেন। তার মৃত্যু সমাজের কোন মাথাব্যথার কারণ হবে না তিনি বুঝতে পারছেন কারণ যদিও তিনি বেশ বিত্তশালী এবং সুখী মানুষ তথাপি দেশের রাজনৈতিক বা ব্যবসায়ীক পরিমন্ডলের খুব ক্ষমতাবান কেউ না। আর দশটা ক্রসফায়ারের মতই তার মৃত্যুও হয়ত জায়গা করে নেবে খবরের কাগজে গুরুত্বহীনভাবে কিন্তু তাতে কারো কিছুই আসে যায় না। তার নিজের ও আসবে যাবে না। কারণ মৃতব্যক্তি দুনিয়াবি ব্যাপারগুলোর উর্ধ্বে উঠে যায় বলে শোনেছেন তিনি।
আহমেদুর রশীদ এসব চিন্তা করছিলেন বিধ্বস্ত মন নিয়ে।
দুজন সদস্য উঠে দাঁড়িয়েছে। তাদের একজন গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, চলুন স্যার।
আহমেদুর রশীদের ঘোর ভাঙল।
বিশেষ বাহিনীর সদস্য বলতে লাগল, স্যার আপনি আগে আগে যাবেন। আমরা যাবো পিছে পিছে। সামান্য একটু দূরত্ব রেখে। সুবিধাজনক জায়গা পেলে ওখানেই শ্যুট করে ফেলব। তবে চিন্তা করবেন না স্যার। আপনাকে খুব বেশি একটা হাটতে হবে না। কিন্তু দয়া করে পিছনে তাকাবেন না। তাহলে গুলি গিয়ে লাগবে মুখে। নষ্ট হবে মুখশ্রী।
কাঁপা কাঁপা পায়ে আহমেদুর রশীদ হেটে যাচ্ছেন। তার কানদুটি খাঁড়া। পিছন থেকে পায়ের শব্দ শোনে শোনে তিনি ধীরভাবে পা চালাচ্ছেন আর প্রতি পদক্ষেপে অনুভব করছেন সীমাহীন ভয় ও যন্ত্রণা। যেকোন সময় গুলি আসতে পারে পিছন থেকে।
ছবিঋণঃ “ClaraLieuFineArt, www.etsy.com “