আরেক লেখার পুরানা উদাহরণে ফিরে যাই। ধরা যাক, আপনার মা এক কাপ চা বানাইলেন। স্বাদে গন্ধে এটা ৪০ টাকা দামের চায়ের সমান। আমি রেস্টুরেন্ট থেকে আপনারে ১০০ টাকা দামের চা আইনা দিলাম। এক্ষেত্রে কোন চায়ের কাপের ভ্যালু বেশি হবে আপনার কাছে?
ওই লেখায় বলা ছিল, আপনার মায়ের হাতের চায়ের কাপের ভ্যালুই বেশি হবে, যদিও বাজারমূল্যে কম। ভ্যালু বেশি হবে আপনার কাছে কারণ এটা আপনার মাতাশ্রী বানাইছেন।
র্যাশনাল বিচারে বাজারের চায়ের মান বেশি হইলেও আপনার কাছে আপনার মায়ের হাতের চায়ের দাম বেশি হয়।
এইটা দিয়া আমরা ভ্যালু বুঝার চেষ্টা করছিলাম, যে ভ্যালু ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেমন প্রিয় ডিরেক্টর ডেভিড লিঞ্চ সাব বলেছিলেন, ‘আমার গরু সুন্দর না, কিন্তু আমার কাছে সুন্দর’। এইখানে প্রথম সুন্দর না দিয়া লিঞ্চ বুঝাইছেন দুনিয়ার কাছে হয়ত সুন্দর না, এবং পরে নিজের কাছে সুন্দর, এইটা দিয়া বুঝাইছেন তোমাদের কাছে সুন্দর না অসুন্দর এইটা আমি কেয়ারই করি না, কারণ আমার কাছে এর ভ্যালু আছে, তথাপি অবশ্যই সুন্দর।
এখন জিনিশটারে একটু জটিল করতে যাই।
একটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা/রোবট বানানো হইল। তারে বিভিন্ন ধরণের চা বিষয়ক তথ্য দেয়া হইল। এরপর তারে দুই কাপ চা দেয়া হইল, বলা হইল প্রথম কাপ তোমার মায়ের হাতের চা (দাম ৪০ টাকা), দ্বিতীয় কাপ বাজারের (দাম ১০০ টাকা)। কোন কাপ বেটার?
সে তার ভেতরে থাকা তথ্যের বিচারে বাজারের কাপরে বেটার মনে করবে। কারণ র্যাশনালি সেইটাই স্বাভাবিক।
অর্থাৎ, মানুষের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতিতে মানুষ যে ইর্যাশনাল হইতে পারে, এটাই তারে মানুষ বানায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চাইতে আলাদা করে।
উপরোক্ত সিদ্ধান্তে আমি প্রথমে গেছিলাম। পরে এর সীমাবদ্বতা দেখতে পাইলাম।
ধরা যাক, আপনারে দুই কাপ একই মানের চা দেয়া হইল। এক কাপ আপনার আসল মা বানাইছেন। যে মা রে আপনি জন্মের পরে আর দেখেন নাই। জানেনই না ইনি আপনার মা। একজন নার্স জন্মের পরেই আপনারে নিয়া আরেক মহিলার কোলে দিছিলেন।
আরেক কাপ চা বানাইছেন ওই মহিলা, যার কাছে নার্স আপনারে নিয়া দিছিলেন, যিনি মাতৃ মমতায় আপনারে লালন করছেন, ও তারেই আপনে মা হিসেবে জানেন।
এই দুই কাপ চায়ের মধ্যে কোন কাপের ভ্যালু আপনার কাছে বেশি হবে?
দ্বিতীয় কাপের। কারণ যিনি বানাইছেন উনিই আপনার মা, আপনার জানামতে।
কিন্তু তিনি জন্ম দেন নাই। তাইলে মা হইলেন কেমনে?
প্রথমত, আপনারে জানানো হইছে তিনি আপনার মা। জন্ম থেকেই আপনে জানেন এটা। যেমন জানেন আপনার ধর্ম দেশ ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত, তিনি মাতৃমমতায় পালন করছেন আপনারে, তার সাথে আপনার অনেক আনন্দের স্মৃতি।
এইগুলার সংমিশ্রণেই তিনি মা হন, এবং তার হাতের চায়ের “ভ্যালু” আপনার কাছে তৈরি হয়।
ফলে, আমরা দেখতে পাইতেছি যে, জন্ম দেয়া না, আপনার কাছে কী ডেটা আছে, এর উপর নির্ভর করে কে আপনার মা। এরই ধারাবাহিকতায় পরে আসে ভ্যালুর হিসাব।
ধরেন ওই রোবটরে যদি আমি তথ্য দেই ইনি তোমার মা, এবং তার সাথে দীর্ঘ বসবাসের স্মৃতি দিয়া দেই, কেমনে উনি লালন পালন করছেন ইত্যাদি, তাহলে রোবট কি ওইটারে মিক্সিং করে মায়ের হাতের চা এর আলাদা ভ্যালু বুঝতে পারবে?
ধারণা করি, পারবে।
যখন সে বিভিন্ন স্মৃতির ডেটার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের অনুভূতি অনুভব করতে পারবে। এই স্বক্ষমতাটা যখন টেকনিক্যালি তারে দেয়া যাবে।
যেমন, আমাদের ইমোশনগুলি বিভিন্ন স্মৃতির ডেটার উপর ভিত্তি করে। কাউরে আপনে মারছিলেন, এই স্মৃতিতে আসতে পারে গিল্টি ফিলিং। কোন অন্যায়ের সম্মুখীন হইছিলেন, এই স্মৃতিতে আসতে পারে ক্ষোভের ফিলিং। ডেটাগুলির মিথস্ক্রিয়ায় একেক অনুভূতি উৎপন্ন হয়।
আমাদের এমনও হয়, স্মৃতির প্রভাবে কোন কাজ না করেও কেবল দেখে একটা অনুভূতি হয়ে যায় অনেক সময়। যেমন তেঁতুল দেখলে জিভে পানি আসে। যারা জীবনে তেঁতুল খায় নাই এদের এটা হবার কথা না।
রোবটেরও স্মৃতির প্রভাবে কোন বস্তু দেখে ট্রিগার হওয়া সম্ভব।
এই স্বক্ষমতাটা লজিক্যালি সম্ভব। এবং এই পর্যায়ে গেলেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দুর্নীতি করতে পারবে, নিজের স্বার্থ দেখে কাজ করতে পারবে।