আমাদের বিজ্ঞানী আইনস্টাইন সাব বলছিলেন লাইফ দুইভাবে যাপন করা দেখা যায়। যদিও এই দুইভাবে দেখা যায়, বা জগতে দুইরকম মানুষ আছে ইত্যাদি ক্লিশে শোনায়, তাও আইনস্টাইনের এই লাইফরে দেখার দুইভাগের বিভাজন গুরুত্বপূর্ণ। এক ভাবে হইল, জগতে কোন মিরাকল নাই। দ্য প্রেস্টিজ ফিল্মের রবার্ট এঞ্জিয়ার যেমন ভাবত, লাইফে কোন ম্যাজিক নাই, মিরাকল নাই। দ্বিতীয় ভাব, জগতে সব কিছুরেই মিরাকল হিশাবে দেখা।
পুষ্প তথা ফুল নিয়া আলাপ করতে গেলে এই কথা দিয়ে শুরু করা যায়।
দুনিয়ার বয়স প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর। কোনমতে এর প্রায় প্রথম ৫০০ মিলিয়ন বছর ছিল কালো কালো, তাও আবার ডার্ক কালো না, কিছুটা গাঢ় ধূষর ধরণের পাথর আর তার উপরে দিয়ে বইতে থাকা পানি।
এইভাবে দিন যাইতে যাইতে প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগে এক কোষী জীবনের দেখা মিলল। আমরা দেখলাম গাঢ় হলুদাভ মাইক্রোবায়াল ম্যাট জন্মাইছে। অনেক অনেক দিন এই অবস্থায় গত হইল।
এরপরে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন বছর আগে আসল সবুজ শৈবাল। দুনিয়াতে সবুজের আগমন।
এইভাবে অনেকদিন যাবার পর, ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে দুনিয়াতে ছোট ছোট গাছ গাছালির আগমন, যেইগুলা শক্ত কান্ডে দাঁড়াইতে পারত না। ভূমির সাথেই লাইগা থাকত।
প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বছর আগে ফার্নের মত গাছ, মানে যারা মাথা উচাইয়া দাঁড়াইতে পারেন, উনাদের আগমন।
দুনিয়াতে গাছদের কালার হইল সবুজ, ক্লোরুফিলের কারণে, এবং বাদামি। বাদামি রঙ হয় বিভিন্ন রঙ একত্রে মিশাইলে। অর্থাৎ ন্যাচারাল এক্সপেরিমেন্ট যখন বিভিন্ন রঙ মিশাইয়া কিছু হইতে গেছে, তখন বাদামি হইছে।
এইভাবে চলতেই থাকল।
তারপর বিস্ময় ও বিস্ময়!
১৩০ মিলিয়ন বছর আগে নিচের ছবির ঘটনাটি ঘটে গেল।
এটা গাছের যৌনাঙ্গ অবশ্যই। তার পরাগরেণু একই প্রজাতির অন্য গাছের কাছে পৌঁছাইতে হয়। এর জন্য এক উপায় বাতাসে ছড়াইয়া দেয়া, কিন্তু এই জিনিশ কার্যকর না। অনেক রেণু নষ্ট হবে এই পন্থায়, দৌড়ে পৌঁছানোও কঠিন হবে। ফলে উক্ত ঘটনা ঘটে গেল, এক আকর্ষক বস্তু তৈরি করে ফেলল গাছ।
যাতে বাহকেরা আকৃষ্ট হয়, ও রেণু নিয়ে যায়। এই পন্থা মারাত্মক কার্যকর।
পুষ্প আপনার জন্য তথা তার নিজের জন্যই ফুটেন। তার সৌন্দর্যও নিজের কারণেই। কিন্তুক, আমরা যদি চিন্তা করি দুনিয়ার ইতিহাস, তাহলে সেই কালা পাথরের দশা থেকে এই আকর্ষক পুষ্প পর্যন্ত আসা, একটা অবাক হবার মতো মিরাকল। সাধারণ এক ফুল হয়ত, নানা কাজে ব্যবহার হয় এখন, কিন্তু তার এই পর্যন্ত আসতে কতো দীর্ঘকাল চেষ্টা করতে হয়েছে, কতো ট্রায়াল এন্ড এররের ভেতর দিয়ে যাইতে হইছে।
সিমলার বিস্তারিত আলাপ করেছেন সৌন্দর্য বা বিউটিরে বুঝতে গিয়া, আমি সেদিকে এখন আর গেলাম না।
ফুল দেয়া
লাভ হইতেছে বশ্যতা স্বীকার করে নেয়া। এটা উভয় দিক থেকেই হয়। গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড স্বীকার করে নেন যে তারা পরস্পরের কিছু স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়া একত্রে সম্পর্কে থাকবেন। হাঁটু গাইড়া ছেলে মেয়েরে ফুল দেন। এই সিম্বোলিক চিত্র বশ্যতা মেনে নেয়ার।
সাধারণত ছেলেরা এইটা করেন। কারণ যেহেতু পুরুষেরা সিস্টেমিক ভাবে নারীদের অধীন কইরা রাখছেন দুনিয়ায়, তাই পুরুষদের একজন হইয়া পুরুষরেই নিচা হইতে হয়। নারী নিচা হইলে তা তো বাস্তবেরই চিত্র হয়, প্রেমের জন্য ত্যাগ বা স্বাধীনতা বিসর্জনের ব্যাপারটা আসে না।
জিজেক ফুল বিষয়ে বলতে গিয়া বলেন, ফুল হইল ডিজগাস্টিং, এইটা তো ভ্যাজাইনা, সব মৌমাছি আর পোকাদের বলতেছে, আসো এন্ড স্ক্রু মি। আন্দোলনে পুলিশরে ফুল দেয়াটার সাইকোএনালিসিস হতে পারে, হাঁটু গাইড়া ফুল দিয়া পরাজয় মানতেছে, স্বাধীনতা ত্যাগ করতেছে, ও এক্সট্রিম সেন্সে এই আহবানও আছে, কাম এন্ড স্ক্রু মি। ‘সে মোরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ, আমি দেই তারে বুকভরা গান’; কিন্তু এই জায়গায় আমরা কি নবী জেসাসের কথা স্মরণ করতে পারি?
মহান নবী বলে গেছিলেন, এক গালে চড় খাইলে আরেক গাল পাইতা দাও। ফুল দিয়া কি সেই আরেক গাল পাইতা দেয়া হয়? শত্রু যা আশা করে নাই এমন কিছু করে ভড়কাইয়া দেয়া এমন সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ারের টেকনিক হিসাবে নবীর এই কাজরে ধরলেও, অন্তত আন্দোলনে পুলিশের বিরুদ্ধে এটা খাটে না। পুলিশ এইখানে ভড়কাবে না। কারণ তারা শক্তিশালী।
স্মরণ করতে হবে মেলিয়ান ডায়লগের কথা। এথেন্স যখন মেলোজ অন্যায় আক্রমণ করে, তখন প্রতাপশালী এথেন্স বলেছিল, আক্রমণের নৈতিকতা নিয়ে আমরা ফালতু আলাপে যাব না। শক্তিশালীরা তার ক্ষমতা যা আছে তাই করে এবং দূর্বলেরা কোন পথ না থাকায় যেইটা সাফার করার ওইটা করেই। ফুল দেয়া পরাজয় স্বীকার ও আরও স্ক্রুইং এরই আহবান। যুদ্ধের টেকনিক হিসাবে এইখানে অকার্যকর। মেলোজ যিশুর জন্মের ৫১৪ বছর আগেও এই পথে যায় নাই। আত্মসমর্পণ না করে লড়েছিল।