প্রারম্ভঃ
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার এবং বিশ্বখ্যাত ধারাভাষ্যকার রিচি ব্যানোও একবার বলেছিলেন, ক্যাপ্টেন্সি হচ্ছে ৯০% লাক এবং ১০% স্কিল। কিন্তু ১০% স্কিল ছাড়া আবার ট্রাই করতে যাইও না।
এই কথার মধ্যে একটা চমৎকার উইজডম আছে।
ইনভেস্টিং বা কেরিয়ারের এর ক্ষেত্রেও এটা বলা যায়, সফলতা ৯০% লাক, ১০% দক্ষতা ও হার্ড ওয়ার্ক। কিন্তু শেষের ১০% ছাড়া ট্রাই করতে যাইও না।
মূল লেখাঃ
আতাহার আলী খানের স্বাক্ষাতকার দেখলাম খেলা৭১ এ।
আতাহার আলি’র ব্যাটিং দেখতেও পারলাম কিছুদিন আগে ফেসবুকের বদৌলতে। বাংলাদেশের কয়েকজন স্টাইলিস্ট ব্যাটসম্যানদের কাতারে তিনি থাকবেন।
স্বাক্ষাতকারে তিনি কথা বলেছেন তার ধারাভাষ্য, ক্রিকেট ইত্যাদি বিষয়ে। এইগুলার উপর ভিত্তি করে জীবন দর্শন এনালাইজ করি, কারণ আমার সাইটের একটা লেখার সাথে কিছু জিনিশ মিলে। আশা করি এখান থেকে কাজে লাগানোর মত ইনসাইট পাবেন।
১৯৯৮ সালে আতাহার আলীরা গেছিলেন ইংল্যান্ড স্কটল্যান্ড আয়ারল্যান্ডে খেলতে। খেলার পরে বিদেশী এক টিভি চ্যানেল আসত কথা বলতে। দলের ম্যানেজার আতাহার আলীকে বললেন তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে। আতাহার বললেন।
এরপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একটা হোটেলে আতাহারের সাথে ওই লোকের দেখা, যিনি ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ডে খেলা শেষে কথা বলতেন। হাই হ্যালোর পরে, আতাহার বললেন, আমি তো ধারাভাষ্য দিতে চাই, কিন্তু কী নিয়ম বা কানেকশন ইত্যাদি। তখন লোকটা তারে পরদিন আসতে বলেন। ব্রেক দেন, এবং ঘটনাক্রমে তিনি ধারাভাষ্যকার হয়ে যান। অবশ্যই এই ধারাভাষ্য দেয়ার যাত্রায় তারে শিখতে হয়েছে, আরও স্ট্রাগল করতে হয়েছে।
কিন্তু, দুইটা জিনিশ খেয়াল করেন।
১। আতাহাররে বাড়তি কাজ করতে বলা হইছিল। খেলা শেষে আবার কথাবার্তা, তাও ইংরাজিতে। আতাহার এতে আপত্তি তো জানানই নাই, খুশি হয়ে করেছিলেন।
২। এই কাজের সূত্রেই তার ওই লোকের সাথে পরিচয়। এবং হোটেলে দেখা হবার সময় তিনি তার ধারাভাষ্যে আগ্রহ থাকার বিষয়টাও তাকে জানিয়ে দেন।
এখন কেউ বলতে পারেন, আতাহার লাকি। কারণ ওই লোকটা প্রডিউসার নাও হইতে পারত। প্রডিউসার নাও হতে পারত ঠিক। কিন্তু খেলার শেষে কথাবার্তা বলার ওই অতিরিক্ত কাজ সানন্দে না করলে তার কোন সম্ভাবনাই তৈরি হইত না। এবং পরবর্তীতে হোটেলে লোকটারে আগ্রহের কথা না জানাইলেও হয়ত হইত না। এই দুই কাজের মাধ্যমে তিনি তার লাকের সম্ভাবনা অনেক বাড়িতে তুলেছিলেন।
খেয়াল করলে দেখবেন, এই দুই কাজে তার ঝুঁকির বা হারানোর তেমন কিছুই ছিল না। প্রথম কাজে, কিছু সময় ব্যয় করে কথাবার্তা। দ্বিতীয় কাজে, অহেতুক ইগো বাদ দিয়ে আগ্রহের কথাটা বলা, এই জায়গায় লোকটা না করলে একটু খারাপ লাগার অল্প জায়গা থাকে, আর কিছু না। কিন্তু সম্ভাব্য রিটার্ন দেখেন, একজন ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হয়ে যাওয়া। দুনিয়ার সব স্টার ক্রিকেটারদের সাথে বসে আলাপ করা। সেরা অনেক ক্রিকেট সরাসরি উপভোগ করা।
সাইটের যে লেখাটির সাথে মিলে, কয়েক বছর আগে লেখছিলাম, ভাগ্যবান হওয়া কি ইস্কিল? ওইখানে এই জিনিশই বলা ছিল, ভাগ্যবান হওয়ার স্কিলের জায়গাটাতে কাজ করে একজন নিজের সৌভাগ্যের সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে তুলতে পারেন। যেটা আতাহার করেছেন।
যারা কেরিয়ারে শুরুর দিকে আছেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত কাজ একটা মহাসুযোগ নিজের স্কিল বাড়ানোর। আপনার টার্গেট থাকা উচিত কীভাবে আপনি আপনার স্কিল বাড়াবেন, নলেজ বাড়াবেন, কানেকশন বাড়াবেন এবং সুযোগ বাড়াবেন।
ওয়াইজম্যান তার রিসার্চ থেকে দেখেছিলেন লাকি লোকদের একটা এটিচ্যুড থাকে, একটা জীবন দৃষ্টি থাকে, যেটা তাদের সুযোগ দেখতে ও কাজে লাগাতে সাহায্য করে। তারা অজান্তেই চার বেসিক মূলনীতির চর্চা করেন।
১। চান্স অপরচুনিটি বা সুযোগ বাড়ানো। যেমন আতাহার খেলার শেষে কথাবার্তায় গিয়েছেন, এবং পরে লোকটাকে তার আগ্রহের কথা বলেছেন।
২। ইনটিউশন বা গাট ফিলিংকে তারা গুরুত্ব দেন। যেমন, ওই লোকটারে ধারাভাষ্যে আগ্রহের কথাটা বলা, গাট ফিলিংরে গুরুত্ব দেয়া ছাড়া সম্ভব হত না। নিশ্চয়ই তার মনে হয়েছিল বললে হয়ত কাজ হলে হতে পারে। ৩। লাকি মানুষেরা মনে করেন তারা লাকি। সামনে ভালো জিনিশ ঘটবে।
৩। এরা ব্যাড লাক নিয়ে হা হুতাশ করেন না। তারা মনে করেন যা লং রানে ভালো হবে। আতাহারের কথায় দেখবেন, তারে নিয়া সমালোচনা, তার ইংরেজি কেন ইংরাজদের মত না বা পক্ষপাতিত্বে অভিযোগ, এগুলা নিয়ে তিনি রিয়েক্টিভ হয়ে উত্তর দেন নি। এই নিয়ে তার হতাশার কথাবার্তা দেখা যায় নি। (আমি যা খেলা দেখেছি, সাম্প্রতিক কালে তার ধারাভাষ্যকে বাংলাদেশের প্রতি অতিরিক্ত পক্ষপাতমূলকই মনে হয়েছে।)
এক ভিডিও থেকে মানুষ বুঝা অসম্ভব। কিন্তু আমার মনে হয়, উক্ত চার মূলনীতি আতাহার আলী খানের জীবন দৃষ্টির ভেতরে আছে।
——
–খেলা৭১ এর ফেসবুক পেইজে আতাহার আলী খানের স্বাক্ষাতকার ভিডিও লিংক ।